আমি বিশ্বাস করি নি। ভেবেছিলাম গল্পকথা। নিষাদসন্তান একলব্যের আঙ্গুল কেটে দেওয়া হয়েছিল- স্রেফ অর্জুনকে জেতানোর জন্য।
আমি বিশ্বাস করি নি। ভেবেছিলাম গল্পকথা। তাজমহলের স্থাপত্যশিল্পীদের মেরে ফেলা হয়েছিল। যাতে তারা আর দ্বিতীয় তাজমহল না গড়তে পারে,স্রেফ তাজমহলকে অমর করার জন্য।
বিশ্বাস করুন আমি বিশ্বাস করি নি। ভেবেছিলাম গল্পকথা। ঢাকার মস্লিন শিল্পীদের আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছিল। স্রেফ বিলিতি কাপড়ের বিক্রি বাড়ানোর জন্য। (কেউ কি পড়ছেন? দেখুন কেমন সব গল্পই একবৃত্তে ঘোরে)।
আমি বিশ্বাস করি না। তিন দিন বা তিন মাসের শিক্ষা দিয়ে ডাক্তার তৈরি করা যায়। অথচ তাই হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি না এইভাবে চিকিৎসাকে হত্যা করে বিদেশী বীমা কোম্পানির সুবিধা করা যায়। অথচ তাই হচ্ছে।
আমি বিশ্বাস করি না এভাবে অশিক্ষিত চিকিৎসক দিয়ে সরকারি হাসপাতাল তুলে দেওয়া যায়। আমি বিশ্বাস করি এটা গল্পকথা। অথচ তাই হচ্ছে।
আমি বিশ্বাস করি না, যে ডাক্তাররা ধান্ধাবাজ, স্বার্থান্বেষী। আমি বিশ্বাস করি না, ডাক্তারদের নিজেদের কোনও বলার জায়গা নেই। অথচ সেটাই সত্য।আমাদের কিচ্ছু নেই।
এককালে ছিলো-আমাদের ঐক্য কিন্তু ছিলো-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। তখন সমস্ত জুনিয়র ডাক্তাররা একজোট হয়ে দাবী তুলেছিলো-আমাদের মজুরি বাড়াতে হবে-আমাদের ন্যূনতম কাজের সময় বেঁধে দিতে হবে। সবাই একজোট, একপ্রাণ, একমন। তখন মসনদে প্রগতিশীল-উন্নয়নপন্থী সরকার। সরকার বললো-হেই বাপ্পো, এ আন্দোলন তো তুলতে হবে, এতে ইমেজ খারাপ হয়। ওহে যারা নতুন একটা বিপ্লবী দল গড়ে’ কাজে যোগ দেবে-তাদের চাকরি পাকা হবে। হয়ে গেল। চাকরমনস্ক, মীরজাফরের দল আন্দোলন ভেঙে টুকরো করে দিলো। আগামীর জন্য, চিরকালের জন্য, শেষ হয়ে গেল সরকার বিরোধিতা।
এককালে মেরিট লিস্ট দেখে হাউসস্টাফ শিপ দেওয়া হতো। তারপর এলো ইন্টারভিউ (ধরাকরার প্রকৃষ্টতম উপায়), তখন আমরা প্রতিবাদ করি নি।আজ যখন আরজিকরে বাইরের ছেলে ভর্তি হচ্ছে, তখন ছাত্ররা প্রতিবাদ করছে, আশ্চর্য! আগে মনে হয়নি? ইন্টারভিউ দেবো আবার নম্বরের সুবিধেও চাইবো। বলবো, আব্বুলিশ আর খেলবো না। এবার আমরা অনশন করবো। আরজিকর কি কেবল তোমাদের? বাইরের ছেলেরা কাজ করবে না?
যখন শিক্ষায় অনিলায়ণ হলো, সব স্কুলে পার্টি ক্যাডার হয়ে যাচ্ছে মাস্টার।যখন প্রাথমিক ইশকুলের মাস্টাররা কল্যাণীতে মার খেয়ে পড়ে’ আছে-তখন জুনিয়র ডাক্তাররা কেউ সমব্যথী হতে যায় নি। আজকে নিজেদের অসুবিধা হলে আমরা কুম্ভীরাশ্রু মোচন করে’ হাহাকার করি।
আন্দোলন হচ্ছে, অনশন হচ্ছে। প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে-কিন্তু কারো কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে, হাসপাতাল বন্ধ হয়ে বীমা চালু হচ্ছে, প্রিন্সিপাল গটমটিয়ে গাড়ি চালিয়ে, ধুলো উড়িয়ে ঢুকছেন-অথচ আন্দোলন চলছে, বিদ্রোহ চলছে। গাঁধী বাবার অনশন চলছে। শখকা প্রাণ, গড়কা মাঠ।ইল্লি খায় বিল্লি।
সাধারণ মানুষ-অস্থায়ী, পরিযায়ী পেশায়, চূড়ান্ত অর্থনৈতিক অস্থিরতায় আঠারো ঘন্টা মালিকের মনোতোষ করে’ বাড়ি ফিরে রঙিন টেলিভিশনের চমৎকার উদরনৃত্য, যুগলের ভুঁড়িনৃত্য দেখে, রঙিন পানীয়ের রঙিন চশমা পরে’ পরাবাস্তবে ডুবে থাকছে। স্বাস্থ্য, জ্বালানি সব এখন গৌণ। নিঃসহায়, নিউক্লিয়ার পরিবার কোনও রকমে দিন কাটাও (এ জীবনটা পেরোলে বাঁচি)।
তবুও আমি বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি আমরা সমাজবন্ধু। কাকের মতো। নোংরা ঘাঁটা কাক। একটা কাকের মৃত্যু- একজনের আঘাত- সহস্র কাকের সমাবেশ ঘটায়। আসুন কা কা কলরবে আকাশ ভরে তুলি। যতটুকু ক্ষমতা তাই দিয়ে আঘাত করি। আমি বিশ্বাস করি আমরা পারবো। পারতেই হবে। শতকোটি খেতে না পাওয়া মানুষের জন্য – তাদের অনাগত সন্তানের জন্য – অমানবিক আগামী স্বাস্থ্য-বীমার প্রতিরোধে আমাদের পারতেই হবে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে। তখন এডি, পিডি, এসব উপদল নয়। সব ডাক্তার এক হয়ে লড়বে। এটাই হবে আগামীতে ডাক্তার আন্দোলনের অভিমুখ।
অনেক টাই সত্য।ডাক্তার কখনো খারাপ হয় না,মানি না কারন তারা মানুষ যে মানুষ অনেকেই স্বার্থন্বেষী হয় হতে বাধ্য,অনেক ডাক্তারকে বলতে শুনেছি বাবা মা অনেক পয়সা খরচ করে ডাক্তারি পরিয়েছে,টাকা তুলতে হবে না?
