শারীর বিদ্যা যাকে আমরা বলি অ্যানাটমি (এর মধ্যে আসে দৃশ্যমান গোদা শরীর থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম কোষ অব্দি), ভয় যেটা মানুষ তথা বেশিরভাগ প্রাণীর সবচেয়ে আদিমতম গুণ (এমনকি বিবর্তনের পথে পথে হেঁটে আজো যেটা বর্তমান), তিন নম্বর এবং মাঝখানে হলো খবর (তার মধ্যে আসবে সব ধরনের খবর – সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পিএনপিসি থেকে খবরের কাগজ, চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল ইত্যাদি সব – এটা নিয়েই মূলতঃ লেখার উদ্দেশ্য), ব্যবসা (না চাল ডাল আলু ইট বালির ব্যবসা বলতে যা বোঝায় ঠিক সে অর্থে নয়, তবে এর মধ্যে এগুলো সব কিছুই আসবে, সাথে আসবে আরো নানা ধরনের পণ্য, এমনকি পণ্য হিসেবে মানুষও!), এরপর নির্বুদ্ধিতা (যেটা এই লেখার ধারাবাহিকতায় আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠার কথা, জানি না কতটা বোঝাতে পারবো) – এই সব মিলিয়ে রান্না করার চেষ্টা করবো একটি অপাচ্য বিস্বাদ জগাখিচুড়ী।
বিষয়ের ব্যাপ্তি এতোটাই বেশি যে, বেশ কয়েকটি পর্বে ভাগ করে লিখতে হতো। তাও হয়তো শেষ করা যাবে না। কিন্ত সোজা কথা অতটা লেখার মত ধৈর্য আমার নেই। আর পড়ার কথা তো ছেড়েই দিলাম। আমরা এখন খবরের হেডলাইন ছাড়া বেশি কিছু পড়ি না। ভেতরে কি থাকলো না থাকলো – সেসব পড়ার/ভাবার সময় নেই।
আর সেটাই এই লেখাটি লেখার বড় কারণ!
এবার শারীরবিদ্যার যে সামান্য জায়গা এই লেখার দরকার (পুরো শারীরবিদ্যা বলা বা পড়ার জন্য বোধহয় কয়েকটি জীবনকাল দরকার) বলে মনে হলো, সেটুকু প্রথমেই বলে নিই। কারণ, ওই জ্ঞান টুকুনই আমার লেখার সম্পদ।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অসামান্য সব শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে ভেসালিয়াসের শরীর ব্যবচ্ছেদ করে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ, ডারউইনের বিবর্তনবাদ … তারপর ও বহু মনীষীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমাদের হাতে শারীরবিদ্যার যত খুঁটিনাটি বিষয় আয়ত্তে চলে এসেছে – সেটা নিজে একটা বিশাল অধ্যায়। শতাব্দী বিস্তৃত তার পরিধি। এখন বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি কোষের ডিএনএ অব্দি মানুষের জানা। অন্তহীন সেই জানাকে নিখুঁত করার চেষ্টাও। খুব সামান্য আমরা এক একজন মানুষ – সেই জ্ঞান সমুদ্রের কাছে।
শুধু মাত্র মানুষের একটা শরীর- আর তাই নিয়ে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম পড়াশোনা চিকিৎসা বিদ্যা!
সবচেয়ে বেশি তার ভলিউম! সবচেয়ে বড় সাধনার বিষয় তাকে জানা! বিজ্ঞান ধর্মগ্রন্থ থেকে সহজেই শরীর চেনে না বলেই, এতো সমস্যা। না হলে জাস্ট বলে দিলেই হতো – অমুক জায়গায় অমুক থাকতে পারে!
সাধারণের জন্য খুব সহজ করেও যেটা বলা একরকম অসম্ভব। তবু .. আমাদের মস্তিষ্কের মাঝামাঝি এবং নিচের দিকে, যাকে আমরা বলি টেম্পোরাল লোব তার আশেপাশে, যেটা জন্মগত ভাবে ডায়েনসেফালনের পার্ট, এবং বিবর্তনের ফলশ্রুতিতে এখনো মানব মস্তিষ্কের সবচেয়ে আদিমতম অংশ, যাঁর কাজকর্ম এখনো অনেকটাই অজানা, সেই লিম্বিক সিস্টেমেরও নানা অংশের মধ্য থেকে একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে কথা বলবো।
বলে রাখি, এই লিম্বিক সিস্টেম হলো মানুষের সবচেয়ে প্রিমিটিভ অংশ, যেটা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সমস্ত আদিমতম গুণাবলীগুলোকে!
