ঙ) Cross-matching পদ্ধতি কী?
ব্লাড ব্যাঙ্কে দান করা সংরক্ষিত রক্ত রোগীকে দেওয়া যাবে কি না সেটি যে পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয় সেই পদ্ধতি কে বলে Compatiblity testing, যাকে চলতি কথায় Cross-match বলে। এটি এই চারটি ভাগে বিভক্ত –
১) Patient Blood grouping অর্থাৎ রোগী বা রক্তগ্রহীতার রক্তের গ্রুপ নির্ণয়;
২) Donor Blood grouping অর্থাৎ রক্তদাতা বা ব্লাড ব্যাঙ্কে থাকা দান করা রক্তের গ্রুপ নির্ণয়;
৩) Patient antibody Screening অর্থাৎ রোগীর রক্তের মধ্যে অ্যান্টিবডি আছে কি না (এবং থাকলে কোনটি/গুলি) তার পরীক্ষা;
৪) Cross-match অর্থাৎ রোগী এবং দাতার রক্ত পরষ্পরের সাথে খাপ খায় কি না তা নির্ণয় করার পদ্ধতি।
রিকুইজিশনের সাথে রোগীর রক্ত দুটি নমুনার (একটিতে RBC এবং অন্যটায় Serum/Plasma) মাধ্যমে আসে, তার গ্রুপটি (ABO এবং Rh-D) পূর্বে বর্ণিত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। একইভাবে ব্লাড ব্যাঙ্কে থাকা রক্তদাতার রক্তের গ্রুপটিও একই রকম পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। দুটি ক্ষেত্রে আগে থেকে রক্তের গ্রুপ জানা থাকলেও সঞ্চালনের আগে পরীক্ষার মাধ্যমে গ্রুপটি পুনরায় নির্ণয় করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
রোগী অর্থাৎ রক্তগ্রহীতার অ্যান্টিবডি স্ক্রিনিং-এ দেখা হয় যে রোগীর মধ্যে কোনো বিশেষ অ্যান্টিবডি আছে কি না এবং থাকলে কোন কোন অ্যান্টিবডি আছে। যদি কোনো অ্যান্টিবডি থাকে, তাহলে সেই অ্যান্টিবডির অ্যান্টিজেন দাতার রক্তে নেই, এমন রক্ত রোগীকে দেওয়া যায়। আর বিশেষ কোনো অ্যান্টিবডি না পেলে মিটেই গেলো।
Whole Blood – এর ক্ষেত্রে ক্রশম্যাচ করা বাধ্যতামূলক। এই প্রক্রিয়াটি এই দুটি ভাগে বিভক্ত –
১) Major Cross match যেখানে রক্তদাতার রক্তের RBC – এর সাথে রোগী (রক্তগ্রহীতা)-র রক্তের Serum বিক্রিয়া করে অ্যাগ্লুটিনেশন হচ্ছে কি না দেখা হয়।
২) Minor Cross-match যেখানে রক্তদাতার রক্তের সিরামের সাথে রোগী (রক্তগ্রহীতা)-র রক্তের RBC বিক্রিয়া করে অ্যাগ্লুটিনেশন হচ্ছে কি না দেখা হয়।
এই পরীক্ষাগুলি Anti Human Globulin (AHG) দিয়ে IAT করতে হবে Test Tube বা CAT-এর মাধ্যমে।
রোগীকে CRBC দেওয়ার এর ক্ষেত্রে শুধু মেজর ক্রশম্যাচ করলেই হয়, প্লাজমা ও অণুচক্রিকার ক্ষেত্রে সাধারণত ক্রশম্যাচ করা হয় না।
ফেনোটাইপের ক্ষেত্রে ধরা যাক, কেউ কারোর Rh-C এবং Rh-e অ্যান্টিজেন আছে, তাহলে তাকে Rh-c এবং Rh-E আছে এমন রক্ত দিলে তার সমস্যা হবে (তার নিজের Rh C এবং e অ্যান্টিজেনথাকায় সেগুলো দাতার রক্তে আছে কি না, তাতে কোনো সমস্যা হবে না)। তাই তাকে এমন রক্ত দিতে হবে যেটায় Rh-c ও E অ্যান্টিজেন নেই।
RBC সঞ্চালনের জন্য রক্তের গ্রুপ নির্বাচন | ||||||
রক্তগ্রহীতার গ্রুপ | রক্তদাতার গ্রুপ | |||||
A | B | AB | O | Rh-D Pos. | Rh-D Neg | |
A | প্রথম বিকল্প | —————- | —————- | দ্বিতীয় বিকল্প | —————- | —————- |
B | —————- | প্রথম বিকল্প | —————- | দ্বিতীয় বিকল্প | —————- | —————- |
AB | তৃতীয় বিকল্প | চতুর্থ বিকল্প | প্রথম বিকল্প | দ্বিতীয় বিকল্প | —————- | —————- |
O | —————- | —————- | —————- | প্রথম বিকল্প | —————- | —————- |
Rh-D Pos. | —————- | —————- | —————- | —————- | প্রথম বিকল্প | দ্বিতীয় বিকল্প |
Rh-D Neg. | —————- | —————- | —————- | —————- | —————- | প্রথম বিকল্প |
Plasma / SDP এর জন্য রক্তের গ্রুপ নির্বাচন (Rh-D-এরউপর নির্ভর করে না) | ||||
রক্তগ্রহীতার গ্রুপ | রক্তদাতার গ্রুপ | |||
A | B | AB | O | |
A | প্রথম বিকল্প | —————- | দ্বিতীয় বিকল্প | —————- |
B | —————- | প্রথম বিকল্প | দ্বিতীয় বিকল্প | —————- |
AB | —————- | —————- | প্রথম বিকল্প | —————- |
O | তৃতীয় বিকল্প | চতুর্থ বিকল্প | দ্বিতীয় বিকল্প | প্রথম বিকল্প |
