আগেই বলেছি থ্রেট সিন্ডিকেটের পাঁচালি লিখতে হলে ব্যাসদেবও হার মেনে যেতো। এই থ্রেট সিন্ডিকেটের হেড অফিস হলো ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিল। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিল থেকেই থ্রেট সিন্ডিকেটের একটি বড় অংশ অপারেট করে। থ্রেট সিন্ডিকেট চালানোর জন্য মেডিকেল কাউন্সিল কেনো গুরুত্বপূর্সেণটা আজকে বলার চেষ্টা করবো।
সবার জ্ঞাতার্থে প্রথমেই বলে নেবো মেডিকেল কাউন্সিলের মূল কাজ কি। মেডিকেল কাউন্সিল সকল ডাক্তারকে মেডিকেল রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেয়। আপনি ডাক্তারি পাস করলেন। তারপর এই রেজিস্ট্রেশন নম্বর না পেলে আইনত আপনি ডাক্তারি পেশা চালানোর অধিকারী হবেন না। মেডিকেল কাউন্সিলের দ্বিতীয় কাজ হলো যে ডাক্তাররা রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে ডাক্তারি করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠলে তার তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে সাময়িক বরখাস্ত করা বা বড় অপরাধের ক্ষেত্রে পুরোপুরি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়া।
আপনারা দেখেছেন এই রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কি পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। বহু ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীকে পাস করার পর বেআইনিভাবে তাদের রেজিস্ট্রেশন আটকে রাখা হয়েছে। সন্দীপ সুশান্ত সুদীপ্ত বাহিনীর থ্রেট সিন্ডিকেটের এই মেলবন্ধন বহু ডাক্তারি পড়ুয়ার জীবন নরক বানিয়ে ছেড়েছে। অনেককেই হাইকোর্টে মামলা করে রেজিস্ট্রেশন পেতে হয়েছে।
সিনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ভুয়ো অভিযোগ করানো হয়েছে। তারপর তাঁদের হুমকি দিয়ে লক্ষলক্ষ টাকা তোলা নিয়েছে এই সুশান্ত অভিক বিরু বাহিনী।
মেডিকেল কাউন্সিল একটি স্বশাসিত সংস্থা। একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে এর পরিচালক গোষ্ঠী ঠিক হয়। সকল ডাক্তার যাঁদের রেজিস্ট্রেশন আছে তাঁরা ভোট দেন। প্রথমে গোপন ব্যালট বাড়ির ঠিকানায় বা কর্মস্থলের ঠিকানায় যায়। সবাই ভোট দিয়ে মুখবন্ধ খামে সেই ব্যালট পোস্ট করে পাঠিয়ে দেন মেডিকেল কাউন্সিলে। সেখানে সমস্ত ব্যালট পৌঁছে যাবার পর কাউন্টিং করা হয়। সর্বোচ্চ ভোট প্রাপকরা কাউন্সিল ফর্ম করে।
শেষ নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
একটি প্যানেল দাবি করে তারা সরকারপন্থী। সেই প্যানেলের নামগুলো একবার দেখে নিন। ডাঃ সুদীপ্ত রায়, ডাঃ সুশান্ত রায়, ডাঃ অভীক দে, ডাঃ দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ সৌরভ পাল, ইত্যাদি।