তার মধ্যে পড়বে সব ধরণের অনুভূতিগুলো, তার মধ্যে পড়বে সব আবেগ, ভয়, দুশ্চিন্তা, ঘুম, উদ্বেগ সহ নানা রকম শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – সেটা হলো মেমোরি বা স্মৃতি। লিম্বিক সিস্টেম এর বিভিন্ন অংশ- যেমন amygdala, hypothalamus, hippocampus, parahippocampal gyrus, thalamus, ইত্যাদি।
বিবর্তনের ঠেলায় পড়ে তারপর আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটেছে অনেক, নতুন নতুন অংশের কাজ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে তার সাইজ। এবং এই বিকশিত অংশই এখন আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে আছে।
এবার আসি – সবচেয়ে ছোট এবং সাইজে almond-এর মত একটি আদিম অংশ নিয়ে। যার নাম – amygdala।
আমাদের মস্তিষ্কের ডান এবং বাম- দুই গোলার্ধে এমন দুটি amygdala আছে। যার হাতে রয়েছে – কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। লিম্বিক সিস্টেমের বাকি অংশ গুলোরও যেমন নিজ নিজ কাজ আছে, অন্যের সাথে মিলে মিশে কাজ করার দায়বদ্ধতা আছে, বিরোধিতা করার কাজ আছে, তেমনি amygdalaর ও রয়েছে নির্দিষ্ট কাজ, মস্তিষ্কের অন্য জায়গার সাথে তথ্য দেয়া নেয়া করা, এবং কখনো সাপোর্ট কখনো বিরোধিতা করার বাধ্যবাধকতার রাজনীতি। এর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে – ব্রেনের প্রায় সব জায়গার সাথে।
এবার, এর নিয়ন্ত্রণে কি থাকে?
ভয়, ঘুম, উদ্বেগ, আরো নানা রকম আবেগ ও তাঁদের বহিঃপ্রকাশ। এর হাতেই আছে রাজনৈতিক মতাদর্শের যোগ, আছে লিঙ্গ ভেদে বৈষম্য, আছে সামাজিক জীব হবার কৌশল, আছে সুস্থ থাকার উপায়!
একটা উদাহরণ দিই – মস্তিষ্ক একটি সুপার কম্পিউটার। তার কাছে কোন একটি তথ্য এলো। সেটা ইনপুট। আমাদের শরীরের সমস্ত জায়গা থেকে পৌঁছাবে তথ্য। কোথায়?
সেটা হলো – সব ধরনের নার্ভ যাদেরকে ডাকহরকরা বলা যায়, তারা নানা পাক দণ্ডি বেয়ে থ্যালামাস নামক প্রাচীন নিউক্লিয়াসে পৌঁছে দেবে তথ্য। সেই তথ্য বিশ্লেষণ এর জন্য থ্যালামাস তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে যাবে কর্টেক্সএ।
টার্মটা বুঝতে অসুবিধা হবে তবু বলি, কর্টেক্স বলে ব্রেন এর যে অংশ আমরা হামেশাই দেখতে পাই ছবিতে অসংখ্য উচু নিচু জায়গা, সেই বাইরের অংশ। যেখানে সাধারণত ছ’টি লেয়ারে সাজানো থাকে নিউরন।
এবার এই কর্টেক্স এ (যেটাকে অনেকগুলো এরিয়াতে ভাগ করা হয়েছে কাজ অনুসারে) আমাদের শরীরের সমস্ত কাজকর্ম-কে কখন কোথায় কিভাবে কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে তার ম্যাপ রয়েছে, সেখানে ইনপুট পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ নির্দিষ্ট জায়গায় আউটপুট হিসেবে যাবে। তেমন ই একটি আউটপুট সেন্টার এই লিম্বিক সিস্টেম এবং অবশ্যই amygdala. বাকিগুলো hypothalamus, hippocampus ইত্যাদি।
এবার এই আউটপুট সেন্টার কিন্ত মোটেই একা কাজ করবে না। সে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছে ব্রেনের বাকি প্রত্যেকটি অংশের সাথে। যেমন – দেখার জায়গা, শোনার জায়গা, ঘ্রাণ নেয়ার জায়গা, স্পর্শের জায়গা ইত্যাদি।
আর কি করছে ?
দু’টো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এক্ষেত্রে বলবো – সেটা হলো মেমোরি এবং ভয়/আবেগ/উদ্বেগ।
এবার মেমোরি এবং ভয়/আবেগ/উদ্বেগ – শুনতে পুরোপুরি আলাদা মনে হলেও, অবাক ব্যাপার, এঁদের মধ্যে একটি জটিল সম্পর্ক আছে।
কি রকম?
মেমোরি হলো সেই জিনিস – বিবর্তনের শুরু থেকে যাকে প্রতিনিয়ত আমরা অর্জন করেছি, সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছি, জেনেটিক মডিফিকেশনের মাধ্যমে অপত্যদের মধ্যে সঞ্চারিত করেছি, তাকে প্রতিদিন বেঁচে থাকার কাজে, ভালো থাকার কাজে লাগিয়েছি।
তাহলে বলা যায় যে – এটা শিক্ষা!
সার্টিফিকেট নেই ভাবছেন?
আছে! সেটিও আছে!
কার কাছে?
Hippocampus এর কাছে!
সার্টিফিকেট দিয়েছে কে?
বলতে পারেন – পাশ ফেল করিয়ে মেমোরিকে সেই সার্টিফিকেট দেয়াও এই লিম্বিক সিস্টেম বা amygdala/ hypothalamus/hippocampus এর কাজ!
এবং পাশ ফেল – দুটোরই সার্টিফিকেট দেয়া হয় কিন্তু!
তারা সবই মেমোরি!
আমাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব বলে যে অংশ আছে, তার সাথে মিলে মিশে এই মেমোরি আমাদেরকে দেয় – লজিক্যাল চিন্তা ভাবনা করার উপাদান, কখন কি করা উচিত বা অনুচিত, সংরক্ষিত রাখে দরকারি সব তথ্য ভবিষ্যতের জন্য – স্মৃতি থেকে।
আইনস্টাইনের কথা ভাবুন – প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স সহ এই লিম্বিক সিস্টেম নাকি অনেকটাই আলাদা ছিল তাঁর ।
জ্ঞানী তো আর এমনি হননি !
