পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং শহরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে পড়বে টুং। অঞ্জন দত্তের সেই নস্টালজিক ‘দার্জিলিং’ গানের ‘টুং, সোনাদা, ঘুম পেরিয়ে, একা একা রাস্তা ধরে’ র সেই বিখ্যাত টুং। গানটা জনপ্রিয় না হলে বোধহয় কেউ মনেই রাখত না তাকে। পাহাড়ের কোলে আর চা বাগানের মাঝে আরেকটা অচেনা লোকালয় হয়েই কেটে যেতো তার বাকি জীবন টা।
কিন্তু তা হলো না। ১৮৬৪ সালে কার্শিয়াং লাগোয়া টুং এর রিংটং নামের এক চা বাগানের ম্যানেজার হয়ে আসেন ক্রুকশ্যাঙ্ক নামে এক ইংরেজ ভদ্রলোক। সাহেব সারাদিন চা বাগান নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কিশোরী কন্যা মার্গারেট সেই সব নিয়ে চিন্তিত ছিল না মোটেও।
কমবয়সীরা যে ভাবে প্রেমে পড়ে, সেভাবেই সে প্রেমে পড়েছিল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা ঝিরিঝিরি ঝর্ণার, শিখর কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে লেগে থাকা প্রথম সূর্যের সোনালি আলোর আর উপত্যকা উপচে পড়া গাঢ় সবুজ চা গাছের নীরবতার। বাবার হাত ধরে দেশে ফেরার সময়ে সে কথা দিয়ে গিয়েছিল আবার ফিরে আসবে সে এই পাহাড়ের কোলে।
তার সেই ফিরে আসা আর হয় নি। জাহাজে যাত্রা কালীন কোন এক অসুস্থতায় তার মৃত্যু হয়।
সেই মেয়ের স্মৃতিতেই পরবর্তীকালে রিংটং বাগানের নাম পরিবর্তন হয়, যা এখন গুডরিকের “মার্গারেট হোপ” চা বাগান নামে পরিচিত।
এই কাহিনী আমার জানা ছিল। তাই বাগডোগরা এয়ারপোর্টেই গাড়ির ড্রাইভারকে জানিয়েছিলাম টুং এলেই আমায় জানাতে।
সেখানে এখন মার্গারেট হোপ চা বাগানের লাগোয়া খুলেছে একটি টি লাউঞ্জ, যার নাম ‘মার্গারেট’স ডেক’। সেই ঝুলন্ত ডেকে বসে, দামি ক্যাসলটন চা সেবন করতে করতে আপনি দেখতে পারেন সবুজ হয়ে থাকা সেই নীরব উপত্যকা আর চা বাগানের দৃশ্য।
এই এপ্রিলেও যে উপত্যকা ধরে ভেসে আসা হু হু হিমেল হাওয়া আপনাকে একবার হলেও মনে করিয়ে দেবে কোন এক মার্গারেটের কথা, প্রেমিক পাহাড়কে কথা দিয়েও যার আর ফিরে আসা হয়নি।