আজকের পাঁচালি গতকালের পাঁচালীর আরেকটা দিক।
চলুন আরেকবার যাই সেই নিশ্চিন্দিপুরের ভোজ সভায়। পঞ্চাশ জনের খাবার আর পাঁচ হাজার মানুষ। এবার প্রশ্ন হলো কোন পঞ্চাশ জন খাবার পাবে। একটা উত্তর আপনি দিতেই পারেন first come first serve. এটা কেশব নাগের অংকের বইতে হতে পারে কিন্তু বাস্তবে হয়না। এই সরল হিসেব হতে না দেবার জন্য একটি আলোআঁধারিতে থাকা গেস্টাপো বাহিনী সব পাড়ায় সব মহল্লায় মজুদ আছে। পাঠক যারা আমার লেখা পড়ছেন তাদের কারুর আশেপাশে যদি এই গেস্টাপো বাহিনী না থাকে তাহলে আমাকে জানাবেন। আমার ভুল আমি শুধরে নেবো।
আগের লেখাতেই বলেছি হাসপাতালে বিভিন্ন রকমের বেড থাকে। এক বেডে ভর্তিযোগ্য রোগী অন্য বেডে ভর্তি করা যায় না। এবার একটি হাসপাতালের কথা চিন্তা করুন যেখানে চারশো বেড আছে। সেখানে ধরুন মেডিসিন ওয়ার্ডে আপনার রোগী কোনমতে ভর্তি হয়ে গেছে। ডাক্তারবাবু রাউন্ড দিয়ে লিখে দিয়ে গেছেন এনাকে আই সি ইউ তে ট্রান্সফার করতে হবে। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। আপনি শুনেই উতলা হয়ে উঠলেন। নার্স দিদির কাছে সঙ্গে সঙ্গে দেখা করে তাড়া দিতে শুরু করলেন রোগীকে আই সি ইউ তে দ্রুত পাঠানোর জন্য।নার্স দিদি বললেন এখন সম্ভব নয়। আই সি ইউ পুরো ভর্তি আছে। কোনো বেড খালি নেই।
এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এবার শুরু হবে অদৃশ্য গেস্টাপো বাহিনীর খেলা। এরকম সময় দেখবেন উপযাজকের মতো কেউ এসে আপনার সঙ্গে আড়ালে কথা বলতে চাইবে। সেই লোক হাসপাতালের কোনো অস্থায়ী কর্মী হতে পারে। প্রাইভেট এম্বুলেন্সের চালক হতে পারে। অথবা হাসপাতালের সামনে আড্ডা দেয়া কোনো অনুপ্রাণিত সমাজসেবী হতে পারে। সে এসে বলবে বেড খালি হলেই আপনার পেশেন্টের ব্যবস্থা করে দেবে। আপনাকে শুধু কাঞ্চনমূল্য ধরে দিতে হবে। এই মূল্য হাসপাতাল অনুযায়ী এবং বেডের ক্রাইসিস অনুযায়ী কয়েক হাজার থেকে বিশ পঞ্চাশ হাজার হতে পারে।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে এই বন্দোবস্ত হতে পারে।
এই বন্দোবস্ত হবার জন্য একটি সুচারুভাবে তৈরি করা সিস্টেম লাগে। সেই সিস্টেম যে তৈরি আছে সেটা আমিও জানি। আপনিও জানেন।
সম্প্রতি আর জি কর থেকে আশীষ পান্ডে গ্রেফতার হয়েছে। আপনি একটু ভেবে দেখুন তো আর জি কর হাসপাতালে কোনো মাইকে লাল বিভাগীয় প্রধান কি ছিলেন যিনি এই আশীষকুলের নির্দেশ অমান্য করার দুঃসাহস দেখাবে।এই আশীষ একটা নয়। সব হাসপাতালে আছে। হয় সে কোনো অস্থায়ী কর্মচারী। নাহলে হাসপাতালে নিবেদিতপ্রাণ কোনো অনুপ্রাণিত সমাজসেবী।
হাসপাতাল চালায় সুপারিনটেনডেন্ট নামক একটি অবলা প্রজাতি। এরা কোনো কমান্ডো ট্রেনিং করে এই পদে আসেনা। এরা মেডিসিন সার্জারি পড়ে আসা নিরীহ ডাক্তার। এদেরও বউ বাচ্চা থাকে বুড়ো বাবা মা থাকে। এরা কেউ আগুনখেকো বিপ্লবী নয়। সেইজন্য প্রাণে ভয়ও থাকে।