আরেকটি বিষয় হলো – ভয়।
এই ভয় হলো একটি আবেগ!
অথচ এই ভয়, যাকে আমরা এক একজন এক এক রকম করে দেখি, আলাদা আলাদা জিনিসে অনুভব করি – সেটা কিন্ত শুধুই এড়িয়ে যাবার জিনিস নয়।
মনে করে দেখুন, কোন একটা কারণে (সে যাই হোক, আরশোলা থেকে সাপ টিকটিকি হাতি ঘোড়া বাইসন, মেঘের ভয়, বেতের ভয়, যুদ্ধের ভয়, মারামারি কাটাকাটি রক্ত, জল, শূন্যস্থান, চৌম্বকক্ষেত্র ইত্যাদি ইত্যাদি সব) ভয় পেলে আপনি কি করেন?
বা ভাবুন, সেই আদিমতম মানুষটির কথা।
কি করতো যখন বজ্রপাত হতো?
যখন বন্য প্রাণী তেড়ে আসতো?
যখন পরিবেশের প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই করতে হতো?
ভাবুন, এখন উন্নত মানুষ হিসেবে আপনি কি করেন যখন অন্ধকারের ভয় পান, ভুতের ভয় পান?
কি করেন যখন ভয়ের জিনিসটা আপনি সামনে দেখতে পান বা আপনার কাছে অদৃশ্য?
কি করেন – যখন একটা জিনিসে আপনার ভয় এমনই হয় যে আপনার কাছে সেটা ফোবিয়া হয়ে দাঁড়ায়?
কি ভাবেন, যখন কেউ বলে এই না করলে এই ভয় আছে কিন্ত!
কি করেন যখন কেউ বলে – অমুক দিন অমুক কাজ করো, ভয় চলে যাবে?
সাথে ভাবুন, ভয় দূর করতে আপনি কি কি করেন।
বিশদে বলতে যাবো না – তবে এই ভয় থেকেই সৃষ্টি হয়েছে/সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে দমিয়ে রাখার/শোষণ করার নানা উপায়।
এবং সেটাও কিন্ত করেছি আমরা – এই মানুষরাই!!
অবাক হলেন – এটাই সত্যি!
আমাদের মধ্যে যাঁরা অন্যের আগে এই ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছি, তাঁরাই অন্যদের ভয় দেখিয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষা করেছি।
ছোটবেলায় সবাই করেছেন এটা – হঠাৎ আড়াল থেকে একলাফে সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন! অন্যরা ভয় পেয়েছে।
আপনি কিন্ত ওটা আগেই শিখেছেন! ভয় পেয়েই!
এই ইতিহাস মানব সভ্যতার সবচেয়ে ঘৃণিত অধ্যায়।
এবং সবচেয়ে পুরোনো অধ্যায় – আমরা ভয় পাই এবং ভয় দেখাই!
না, লজ্জা পাওয়ার ব্যাপার নয় সেটা।
আমরা বলি – তিনটে বেসিক রিঅ্যাকশনের কথা।
ভয় পেলে যেটা সাধারণতঃ দেখা যায়। কি তারা?
Flight fight freeze.
হয় আপনি পালিয়ে যাবেন বা লড়াই করবেন, অথবা নিশ্চল হয়ে যাবেন।
ধরা যাক, একটা আরশোলা। তিন বন্ধু আপনারা। আপনি দেখার সাথে সাথেই চিৎকার করে দৌড়!
অন্যজন সেটাকে ধরে বা তাড়িয়ে বা মেরে দেবে।
অন্যজন হয় সাহসী বা ভীতু – কিন্ত সে কিছুই করবে না। নিশ্চল হয়ে যাবে।
এবার ভাবুন, তিনজনের ক্ষেত্রেই ইনপুট হলো আরশোলা র ভয় ।
তিনজনের ই থ্যালামাস হয়ে ইনপুট কর্টেক্স এ গেল , সেখান থেকে তথ্য বিশ্লেষণ হয়ে যাবে amygdala তে । সেই অনুযায়ী মস্তিষ্কের বাকি অংশ এই তিন ধরনের রিঅ্যাকশন ঘটাবে ।
এই ভিন্ন রিঅ্যাকশন এর কারণ হতে পারে –
যে পালিয়ে গেল তাঁর কাছে আরশোলা হতে পারে নোংরা /কামড় দেয় এমন প্রানী/তাঁর জাস্ট অস্বস্থি হয় ।
যে ধরতে /তাড়াতে চাইলো – তাঁর কাছে আরশোলা কিছুই নয় । তাড়া দিলে বা একটা ঝাঁটা দিয়ে মারলে চিৎপটাং।
অন্যজনের কাছে – আরশোলা কিছু করবে না / করলে ও কি করবে জানা নেই / বা অতিরিক্ত ভয়ে পাথর হয়ে যাবার মত কিছু।
এবার তিনজনই কিন্ত অতীত অভিজ্ঞতা থাকার /না থাকার কারণে এই ভিন্নধর্মী রিঅ্যাকশন দেবেন।
এই যে ভয় ও তার থেকে মেমোরি তৈরি হওয়া , তার থেকে প্রতিনিয়ত শিখে চলা – এটার জটিল নিয়ন্ত্রণ ই হলো গোদা বাংলায় amygdala তথা লিম্বিক সিস্টেম এর একটি আসল কাজ ।
মনে করুন , পাভলভের সেই কুকুরের পরীক্ষা । মনে করুন – little Albert experiment .
