দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি বিশেষ ২
★ বাচ্চারা কত বয়সে কথা বলতে শেখে?
দু’মাস বয়সের পর থেকেই বাচ্চারা বিভিন্ন রকম শব্দ করতে শুরু করে। মোটামুটি ভাবে ছ’মাস বয়স থেকে ‘বা, দা, পা’ এবং ন’মাস বয়সে ‘মামা, বাবা’ এভাবে বলতে শুরু করে। যদিও এগুলো তারা তখন অর্থ বুঝে ব্যবহার করে না। এক বছরের কাছাকাছি বয়স থেকে এক দু’টো শব্দ বুঝেশুনে ব্যবহার করতে শুরু করে। ‘আমি, তুমি’র ব্যবহার শুরু হয় দু’বছর বয়সের পরে। সব বাচ্চাই একই বয়সে সবকিছু শিখবে এমনটা নয়। বয়সের অল্প এদিক-ওদিক খুব স্বাভাবিক। পাশের বাড়ির বাচ্চা কত বয়সে কথা বলার শিখলো সেটা ভেবে খুব বেশি চিন্তিত হবেন না। যদিও অনেক বেশি বয়স অব্দি কথা বলা না শিখলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আঠারো মাস বয়স পেরিয়েও যদি একটিও শব্দ না বলতে শেখে সেটা নিশ্চয়ই চিন্তার।
★ কথা না বলতে শেখার সমস্যাগুলোকে কীভাবে শ্রেণীবিভাগ করব?
প্রথমেই দেখতে হবে বাচ্চা শুরু থেকেই কথা বলা দেরিতে শিখছে নাকি আগে কথা বলতে পারতো এখন ধীরে ধীরে কথা বলা ভুলে যাচ্ছে। তারপর দেখতে হবে শুধু কথা বলাতেই সমস্যা নাকি বসতে শেখা, দাঁড়াতে শেখা, বাবা-মাকে চিনতে শেখা ইত্যাদি সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছে। শারীরিক বা ব্যবহারগত অস্বাভাবিকতা গুলিকেও মাথায় রাখতে হবে।
★ কী কী কারণে বাচ্চারা দেরিতে কথা বলতে শেখে?
এটা আসলে খুব জটিল একটা বিষয়। কাজেই বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। বাচ্চার জন্মের পরপরই গুরুতর কোনও অসুস্থতা দেখা দিলে, বাচ্চার জন্মের পরে কাঁদতে দেরি হলে, মাথায় ইনফেকশন, মাথায় আঘাত, সাংঘাতিক জন্ডিস, বিভিন্ন সিনড্রোম (নানারকম শারীরিক ও মানসিক ত্রুটির সমাবেশ) ইত্যাদিতে বাচ্চারা দেরি করে কথা বলে। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত দেরিতে কথা বলার সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যান্য দিকগুলিও দেরিতে হয়। শুধুমাত্র দেরিতে কথা বলার সমস্যা হলে বাচ্চা কানে ঠিকমতো শুনতে পায় কিনা ভাবতে হবে। বাচ্চা যদি জন্ম থেকেই খুব অল্প শব্দ শোনে বা তার সাথে কথা বলার মত কেউ না থাকে সেটাও দেরিতে কথা বলতে শেখার অন্যতম কারণ। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে অটিজম। অটিজম আসলে একটা বিশাল ছাতার মতো জিনিস। এই স্বল্প পরিসরে অটিজম নিয়ে আলোচনা করা প্রায় অসম্ভব। যদি একটা বাচ্চা সারাদিন নিজের জগত নিয়েই থাকে, অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে না পারে, পরিচিতদের মুখের দিকে স্বাভাবিকভাবে না তাকায় বা না হাসে, সারাদিন একইরকম খেলা খেলে বা একইরকম গান শোনে এবং একটু অন্যরকম শব্দেই ভীষণ বিরক্ত হয় তাহলে অটিজমের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
★ বাচ্চা শুনতে পায় কিনা কিভাবে বুঝবো?
নবজাতক অল্প শব্দেই চমকে ওঠে বা চোখ বন্ধ করে ফেলে। কখনো হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে শব্দ করলে চুপ করে যায়। তিন থেকে চার মাস বয়সে শব্দের উৎপত্তিস্থলের দিকে ঘুরে তাকায়। বারো মাস বয়সে বাচ্চাকে নাম ধরে ডাকলে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে। যদি মনে হয় বাচ্চা স্বাভাবিক শব্দে সাড়া দিচ্ছে না তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
★ দেরিতে কথা বলার চিকিৎসা কীভাবে হবে?
পুরোটাই নির্ভর করছে দেরিতে কথা বলার কারণ-এর ওপর। যদি কানে কম শোনার সমস্যার জন্য কথা বলতে দেরি হয় তাহলে নাক-কান-গলার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। কানের লতি থেকে শুরু করে স্নায়ু এবং মস্তিষ্ক অব্দি বিভিন্ন জায়গাতে সমস্যা হতে পারে। কানে শোনার জন্য বিভিন্ন ধরনের হিয়ারিং এইড এবং ইমপ্ল্যান্ট পাওয়া যায়। প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। সিনড্রোম বা জন্মগত সমস্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিতে বিভিন্ন স্পেশালিটির ডাক্তারের সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। কথা আটকে যাওয়ার সমস্যা একটি সম্পূর্ণ অন্য বিষয়। তার চিকিৎসাও অন্যরকম।
★ বড্ড জটিল হয়ে গেল। এই যে আমরা সাধারণভাবে বাচ্চাদের অল্পবিস্তর দেরিতে কথা বলতে দেখি সেগুলোর সমাধান কী হবে?
সমাধান করার আগে দেখে নেওয়া দরকার সত্যিই সমস্যা আছে কিনা। প্রতিটি বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তার নিজের মতন। পাশের বাড়ির বাচ্চা ‘এত মাসে এই শিখে গেছে’ এটা ভেবে অহেতুক মন খারাপ করবেন না। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের নির্দিষ্ট কোনো কাঁটা মাপা সময় হয় না। মোটামুটিভাবে একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যারা থাকে তারা সবাই স্বাভাবিক। জন্ম থেকেই ইঁদুর দৌড়ে নাইবা নামলেন…