সমগ্র বিশ্ব যখন ঘটমান ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়ার মারাত্মক যুদ্ধ; বাংলাদেশের ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ও নৈরাজ্য; তাইওয়ানকে ঘিরে ও দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের দাপাদাপি; উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা; ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, গাজা, পানামা খাল দখলের হুমকি নিয়ে চিন্তিত তখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ আফ্রিকার গরীব দেশগুলি এবং সেখানকার অসহায় অধিবাসীরা একের পর এক ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। সে রাষ্ট্রপুঞ্জই হোক বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা অন্য কোন আন্তর্জাতিক সংস্থাই হোক, প্রথম বিশ্বের বাতিল হওয়া কিছু খাবার অথবা বহুজাতিক সংস্থার টিকা ইত্যাদি আফ্রিকানদের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গতানুগতিক কিছু লব্জ ছাড়া আফ্রিকার প্রতি কারো কোন নজর বা দায়িত্ববোধ নেই।
বিরামহীন যুদ্ধ:
গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০ এর দশক অবধি আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশ ও ভূভাগগুলি ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, দ্যা নেদারল্যান্ডস, ইতালি, পর্তুগাল প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশ। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তাঁরা স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি অচিরেই পেটোয়া সেনানায়কদের দিয়ে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কিংবা কিছু বিরোধী বা জঙ্গি নেতাকে আর্থিক, সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন জুগিয়ে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে আবার দেশগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেখানকার পুতুল সরকার গুলির মাধ্যমে। প্রয়োজনে দেশগুলি ভেঙ্গেচুরে নিজেদের সুবিধামত ভৌগোলিক অঞ্চল করে দেয়। এই দেশগুলির প্রতি আকর্ষণের মূল কারণ ছিল এই দেশগুলির মূল্যবান খনিজ ও অরণ্য সম্পদ এবং সস্তা শ্রম দখলে রাখা। খনিজ ভান্ডারে পরিপূর্ণ কঙ্গোর জনপ্রিয় বিপ্লবী নেতা লুলুম্বাকে হটিয়ে মপুতুর মত স্বৈরাচারীকে ক্ষমতায় বসানো এবং মপুতুকে উৎখাত করা কাবিলাকে হত্যা একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আর প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় দেশগুলিকে নিজ স্বার্থে মদত দিয়েছে কিংবা নিজেরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের চূড়ামণি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য খনিজ, বিশেষত বিরল খনিজ (Rare Earth Minerals), আহরণ এবং বাণিজ্য ও অর্থনীতির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, সঙ্গে ভূ – সামরিক দিক থেকে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ ও ঘাঁটি নির্মাণ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এক্ষেত্রে প্রতিস্পর্ধি রাশিয়া প্রতিযোগিতা থেকে পিছু হটলেও চিন ক্রমশঃ প্রবলভাবে এগিয়ে চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এই মহাদেশেও।
সাম্রাজ্যবাদের শোষণ শাসনের নিগড় থেকে মুক্তি পেতে আফ্রিকা জুড়ে দশকের পর দশক মুক্তি সংগ্রাম চললেও রাশিয়া, কিউবা ও উত্তর কোরিয়ার সাহায্যে পাশ্চাত্য শক্তির থাবা থেকে অ্যাঙ্গোলার অব্যহতি, দক্ষিণ আফ্রিকার জাঁতাকল থেকে নামিবিয়ার স্বাধীনতা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবোয়ে (রোডেশিয়া) থেকে সরকারিভাবে বর্ণবৈষম্যের অবসান ছাড়া সাফল্য প্রায় নেই। অতীতের সংঘর্ষের তো দীর্ঘ ইতিহাস আছেই। নতুন করে সংঘর্ষ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে। রোয়ান্ডায় মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে আট লক্ষ তুতসি উপজাতির এবং কিছু বিরোধী হুটু উপজাতির মানুষকে হত্যা করেছে হুটু জঙ্গিরা। পূর্বতন