এই ভয় পাবার প্রক্রিয়া কে বলা হয় কন্ডিশনিং ।
এবার সেটা হতে জানা কোন জিনিস থেকে ( যেমন ইলেকট্রিক তার ধরলে শক খাওয়ার ভয়) ,
হতে পারে অজানা কিছুর ভয় ( যেমন ভুত প্রেত ভগবান গ্রহের ঘূর্ণন ইত্যাদির ভয়) ।
এঁদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে ভয় পাবার যুক্তি আছে ( যেমন ধরুন বিষাক্ত সাপ / ভূমিকম্প/বোমা গুলি ) , কিছু কিছু পুরোটাই অযৌক্তিক ( যেমন অন্ধকারে ভুত থাকে / ভগবান কে খারাপ কথা বলা/নেতাকে গালি দিলে চ্যালারা পেটাবে/ অমুক বাবার তাবিজ কবজ ঠিকমতো ব্যবহার করতে হবে না হলে ক্ষতি হবে / অমুক গ্রহ নক্ষত্রের ভয়ে তমুক উপবাস বা পাথর ধারণ করতে হবে / দশ বার হাত না ধুলে জীবানু ঢুকবে ইত্যাদি )।
আরেকটি বিষয় বলে রাখা ভালো – এই ভয় এবং তার প্রতি আমাদের এই যে ভিন্ন ভিন্ন রিঅ্যাকশন , সেটা প্রতিফলিত হয় আমাদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনে । নানা রকম হরমোন ( অ্যাড্রিনালিন / অক্সিটোসিন/ কর্টিসল) ও তাঁদের জটিল কাজকর্মের প্রভাব পড়ে আমাদের ফুসফুসে, হৃৎপিন্ডে , হাতে পায়ে , মাংসপেশী তে, রক্ত চলাচলে , শরীরের নানা রকম রাসায়নিক পরিবর্তনে ! ( হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, জোরে শ্বাস নেয়া , দৌড়ে পালানোর সময় পেশীর অতিরিক্ত সংকোচন প্রসারণ)
তার ফলে বাহ্যিক যে পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই , সেটা স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে – অর্থাৎ সেটা মেমোরি তে কনভার্ট হতে পারে।
লেখা বড় হয়ে যাবার ভয়ে এইখানে শরীরবিদ্যা নিয়ে কচকচি বন্ধ করবো ।
মাথায় রাখতে হবে – এই ভয় এবং তার থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত শিখে চলা , সেই অনুযায়ী পাল্টে যাওয়া , এটা বিবর্তনের একটি বড় প্রমাণ ।
মোদ্দাকথা , ভয় শুনতেই শুধু নেগেটিভ , আসলে এ আমাদের এক আদিমতম এবং দরকারি ইমোশন । অনেক সময় পজিটিভ ও !
Amygdala নিয়ে বা লিম্বিক সিস্টেম নিয়ে আর বেশি জানতে চাইলে – একটু খানি পড়তে হবে।
এবার আসবো – খবর নিয়ে ।
দেখবেন- এই সময়ে আমাদের সব মানুষের একটা ভয়ানক অসুখের মত পরিবর্তন হয়েছে ।
সেটা হলো খবর নিয়ে/ খবরের দ্বারা ।
পৃথিবীর সব কিছুই এখন খবর । ভালো মন্দ সব ! হেডলাইন না দেখলে আমাদের হাত নিশপিশ করে, মাথা কাজ করে না, দিন ভালো যায় না , রাতে ঘুম হয় না , নিজেকে অসামাজিক লাগে , বিচ্ছিন্ন লাগে ।
টয়লেটে যাওয়া থেকে শুরু করে পরেরদিন ফের টয়লেটে কাটানো সময় অব্দি – আপনি আমি আমরা খুঁজে চলেছি খবর !
প্রেম ভালোবাসা বন্ধুত্ব চিটিং দান ধ্যান নায়ক নায়িকা র খোলা শরীর যুদ্ধ বোমা গুলি খুন চুরি ডাকাতি রাহাজানি ধর্ষণ তন্ত্র মন্ত্র জ্যোতিষ শাস্ত্র শেয়ার বাজার সোনার দাম করোনা ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস পরিযায়ী ভূমিকম্প সুনামি গণেশের দুধ খাওয়া হঠাৎ অবতার আবিষ্কার হওয়া ভুত প্রেত রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতি দলাদলি গলাগলি দাঙ্গা হাঙ্গামা পুরষ্কার জেতা হারা পেশা নেশা – সব এখন খবর !!
ভালো করে ভেবে দেখুন – আপনি এখন জন্ম নিলে খবর , বেঁচে থাকলে খবর , মরে গেলে খবর , মরার পর ও খবর !
আপনি ঘরে খবর , বাইরে খবর , মন্দির মসজিদ গির্জা প্যাগোডায় খবর !