Whole Blood এর ক্ষেত্রে তাতে RBC ও প্লাজমা উভয়েই থাকায় দাতা ও গ্রহীতার গ্রুপ একই হতে হবে। সাধারণত যেকোনো গ্রুপের প্লেটলেট (RDP) এবং Cryo-precipitate (CRYO) যেকোনো গ্রুপের রক্ত গ্রহীতাকেই দেওয়া যায়।
চ) ? রক্ত এবং তার বিভিন্ন উপাদানের সরকার দ্বারা নির্ধারিত মূল্য (রক্তের গ্রুপ যাই হোক, দাম একই) –
যে কোনো গ্রুপের রক্ত বা তার উপাদান | সরকারী ব্লাড ব্যাঙ্কে সর্বোচ্চ মূল্য | বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে সর্বোচ্চ মূল্য |
Whole Blood | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ১০৫০ টাকা | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ১৪৫০ টাকা |
Packed Red Cell (PRBC/CRBC) | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ১০৫০ টাকা | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ১৪৫০ টাকা |
Platelet Concentrate | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ৩০০ টাকা | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ৪০০ টাকা |
Fresh Frozen Plasma | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ৩০০ টাকা | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ৪০০ টাকা |
Cryoprecipitate | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ২০০ টাকা | প্রতি ইউনিট (ব্যাগ) = ২৫০ টাকা |
Apheresis Method (SDP) | জানানো নেই | প্রতি ইউনিট = ১১০০০ টাকা |
এছাড়া যাদের ক্ষেত্রে প্রাণ বাঁচাতে সারা জীবন ধরে বারবার রক্তের প্রয়োজন হয় সেই সব ক্ষেত্রে বিনামূল্যে রক্ত বা তার উপাদান দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে। যেগুলো হলো –
১) থ্যালাসেমিয়া,
২) হিমোফিলিয়া,
৩) সিকল সেল অ্যানিমিয়া
ইত্যাদি।
? রক্ত এবং তার বিভিন্ন উপাদানের উপর হওয়া বিভিন্ন পরীক্ষার সরকার দ্বারা নির্ধারিত মূল্য যেটা রক্তের উপাদানের মূল্যের সাথে বাড়তি লাগে (রক্তের গ্রুপ যাই হোক, দাম একই) –
TTI পরীক্ষার নাম | সর্বোচ্চ মূল্য |
NAT (Nucleic Acid Test) / ন্যাট | ১২০০ টাকা |
কেমিলুমিনেসেন্স | ৫০০ টাকা |
ই এল আই এস এ (ELISA) – 4th Generation for HIV | ৫০ টাকা |
ই এল আই এস এ – 4th Generation for HBs Antigen | ৫০ টাকা |
ই এল আই এস এ – 4th Generation for HCV | ১৫০ টাকা |
Anti HBc | ২৫০ টাকা |
রক্তদাতার অ্যান্টিবডি স্ক্রিনিং | ৩০০ টাকা |
পদ্ধতির নাম | যে উপাদানের জন্য প্রযোজ্য | খরচ |
Leuco Filtration | Whole Blood, RBC. | ১০০০ টাকা |
Platelets. | ১৫০০ টাকা | |
Grouping & Cross-matching by Automation | Whole Blood, RBC. | ২৮০ টাকা |
Grouping & Cross-matching by Semi-automation | Whole Blood, RBC. | ১২০ টাকা |
Phenotyping for Extended Serology | Whole Blood, RBC. | ৫০০ টাকা |
Irradiation | Whole Blood, RBC, Platelets, Granulocytes. | ১০০০ টাকা |
Bacterial Detection | Platelets. | ৪০০ টাকা |
স্বাভাবিক ভাবেই এরপরে মনে হতে পারে যে রক্ত যখন আমরা নিজের ইচ্ছায় এবং বিনামূল্যে দিয়ে থাকি তখন সেই দান করা রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হলে সেটি টাকা দিয়ে কিনতে হবেই বা কেন। তুলো থেকে কাপড় বা টমেটো থেকে টমেটো সস যেমন বিনামূল্যে তৈরী করা যায় না, তেমনি দান করা রক্তটিকে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে সঞ্চালনের উপযোগী করতে তুলতে গেলে যে খরচ হয় তার জন্যই রক্ত কিনতে গেলে একটি মূল্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে যার থেকে বেশী দাম চাওয়া বেআইনি এবং এটি সব রক্তের গ্রুপের ক্ষেত্রেসমান। তবে, সরকারের কিছু প্রকল্পে কিছু চিকিৎসার ক্ষেত্রে রক্ত কিনতে কোনো টাকা লাগে না (যদিও পরীক্ষা বা বাড়তি পদ্ধতিগুলির জন্য লাগে), কারণ সরকার ভর্তুকি দিতে সক্ষম।
এই রচনায় ডা ঋতম চক্রবর্তীর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
সমাপ্ত