সম্প্রতি এন আর এস মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়ার ডাক্তার আন্দোলন সারা দেশ জুড়ে সাড়া ফেলেছিল। এই আন্দোলনের প্রায় ৩৬ বছর আগে, ১৯৮৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়ার ডাক্তাররা জনস্বাস্থ্যের দাবী নিয়ে পথে নেমেছিল। সেই ইতিহাস ডা পুণ্যব্রত গুণের কলমে।
১৯৭৯-এর হাসপাতাল আন্দোলন ছিল পরের দশকের এক বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে জুনিয়র ডাক্তাররা সংগঠিত হন হাউসস্টাফ-ইন্টার্ন অ্যাসোসিয়েশন (HIA) বা জুনিয়র ডক্টরস’ অ্যাসোসিয়েশন (JDA) নামের সংগঠনে। আমাদের কলেজের সংগঠন ছিল মেডিক্যাল কলেজ হাউসস্টাফ-ইন্টার্ন অ্যাসোসিয়েশন।
তখন পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা সাত—মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার, আর জি কর, ন্যাশানাল, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও নর্থবেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ। মেডিক্যাল কলেজগুলোর হাউসস্টাফ-ইন্টার্ন অ্যাসোসিয়েশন বা জুনিয়র ডক্টরস’ অ্যাসোসিয়েশন একসাথে মিলে গঠিত হল অল বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস’ ফেডারেশন (ABJDF)। আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে দাবীপত্র গঠিত হয়, তার মধ্যে কতগুলো ছিল আশু দাবী, কতগুলো মূল দাবী।
আশু দাবী স্থির করা হয়ঃ
১। জীবনদায়ী ও অত্যাবশ্যক ওষুধ সরবরাহ নিয়মিত ও সুনিশ্চিত করতে হবে।
২। ২৪ ঘন্টার জন্য এক্স-রে, ইসিজি, রক্ত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। পাশ করা ও ইচ্ছুক সমস্ত জুনিয়র ডাক্তারকে সরকারী চাকরীতে নিয়োগ করতে হবে। ডাক্তাররা গ্রামে যায় না এই অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
৪। জুনিয়র ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সমস্ত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদের ভাতা দিতে হবে।
৫। সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজের সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে হবে।
৬। ‘কালা হাসপাতাল বিল’ বাতিল করতে হবে।
৭। হাসপাতাল পরিচালন কমিটিতে সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী-প্রতিনিধি নিতে হবে।
৮। অযৌক্তিক হাতুড়ে ডাক্তার তৈরীর DCMS কোর্স বাতিল করতে হবে।
৯। সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীর প্রকৃত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
মূল দাবী নির্ধারিত হয়ঃ
১। জনমুখী বৈজ্ঞানিক জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করতে হবে, প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য পাওয়ার অধিকারকে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং একে কাজে প্রয়োগ করার জন্য (জাতীয় ও রাজ্য-স্তরে) প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত করতে হবে।
২। বৈজ্ঞানিক ওষুধনীতি প্রণয়ন করতে হবে, যাতে জীবনদায়ী ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ সুনিশ্চিত হয় তার জন্য রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে স্বল্পমূল্যে ওষুধ প্রস্তুত করতে হবে।
৩। সুসংহত মেডিকাল শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে, মেডিকাল শিক্ষা স্বয়ংসম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতে হবে এবং মেডিকাল শিক্ষার সাথে জড়িত সমস্ত স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে উক্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠন করতে হবে।
এবিজেডিএফ আন্দোলনের শুরুতে আমি জুনিয়র ডাক্তার হইনি, মেডিক্যাল ছাত্র।
১৯৮২ জানুয়ারীতে এবিজেডিএফ-এর প্রথম কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের কাছে দাবীপত্র পেশ করা হল। সরকার এবিজেডিএফ সংগঠনকেই মানতে অস্বীকার করে।
কিছুদিন পর পাব্লিক সার্ভিস কমিশনের চাকরী দিতে অক্ষমতার জন্য ‘রিগ্রেট লেটার’ নিয়ে মিছিল করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, স্মারকলিপি পেশ করলেন। সরকার দাবী মানতে নারাজ।