সেই খবর কোন রূপে আপনার আমার কাছে আসছে – সেটা বড় কথা নয় । কিন্ত আসছে ।
পিএনপিসি থেকে শুরু করে টিভি পেপার ফেসবুক নিউজ পোর্টাল টিকটক – সব আমাদের কাছে নিয়ে আসছে খবর !
মোদ্দাকথা, আমরা এই সময়ের মানুষ – খবর সে ঘেরা হুয়া হ্যায় !
ভাবুন তো একটা দিন – যখন আপনি কোন খবর দেখতে /শুনতে /বুঝতে চান না ?
ভাবুন তো একটা দিন – যখন আপনি আমি সবাই খবর হবার জন্য / খবর দেয়ার জন্য /সেই অনুযায়ী নিজেদের পাল্টে নেয়ার জন্য ভাবছি না ?
আমি ভাবছি / ভাবছেন আপনিও ।
বাচ্চা থেকে শুরু করে চৌবাচ্চা – সবার এখন খবর ই খাদ্য ।
খাদ্য বললাম এই কারণেই – এটা ও মানুষের একটা আদিমতম গুণ !
খাদ্য হলেই তাকে হতে হবে জিভে জল আনা / টেস্টি / টক ঝাল নোনতা – মানে যার যেমন পছন্দ !
আপনার টক তো আমার নোনতা !
ওর মিষ্টি তো অন্য জনের ঝাল ।
খাদ্য মানেই আমাদের পছন্দ হতে হবে ।
এবং সেটাও আমাদের শিক্ষা ।
সেই শিক্ষার পেছনে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে সৃষ্টির পর /জন্মের পর থেকে – সেটা হলো মেমোরি এবং তার থেকে তৈরি হওয়া ভয় !
অপছন্দের খাবার আমরা খাবো না সহজে !
অতএব , আমাদের সেই আদিম ইমোশন ও শিক্ষা কে কাজে লাগিয়ে শুরু হলো খবর তৈরি করা ! কেউ কেউ তো এখন বড় বড় করে বিজ্ঞাপন দেন – খবর আমরা তৈরি করি !
আমাদের খাওয়ানো শুরু হলো !
আমরা গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম।
এ ইতিহাস আজকের নয় !
যে মানুষ যে ভয়কে অতিক্রম করতে পেরেছে বা ভয় থেকে নিজের আখের গোছানোর সুযোগ পেয়েছে – সে ই শুরু করেছে খবর কে খাদ্য হিসেবে /টোপ হিসেবে ব্যবহার করা !
অন্যরা সেই খবর খেয়েছি !
কেউ পুষ্টি পেয়েছি / কেউ বমি করেছি / কেউ হজম করেছি / কেউ টয়লেটে বিসর্জন দিয়েছি !
কিন্ত জিভে জল আনা খবর না খেয়ে থাকিনি !
একটু খেয়াল করে দেখবেন – খবরের উৎস গুলো / ধরণ গুলো / কনটেন্ট গুলো প্রতিনিয়ত টিআরপি দেখে দেখে পাল্টে গেছে / যাচ্ছে !
ওষুধ থেকে শুরু করে সব কিছুই খবর হয়ে এসেছে / আসছে !
আরো সহজে বলছি – আপনি আপনার মোবাইলে একটি জিনিস সার্চ করুন । সোনার দাম / ট্যাক্স ইনফো / ঝড়ের খবর / আবহাওয়ার খবর / পর্ণ ভিডিও/ চ্যাটিং সাইট ইত্যাদি যা কিছু হোক – পরের দিন থেকে দেখবেন আপনার ফেসবুক বা অন্য সাইটের টাইমলাইনে এসে চলেছে একের পর এক জিভে জল আনা খবর !
হ্যাঁ , ঠিক আপনি যেটা খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন !!
আপনি হয়তো জানেন ও – কোন নিউজ পোর্টাল চ্যানেল পেপার কি কি খবর নিয়ে আসছে ।
ভেবে দেখুন – ওগুলো জাস্ট আপনি পছন্দ করেন বলেই গাঁটের পয়সা খরচ করে কেনেন !
না মশাই , কিছুই আপনাকে ফ্রি তে দেয়া হয় না !
যদি ভেবে থাকেন যে , ওই জিভে জল আনা খবর টি ফ্রি তে পেয়েছেন , তাহলে আপনার মত নির্বোধ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই !
রাগ হচ্ছে ?
সবুর করুন ।
এবার প্রশ্ন হলো – কে করছে এই অপকর্ম টি ? কে কোন উদ্দেশ্যে আপনাকে ঠিক ঠিক খবরটি জোগান দিচ্ছেন ?
এখানেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য ।
আপনাকে নিয়ে কেউ ভাবে না – এই যা খুশি খবর পড়েন /শেয়ার করেন / সেই নিয়ে বুদ্ধিজীবী সাজেন – এটা ভাবা হলো এই সময়ে সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা !
মশাই আপনি যতই তুচ্ছ নগন্য হরিদাস পাল হোন না কেন বা যতবড় ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ জ্ঞানী হোন না কেন – আপনাকে নিয়ে ভাবার লোকের অভাব নেই !