অনেক ডাক্তার কে দেখেছি ওষুধ কি রকম কাজ করছে তার ফীড ব্যাক না দেখেই মেডিকেল রিপ্রেসেন্টিভর পুশ করা ওষুধ প্রেসক্রিপসন করছে কমিশনের লোভে অযথা টেস্ট করিয়ে ল্যাবগুলি থেকে কমিশন নিচ্ছে,এগুলি আমরা সবাই জানি,নতুন কিছু নয়। শহরের হাসপাতালের কথা বলতে পারবো না কিন্তু কটা পাস করা ডাক্তার গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করে? 2 দিন যায় তো 5 দিন ছুটি কাটায় শহরের বাড়িতে আর প্রাইভেট প্রাক্টিসে,সবাই জানি।গভর্নমেন্ট যতই চোখ রাঙাক এই ডাক্তারদের চটাতে পারবে না তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।তবে? বহু ঐ তিন চার মাস ট্রেনিং নেওয়া সিকি ডাক্তাররা প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে ঠেকা দিয়ে রেখেছে কিছু মেরে কিছু মরে বাঁচিয়ে রেখেছে।যার জন্য প্রশাসন তাদের মানতে বাধ্য,গ্রামের মানুষ যে টুকু বেঁচে আছে ঐ সিকি ডাক্তারদের জন্য। আমাদের 140 কোটি দেশের মানুষ কয় জন চিকিৎসা পায় বলুন তো? আমরা তো চোখ,কান বন্ধ করে বসে আছি,কিছু দেখিনি ,কিছ শুনিনি।আজ যদি ডাক্তারদের কিছু অংশ সপ্তাহে 3 বিনা পারিশ্রমিকে গ্রামের মানুষ গুলি কে মানুষ ভেবে চিকিৎসা করতো তবে তাদের বোধ হয় নাগরিক সমাজ মানুষ বলে মনে করতো শুধু ডাক্তার ভেবে গালাগালি করতো না কিম্বা কেসে অসফল হলে গায়ে হাত তুলত না।নাগরিক সমাজের মানসিক অবক্ষয়ের দায় তাদের নিতেই হবে।আজ হাসপাতাল পরি কাঠামো ভেঙে পড়েছে,নার্সরা,ডাক্তার রা বিদ্রোহ করছে,কিন্তু কেন ? সরকারি ব্যবস্থা,ডাক্তারের অপ্রতুলতা,স্বাস্থ কর্মী অপ্রতুলতা এর জন্য দায়ী।কিন্তু কেন? কেন সরকার বলছে না একটা ডাক্তার তৈরি করতে সরকারি টাকাও খরচ হয়,সুতরাং প্রতিটা ডাক্তারকে সরকারি হাসপাতালে সেবা দিতে হবে,বাধ্যতামূলক ভাবে।ডাক্তারি কোন প্রোফীটেবল ব্যবসা নয়,জনসেবা।বীমা কোম্পানিগুলোর উপর সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে।
এতো কিছু লিখলাম সবই কিন্তু গল্পকথা।
দিদি, ডাক্তাররা গ্রামে গিয়ে বিনা পয়সায় কাজ করবে।আর বাকিদের মানবিকতা কোথায় বন্ধক রাখা?শুধু ডাক্তারে চিকিৎসা হয়না, নাম লিখতে, ওষুধ দিতেও লোক লাগে।
এই সব অবাস্তব স্বপ্ন ছেড়ে, আমাদের অধিকার কতোটা, সেটা জানা উচিত।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা সরকারের দায়িত্ব হওয়া উচিত।তার বদলে আসছে বীমা আর বেসরকারি ইশকুল।
বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়, গোটা ভারতবর্ষে মোট ভেন্টিলেটর সংখ্যা হলো ‘ঊনত্রিশ’ হাজার(নভেম্বর, কুড়ি কুড়ির তথ্য)।আট কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষ ইনকাম ট্যাক্স দেয়।মোট জনসংখ্যা একশত চল্লিশ কোটি।
এ বিষয়ে আমার লেখা আছে পড়ে দেখুন।
অসাধারন লেখা।
ধন্যবাদ
আপনার ফোন নম্বর টা কি পেতে পারি ? বিরক্ত করবো না।
৯৮৩০০২৮৮৯৯