দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি বিশেষ ৩
তিন মাথার মোড়। শীতের কুয়াশা পাতলা হয়ে মোড়ের খাবারের দোকানটা দেখা যাচ্ছে।
‘আঃ আঃ আঃ’
আওয়াজ টা শুরু হতেই কাছের বুড়ো অশ্বত্থ গাছের দিক থেকে একদল কাক আর শালিক ইংরেজী ‘ভি’ অক্ষরের মত দল বেঁধে নেমে এল দোকানের সামনে, রাস্তার উপরে।
এত সকালে রাস্তায় গাড়ি নেই। কা কা, কিচির মিচির শব্দ করে তারা দোকানদারের ছড়িয়ে দেওয়া গত রাতের বাসি মিষ্টির টুকরো, ভাজাভুজি খেতে থাকল। কেউ কেউ খাবার ঠোঁটে নিয়ে ফের উড়ে এসে বসল অশ্বত্থের ডালে।
‘তুমিও তো যেতে পার। ওদের মত কিছু খাবার কুড়িয়ে আনতে।’
পাশের নিম গাছটার উঁচু ডালে বসা কালো দাঁড়কাক তার কাকিনীকে বলল, ‘আমি খেটে খাই। ভিক্ষা করে খাই না।’
‘ঠিক আছে, কিন্তু বাচ্চাগুলোর জন্যও তো আনতে পারতে।’
‘বাচ্চাগুলো কি না খেয়ে আছে? আমি ওদের জন্য শিকার ধরে আনি না? তোর জন্যও তো এটা-ওটা আনি।’
‘হ্যাঁ, তা আনো।’
‘তাহলে? ওই বাসি খাবার খেলে বাচ্চাদের পেট গরম হবে, এটা বুঝিস না? ‘
‘বুঝলাম। কিন্তু ওরা না হয় ওগুলো খেত না। আমরা তো খেতে পারতাম! খাবারের জন্য হন্যে হয়ে তোমাকে বেশীদূর ঘুরতে হতো না।’
‘খাবারের খোঁজে দূরে দূরে উড়ে বেড়াই বলে ডানাদুটো এখনো শক্তপোক্ত আর চোখদুটো উজ্জ্বল আছে। তীক্ষ্ম আছে ঠোঁট। নাহলে কবেই ল্যাদ খেয়ে মুটিয়ে যেতাম। উড়তে পারতাম না।’
তারপরেও কাকিনীর আক্ষেপ যায় না, ‘তাও! সবাই কত-ও-ও খাবার নিয়ে আসছে!’
‘দোকানদার পুরনো, বাসি খাবার ফেলে তাক পরিষ্কার করছে। না হলে সকালের নতুন খদ্দের আসবে না। নোংরা, বাসি দুর্গন্ধে ফিরে যাবে। আর তোরা ভাবছিস দোকানদার কত দানবীর মহানুভব!’
নীচের ঝোপে একটা মাকড়সা গতকাল থেকে ধৈর্য্য ধরে জাল বুনে চলেছে। আজ সকালে জালে আটকেছে একটা মথ।
তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দূরে গাছের গোড়ায় একটা ইঁদুর দেখে দাঁড়কাক তার ডানাদুটো ভাসিয়ে দিল বাতাসে।