কালকের থেকে আমার আপনার timeline জুড়ে কিছু passionate মানুষের ছবি… তারা এই দুঃসময়েও পিপাসার্ত হয়ে মদের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়েছে… অসীম তাদের সাহস, অসীম তাদের ধৈর্য… ! প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি সত্যিই মানুষ অভাবে ছিল? রাগ হচ্ছে আর সেই রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমরা সহজেই বলছি যে এদের free খাবারের কোনো দরকার নেই… এদের কোনো অভাব-ই নেই…! কিছু ক্ষেত্রে এটা হয়তো ঠিক, সবক্ষেত্রেই হয়তো ঠিক নয়… এটাই বোধহয় নেশা নিয়ে চারটি কথা বলার সবচেয়ে ভালো সময়!!
প্রথমেই বলি alcohol-কে morality-র সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না… শুধুই অন্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকে এই “passion”-টা কে বোঝার চেষ্টা করি আসুন… social drinking আর alcoholism এর কিছু ফারাক রয়েছে… বুঝে নেয়া যাক… alcohol বস্তুটি, শুধু alcohol নয় বস্তুত যেকোনো নেশার বস্তুই আমাদের মস্তিস্ক নিয়ে খেলা করতে সক্ষম… নেশা দ্রব্যের সেবনের ফলে যে সাময়িক উত্তেজনা বা pleasure আমরা অনুভব করি তা ডোপামিন (dopamine) বলে একটি রাসায়নিক পদার্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়….! বারেবারে এই নেশাদ্রব্য সেবনের সাথে সাথে একটা সময় কিছু মানুষ নেশা-র কবলে পরেন… ব্যাপারটা অনেকটা একটা জালের মতো… নেশাদ্রব্য ক্রমশঃ এই মানুষটির জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে…
ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম যে –
শুরুতে যে পরিমাণে নেশাদ্রব্য উত্তেজনার সঞ্চার করতে পারতো, একটা সময়-এর পরে সেই পরিমাণ নেশা দ্রব্যে কাঙ্ক্ষিত আনন্দ বা উত্তেজনার সঞ্চার হয় না, ফলে নেশাদ্রব্যের পরিমাণ বাড়তে থাকে… মানুষটি ক্রমশ নেশা করার ক্ষেত্রে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরও বেশী পরিমাণ নেশা দ্রব্য সেবন করতে শুরু করেন, অনেকটা সময় চলে যায় নেশাদ্রব্য জোগাড় করতে, প্রয়োজনে ধার করা বা অসৎ উপায় অবলম্বন করাও অস্বাভাবিক নয়, পরিবার, কাজকর্ম, সামাজিকতা, hobby সবকিছুর থেকে মানুষটা ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকেন, নেশা ছাড়া বাকি সবকিছুই অগ্রাহ্য করতে শুরু করেন… অনেকেই কাজ হারান, মেজাজ হারান, বিয়ে ভেঙ্গে যায়, পরিবারে অশান্তি হয়, শারীরিক সমস্যা হয়, তবু নেশা এদের ছেড়ে যায় না… ফলে যে ছেলেটা হয়তো শুরুতে সপ্তাহে ২/৪ দিন বন্ধুদের সাথে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরত, সে এখন সকাল থেকে মদ খেতে শুরু করে, মদ ছাড়া তার আর দিন গুজরান হয়না !এরা কেউ যে একেবারেই চেষ্টা করেন না মদ ছাড়ার, সেটাও নয়… চেষ্টা করলেই এদের শরীরের ভিতর এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় (withdrawal syndrome ), যার ফলে অনেকেই আবার নেশার কাছে আত্মসমর্পন করেন… কেউ কেউ হয়তো সেটুকুও সয়ে নেন… কিছুদিন নেশা ছাড়া কাটান… কিন্তু এক আধটা সোশ্যাল ড্রিংকিং-ও এদের আবার পুরোনো জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে (relapse)।
এই নেশার সাথে জড়িয়ে থাকে অনেককিছু… ক্রমশ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, aggression, হিংসাত্মক কাজ করে বসা, domestic violence, accident, আত্মহত্যার মতন কিছু গুরুতর সমস্যা !!
এবার যদি আমরা নেশার কারণ বা উৎস সন্ধানে যাই, তাহলে দেখবো… এর কিছু বায়োলজিক্যাল কারণ রয়েছে… যেমন জেনেটিক কারণ রয়েছে… তেমনই কিছু সোশ্যাল কারণ রয়েছে… যেমন নেশা/মদ্যপান ইত্যাদিকে সমাজ কি চোখে দেখে, একটা মানুষের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, মদ্যপানের প্ৰতি পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি… আর রয়েছে আরেকটা ফ্যাক্টর… Availability !! যেসব জায়গায় নেশাদ্রব্য সহজলভ্য সেখানে নেশা-র প্রকোপ বেশী হবেই… সরকারি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যদি হয় যে মদের দোকান একটি “essential” পরিষেবা, সে ক্ষেত্রে মদ্যপান কে প্রমোট করাই হয়….!
কাল যে বিশাল বিশাল লাইনগুলো দেখা গেছিলো… সেখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ ছিলেন… কিছু মানুষের সরকারি সাহায্যের সত্যিই দরকার নেই, কিন্তু এঁদের মধ্যে এমন মানুষও ছিলেন যাঁরা হয়তো এতদিন যেটুকু টাকা-পয়সা ছিল তা দিয়ে যদিও এই কদিন পরিবারকে কিছু খেতে দিয়েছেন, কিন্তু মদের দোকান খোলা থাকলে এঁরা সরকারি চাল-ডাল বিক্রি করেও মদ খেয়ে নেবেন সেটাও বিচিত্র নয়… !! নেশা জিনিসটাই এরকম…
এই জন্যেই হয়তো এই সংকটময় মুহূর্তে মদের দোকানগুলো খুলে দেওয়া একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে!!
অর্থনীতি নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাই না, আমি অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ নই… কিন্তু একটা ইমার্জেন্সি-তে রোজ মদ্যপান আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা সমস্যা নিয়ে কতজন মানুষ হাজির হন, সেটুকু জানি….!! তাই নেশা-র উপর ভরসা করে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে গিয়ে কি বিপদ ডেকে আনছি, আর কোনপথে এগিয়ে চলেছি এটা সত্যিই ভাবার বিষয়…. !
মানুষ কেন্দ্র আর রাজ্যের অপদার্থরতা র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যাতে না করে সে কারণেই মদের দোকান খুলে দেওয়া হল।