লাগাতার ২৪ ঘন্টা, ছুটিবিহীন ডিউটির ফলে কর্মরত অবস্থায় প্রাণ হারালেন জুনিয়র ডাক্তার পরেশ চৌধুরী। দায়িত্ব নিতে ও ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করল সরকার।
১৯৮৩-র ২৩শে মার্চ এবিজেডিএফ-এর কনভেনশন হল। দাবীর সমর্থনে আউটডোরগুলোতে প্রচার, লিফলেটিং করা হল। ৬৭ টা পথসভা করা হয়। আবার দাবীপত্র পেশ করা হয় সরকারের কাছে, সরকার নিরবিকার। হাসপাতালগুলোর সুপার ও প্রিন্সিপালদের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়, তাঁরাও নিরবিকার থাকেন।
২২শেএপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। তিনি আশ্বাস দেন যে সাতদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এই আশ্বাসনের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত আউটডোর বয়কট প্রত্যাহার করা হয়। সাতদিন পরেও সরকার নীরব থাকে।
৩রা মে সহস্রাধিক জুনিয়র ডাক্তার মিছিল করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ডেপুটেশন দিতে যান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েতের ব্যাপারে ব্যস্ত, তাই আলোচনার সময়ই পাননি।
৯ই থেকে ১৪ই মে বিভিন্ন হাসপাতালে পরযায়ক্রমে আউটডোর বয়কট করা হয়, ব্যাজ পরে দাবী দিবস উদযাপন করা হয়।
৬ই জুন বর্ধমান মেডিকাল কলেজের দুজন হাউসস্টাফকে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়।
১৩ই জুন থেকে আউটডোর, ইনডোর বয়কট, দুদিন-ব্যাপী অনশন। সরকার নীরব। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের গেটে-গেটে প্রচারে নামানো হয় সিপিআইএম-এর গণসংগঠনগুলোকে।
১৫ই জুন আউটডোর, ইনডোর, ইমার্জেন্সি বয়কট করে হাসপাতালগুলোকে অচল করে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রোগীদের স্বার্থে হাসপাতালগুলোতে ইমার্জেন্সি স্কোয়াড চালু করা হল। পিজি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা করার সময় আন্দোলন-বিরোধীদের হাতে আক্রান্ত হলেন অর্থোপেডিক্সের ভিজিটিং প্রফেসর, সরকারী ডাক্তারদের সংগঠন হেলথ সার্ভিস আসোশিয়েসনের রাজ্য সম্পাদক ডা অরুণ ব্যানার্জী, তাঁর দোষ তাঁর সংগঠন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করছিল। পুলিশের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ওপর আক্রমণ নামাল ডিওয়াইএফ ও কোঅর্ডিনেশন কমিটি।
১৭ই জুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হল দাবীদাওয়া নিয়ে।
৭ই জুলাই সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের ভাতাবৃদ্ধির ঘোষণা করল। জনস্বাস্থ্য-সম্পর্কিত দাবীগুলো সম্পর্কে সরকার নীরব থাকল।
৮ই জুলাই সরকারী ‘ঘুষ’-এর প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল—মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হল।
৯ই থেকে ১৩ই জুলাই আউটডোর বয়কট করে জুনিয়র ডাক্তাররা প্যারালেল আউটডোর চালালেন। প্রস্তাব এল বাড়তি ভাতা রোগীদের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে। হাসপাতালগুলোতে পালটা আঊটডোর চালানো কার্যত বিদ্রোহের ডাক দেওয়া- সাংবাদিকদের বললেন রাজ্যের ভূমি সদব্যবহার মন্ত্রী বিনয় চৌধুরী।
৪ঠা আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা, দাবী মানতে নারাজ সরকার।
৫ই থেকে ১২ই আগস্ট আবার কর্মবিরিতির পথে গেলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
১৬ই আগস্ট আমার ইন্টার্নশিপ শুরু, মেডিক্যাল ছাত্র থেকে জুনিয়র ডাক্তার হওয়া আমার এই আন্দোলনেরই সময়কালে।
২৭শে আগস্ট হেলথ সার্ভিস আসোশিয়েসন, ইন্ডিয়ান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশন ও এবিজেডিএফ-এর যৌথ উদ্যোগে দাবীগুলোর সমর্থনে চিকিৎসকদের সম্মেলন। সরকার তবু নীরব।
১৫ই থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বর জনস্বার্থ-সম্পর্কিত দাবীগুলো নিয়ে পালাক্রমে আউটডোর বয়কট করা হল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওরা আবার প্রত্যেকের চাকরির দাবী করছে। আমরা আগেই বলে দিয়েছি সবার চাকরির ব্যবস্থা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।– গণশক্তি, ২০।৯। ১৯৮৩
রোগীর ওষুধের জন্য চাই সমাজতন্ত্র
চাকরীর জন্য সাম্যবাদ!
