‘দেখো বাপু, আমাদের হাতে আছে প্রমোশন ডি এ,
ট্রান্সফার-ফাইল কার ক’মাইল যাবে,
আমরাই দিই সেটা এগিয়ে পিছিয়ে ,
আশা করি সেটা জানো। সহজ সত্যিটাকে মানো,
শুধু নই হর্তা কর্তা বাছা, আমরা বিধাতা,
আমাদেরই নিশিদিন ভজে ভোটদাতা।’
‘আজ্ঞে, অধম যে ভোটদাতা, নাম আছে রোলে,
সেটাই তো আশ্চর্য ঘটনা।
আলগা মানুষ আমি, কত যে বেফাঁস দিই ফস করে বলে,
নিজেই কি বুঝি! তারপর মানে মানে অজুহাত খুঁজি,
আদতে আমি যে বিপ্লবী টিপ্লবি নই, স্রেফ এলেবেলে,
চাইছি না বিপরীতদিকে গিয়ে হইচই ফেলে,
কি করে বোঝাই যে ছাই!
তা দাদা, আজকে আমার থেকে আবার কি চাই?’
‘এই দেখো, ভীষণই সামান্য ব্যাপার,
তোমার হ্যাপার কাজ কিছুটা কমানো,
ঠিকানায় এসে গেছে নাম লেখা ব্যালট পেপার,,
সে কাগজ দাও দেখি দিয়ে। যা লেখার ঠিক লিখে নিয়ে,
ফেলে দেবো বাক্সতে আমরাই গিয়ে,
তুমি কেন খাটবে হে বোকচন্দর?
দাও , দাও , কাগজটা যাও গিয়ে আনো সত্ত্বর!’
‘আজ্ঞে, বলছি তো, আপনাদেরই আমি পন্থী।
পোস্টিং প্রোমোশন ও পেনশন, সবই আপনাদের হাতে,
কিভাবে অন্য দিকে মন দিই?
চিন্তা করবেন না একদম দাদারা, দুগগা কালী গণেশ মা-তারা,
যে সব পুজোয় চাঁদা দিই, দিব্যি তাদের সকলের,
আমি সাথী এই গণতান্ত্রিক ভাবে সমিতি দখলের,
নম্বর দেখে দেখে ভোট দেবো আপনাদেরকেই।
ব্যালটটা শুধু থাক। ওটা দিলে মনে হবে শিরদাঁড়া নেই।’
‘শিরদাঁড়া? নিকুচি করেছে বাঁ.. থুড়ি,
ফস্কে বেরিয়ে গেছে।
আরে বাবা এটা নয় ভোট করা চুরি,
কারা যে জিতবে সেটা জানা আছে আগে থেকে,
কাজটা যাচ্ছি শুধু একটু এগিয়ে রেখে,
তা ছাড়া, জানোই তো এটা গোপন ব্যালট,
তোমার জানার কথা নয়, কাকে দাও ভোট।
সে খবর খুবই গোপনীয়, আমাদেরই শুধু আছে জানা,
শুধু ওই ব্যালটেরা এসে যায় নানান ঠিকানা,
তাই কষ্ট করে আসা আমাদের।
যাও ভাই, কথা হলো ঢের,
ব্যালটটা নিয়ে এসো দেখি।’
এরপর কি হয়েছিলো আমি জানি না।
ভোট নিজে দিয়েছিলো সে কি,
নাকি ভোট দিলো কোনো মেকি,
কি জানি কে জানে সেই কথা!
শুধু জানি, গণতন্ত্র এভাবেই মরে।
অন্যায়ে প্রতিবাদহীন হয়ে,
জনতা পালন করে যদি নীরবতা।