করোনা অতিমারির বিশ্বে আমাদের যাপিত বর্তমান সময় – সঠিক অর্থে বললে দিন দশেক হল (৬.০৭.২০২০ থেকে) – ভীষণভাবে আলোড়িত। প্রশ্ন উঠেছে করোনা ভাইরাস কি বায়ুবাহিত? তাহলে এতদিন কাশি, হাঁচি, থুতু ফেলা ইত্যাদি জৈবনিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া ড্রপলেট বা ছোট ছোট জলবিন্দুকে (যার মধ্যে ভাইরাসের কণা আছে) যে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল তা কি ভুল? কিংবা তার সাথে এ আরেক নতুন বিপদ এসে জুড়ে গেল সংক্রমণের পদ্ধতিতে? খানিকটা বিস্তারে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা আমার এ প্রবন্ধে। প্রসঙ্গত বলে রাখি করোনাকে বায়ুবাহিত (aerosol transmission) বলা হলেও এটা ঋতু পরিবর্তনের সময়ে যেভাবে বিভিন্ন পরাগরেণু কিংবা কিছু ভাইরাস বা ফাঙ্গাস যেমন বায়ুবাহিত হয়ে এক অঞ্চল থেকে দূরবর্তী আরেক অঞ্চলে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং অ্যালার্জি বা অন্যান্য রোগের সৃষ্টি করতে পারে এক্ষেত্রে সেরকমটা ঘটেনা। শুধু সংক্রমিত হবার ধরন, সম্ভাবনা এবং পরিবেশ ভিন্ন মাত্রা নেয়। এমনিতেই সার্স-কোভ-২ অতিমাত্রায় সংক্রামক এর গায়ে থাকা স্পাইক প্রোটিনের জন্য। তারপরে যদি সংক্রমণের পরিসর আরও বৃদ্ধি পায় তাহলে সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মী এবং বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ বাড়ে বৈকি!
বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকেরা বেশ ক’দিন ধরেই কিছু প্রশ্নের সঠিক জবাব পাচ্ছিলেন না। যেমন, চিনের কোন রেস্তোরাঁয় ৬ ফুটের বেশি ব্যবধান রেখে বসার পরেও বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হল। কিংবা আমেরিকায় ঘরের মধ্যে একটি গানের রিহার্সালের (Skagit Valley Chorale group) পরে ৬১ জন গায়ক-গায়িকার মধ্যে ৩৩ জন সংক্রমিত হল। এরকম বিক্ষিপ্ত বেশ কিছু ঘটনা বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের নজরে আসছিলো যা ড্রপলেট পদ্ধতি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছেনা। কিন্তু WHO এবং আন্তর্জাতিক মহলে মান্যতা পেয়ে এসেছে ড্রপলেট পদ্ধতি। এর সাথে অনুষঙ্গ ছিলো fomite বা বিভিন্ন সংক্রামিত স্থান, যেমন দরজার হাতল বা বেসিন ইত্যাদি, যেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
আসলে ১৯৩০-এর দশক থেকেই পেশায় ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম ওয়েলসের ধারণানুযায়ী বিজ্ঞানীরা মেনে আসছিলেন যে ড্রপলেট দিয়েই সংক্রমণ হয় এবং বড়ো ড্রপলেট ২ মিটারের বেশি বাতাসে ভেসে থাকতে পারেনা। সেজন্য বারংবার “সোশ্যাল” এবং “পার্সোনাল” ডিসট্যানসিং-এর ক্ষেত্রে অন্তত ৬ ফুটের ব্যবধান মান্যতা পেয়ে এসেছে। যেমনটা এতদিন ধরে WHO বা ভারত সরকার বলে এসেছে। এর মধ্যে অসম্পূর্ণতা ছিল, কিন্তু ভুল কিছু ছিলনা। কারণ প্রায় ১০০ বছর ধরে এ ধারণাটিই গ্রাহ্যতা পেয়ে এসেছে।
১২ বছর আগে অক্টোবর ৯, ২০০৮-এ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ প্রকাশিত হল “Coughing and Aerosols”। এখানে বিশেষ পদ্ধতিতে ছবি তুলে দেখানো হল – যদি কেউ ১/২ সেকেন্ড কাশে তাহলে সেই ড্রপলেটের প্রতি ঘন্টায় ১৮ মাইল বেগ অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ৮ মিটার বেগ দেখা যায় (“A maximum airspeed of 8 m per second (18 mph) was observed, averaged during the half-second cough.”)। জার্নালে ব্যবহৃত নীচের ছবিগুলো থেকে এ ধারণা পরিষ্কার হবে।
একই জার্নালে আগস্ট ২৫, ২০১৬-তে প্রকাশিত হল “A Sneeze”। এখানে বলা হল – “The ejection lasts up to 150 msec (top row) and then transitions into a freely evolving turbulent puff cloud (middle and bottom rows). The largest droplets rapidly settle within 1 to 2 m away from the person. The smaller and evaporating droplets are trapped in the turbulent puff cloud, remain suspended, and, over the course of seconds to a few minutes, can travel the dimensions of a room and land up to 6 to 8 m away.” অর্থাৎ দু’ধরনের ড্রপলেটের মধ্যেকার পার্থক্যের উপাদান চিকিৎসাবিজ্ঞানের বোধে এবং জ্ঞানে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হচ্ছিল। জার্নালে ব্যবহৃত নীচের ছবিদুটো থেকে এ ধারণা আরও স্পষ্ট হবে।
জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিজেজ-এ প্রকাশিত হল “Airborne or Droplet Precautions for Health Workers Treating Coronavirus Disease 2019?” (16.04.2020)। এখানে বলা হল – “Available studies also show that SARS-CoV-2 can be detected in the air, and remain viable 3 hours after aerosolization. The weight of combined evidence supports airborne precautions for the occupational health and safety of health workers treating patients with COVID-19.”
মে ২৭, ২০২০-তে সায়ান্স-এর মতো পত্রিকায় একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হল – Reducing transmission of SARS-CoV-2। এ গবেষণাপত্রে বলা হল – “Respiratory infections occur through the transmission of virus-containing droplets (>5 to 10 μm) and aerosols (<5 μm) exhaled from infected individuals during breathing, speaking, coughing, and sneezing.” বাংলায় বললে, ভাইরাস-ঘটিত ইনফেকশন ড্রপলেট এবং এরোসল-বাহিত হয়ে দুভাবেই ঘটে। ড্রপলেটের ক্ষেত্রে এর মাপ ৫ থেকে ১০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে, এরোসলের ক্ষেত্রে এর মাপ ৫ মাইক্রোমিটারের কম – সাধারণত ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার। এরপরে ব্যাখ্যা করে বলা হল, আমাদের প্রথাসিদ্ধ বা ট্র্যাডিশনাল ধারণার বাইরে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে – “Traditional respiratory disease control measures are designed to reduce transmission by droplets produced in the sneezes and coughs of infected individuals. However, a large proportion of the spread of coronavirus disease 2019 (COVID-19) appears to be occurring through airborne transmission of aerosols produced by asymptomatic individuals during breathing and speaking.” এ গবেষণাপত্র থেকে বোঝা যায় উপসর্গহীন অথচ সংক্রমিত মানুষ কথা বললে বা শ্বাসপ্রশ্বাস নিলেও এরোসলের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াবে। এখানেই বিপত্তি।
এখানে ব্যাখ্যা করে বলা হল – “Smaller droplets and aerosols will evaporate faster than they can settle, are buoyant, and thus can be affected by air currents, which can transport them over longer distances.” অর্থাৎ, মাধ্যাকর্ষণের টানে মাটিতে পড়ে যাবার আগে এই অতি ক্ষুদ্র কণাগুলো বাষ্পীভূত হবে এবং বায়ুপ্রবাহের কারণে অনেকটা দূর অব্দি যেতে পারবে।
আরও দেখানো হল – “A study in hospitals in Wuhan, China, found SARS-CoV-2 in aerosols further than 6 feet from patients, with higher concentrations detected in more crowded areas. Estimates using an average sputum viral load for SARS-CoV-2 indicate that 1 min of loud speaking could generate >1000 virion-containing aerosols. Assuming viral titers for infected super-emitters (with 100-fold higher viral load than average) yields an increase to more than 100,000 virions in emitted droplets per minute of speaking.” এর অর্থ, এক মিনিট কথা বললে ১০০০-এর বেশি ভাইরাস-সমৃদ্ধ এরোসল তৈরি হয়। আবার যাদেরকে “super-emitters” বা অতিরিক্ত সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে ধরা হয় তাদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১০০ গুণ বেড়ে গিয়ে ১ মিনিট কথা বললে ১,০০,০০০-এর চেয়ে বেশি ভাইরাস কণা ছড়িয়ে পড়বে। নীচের ছবিতে এটা পরিষ্কার হবে। বোঝা যাবে কেন মুখে মাস্ক ব্যবহার করা এত জরুরী।