কথাটা খারাপ বলেন নি
যুক্তি আছে—
ফর্সা আকাশের মত যুক্তি!
আমিও আপনাদের হয়ে
লক আউট জুট মিলের মজুরদের বলে দেব—
‘বাবুয়া, সমাজবাদ নাহি আনেসে মেশিনকা চাক্কা
নাহি ঘুমেগা’।
বাঁকুড়ার কিষাণকে বলে দেব—
‘সমাজতন্ত্র আসেক নাই
ত ই-মাটিতে কূপ খনন হবেক নাই’।
নদীকে বলে দেব
কানে কানে
(ও বড় মুখরা)
সমাজতন্ত্র আসেনি—
সাগরে যাস না!
সমীর রায়
‘জুনিয়ার ডাক্তারদের সমর্থনে
কবিকন্ঠ’ থেকে, ১৯৮৩
২১শে থেকে ২৭শে সেপ্টেম্বর চরমপত্র দিয়ে পূর্ণ-কর্মবিরতির পথে গেলাম আমরা। ডাক্তাররা।
১লা অক্টোবর সরকার ঘোষণা করল- ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কমপ্লিশন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না, ভাতা আটকে দেওয়া হবে। ঘোষণার প্রতিবাদ করলেন এইচএসএ ও আইএমএ।
৪ঠা অক্টোবর এস এস কে এম ও নীলরতন সরকার মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে সুপারিন্টেডেন্টের ঘরে অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারদের ওপর নির্মম লাঠিচার্জ পুলিশের। ন্যাশানাল মেডিকাল কলেজে হামলা চালায় কোঅর্ডিনেশন কমিটি। প্রতিবাদে ডাক্তারদের দৃপ্ত মিছিল মাঝরাতে কলকাতার রাজপথে।
৫ই অক্টোবর লাঠিচার্জের সমর্থনে সাফাই দিলেন মন্ত্রী। বিনয় চৌধুরী বললেন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে লাঠি চালিয়েছে। ন্যাশানাল মেডিকাল কলেজে পুলিশ লাঠি চালিয়ে আহত করল ২৮ জনকে, গ্রেপ্তার হলেন ১৪ জন। সহস্রাধিক জুনিয়র ডাক্তার-ছাত্র-নার্স-কর্মচারী বিক্ষোভে উত্তাল। রাত্রের সমস্ত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে রাজভবনের সামনে অবস্থান।
৬ই অক্টোবর এইচএসএ এবং আইএমএ-র কর্মবিরতি—১৮টা সরকারী হাসপাতালে ইনডোর বাদে সরবাত্মক কর্মবিরতি।
৮ই অক্টোবর সরকার মিথ্যা প্রচার শুরু করল জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে শিশুরা মারা যাচ্ছে। হাসপাতালের সুপার জানালেন তাঁর হাসপাতালে ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে কোনো শিশুর মৃত্যু হয় নি। বাঙ্গুর হাসপাতালে সিপিআইএম-নেতৃত্বাধীন নাগরিক কমিটির হামলা।
আইএমএ-র আহ্বানে হাজার হাজার মানুষ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের বিশাল মিছিল ও স্মারকলিপি পেশ।
৯ই অক্টোবর বিসি রায় শিশু হাসপাতাল ও বাঙ্গুরে সিপিআইএম ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীর আক্রমণ।
১০ই অক্টোবর এবিজেডিএফ-এর সভাপতির বাড়ি সিপিআইএম-এর নেতৃত্বে ঘেরাও।
১১ই অক্টোবর আলোচনায় ডেকে এনে ডাক্তারদের প্রতি দুর্ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবাদে দুই জুনিয়র ডাক্তার প্রতিনিধির কক্ষত্যাগ । অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী অনড়।
১৩ই অক্টোবর পিছু হটল সরকার। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হল। আরো কয়েকটা দাবী মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানাল সরকার।
