মে মাসে ল্যান্সেটে কোভিড জনিত মৃত্যু নিয়ে একটি বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা প্রকাশ করেছে। আলোচক (অমিতাভ ব্যানার্জি ও অন্যরা) ইংল্যান্ডে কোভিড মৃত্যুর বিভিন্ন দিক আলোকপাত করেছেন। নানারকম শ্রেণী বিন্যাস করে এই রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রকৃত প্রভাবের অনেক চিত্তাকর্ষক দিকের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে কোভিড 19 কতগুলি বিশেষ ধরনের জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। আলোচ্য লেখাতে দেখানো হয়েছে যে যদি আনুষঙ্গিক অসুস্থতার বিষয়টি উহ্য,রাখা হয় তাহলে কোভিভে ফ্যাটালিটির গড় হার 0.27-10%। ইংল্যান্ডের 28 মার্চ থেকে 3রা এপ্রিল এই এক সপ্তাহে 6000 বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে, যাদের 2500 জনের কোভিড 19 জীবাণু ছিল না। এই তথ্যটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এই 2500 অতিরিক্ত মৃত্যু থেকে মনে হয় যে হয়তো কোভিড সংক্রান্ত কোন পরোক্ষ কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
ইংল্যান্ডে 30 বছর বয়স থেকে 70 বছর বয়সী মোট 1639 জন মানুষ COPD র জন্য মারা যেতে পারেন। যদি কোভিড ভাইরাসে তারা আক্রান্ত হন তাহলে 164 টি অতিরিক্ত মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই মডেলে 66 বছর গড় বয়স, রিলেটিভ রিস্ক 2 ও 10% সংক্রমণ সম্ভবনার নিরিখে 1-বছরে মৃত্যুর সম্ভাবনা কষা হয়েছে।
ঠিক একইভাবে কোভিডে আশঙ্কা-যুক্ত প্রতিটি উপগোষ্ঠীর 1-বছরে মৃত্যু সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখে গবেষণাপত্রটি বলেছে যে যদি উপযুক্ত চিকিৎসার বন্দোবস্ত না হয় তাহলে 146946 টি অতিরিক্ত মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে। উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে মৃত্যু সংখ্যা কমে 18374 টি হতে পারে। অর্থাৎ, প্রতিরোধ যোগ্য মৃত্যুর সংখ্যা 18374 টি যাদের HARQOL (diminished health related quality of life) হলেও জীবন দীর্ঘ্স্থায়ী হতে পারতো।
ভারতের ক্ষেত্রে এই মডেলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবু, এ থেকে একটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে যে কোভিড মোকাবিলায় আমাদের কি করতে হবে, বিশেষতঃ যখন প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে।
এই সমীক্ষা ও অন্য আরেকটি সমীক্ষা বলেছে যে উপসর্গযুক্ত রোগীর প্রায় শতকরা 20 জনের ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক জটিলতা না থাকা সত্বেও কোভিড মারক ব্যাধি হয়ে উঠতে পারে, আবার উল্টোদিকে আনুমানিক 80 শতাংশ মানুষের শরীরে রোগ জীবাণু থাকলেও তা উপসর্গহীন হতে পারে।
এই তথ্যের আলোকে কোভিড রোগীর নতুন শ্রেণী বিন্যাস করা সম্ভবঃ
1) উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ যাদের এক বা একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অসুখ আছে। (মোট আক্রান্তের 80%,)। করোনা এদের মূল সমস্যা নয়, মূল সমস্যা হল করোনা পূর্ববর্তী কোন না কোন স্বাস্থ্য সমস্যা যথা হাঁপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার বা ক্যানসার চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা, ইত্যাদি। সুতরাং এদের ক্ষেত্রে করোনাই এদের আনুষঙ্গিক সমস্যা, মূল সমস্যা তাদের দীর্ঘ্স্থায়ী অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা। সাধারণ রোগীর মত এদের চিকিৎসা সম্ভব, অতিরিক্ত অক্সিজেন এদের দরকার নেই। শুধু স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য তারা সংক্রামক হয়ে উঠতে পারে বলে স্বাস্থ্যকর্মীদের অতিরিক্ত প্রতিরোধক্ষম পোশাক প্রয়োজন।
2)উপসর্গ যুক্তঃ (20%)
ক) কম উপসর্গ যুক্ত রোগী, যাদের এক বা একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অসুখ আছে।(95%)
খ) মারাত্মক উপসর্গ যুক্ত রোগী এক বা একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অসুখ আছে। (5%)
3) মারাত্মক উপসর্গ যুক্ত রোগী যাদের কোন ঝুঁকিপূর্ণ অন্য কোন অসুখ নেই (20%)
এই শ্রেণী বিন্যাস শুধু প্রশাসনিক সুবিধার জন্য করা যেতে পারে। এই বিভাগ এই জন্য দরকার যে দেশে শয্যা সংখ্যা কম, অক্সিজেন সরবরাহ করা যায় এমন শয্যার সংখ্যা সীমিত ও ভেন্টিলেটর খুবই কম। প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে যথাযথ শ্রেণীবিভাগ করতে পারলে একটি গ্রহণযোগ্য SOP তৈরী করা সম্ভব যাতে কোন ঝুঁকিপূর্ণ রোগী বঞ্চিত না হন। তাছাড়া, প্রভাব খাটিয়ে বেড দখল করার প্রতিযোগিতা থেকেও প্রশাসনকে মুক্ত করা যেতে পারে।