এই প্যানেল এরপর যে নোংরামি শুরু করে তার তুলনা নাৎসি জার্মানিতে শুধুমাত্র পাওয়া যেতে পারে। প্রত্যেক মেডিকেল কলেজ আর হাসপাতালে এই থ্রেট সিন্ডিকেটের লোকজন শুরু করে ব্যালট ছিনতাই। কোথাও কোথাও আধিকারিকরা এর বিরোধিতা করেন। কোথাও আবার আধিকারিকরা এই থ্রেট সিন্ডিকেটের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। ফাঁকা ব্যালট ডাক্তারদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে কেড়ে নেয়। তারপর তাতে ছাপ্পা ভোট দিয়ে সেগুলি মেডিকেল কাউন্সিলে পাঠিয়ে দেয়। কোথাও কোথাও কারুর হাতে ব্যালট পৌঁছানোর আগেই প্রিন্সিপাল বা সুপারের কাছে ব্যালট আসার পরেই পুরো হাসপাতালের ব্যালটের প্যাকেট ছিনতাই করে। কারুর হাতেই ব্যালট পৌঁছায় না। এটা করার জন্য যা হুমকি এরা দিয়েছে সেটা লিখলে যেকোনো হলিউডের হরর মুভি হার মেনে যাবে।
হাজার চাপের মধ্যেও রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল নতি স্বীকার করেননি। প্রত্যেকের ব্যালট তাঁর হাতে দেয়া হয়েছে সিসিটিভির সামনে। তারপর ছিনতাই হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। যার ব্যালট তাকে সেটা দিতে গিয়ে অজানা ফোন নং থেকে যে হুমকি পেয়েছি সে ইতিহাস না বলাই ভালো। এই হুমকি আমাকে তীব্র ব্যথা দিয়েছে অন্য একটি ব্যক্তিগত কারণে। যে সরকারপন্থী প্যানেল ব্যালট ছিনতাই আর হুমকি চালিয়ে যাচ্ছিল সেই প্যানেলের প্রার্থী ছিলো আমার ভীষণ ভালো বন্ধু ডাঃ সুমন মুখোপাধ্যায় আর আমার কলেজের সিনিয়র ডাঃ দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদি আপনারা মনে করেন অত্যাচারের এখানেই শেষ তাহলে ভুল ভাবছেন। আর জি করে সন্দীপ ঘোষের চেম্বারে এরা ভোট লুঠের অফিস খুলে বসেছিল। সেখান থেকে জাল ব্যালট পেপার ছাপিয়ে সেগুলোতে ভোট দিয়ে সেগুলো মেডিকেল কাউন্সিলে জমা দেয়। এই জালিয়াতির নেতৃত্ব দেয় সন্দীপ ঘোষ। একদুটো নয় হাজার হাজার জাল ব্যালট। এরপরেও যখন কাউন্টিংয়ের দিন দেখে বেশ কিছু সিট বিরোধীরা পেয়ে যাবে তখন প্রথমে কাউন্টিং বন্ধ করে দেয়। স্রেফ গুণ্ডা দিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের মেডিকেল কাউন্সিল থেকে বের করে দেয়। পুলিশ দিয়ে ঘিরে রেখে ভোটের রেজাল্ট নিজেরা ঘোষণা করে কাউন্সিলের দখল নেয়।
অজস্র ঘটনার মধ্যে কয়েকটি শুধু বললাম ব্যাপারটা বোঝার জন্য। এক কথায় বলা যায় তিলোত্তমা খুন আর ধর্ষিত হবার বহু আগে ভারতীয় সংবিধান খুন হয়েছে মেডিকেল কাউন্সিলে এই সরকারপন্থী প্যানেলের হাতে। আপনাদের আরেকটা কথা বলে দিতে চাই এই সরকারপন্থী প্যানেলের অনেকেই তিলোত্তমা খুন হবার পর সেমিনার রুমে ছিলো। প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত। একটা জিনিস আরো আপনাদের মনে করাতে চাই এই মেডিকেল কাউন্সিল আর কলেজে কলেজে থ্রেট সিন্ডিকেট একটি সুতোয় বাঁধা। সকলের দাবি তারা সরকারপন্থী। সরকার এই দাবির কোনো প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেনি। তাই এটা ধরেই নেয়া যায় এরা সবাই সত্যি কথাই বলেছে।
আজকে এখানেই শেষ করছি। মেডিকেল কাউন্সিল দখল করে তারপর যে অত্যাচার এই সুশান্ত অভিক বিরু বাহিনী চালিয়েছে সেটা পরের কিস্তিতে বলা যাবে।
(চলবে)