বছর দুই আগে এক বাচ্চা মেয়ে মায়ের সাথে আমাদের স্কুলে এসেছিলো| উদ্দেশ্য স্কুলের বাচ্চাদের সাথে কিছু সময় কাটাবে ও তাদের কিছু খাবার খাওয়াবে| তখন তার বছর পাঁচ বয়স| থাকে আমেরিকায়| দেখলাম খুব অনায়াসে বাংলা বলছে সে| কোনো শব্দ আটকে গেলেও সে তৎক্ষণাৎ সংশোধন করে নিচ্ছে| বাংলাই বলছে ফের| নিজের ভাষা বারবার ধোয়ামোছা করে নিজেকেই চমৎকৃত করছে|
সেজেছিল সে বাঙালিনীর মতো| বড় চুলে একটি লাল টকটকে গোলাপ|তার যা বয়স তাতে সে বেশ বুঝে গ্যাছে, সে যে স্কুলটিতে আজ সে এসেছে সেখানকার বাচ্চারা কেউ তার মতো স্বাভাবিক বা স্বচ্ছন্দ নয়| নয় কেউ কথা বলতে পারে না নয় কেউ কমবুদ্ধি বাচ্চা| কিন্তু অবাক হলাম যখন দেখলাম, বাচ্চা মেয়েটি পরম শ্রদ্ধায় খাবারের ঠোঙাগুলো তার ছোট্ট ছোট্ট দুহাতের মুঠোয় ভরে দিচ্ছে এই দুবলা বাচ্চাগুলোকে| দেয়ার ভঙ্গিটি অনেকটা ঐ আঁজলা ভরে দেবতার পায়ে পুজোর ফুল দেয়ার মতো| বিলোনো বা দক্ষিণ্য দেবার মত নয়| আমার বাচ্চাগুলো তো কথা বলতে পারে না| এ মেয়েটি কিন্তু তাদের সাথে কত কথা বলে যাচ্ছে| এমনকি সে যে বিশেষ ধরনের বাচ্চাদের সাথে কথা বলছে চোখে কোথাও এই ছাপ নেই তার|
বাচ্চার প্রতি বাচ্চার এই সম্মান আমার বাচ্চাগুলোকে অনেকখানি যে উৎসাহ দিয়েছে বুঝলাম| আমার বিশ্বাস, এই বাচ্চাটির মায়ের মতো বাকি অভিভাবকরা যদি তাদের স্বাভাবিক সন্তানদের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বাচ্চাদের সাথে সহজ মেলামেশার সুযোগ দেন তাহলে দেশের পিছিয়ে পড়া শিশুরা একদিন ঠিক ওপরে উঠবে| একদম আকাশ পর্যন্ত| সেদিন সবার চুলে বাঁধা গোলাপ লাফাবে ফটাফট|
ধাঁধা লাগবে —-বোঝা যাবে না কে পিছে কে আগে| এক দেশেতেই সমুদ্র পাহাড় — কোনটিরে বাছি? বাছতে গিয়ে নতুন করে বাঁচি|
ধাঁধায় কী উল্লাস! ব্যাপক|
★★ লেখাটি দিলাম সেই সব বাবা ও মাকে যাঁরা বিশ্বাস করেন —সব শিশুর সমান সম্মান| বাঁচার অধিকারও সমান| ক্রান্তিকাল| সরকার ভুলেছেন পিছিয়ে যাওয়া শিশুর কথা| তাদের অনলাইন না অফলাইন? দাঁতের পর দাঁত চাপি| আপনারা ভুললে কষ্ট পাব| ★★