তো এরকম সুপারের কাছে এই গেস্টাপো বাহিনীর কেউ এবার এসে অতি বিনয়ের সঙ্গে বলবে, স্যার অমুক বেড নাম্বারের অমুক পেসেন্ট আমার চেনা। ওনাকে আই সি ইউ তে ট্রান্সফার করে দিন। সুপার যদি নেহাত নতুন আর আনাড়ি হয় তাহলে বলবে সেটা কি করে হয়। ওই পেশেন্টের চেয়েও তো আরো সিরিয়াস পেসেন্ট আছে। সে আগে যাবে।
গেস্টাপো তখন বলবে, স্যার বেডটা দিয়ে দিলে ভালো করতেন স্যার।
এরপর সুপারের কাছে একটি হোয়াটস এপ কল আসবে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে হুমায়ূন কবিরের মতো কোনো অহিংস নেতা সেই একই অনুরোধ করবে যেটা একটু আগে গেস্টাপো করে গেছিলো। সুপারের চোখে তখন একটা দৃশ্যই ভাসবে। ছেলেটা বা মেয়েটা একা স্কুল যাচ্ছে বা ফিরছে। বাড়িতে বউটা একা আছে। বিগত দুইমাস ধরে আরেকটা দৃশ্য সকল ডাক্তারের চোখে ভাসে। তিলোত্তমার ক্ষতবিক্ষত দেহ।
সুপার তখন আই সি ইউ তে ফোন করে বলবে, সিস্টার বেড খালি হলে অমুক ওয়ার্ড থেকে অমুক পেসেন্টকে অনিয়ে নিন।
এই ফোন করে সুপার এক কাপ চা আনিয়ে একটা সিগারেট ধরাবে।
আমরা এটা এখন জেনে গেছি সকল অস্বাভাবিক মৃত্যুই আত্মহত্যা যদি না আর জি কর কান্ডের মতো কোনো আন্দোলন হয়।
এইবার ওয়ার্ডের দিকে আরেকবার ফ্ল্যাশ লাইট ফেলে আজকের কিস্তি শেষ করবো। ওয়ার্ডে যে পেশেন্টরা আই সি ইউ যাবার জন্য অপেক্ষমাণ তারা দেখবে হঠাৎ একটি অনেক কম সিরিয়াস পেসেন্ট আই সি ইউ বেড পেয়ে গেলো। কি করে পেলো সেটা চাপা থাকবে না। সবাই জানবে সুপার টাকা খেয়ে বেড দিয়েছে। বা কোনো জনপ্রতিনিধির কোটায় বেড পেয়েছে।
যারা অপেক্ষমাণ তারা জেনে গেলো বেড যদি পেতেই হয় তাহলে এই গেস্টাপো বাহিনীই সেটা দিতে পারবে। মানুষ তখন এই গেস্টাপো বাহিনীকেই পরম আপন মনে করবে।
ডাক্তার নিজের স্বকৃত রোজগারে খেয়ে পরে হয়ে উঠবে গণশত্রু। গণশত্রুকে মারধর করতে বিষ্ঠা মাখাতে তো বিবেকে লাগার কথা নয়। লাগেও না। এই গেস্টাপো সিস্টেম ডাক্তারদের কাছে বিরাট থ্রেট।
কয়েকটা কথা বলে আজকের কিস্তি শেষ করছি। উচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তি যেমন ডিএম এসপি এসডিও এবং এমএলএ এমপি এদের স্বভাব হলো এরা যখন ফোন করে তখন হোয়াটস এপ কল করে। ইন্টারনেট কল টেলিকমের নজর এড়িয়ে যায়। ফলে পরে প্রমাণ করা কঠিন হোয়াটস এপ কলে কি নির্দেশ এসেছিল।
টালার ওসি সিবিআই এর হাতে ধরা পড়েছে। এটা একটা বাচ্চাও জানে যে ওসি পুরো কাজ বিনীত গোয়েলের নির্দেশে করেছে। এবার এই নির্দেশ যদি হোয়াটস এপ কলে দিয়ে থাকে তাহলে বিনীত গোয়েলকে ধরা শক্ত। সব শাস্তি টালার ওসির হবে। গোয়েল পার পেয়ে যাবে। এই জন্যই নিচুতলার পুলিশ কর্মীরা দাবি তুলেছে তারা হোয়াটস এপ কলে দেয়া নির্দেশ মানবে না।
আরেকবার মনে করিয়ে দি সবাইকে।
WE DEMAND JUSTICE
তোমার আমার একই স্বর
জাস্টিস ফর আর জি কর
(চলবে)