নবমীর গল্প।
গতরাতে সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘুমিয়েছি। সাড়ে তিনটের সময় নার্সিং হোম থেকে ফোন। স্যার, সেই টুইন মাদারটা রাত বারোটায় এসে ভর্তি হয়েছে।
কোনটা?
সেই টেস্টিউব মাদার, যার নীচে আপনি স্টিচ দিয়েছেন।
সেকীরে! কেন? কত সপ্তাহরে?
বত্রিশ। হাল্কা পেন নিয়ে এসেছিল, তাই তখন ফোন করিনি। এখন ব্লিডিং হচ্ছে। ক্লট বেরোচ্ছে। পেন বেড়ে গেছে।
সেরেছে! তাহলে তো কিছু করতে হবে।
রেডি কর। যাচ্ছি। এই বয়সে অসময়ে এত চাপ খেলে বাঁচবো!
লাস্ট লাইনটা স্বগতোক্তি হয়ে গেল ভুল জায়গায়। একজন শুনতে পেয়ে গেছে।। তাকে ম্যানেজ করে কোনমতে আশ্বস্ত করে বেরিয়ে এলাম।
ঐ অন্ধকারে রাস্তায় মাংস দোকানে বিরাট লাইন। গাড়িটাই আটকে গেল। ভেতরে আমাকে দেখতে পেয়ে সকলে যাওয়ার জায়গা করে দিল। দেখলাম দোকানটাও খুলে গেছে। দড়িতে টেংরি ঝোলাচ্ছে। রেওয়াজী খাসি।
অপারেশন করে মনটা ফুরফুরে। সবকিছু ঠিকঠাক।
চা খাবো।
চা পাতা, টী ব্যাগ কিচ্ছু নেই নার্সিং হোম কিচেনে। জঘন্য। মেজাজ বিগড়ে কাঁই! জাস্ট আলো ফুটছে। চা পাওয়া গেল না।
নীচে নামলাম। একটা মেয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে দিন। জরুরী দরকার।
শরীর টায়ার্ড। চা পাইনি, মাথা ঝিমঝিম, ভেতরে ভেতরে ক্ষেপে আছি। বললাম, দুটোর সময় আসো। এখন মাথা কাজ করবেনা।
ফেরার পথে দেখলাম মাংস কেনার লাইন দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তখনো অন্য কোন দোকান খোলেনি। রাস্তায় ফুলওয়ালা আর নতুন শাড়ি পরা সব্জীওয়ালীরা সাইকেল চালিয়ে হনহন করে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছে বা আসছে।
সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত ঘুমের অভাবটা কাটিয়ে দুটোর সময় এসে মেয়েটার কথা শুনলাম।
দুটো বাচ্চার মা। আরেকটা এসেছে। কোয়াক ডাক্তারের কাছে ওষুধ খেয়ে বিপদ বাড়িয়ে এসেছে।
এমনিতে আমি জানি, সমাজে এখনো কোয়াকদের প্রয়োজন রয়েছে। ওরাই তো আমাদের নির্দেশগুলো বাড়িতে দেখে। বুড়োদের প্রেসার দেখা, ইনজেকশন দেওয়া, ড্রেসিং করা, টুকটাক প্রাথমিক চিকিৎসা, বাড়িতে ব্লাড কালেকশন, এসব কে করবে?
এরা আজকাল পালস অক্সিমিটার নেবুলাইজার, এসবও রাখে। রাখুক, সেটা ভালো। তবে, এদের কিন্তু একটু প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষা থাকলে ভালো হতো। কিন্তু বাস্তবে কী হয়, যেমন ডাক্তার (যার কাছে শিক্ষানবীশী করে বেরিয়েছে) ঠিক তার মতোই মানসিকতা নিয়ে আসে। যেমন গুরু, তেমন চ্যালা।
কিন্তু একটা আর্লি প্রেগন্যান্সি ঠিকঠাক না দেখে, না ইনভেস্টিগেট করে নষ্ট করবার ওষুধ দেওয়ার বিপদ সম্বন্ধে সচেতন নয়। দোকানেও অনেকে OTC দিয়ে দেয়। আমি একবার একটা মেয়েকে দেখেছিলাম, ঐভাবে ওষুধ কিনে এনে টিউবের প্রেগন্যান্সি ফাটিয়ে মরণাপন্ন হয়ে এসেছিল।
এই কোয়াকটা আবার আরেক কাঠি ওপরে। সে ওষুধের স্ট্রিপটাকে কেটে কেটে পাঁচটা ট্যাবলেট আলাদা করে মেয়েটার হাতে গছিয়ে দিয়েছে। ভাবটা এমন, যেন কেউ বুঝতেই পারবেনা, কী ওষুধ দেওয়া হল! মেয়েটা আবার সেই ফয়েলগুলো নিয়েও এসেছে।
ব্যোমকেশ হয়ে ম্যাগনিফাইং গ্লাস লাগিয়ে দেখলাম, একটা জায়গায় পড়তে পারলাম, ওটা মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সির ওষুধ।
ইউএসজি করে দেখলাম, যাকে ভাগাতে চেয়েছে, সে রয়ে গেছে।
এই ওষুধ খেয়ে এখন তার বিকলাঙ্গ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আগে, শুধু অ্যাবরশন করেই অনেক ডাক্তার লাখোপতি হয়েছে। ঐ করেই জিন্দেগী কাটিয়ে দিয়েছে। এখন MTP করবার ডাক্তারই খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তখন পাড়ায় পাড়ায় পাওয়া যেতো।
আমি তাই প্রত্যেককেই বলি, দরজায় ভালো করে আগল না দিলে ঘরে চোর ঢুকতে কতক্ষণ?
ছবিতে সেই কাটা ফয়েলগুলো।
উৎসব ভালো কাটুক সকলের। আকাশে আর মেঘ নেই।
আবার বললাম, মলয়ের পোস্টগুলোতে অনুপ্রাণিত হয়ে এটা লিখে দিলাম।