সায়ান্স-এর প্রবন্ধটিতেই আবার ফিরে আসি। ওখানে বলা হল, ১৯৩০-এর দশকে যে স্টাডিগুলো করা হয়েছিল তাতে দেখা গিয়েছিল যে একটি ১০০ মাইক্রনের ড্রপলেট ৮ ফুট গিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে ৪.৬ সেকেন্ডে, কিন্তু বর্তমান স্টাডিতে দেখা যাচ্ছে একটি ১ মাইক্রনের এরোসল মাটিতে পড়ে যেতে সময় নেবে ১২.৪ ঘন্টা। অর্থাৎ এসময়টা এরোসলটি বাতাসে ভেসে থাকবে। এই অর্থে এটা বায়ুবাহিত বলে ধরা হবে। কিন্তু উল্লেখ করার বিষয় হল যখন ১৯৩০-এর দশকে এই স্টাডিগুলো করা হয়েছে তখন “the technology did not exist for detecting submicron aerosols”। কিন্তু পরবর্তী প্রায় ১০০ বছর ধরে এটাই নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাধান্যকারী ভুমিকা নিয়েছে।
গবেষণাপত্রটিতে আরও বলা হল – “Asymptomatic individuals who are speaking while exercising can release infectious aerosols that can be picked up by airstreams.” এজন্য বদ্ধ ঘরে সে জিম হোক বা রেস্তোরাঁ হোক সবজায়গাতেই এ সমস্যা থাকবে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয় সেখানে বাতাসের আভ্যন্তরীন প্রবাহ (internal circulation) হয়। এজন্য ভালোভাবে বাতাস খেলতে পারে এরকম জায়গা বা ঘর সংক্রমণের বিচারে বেশি নিরাপদ। প্রবন্ধটির শেষ সতর্কবাণী – “Aerosol transmission of viruses must be acknowledged as a key factor leading to the spread of infectious respiratory diseases. Evidence suggests that SARS-CoV-2 is silently spreading in aerosols exhaled by highly contagious infected individuals with no symptoms. Owing to their smaller size, aerosols may lead to higher severity of COVID-19 because virus-containing aerosols penetrate more deeply into the lungs.” অর্থাৎ, বিপদ হল ভাইরসকে নিয়ে বাতাসে ঘুরে বেড়ানো এই এরোসলগুলো ফুসফুসের অনেক গভীরে ঢুকে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা ড্রপ্লেটের ক্ষেত্রে দেখা যায়না। প্রবন্ধটির শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হল, বর্তমানে যেসব গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চলছে সেগুলো “is already leading to a better understanding of the importance of airborne transmission of respiratory disease.” অর্থাৎ, শুধু কোভিড-১৯ নয় শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে এমন অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও বায়ুবাহিত সংক্রমণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
সায়ান্স-এ প্রকাশিত প্রবন্ধটির আগে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল “Profile of a killer virus” (৭ মে, ২০২০) শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র। সেখানে দেখানো হয়েছিল – যদি একজন প্রতিবেশির কাশি থেকে ১০টি ভাইরাস পার্টিকল বেরোয় তাহলে আমার গলায় ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা আছে। আবার যদি প্রতিবেশি আরও কাছে চলে আসে বা কম দূরত্বে থাকে তাহলে তার কাশিতে বেরনো ১০০টি ভাইরাস পার্টিকল সরাসরি গলা থেকে ফুসুফুসে চলে যাবে (A neighbour’s cough that sends ten viral particles your way might be enough to start an infection in your throat, but the hair-like cilia found there are likely to do their job and clear the invaders. If the neighbour is closer and coughs 100 particles towards you, the virus might be able get all the way down to the lungs)। কিন্তু একটি প্রহেলিকার জবাব দিতে পারেনি। বলা ভালো প্রহেলিকাটি গবেষকদের গোচরে এনেছিল – “it might work its way down to the lungs and debilitate that organ. How it gets down there, whether it moves cell by cell or somehow gets washed down, is not known”।