আপনি কার পাছায় থাপ্পড় দিলেন না চুমু খেলেন , আপনার রাতে ঘুম হলো নাকি স্বপ্নদোষ হলো , টয়লেট পরিষ্কার হলো কিনা , মূত্র বিসর্জন হলো কিনা , কাকে চোখ মারলেন , কাকে দেখে যৌনাঙ্গে উত্তেজনা তৈরী হলো কিনা , কাকে ভোট দিলেন কার ডিম্ভাত খেলেন , কোথায় হেঁটে এলেন , কি কিনলেন , ব্যাংকে টাকা আছে কিনা , কতটাকা ইনকাম করলেন , কাল কি করবেন – এই সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হচ্ছে মশাই !
হ্যাঁ – সবকিছু !
ব্যবধান শুধু আপনি সেটা হয়তো জানেন বা আপনার অজ্ঞাতসারে ই সেটা ঘটছে !
অবাক ব্যাপার হলো –
আপনি কিন্ত নিজেই সেই তথ্য জোগান দিচ্ছেন !
কে এসব করছে , সেটা জানা বা বোঝার ক্ষমতা বা চেষ্টা আপনার আছে কি নেই – সেটা আপনার বিষয় ।
কিন্ত এটাই এখন প্রমাণিত সত্য ।
ট্রাম্প কিভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছে , আমাদের দেশে কিভাবে সরকার পাল্টে যাচ্ছে , আপনার পকেট নাইজেরিয়ায় বসে কে খালি করছে – এসব জিনিস নিয়ে একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন !
যাকগে এসব । আসল ব্যাপার হলো – এই যে সব খবর ( যে কোন রূপে ) এখন প্রতিনিয়ত আপনি আমি দেখি শুনি শেয়ার করি , তাতে যে ব্যবসায়ীরা ফুলে ঢোল হচ্ছে , এ খবর আশা করি মানতে অসুবিধা নেই !
আজকের পৃথিবীর একজন ধনী মানুষ হলেন জুকেরবার্গ বা গুগলের হেড !
কি করে ?
কি ধনসম্পদ আছে তাঁদের?
এক একটি নিউজ পোর্টাল চ্যানেল পেপার কোটি কোটি টাকা দিয়ে একজন সাংবাদিক পুষছে !
কোন নিউজ চ্যানেল আপনাকে হঠাৎ করোনার ওষুধ আবিষ্কার হয়ে গেছে বলে বিশাল খবর দিল – সে কি করছে আসলে ?
কোন প্রমাণিত তথ্য আছে তাতে ?
নেই ! কিন্ত একটা জিনিস আছে !
সে সাংবাদিক ( বিভিন্ন রকম সাংবাদিক আছে কিন্ত) সারাদিন রাত আপনার আমার কানের কাছে , চোখের সামনে , মগজের কোষে কোষে ছড়িয়ে দিচ্ছে খবর !
সে খবর কখনো সুক্ষ্ম বাক চাতুরীতে সহ্য করার মত , কখনো রাম ছাগলের চেঁচামেচির মতো অসহ্য !
তাঁর কাছে কি লোহা কে সোনা বানানোর পাথর আছে ? দৈব শক্তি আছে ? টাকা ছাপানোর মেশিন আছে ?
প্রশ্ন করুন ।
দেখবেন – ওসবের পেছনে আপনি আছেন !
আমার আলোচ্য বিষয় সেই গোয়েন্দাগিরি নয় ।
আমার বলার কথা হলো – খেয়াল করেছেন কি – একটি খবরকে লোভনীয় করতে কি কি করা হয় ?
আপনার জিভে জল আনতে তাতে কি কি মসলা মেশানো হয় ?
কোন রূপ রস গন্ধে আপনি সেই খবর দ্বারা মোহিত হন ?
সে কি শুধু ভালো ভালো – এই ভেবে ?
না !
এই খবর এবং খবরিয়া – এঁরা ব্যবহার করছে আপনার আদিমতম ইমোশন কে !
হ্যাঁ , তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা ব্যবহার করছে- সেটা হলো ভয় !
আপনি বাড়ির লোকজনের সামনে একটি মেয়ের/ছেলের সাথে কথা বলতে ভয় পান ?
রাতে চ্যাটিং সাইটে আসুন – তাকে পেয়ে যাবেন!
আপনি ব্যাংক ফ্রডের ভয় পান ? সেই সম্বন্ধে সব খবর চলে আসবে বীভৎস হেডলাইন নিয়ে।
আপনি ধর্ষণ বা অন্য পাপ কাজের ভয় পান – রগরগে বর্ণনায় সে খবর এসে যাবে।
আপনি নায়িকাদের কল্পনা করেন অথচ লোকসমাজে বলতে ভয় পান- তাঁর অন্তর্বাসের ছবিসহ বিস্তারিত এসে যাবে।
আপনি তন্ত্র মন্ত্র জ্যোতিষ ইত্যাদি খোঁজ করেন নানা রকম ভয় থেকে – এসে যাবে !
আপনি ঝড় বৃষ্টি যুদ্ধ বোমা গুলি খুন চুরি ডাকাতি লুট রক্তে করোনায় ভয় পান – আপনি ওটাতে ভয় পাবেন বলেই আপনাকে প্রতিনিয়ত ওটাই দিয়ে যাওয়া হবে লোভনীয় হেডলাইনে – অন্য কারো কৃতিত্ব বা অসফলতা হিসেবে !
ভুতের ভয় পান – সিরিয়ালে আপনাকে দেখানো হবে কম্পিউটারে তৈরি করা নকল ভুত !