কঙ্গো বা জাইর এর উত্তর কিভু জেলার খনিজপূর্ণ গোমা অঞ্চলের দখল নিয়ে এখন চলছে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ, গণহত্যা এবং শরণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি। এরকম চলছেই আফ্রিকার বিভিন্ন কোণে। এর সঙ্গে ঘটানো হচ্ছে খ্রিষ্টান বনাম মুসলমান সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ। মার্কিন পরিকল্পনায় সৌদি আরব, কাতার অথবা ইরান, তুরস্ক প্রভৃতির প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা আল কায়দা ও ইসলামিক স্টেট সহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি এবং তাদের শাখা প্রশাখাগুলি পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, প্রগতিশীল কিংবা মার্কিন প্রতিস্পর্ধি শাসনব্যবস্থাগুলিকে চুরমার করে দিচ্ছে এবং সেখানকার সমাজ ও সংস্কৃতিকে নিয়ে চলেছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও অন্ধকারের দিকে। এই সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার নবরূপী অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল উগ্র আরবী ধর্মীয় মৌলবাদ সাহারা অন্তর্বতী উত্তর আফ্রিকার মরুভূমি প্রধান পশ্চাদপদ রাষ্ট্র গুলিতে অভিষ্ট খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর তাদের যুদ্ধ অভিযান ছড়িয়ে দিয়েছে বাকি আফ্রিকার দেশগুলিতে। অন্য ধর্মের মানুষদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, নারীদের বলপূর্বক যৌন পীড়ন ও ধর্মান্তকরণ করানো হচ্ছে। পুরুষের যৌন কর্মের সুবিধার্থে নিষ্ঠুরভাবে তাঁদের ভগাঙ্কুর ছেদ (Mutilation of clitoris), শিক্ষা ও কর্মস্থান থেকে তাঁদের সরিয়ে পর্দানশীন ও গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হচ্ছে। অপুষ্টি এবং নানারকম আর্থ – সামাজিক ও শারীরিক অসুবিধা সত্ত্বেও তাঁদের একের পর এক সন্তান ধারণে বাধ্য করা হচ্ছে। এই সব অঞ্চলে জন্ম হার ও প্রজনন হার (Birth and Total Fertility Rates) বিপজ্জনকভাবে বেশি।
অবিরত ধ্বংস:
এমনিতেই আফ্রিকার দেশগুলি অত্যন্ত গরীব ও দীর্ঘ যুদ্ধ বিধ্বস্ত। ন্যূনতম শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, পরিবহন, পানীয় জল, শৌচালয়, বিদ্যুৎ প্রভৃতি বুনিয়াদি বিষয়গুলির উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তার উপর খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট, ক্ষরা, দুর্ভিক্ষ, অনাহার, মৃত্যু, শিশু মৃত্যু, পঙ্গপালের আক্রমণ, জাতি ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা – হাঙ্গামা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক দুর্নীতি, যুদ্ধ এবং ভয়াবহ মহামারী লেগেই রয়েছে। আবার এই নতুন করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধের ফলে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মৃত্যু; গুরতর আঘাত ও পঙ্গুত্ব; ঘরবাড়ি সম্পত্তি লুঠ ও ধংস; সরকারি সম্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নষ্ট; বাস্তুচ্যুতি, উদ্বাস্তুকরণ ও অনিশ্চিত ঝুঁকিপূর্ণ জীবন; অনাথের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যতহীন শৈশব; খাদ্য সংকট, অনাহার ও দুর্ভিক্ষ; অপহরণ, অত্যাচার ও হত্যা; নারীর উপর বলাৎকার ও যৌন নির্যাতন; প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন; বালিকা, কিশোরী ও তরুণীদের ধর্ষণের পর অপহরণ ও যৌন দাসী করে রাখা; বালক ও কিশোরদের অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া; অপহৃতদের এবং শিশু সৈন্যদের বিপক্ষের আক্রমণের সামনে ফেলা; জাতিগত নির্মূলিকরণ (Ethnic Cleansing) এর সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এবং ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরের সংক্রমণের ফলে পাল্লা দিয়ে কলেরা, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, হেমারেজিক জ্বর, মঙ্কি পক্স প্রভৃতি গুরুতর রোগের মহামারী বেড়েই চলেছে।
পূর্ব আফ্রিকার আর্তনাদ:
যে কারণে আফ্রিকার সাধারণ মানুষের এত দুর্দশা সেই যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধের ফিরিস্তি দিলে বোধহয় শেষ করা যাবে না। এখানে চলমান প্রধান সংঘর্ষ গুলিকেই কেবল সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল।
ইথিওপিয়া একটি অত্যন্ত দরিদ্র এবং গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশ। কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধ চলার পর উত্তরে ইরিটেরিয়া পৃথক দেশ হয়ে যায়। এখন পশ্চিমের আমহারা অঞ্চলে চলছে FANO সশস্ত্র যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকারের সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং উত্তরের টাইগ্রে অঞ্চলে Tigray People’s Liberation Front (TPLF) এর সঙ্গে একদিকে ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনীর, অন্যদিকে ইরিটেরিয়ার সেনা বাহিনীর যুদ্ধ চলছে। ইরিটেরিয়ায় রয়েছে প্রচুর সোনা, রুপো, তামা, দস্তা, পটাশ ইত্যাদি যেগুলি মূলত চিনা সংস্থাগুলি উত্তোলন করে। ইথিওপিয়ার রয়েছে সোনা ছাড়াও আফ্রিকার সবচাইতে বেশি মিষ্টি জলের ভাণ্ডার। তাছাড়াও এখানকার বিখ্যাত কফি, খাত (এক ধরনের চা), ভোজ্য তেল এবং গৃহপালিত গরু, ভেড়া ও উট রপ্তানি হয়।
মোজাম্বিকে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ অবসানের পর আবার নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন Mozambique Liberation Front (FRELIMO) এবং তার সহযোগী UNAMO এর সঙ্গে বিরোধী Mozambican National Resistance ( RENAMO) এবং তার সহযোগী PRM, COREMO, UNIPOMO, FUMO প্রভৃতি সশস্ত্র মিলিশিয়াদের। মোজাম্বিকের রয়েছে প্রচুর পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস।
আরেকটি অতিদরিদ্র দুর্ভিক্ষপীড়িত রাষ্ট্র সোমালিয়ায় চলছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শাসক মিলিটারি জুনতার সেনাবাহিনীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে Somali Salvation Democratic Front, Somali National Movement, United Somali Congress, Al Queda, Al Sabaat, Islamic State (IS) প্রভৃতি সশস্ত্র বাহিনীর সংঘর্ষ। সোমালিয়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম, লোহা, টিন, জিপসাম, বক্সাইট, তামা, খনিজ নুন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম।
২০০৫ এ দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পৃথক হওয়া খনিজ তেলে সমৃদ্ধ হয়েও ভয়ঙ্কর রকম দরিদ্র ও পশ্চাদপদ দক্ষিণ সুদানে ক্ষমতাসীন সরকারের সেনা দলের সঙ্গে চলছে বিরোধী সশস্ত্র বাহিনী Sudan People’s Liberation Movement (SPLM) এর সঙ্গে ক্ষমতা ও খনি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। SPLM এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে Nuer White Army, SSDM, TFNF, SSFDP প্রভৃতি সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলি। প্রচুর পরিমানে পেট্রোলিয়াম ছাড়াও সাউথ সুদানে রয়েছে লোহা, তামা, ক্রোমিয়াম, দস্তা, টাংস্টেন, অভ্র, রুপো, সোনা, হিরে, চুনাপাথর এবং বিরল খনিজের বড় ভান্ডার।
সুদানে ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে ভয়ংকর সংঘর্ষ। Sudanese Armed Forces বনাম Rapid Support Force এর যুদ্ধ। এছাড়াও SPLM – N (Al Hilu), SLM (Al Nur) প্রভৃতি সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে যুক্ত। সুদানের রয়েছে পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডার যাকে নিয়ন্ত্রণ করে চিন।
হ্রদ অঞ্চলের ক্ষুদ্র রাষ্ট্র রোয়ান্ডায় হুটু জঙ্গীদের FDLR এতদিন তাণ্ডব চালানোর পর এবার ভয়ানক সংঘর্ষ চলছে ক্ষমতাসীন Rwundan Armed Forces এর সঙ্গে Rwandan Patriotic Front (RPF) এর মধ্যে। RPF কে সমর্থন করছে M 23 ও CNDP সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি। কাতারে কাতারে উদ্বাস্তু বিশেষ করে তুতসিরা পাশের রাষ্ট্রগুলিতে আশ্রয়ের খোঁজে। গরিলাদের প্রধান অভয়ারণ্যটিও বিপন্ন। রোয়ান্ডা যেমন প্রচুর চা, কফি, কৃষি পণ্য রপ্তানি করে, তেমন সেখানে সোনা, কোল্ট্রান, ক্যাসিটেরাইট, উলফ্রামাইট সহ বিরল খনিজগুলির সমারোহ।
মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার হাহাকার:
অত্যন্ত পশ্চাদপদ ও দরিদ্র হলেও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (DRCongo, রাজধানী: কিনসাসা) এবং রিপাবলিক অফ দ্য কঙ্গো (R Congo, রাজধানী: ব্রাজ্জাভিল), দু টুকরো করে দেওয়া ঘন অরণ্যময় দেশটিতে রয়েছে অবারিত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ। DR Congo তে অঢেল কোল্ট্রান, কোবাল্ট, তামা, হিরে, ট্যানটুলাম, ক্যাসিটেরাইট, টিন সহ বিরল খনিজগুলি এবং R Congo তে পেট্রোলিয়ামের ভাণ্ডার। সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন ও ইউরোপীয় সংস্থাগুলি। সাম্রাজ্যবাদী মদতে নিরন্তর যুদ্ধ চলছে DR Congo এবং R Congo এর মধ্যে। এছাড়াও DR Congo তে ক্ষমতাসীন সেনা বাহিনীর (FARDC) র সঙ্গে March 23 Movement (M 23) সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ চলছে।
চাড দেশটিতে রয়েছে প্রচুর পেট্রোলিয়াম। এখানে মূল সংঘর্ষ আরবী ইসলামি জিহাদি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সাব – সাহারান ক্রিশ্চিয়ান গোষ্ঠীগুলির। এছাড়াও RDL, UFDP, UFDD, CDR, RFD প্রভৃতি সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়।
নাইজারে রয়েছে বিশ্বের সবচাইতে বেশি ইউরেনিয়াম ছাড়াও প্রচুর পেট্রোলিয়াম, সোনা আর কয়লা। এটি মুসলমান দেশ হলেও বিভিন্ন কট্টর ইসলামি জিহাদি গোষ্ঠী গুলির সঙ্গে সরকারের সংঘাত চলছে।
মালিতে রয়েছে প্রচুর সোনা, কোল্ট্রান ইত্যাদি। মালিতে মূল সংঘর্ষ তুরেগ জনজাতির MNLA এর সঙ্গে Al Queda, IS প্রভৃতি আরবী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে।
বুহ্কিনা ফ্যাসো তে রয়েছে প্রচুর দামি পাথর, তামা, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, সোনা, ক্যাশিটেরাইট, ফসফেট এবং রেয়ার আর্থ মিনারেলস যেগুলি নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন সংস্থাগুলি। সরকারি সেনা বাহিনীর সঙ্গে Al Queda সমর্থিত JNIM এবং Islamic State of Greater Sahara (ISGS) র সংঘর্ষ চলছে।
নাইজেরিয়ায় রয়েছে কয়লা, বক্সাইট, ট্যান্টালাইট, সোনা, টিন, লোহা, চুনাপাথর, নিয়োবিয়াম, সীসা, দস্তা প্রভৃতি। উৎপন্ন হয় প্রচুর কোকো, রবার সহ কৃষিপণ্য। নাইজেরিয়ায় রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ বহু বছরের। হাউসা, ইয়োরুবা, ইগবো, ফুলানি জনজাতিগুলির মধ্যেকার দ্বব্দগুলিও জাতিবিদ্বেষী সন্ত্রাসে পরিণত হয়। আর রয়েছে আড়াআড়ি ক্রিশ্চান – মুসলমান ধর্মীয় বিভেদ। সেই জায়গা দিয়ে বিদেশী মদতে বোকো হারাম, ISWAP প্রভৃতি ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী দলগুলি নৃশংস হত্যাকাণ্ড, প্রাণঘাতী বোমা বিস্ফোরণ, গির্জা ধ্বংস, নারী ধর্ষণ, শিশু ও বালিকাদের অপহরণ, বালিকা ও কিশোরীদের সংগঠনের আমির ও কমান্ডারদের যৌন দাসী করে রাখা ইত্যাদি কার্যকলাপ সংঘটিত করে।
থমথমে আফ্রিকার দক্ষিণ:
অ্যাঙ্গোলায় তিন দশকের গৃহযুদ্ধ আপাতত বন্ধ হলেও MPLA এবং UNITA র সংঘাত রয়ে গেছে। নামিবিয়াতেও আড়াই দশকের গৃহযুদ্ধ আপাতত বন্ধ থাকলেও SADF এবং SWAPO র দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। রয়েছে PLAN প্রভৃতি সংগঠনগুলি। দক্ষিণ আফ্রিকা, লেসোথো, সোয়াজিল্যান্ড, জিম্বাবোয়ে তে সরকারিভাবে বর্ণবৈষম্যর অবসান ঘটলেও সমাজে এখনও বর্তমান। এর সঙ্গে রয়েছে সম্পদের প্রবল বৈষম্য, শোষণ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাপক দারিদ্র্য , বেকারত্ব প্রভৃতির থেকে উদ্ভূত বিক্ষোভ, অপরাধ, নেশা, হিংসা, ধর্ষণ, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ইত্যাদি।
দুর্ভাগ্য আফ্রিকা একবিংশ শতাব্দীতেও বিশ্বকবি বর্ণিত ” উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগে … ” রয়ে গেল, সেখানে ” সভ্যতার শেষ পুণ্য বাণী ” এখনও অধরা।
২৩.০২.২০২৫