এরপরে Clinical Infectious Disease-এ “Accepted Manuscript” হিসেবে প্রকাশিত হল সাড়া জাগানো গবেষণাপত্রটি – “It is Time to Address Airborne Transmission of COVID-19” (৬.০৭.২০২০)। মূল গবেষক দু’জন Lidia Morawska এবং Donald K. Milton। কিন্তু এতে স্বাক্ষর করলেন আরও ২৩৭ জন বিশ্ববিশ্রুত, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী – মোট ২৩৯ জন। এটাকেই চিঠি হিসেবে পাঠানো হল WHO-র কাছে। এখানে খুব স্পষ্ট করে বলা হল – “transmission via airborne microdroplets is an important pathway. Viral RNA associated with droplets smaller than 5 μm has been detected in air, and the virus has been shown to maintain infectivity in droplets of this size. Other viruses have been shown to survive equally well, if not better, in aerosols compared to droplets on a surface.”
আরেকটু বিশদে যাবার আগে আমরা এটা ভালো করে বুঝে নিই যে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে শেষ অব্দি আন্তর্জাতিকভাবে Airborne Transmission হিসেবে স্বীকৃতি মেলা একধরনের paradigm shift. ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বিজ্ঞানের দার্শনিক টমাস কুনের (Thomas Kuhn) আলোড়ন ফেলে দেওয়া গ্রন্থ The Structure of Scientific revolutions। এ গ্রন্থে কুন দেখিয়েছিলেন যে আমরা একটা প্যারাডাইমের মধ্যে “normal science” বা স্বাভাবিক বিজ্ঞানের চর্চা করি। এরপরে ক্রমাগত বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি জমা হতে থাকে সে প্যারাডাইমের মধ্যে। একটা সময়ের পরে আর পুরনো প্যারাডাইমের মধ্যে থাকা যায়না, এটা ভেঙ্গে যায়। একটি নতুন প্যারাডাইম তৈরি হয়। একে কুন বলেছেন “প্যারাডাইম শিফট”। এবং বিশ্বের সারস্বত ও বৈজ্ঞানিক সমাজের প্রধান অংশ একে গ্রহণ করেছেন, মান্যতা দিয়েছেন।
আমার বিচারে আজকের অতিমারির সময়ে ১৯৩০-এর দশক থেকে গৃহীত ড্রপলেট এবং এরোসল সংক্রান্ত ধারণার জগতে করোনা ভাইরাসের Airborne Transmission-এর তত্ত্ব একটি প্যারাডাইম শিফট, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক বিষয়কে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অতীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ একটি অভ্যাসের পরিবর্তন এরকম প্যারাডাইম শিফট ঘটিয়েছিল – অস্ট্রিয়ার চিকিৎসক-বিজ্ঞানী Ignaz Philipp Semmelweis-এর প্রবর্তন করা সার্জারির আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বাধ্যতামূলক অভ্যেস। তাঁর প্রবর্তিত অতি সামান্য (যেখানে কোন বড়ো প্রযুক্তির চেকনাই নেই) এই নতুন পদ্ধতি জন্মের পরে মায়েদের মৃত্যুর হার লক্ষ্যণীয়ভাবে কমিয়ে দিল। তাঁকে বলা হত “saviour of mothers”। পরবর্তীতে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ থেকে লিখলেন Etiology, Concept and Prophylaxis of Childbed Fever গ্রন্থটি।
বায়ুবাহিত করোনা ভাইরাস নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ খবরের (৪.০৭.২০২০) শিরোনাম হল – “239 Experts With One Big Claim: The Coronavirus Is Airborne”। এ লেখায় ভবিষ্যতের দিক বদলের ইঙ্গিত দেওয়া হল – “If airborne transmission is a significant factor in the pandemic, especially in crowded spaces with poor ventilation, the consequences for containment will be significant. Masks may be needed indoors, even in socially-distant settings. Health care workers may need N95 masks that filter out even the smallest respiratory droplets as they care for coronavirus patients.” এ পত্রিকাতেই পরে (৬.০৭.২০২০) আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হল “Airborne Coronavirus: What You Should Do Now” শিরোনামে। এখানে জানানো হল – “Aerosols are released even when a person without symptoms exhales, talks or sings, according to Dr. Marr and more than 200 other experts, who have outlined the evidence in an open letter to the World Health Organization.”
