ঝড়ের বেগে চেম্বারের দরজা ঠেলে ঢুকলেন ভদ্রমহিলা। এমনিতে বেশ পরিপাটি কিন্তু এই মুহূর্তে অবিন্যস্ত আর অগোছালো।
–ডাক্তার বাবু আমাকে একটু দেখতে হবে।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে অনিমেষ ডাক্তার মুচকি হাসলেন- দেখব বলেই তো। আপনি বসুন আর সমস্যাটা কী?
ডাক্তার বাবু, আমার মেয়ের বয়স পঁচিশ আর আমার দু মাস হলো পিরিয়ড বন্ধ।
— ঠিক আছে। আপনি বসুন। অতো চিন্তার কি আছে।
— কি বলছেন ডাক্তারবাবু! আমার মেয়ের দু মাস বাদে ডেলিভারি ডেট আর—
— আপনার বয়স কতো?
— চল্লিশের আশেপাশেই।
— তা হলে তো একবার প্রেগনেন্সী টেস্ট করে নেওয়াই ভালো।
এবার ভদ্রমহিলা ব্যাগ খুললেন, সে আর আপনি কি বলবেন, এই দেখুন।
অনিমেষ দেখল ওর টেবিলের ওপর চার পাঁচটা কিটের প্লেট ছড়িয়ে আছে।
— আমি প্রায় রোজই টেস্ট করছি, নেগেটিভ, কিন্তু ভয় যাচ্ছে না।
এবার অনিমেষ ভদ্রমহিলার আনুষঙ্গিক পরীক্ষা করে জানাল,– চিন্তার কিছু নেই খুব সম্ভবত আপনার পিরিয়ড এবার উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ ডাক্তারি ভাষায় মেনোপজ।
অনিমেষকে অবাক করে এবার ছিটকে উঠলেন ভদ্রমহিলা।– অসম্ভব। আমার মোটেও মেনোপজ হয় নি। আমাকে দেখে কি সে বয়েস মনে হয়?
অনিমেষ পড়েছে মহা বিপাকে। মনে করেছিল ওনাকে আশু বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু ভদ্রমহিলাকে দেখে মনে হচ্ছে অনিমেষ ডাক্তার ওকে আরো এক ঘোর বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
অনিমেষ বোঝাবার চেষ্টা করছিল,– এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আপনার কোনোই অসুবিধা হবে না। কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি, নিয়মিত খাবেন আর মাঝে মাঝে চেক আপ।
কিন্তু ছলছল চোখ অশ্রু মানে না।– না ডাক্তার বাবু, আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।
অসহায় অনিমেষ বিড়বিড় করে,– আজ এতদিন পরেও, নারী তোমায় বুঝতে নারি।