একটা ভিড় চাই জানেন। আশপাশে অনেক মানুষ। একে অপরের গায়ের উপরে পড়ে যাচ্ছে। ঠিক যেমনটা ওই নিউ মার্কেটের সামনে হতো। রাস্তার পাশে আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম। ভিড় সামলাতে দড়ি দিয়ে আটকে রাখা হতো। ঠিক সেই রকম আবার নির্দিষ্ট সময় অন্তর দড়ি ফেলা হবে। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারা দেখে আবার আমরা পিলপিল করে একসঙ্গে রাস্তা পার হবো।
একবার মেট্রোতে চড়তে চাই জানেন। ঠিক যেমন দমদম স্টেশনে স্মার্ট কার্ড পাঞ্চ করে সিঁড়ি দিয়ে ছুটে উঠে যেতাম প্ল্যাটফর্মে। হলুদ দাগের ওপারে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতাম শয়ে শয়ে যাত্রী। ধীর গতিতে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকতো। আমরা সবাই শিকারি পাখির মতো ট্রেনের দরজা খোলার অপেক্ষায় থাকতাম। ঠিক সেই রকম আরেকবার অপেক্ষা করতে চাই। কখন আবার দরজা খুলবে, আমরা দূরত্ব বিধি কাকে বলে আর মনে রাখবো না। একটা সিট জয়ের জন্য একে অপরের সঙ্গে একেবারে গুঁতোগুঁতি করে এগিয়ে যাবো। যে সিট পাবো, তার মুখে বিজয়ীর হাসি লেগে থাকবে।
একটা বিকেল ফিরে পেতে চাই। সেই বিকেলে মা টেনেটুনে আমাকে বাজারে নিয়ে যাবে। আমি বাড়িতে বসে থাকার জন্য আকুলি বিকুলি করবো। একটু অলসভাব দেখাতে চাইবো। মা কিছু শুনবে না। বাজারের এক দোকানে গিয়ে মা সংসারের টুকিটাকি জিনিসের দরদাম করবে। আমি দূরে ভিড় করে থাকা ফুচকাওয়ালর দিকে চেয়ে থাকবো। মায়ের কেনাকাটার আর সময় দেওয়া যাবে না। ধৈর্য্য ধরতে পারবো না। ওই ভিড়ের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াবো। হাতে শালপাতা নিয়ে অপেক্ষা করবো।
সেই সন্ধ্যার অপেক্ষায় বসে আছি। যখন ল্যাপটপের সামনে বাড়ির সকলে আবার বসবো। পরের ছুটিতে ৫ দিন ৬ রাত নাকি ৬ দিন ৭ রাতের প্যাকেজ নেবো বলে দফায় দফায় আলোচনা করবো। পরের দিন বুকিং করবো বলায় বাড়ির খুদেরা বেজায় রাগ করবে। ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে না তো। পোটলাপুটলি বেঁধে কাতারে কাতারে লোক বেড়াতে যাচ্ছে। ট্রেনে যে একটাও সিট নেই।
এমন একটা দিন দেখতে চাই, যখন আমার ছেলে মাঠে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গোল্লাছুট, ক্রিকেট, ফুটবল খেলছে। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে, ঘাড়ের উপরে উঠছে। একটা হৈ হৈ কাণ্ড বাঁধাচ্ছে।
এমন অনেক দামি ইচ্ছে মনের মধ্যে জমিয়ে রেখেছি। জানি না, এই ইচ্ছেগুলো কখনো পূরণ হবে কিনা। কারণ, আমরা সবাই যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, সেই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার ইচ্ছেটুকু এ দেশের সরকারের আছে কিনা!
একজন ‘অভি’নেতা ব্যস্ত সাফাই দিতে! আরেকজন তাঁর হেভিওয়েটদের নিয়ে! আর তার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে ভ্যাকসিন, বেড, অক্সিজেনের মতো বিষয়গুলো। কেউ আশ্বস্ত করছে না, রোগ হলে হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে না। অক্সিজেনের জন্য সাহায্য চাইতে হবে না। প্রয়োজন হলেই তা পাওয়া যাবে। টিকার জন্য কামড়াকামড়ি করতে হবে না। হাসপাতালে গেলে টিকা পাবো। কার্যকরী টিকা পাবো। ইচ্ছে মতো টিকার ডোজের গ্যাপে পরিবর্তন আনা হবে না। আমরা একটা নূন্যতম পরিষেবা চাই। সর্বদা এই অবিশ্বাস নিয়ে বাঁচা বড় কঠিন। নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন হয়েছে। কেন তাঁরা দায়বদ্ধ থাকবেন না? কেন প্রশ্ন উঠবে ভ্যাকসিনের মান নিয়ে?
করোনা মহামারির তৃতীয় ঢেউ আসছে। টিভির সামনে কান্নাকাটি করা ছাড়া সত্যিই কি সরকার আর কিছু করছে! দ্বিতীয় ঢেউয়ের অশনি সংকেতে দেশের প্রশাসন বিশেষ পাত্তা দেয়নি। সেই এক ভুল কি এবারেও হবে! আর মাশুল গুনতে হবে আমাদের! আমরা যারা এখনো মারা যাইনি। কিন্তু প্রতিদিন পরিচিত মানুষের মৃত্যু মিছিল দেখছি, এই বেঁচে থাকা কি সুস্থ জীবন যাপনের মাপকাঠি হতে পারে? সরকার এই প্রশ্নের উত্তর দেবে না? এরপরে নাকি মহামারির প্রকোপ আছড়ে পড়বে শিশুদের উপরেও। সরকার এখনো হাত গুটিয়ে থাকবে! শিশুদের জন্য দেশে কতগুলো বিশেষ আইসিইউ-র ব্যবস্থা হয়েছে? কোন কোন হাসপাতালের পেডিয়িট্রিক বিভাগ চরম পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে? আমরা জনগণ সেই তথ্য কবে জানতে পারবো! আর যে তথ্যের গোপনীয়তা সহ্য হচ্ছে না।
আমরা রোগ থেকে বাঁচতে সরকারের সাহায্য চাই। আর এই চাহিদাটুকু নাগরিক হিসাবে করার অধিকার আমাদের আছে। এ কথা সরকার কবে বুঝতে পারবেন!
Excellent.
খুব সুন্দর লেখা । অভিনন্দন ।