এ কোনও গল্প নয়। প্রতিদিনকার অসহায় রোজ নামচার কঠিন বাস্তব। আজ বিকেলের চেম্বারে তেত্রিশটি পেশেন্ট দেখেছি। একত্রিশটি জ্বরের রুগী। চব্বিশ জনের করোনার সব লক্ষণ আছে।
এর বাইরেও দুজনকে দেখা মাত্র রেফার করতে হয়েছে। জানি না তাঁরা বেড পেয়েছেন কিনা।
প্রতিদিন ফোন আসছে স্যাচুরেশন ৮৫%। বেড পাচ্ছি না। কি করবো স্যার!?
প্রতিদিন ফোন আসছে ওষুধ পাচ্ছি না। কোথায় পাবো স্যর!?
আমি শুনি। যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করি। অনেক ক্ষেত্রেই পারি না। অসহায় লাগে। ডাবল মাস্ক, ফেস শিল্ডের ভীড়ে লুকিয়ে থাকি স্বার্থপরের মতন।
অনেকেই বড্ড দেরি করে আসছেন। চেম্বারের চেয়ারে ফচফচ সানিটাইজার স্প্রে করে বসতে বসতে নিশ্চিন্ত জানাচ্ছেন: জ্বর তো সেরে গ্যাছে স্যার। শুধু গন্ধ নেই। বুকের মধ্যে হাল্কা একটু চাপ।
স্যাচুরেশন মাপতে গিয়ে চমকে উঠছে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অভি। ৮৯%। তৎক্ষণাৎ বুকের এক্স রে। সাদা সাদা ছোপ গিলে ফেলছে ফুসফুস।
অনেকে আবার প্রথম থেকে আসলেও ভালো রাখতে পারছিনা। তবে স্বস্তির যে সে সংখ্যা টা কম।
এভাবেই দিন আসছে। কেটে যাচ্ছে আরেকটা দিন। একই নিয়মে। পিপিই পরে ঘেমে ঘাম চপচপ শরীরে একজন প্রতিদিন হেরে যাওয়া সৈনিকের মতন ফিরে আসছি ঘরে। বাথরুমের সাবান জলে ধুয়ে যাওয়া ঘাম এ মিশে থাকছে কি কয়েক ফোঁটা কান্না? কে জানে!
পারলে তাড়াতাড়ি আসুন। জ্বর আসলেই ডাক্তার দেখান। অন্তত পরামর্শ নিন। ফোনে হলেও। স্যাচুরেশন মাপুন। কমছে কিনা খেয়াল রাখুন। ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন সমস্যা হলেই।
জানি অনেক কিছুই নেই। সঠিক সময়ে টেস্ট করার উপায় নেই। সরকারি বেসরকারী দু জায়গায়ই অসম্ভব চাপ। রিপোর্ট করেও পাঁচদিন লেগে যাচ্ছে হাতে পেতে। মানুষের রোজগার কমে গেছে অনেক। পরীক্ষা, ওষুধ, মাস্ক, স্যানিটাইজার, অক্সিমিটার সবকিছু করতে গেলে রুগী বাঁচলেও খাবে কি।
তবুও বাঁচতে তো হবেই।
এত শত অনটনের সংসারে আপনি আছেন। আমরাও আছি। সময়ে আসুন।
যুদ্ধটা যে জিততেই হবে।