জ্যোতিষী ল্যাপটপে ঘুরিয়ে দেবেন গ্রহ নক্ষত্রকে – স্টুডিও তে বসে ।
যত রকম উপায়ে ভয় কে কাজে লাগানো যায় – তার সবকিছুই ব্যবহার করা হবে সুচারুভাবে !
আপনি তার থেকে শিখলেন নাকি এড়িয়ে গেলেন নাকি পালিয়ে গেলেন – সেটাও লাগানো হবে খবর ব্যবসার পরবর্তী উপায়ে !
এবার এগুলো নিয়ে আপনাকে আমাকে যেমন বাঁচতে হবে – সেটা সত্যি কথা , কিন্ত এই খবরের দ্বারা আমরা কতটা পাল্টে গেছি /যাচ্ছি/ যাবো , তার উপর কিন্ত নির্ভর করে আছে আপনার আমার তথা প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের বাঁচা মরা , সাফল্য ব্যর্থতা , সামাজিক অসামাজিক হওয়া তথা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ব্যবহার ।
এখানেই ভাবার সময় !
ভাবুন তো – একটা খবর , যা কিছু হোক , সেটা আপনাকে কিভাবে পাল্টে দিচ্ছে ?
ধরা যাক, একজন কালো মানুষ কে গলা চেপে দিয়ে মারা হলো ।
আপনি ভয় পেলেন বা সাদা চামড়ার লোকটিকে সাপোর্ট করলেন কালোদের ভয়ে !
কি হলো – আপনি শিখলেন – কালোদের এভাবে মারা হয় বা মারা যায় তাহলে !
আপনি একটি যুদ্ধের খবর পেলেন , সেনার কৃতিত্বের গল্প শুনলেন , ভয়ঙ্কর পরিবেশে ভয় পেতে পেতে আপনিও অমন একখানা যুদ্ধ করতে পারেন হয়তো – এমনটাই ভাবলেন !
আপনি একজন মডেলের বা নায়িকার খোলা শরীরের ছবি দেখলেন গোয়ার বিচে – আপনি ভাবলেন নেক্সট টাইম যখন গোয়া যাবো তখন ঠিক ওরকমই ! বাড়িতে ভয় পেলেন কিন্ত শিখলেন গোয়ায় ওটা করা যায় !
আপনি একটি ধর্ষণের রগরগে বর্ণনা বা সেক্সের গল্প/ ভিডিও দেখলেন/ পড়লেন – ভয় ও পেলেন ! কিন্ত কোন একদিন সুযোগ পেয়ে আপনিও … !
করবেন ই ! কারণ ওটা আপনার ভয় থেকে হলেও শিক্ষা !
স্মৃতি ও!
সেই স্মৃতি আপনার সম্পদ !
ভাবুন তো – একবার জুতো ছোঁড়ার পর আমাদের দেশে কতবার জুতো ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে ?
ভয় কে অতিক্রম করেছে যাঁরা তাঁরা জুতো ছুঁড়েছে !
আপনিও একদিন ভয় কাটিয়ে এই শিক্ষা কাজে লাগাবেন !
আগে অসুখকে কে মানুষ ভয় পেত । ডাক্তার কে মানুষ শ্রদ্ধা করতো ।
একসময় আপনাকে খবর দেয়া হলো – ওমুক নতুন গজানো ডাক্তার গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করে , তমুক ক্রীম আপনাকে কালো থাকার ভয় থেকে মুক্তি দেবে , তমুকের জলপড়া তেলপড়া কবজ মাদুলি চিনির দানা গ্যারান্টি সহকারে আপনার সমস্যার সমাধান করবে , তমুকের পাথর আপনার গ্রহ নক্ষত্রের দোষ কাটাবে – আপনি মরে যাবার / কালো থাকার / বিপদ সঙ্গে করে বাঁচার ভয় কে উতরে যেতে চাইলেন ।
আর যত উতরে যেতে চাইলেন – ব্যবসায়ী আপনার ভয়কে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে নিল রাতারাতি !
উদাহরণ – অসংখ্য ! ক’টা দেবো ?
ভেবে দেখুন , আপনার ভয় এই সময়ে আপনাকে কি দিয়েছে?
জ্ঞানী করেছে ? সামাজিক করেছে ? ভালো চাকরি দিয়েছে ? বাড়ি গাড়ি দিয়েছে ?
কিচ্ছু দেয়নি ! বরং হিসেব করলে উল্টোটাই দিয়েছে !
আর
যদি কিছু দিয়ে থাকে – সেটা হলো মেমোরি ! সেই মেমোরি কার্ড যা আপনার মগজে ঢোকানো – তাতে জমা হচ্ছে একের পর এক ভয়ের খবর !
আপনি কি সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারতেন না একটা ধর্ষণের খবর না পড়ে ?
আপনি কি করোনার ভয়ে গৃহবন্দী না থেকেও সোশ্যাল ডিসট্যান্স মেনে চলতে পারতেন না ?
প্রতিদিন আপনার বাড়ির পাশের লোকটি আক্রান্ত কিনা সেই ভয়ে তাকে ঘরছাড়া না করে তার পাশে দাঁড়াতে পারতেন না ?
আপনি একটি রাজনৈতিক দল বা মতকে বা একজন অচেনা ব্যক্তি কে গালাগালি না করে থাকতে পারতেন না ?
পারতেন !
