“আমার নাম***, আমার বাড়ি হাওড়ায়। আমার বয়স ৩০ আর স্ত্রীর ২৩। আমি গরীব পরিবারের ছেলে। **** সোনার কাজ করি। টাকা রোজগারের জন্য বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকতে হয়। ২ বছর আগে আমার বাবা মারা যান। ফলে সংসারের দায়িত্ব আমার ওপর পড়ে। এমনিতেই আর্থিক চাপ তার ওপরে আছে মানসিক চাপ। কারণ আমাদের বিয়ে হয়েছে ৪ বছর আগে। বিয়ের এক বছর পর থেকেই আমরা বাচ্চার জন্য চেষ্টা করছি। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তারবাবু সব পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, আমার বীর্যে শুক্রাণু অনেক কম আছে। অনেক ওষুধ খেয়েছি কিন্তু কোনো ফল পাইনি। ডাক্তারবাবু এও জানিয়েছেন আমার স্ত্রীর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমার মিসেসের কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও দিন-রাত তাঁকে আমার পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে উলটোপালটা কথা শুনতে হয়। আমার স্ত্রী একবার আত্মহত্যা করতেও গেছিল। ভাগ্য ভালো ছিলো বলে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এখন তাঁকে নিয়ে আমি *** থাকি। আমাদের সমস্যা হল বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারবো না। ওদিকে বাড়িতেও টাকা পাঠাতে হয়। বুঝতেই পারছেন, ওই সামান্য কাজ করে দুজনের থাকার খরচ আবার বাড়িতে টাকা পাঠানোর খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না। ইউটিউবে আপনার কথা শুনে আপনাকে এই চিঠি লিখলাম। যদি কোনো পরামর্শ দেন তাহলে আমরা স্বামী-স্ত্রী একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারি।”
ওপরের লেখাটা আমার নয়, জনৈক যুবক যে আপয়েন্টমেন্ট-এর জন্য এই লেখাটি মেল করেছিল। তাঁর অনুমতি নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ডিটেলগুলো মুছে লেখাটা পোস্ট করছি। ফেসবুকে আমার লেখা হয়েছিল শুরু হয়েছিল অনেকটা ইনফারটিলিটি নিয়ে সাধারণ লোকেদের সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদে। পেশেন্টদের নিয়ে আমার রোজকার অভিজ্ঞতা গুলোই তুলে ধরতাম, যাতে তারা ভাবতে পারে তাদের মতো অনেকেই আছে। অনেকেই তাদের মতো একই রকম দুঃখ-হতাশায় ভোগে, ঘরের এবং বাইরের লোকের কাছে একইরকম গঞ্জনার শিকার হয়। লেখার লক্ষ্য ছিল, তাদের মনোবল বাড়ানো। নিজের জীবন নিজের মতো করে এগিয়ে নিয়ে চলা- তা সে মফস্বলের কোনো গৃহবধূ হোন বা করপোরেট সেক্টরে কাজ করা উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক।
ছোট ঘটনা দিয়ে আজকের লেখাটা শেষ করি। মল্লিকা আমার কাছে গত দু বছর ধরে চিকিৎসা করছে। বনগাঁর কাছে থাকে। বিকেলে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের পড়ায়। অবসর সময় ছবি আঁকে আর ঘরের বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে হাতের কাজ করে। ওর মায়াবী চোখে সব সময় মনখারাপ লেগে থাকে। এবারের কার্তিক পুজোয় ওদের বাড়ির দরজার সামনে কার্তিক ফেলে যাওয়া হয়েছিল। মল্লিকার প্রথমে মনে হয়েছিল ওদের অক্ষমতাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে। কিন্তু ওর যে এক বিশেষ ক্ষমতা আছে, কোন যুদ্ধে না হারা। সে বাড়িতে ঠাকুর তুলে লুকিয়ে পুজো না করে বাড়ির সামনের মাঠে পুজো করলো। নিজের হাতে বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক বেশ কিছু পোস্টার এঁকে মণ্ডপে লাগিয়েছিল এবং ছোটো ছোটো ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে সন্ধেবেলা একটা অনুষ্ঠান করেছিল-যদি তাদের কোনো সহপাঠী “বিশেষভাবে সক্ষম” হয় তারা তাদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করবে। সাবাশ মল্লিকা- সাবাশ তোর থিমের কার্তিক পুজো।
আমি পরের মল্লিকার গল্পের জন্য অপেক্ষা করছি।