১৪ই অক্টোবর সন্ধ্যায় আইএমএ ও এইচএসএ আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল। রাতে এবিজেডিএফ কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, সেই সঙ্গে দাবী আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নেওয়া হল।
আমি মেডিকাল ছাত্র থেকে জুনিয়র ডাক্তার হয়েছিলাম এই আন্দোলন চলাকালীন। আন্দোলনের ফল আমি দেখেছি কাজ করার সময়। সে সময়ে বেশীর ভাগ বেড ছিল ফ্রি বেড। ফ্রি বেডের রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনাতে হত বলে মনে পড়ে না—তা দামী অ্যান্টিবায়োটিক বা ক্যান্সারের ওষুধ যাই হোক না কেন। হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো প্রয়োজন মত করানো সম্ভব হতে লাগলো। তবে এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, বছর তিনেক পর আবার আন্দোলনের পথ নিতে হয় জুনিয়র ডাক্তারদের…।
আন্দোলন থেকে শিক্ষা নেয় সরকারও। সরকারী ডাক্তারদের সংগঠন এইচএসএ এবিজেডিএফ-এর আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল, তাই সরকারী ডাক্তারদের শাসক দলপন্থী অংশকে নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস তৈরী করা হয়। ট্রান্সফার-প্রমোশনের গাজর-লাঠি দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডাক্তারদের এ সংগঠনের সদস্য হতে বাধ্য করা হতে থাকে।
আন্দোলন চলাকালীন সরকারী ডাক্তাররা যখন ‘স্ট্রাইক ব্রেকার্স’ হিসেবে কাজ করতে রাজী হননি, তখন বহু উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ চাকরীপ্রার্থী ডাক্তারকে উপেক্ষা করে এবং ‘প্রথম পোস্টিং গ্রামে’ এই প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে কলকাতার কলেজ হাসপাতালগুলোতে অ্যাড হক নিয়োগ করা হল ৮৭ জনকে, যাদের একমাত্র যোগ্যতা তারা এস এফ আই করত। পরে এদের স্থায়ী করা হয়, এদের কেউ কেউ প্রায় ৩০ বছর ধরে মেডিকাল কলেজগুলোতেই রয়ে গেছিল উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই প্রশাসনের ‘চোখ-কান’ হয়ে।
শাসকদলের তাঁবেদার জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন হিসেবে জন্ম নেয় জুনিয়র ডক্টরস’ কাউন্সিল (JDC)।
এবিজেডিএফ আন্দোলনের পর ৩৬ বছর কেটে গেছে। জনস্বাস্থ্যের অবস্থা দিনের পর দিন আরো খারাপ হয়েছে। ১৯৯১-এর নয়া অর্থনীতি,উদারনীতি, কাঠামোগত পুনর্নির্মাণের সাথে সাথে সরকার স্বাস্থ্য-শিক্ষার মত পরিষেবা ক্ষেত্রগুলো থেকে সরে চলেছে দিন প্রতি দিন। নানা ভাবে স্বাস্থ্যব্যবসায় ডালপালা ছড়াচ্ছে বেসরকারী পুঁজি। ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের পর পরিবর্তনের সরকারের প্রায় আট বছর হতে চলল, মূল অভিমুখে কোন পরিবর্তন এখনও দেখা যাচ্ছে না।
আজও আশা আবারো জেগে উঠবেন বাংলার জুনিয়র ডাক্তাররা, আবারো পথে নামবেন জনস্বাস্থ্যের দাবী নিয়ে, শ্লোগান তুলবেন—‘স্বাস্থ্য কোনও ভিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য আমার অধিকার’। আবারো ব্যাপক জন-সমর্থন পাবে সে আন্দোলন, রূপ নেবে গণ-আন্দোলনের।