তাতে আপনার জীবন যাপন অনেক ভাল ই থাকতো !
দিন রাত দুনিয়ার ভুলভাল গাঁজাখুরি খবর ( কে ন্যাংটো হলো , কে কাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যের ঘরে ঢুকে গেল , কে কাকে কবে খিস্তি মেরেছিল, জিনেদিন জিদান কবে কেন মাতেরাজ্জি কে ঢুসো মেরেছিল, সচিন টেন্ডুলকার কি রান্না করলেন , কে কোথায় ধ্যানে বসলেন , কে কবে গোমুত খেয়ে পার্টি করলেন, কোন সিরিয়ালে শাশুড়ি বউকে টর্চার করলো ) না পড়লে / দেখলে/ শেয়ার না করলেও কি আপনি একজন মানুষ হিসেবে জীবন কাটাতে পারেন না ?
পারেন ।
কিন্ত মানুষের অ্যানাটমি র জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে , ভয় কে কাজে লাগিয়ে ( মাথায় রাখুন, একটি ভয় উদ্রেককারী খবর একটি ভালো খবরের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি এফেক্ট করে আপনার ব্রেন কে তথা amygdala কে , পাল্টে দেয় আমাদের ! ভালো খবর সেটা করতে পারে না ! কারণ , ভালো র ইমোশন অনেক কম সময় স্থায়ী হয় , এটা প্রমাণিত ! ) ,
এই যে ব্যবসায়ীরা খবরের ব্যবসা ফেঁদে বসে আছে , তাতে আমার আপনার প্রতিদিনের জীবন ই পাল্টে যাচ্ছে / যাবে !
আমরা ক্রমশঃ হয়ে উঠছি নির্বোধ !
একটা ভয় ধরানো খবর পড়ার পর
নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আপনি আমি কখনো ভাববোই না ! শুধু ভয় ই পাবো !
এটাই শরীরবৃত্তীয় নিয়ম !
আপনি আমি মোটেই জ্ঞান আহরণ করছি না এইসব খবর থেকে !
মোটেই উন্নত জীবে পরিণত হচ্ছি না !
বিজ্ঞাপন দেখে অর্ধেক দামে কেনা জামার প্রাইস ট্যাগে যে ডাবল দাম লেখা হয়েছে , এটা আমাদের ভাবার বিষয় নয় । কাল ফের দাম বেড়ে গেলে কিনতে পারবো না – এই ভয় ই সেখানে মূখ্য।
আমরা নির্বোধ হচ্ছি অতএব !
আমরা কি কখনো ভাবি যে , যে সাংবাদিক একটা খবর দিলেন , তিনি মোটেই বিশাল পণ্ডিত নন ?
তিনি লেখাপড়া থেকে শুরু করে সামাজিক হিসেবে আপনার থেকে অনেকাংশে কম !
কিন্ত আমরা ভাবি উল্টোটা !
তার কারণ ও কিন্ত ভয় !
কখনো কখনো নিজেই খবর হয়ে যাবার ভয় , কখনো খবর না হতে পারার ভয় !
আমরা ক্রমশঃ হারাতে থাকি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি !
আর কোন লাভ হয় না !
ভয় না পেয়ে নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন । পরিবার পরিজনদের সাথে সময় কাটান । খবরের ভয় বা উদ্বেগ দূর করতে / জ্ঞানী হবার সাধ পূরণ করতে পড়াশোনা করুন – তবে সেটা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা নয় বা সব খবরের উৎস থেকে নয় ।
নিয়ম মেনে করতে হবে সত্যি খবরের উৎস থেকে ।
দৈনন্দিন কাজকর্ম করুন আগে । ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করুন, ঘুম দিন ।
সারাদিন খবরের ভয় থেকে দুশ্চিন্তা হলে , নিজেকে সময় দিন ।
বই পড়ুন । কিছুটা সময় মেডিটেশন করুন ।
নিজেকে প্রশ্ন করুন – কেন ভয় পেলেন ।
না হলে বিশ্বাসী কাউকে মন খুলে বলে ফেলুন আপনার সমস্যা !
ইন্টারনেট অ্যাডিকশন এখন একটি মারাত্মক অসুখ ।
গেমিং ডিসঅর্ডার একটি স্বীকৃত রোগ ।
খবর থেকে উদ্ভূত মানসিক সমস্যা গুলো খুব তাড়াতাড়ি অসুখের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ।
অনেকেই হেডলাইন না দেখলে পড়লে মানসিক অশান্তি তে ভোগেন আজকাল ।
অনেকেই পারিবারিক সামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একঘরে হয়ে যান ।
ঝামেলা বাড়তেই থাকে ।
বিশদে আলোচনা করার জন্য এই লেখা নয় বলেই এড়িয়ে গেলাম অনেক কিছু ।
প্রতিটি জায়গা ধরে ধরে শরীরবিদ্যার জ্ঞান নিয়ে এগুলো ব্যাখ্যা করা যায় এখন ।
দুর্ভাগ্যবশত , শরীর সম্বন্ধীয় বিদ্যার এই ভয়ঙ্কর ব্যবহার নিয়ে আমরা সচেতন নই ।
তাই এই বিস্বাদ জগাখিচুড়ী খাবার পর কারো কিছু মনে হলে বলবেন।
পরবর্তী কোন এক সময়ে আবার লেখার চেষ্টা করবো আরো কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করার ।