এর ক’দিনের মধ্যে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হল (৮.০৭.২০২০) “Mounting evidence suggests coronavirus is airborne — but health advice has not caught up”। এখানে যে পর্যবেক্ষণটি রাখা হল সেটি আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ – “Since the 1930s, public-health researchers and officials have generally discounted the importance of aerosols — droplets less than 5 micrometres in diameter — in respiratory diseases such as influenza. Instead, the dominant view is that respiratory viruses are transmitted by the larger droplets or through contact with droplets that fall on surfaces or are transferred by people’s hands. When SARS-CoV-2 emerged at the end of 2019, the assumption was that it spread in the same way as other respiratory viruses and that airborne transmission was not important.” অস্যার্থ, ১৯৩০-এর দশক থেকেই এরোসলের গুরুত্ব বিশ্বে সেভাবে গ্রাহ্য হয়নি। ২০১৯-এর শেষভাগে যখন সার্স-কোভ-২ আত্মপ্রকাশ করলো তখনও এটা ধরে নেওয়া হয়েছে অন্যান্য যেসব ভাইরাস শ্বাসকষ্ট ঘটায় এটা সেগুলোর মতোই ছড়ায়। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা যখন “created aerosols of the new coronavirus, they remained infectious for at least 16 hours, and had greater infectivity than aerosols of the coronaviruses SARS-CoV and MERS-CoV”। বিষয়টা এরকম হল – ২০০৮ থেকে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে একই বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য জমা হচ্ছিল যেগুলো শেষ অব্দি আর পুরনো প্যারাডাইম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিলোনা। ২০২০-তে এসে সার্স-কোভ-২ নিশ্চিতভাবে রেস্পিরেটরি ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন প্যারাডাইম শিফট ঘটালো – বায়ুবাহিত সংক্রমণ।
এখানেই সে প্রসঙ্গ আসবে – নতুন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার এবং সংক্রামিত করার ক্ষেত্রে যে তত্ত্ব এলো সেটা একটা প্যারাডাইম শিফট। কিন্তু, নেচার-এর পর্যবেক্ষণে, একটি বড়ো প্রশ্নচিহ্ন এখনো রয়ে গেছে বিজ্ঞানীদের সামনে – “Researchers say that one big unknown remains: how many virus particles are needed to trigger an infection?” কতগুলো ভাইরাস লাগে এই মারণান্তক রোগ ঘটানোর জন্য। এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে এর উত্তর অজানা। কিন্তু মুখে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, দূরত্ব রক্ষা করে চলা এগুলো জীবন যাপনের একান্ত উপাদান হয়ে গেলো। The world will never the same again – পৃথিবী আর কখনো আগের মতো হবেনা। এই আমূল পরিবর্তন ঘটালো একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস যারা নিজেদের চেনা বাসভূমি বাদুড় বা অন্য কোন প্রাণীকে ছেড়ে মানুষকে নিজের বাসস্থান হিসেবে গড়ে নিয়েছে মানুষের শরীরকে। এর পটভূমিতে রয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে কর্পোরেট পুঁজির সর্বগ্রাসী লোভ এবং প্রকৃতির ওপরে নিরন্তর আগ্রাসন (আমি গুরুচণ্ডালীর পাতাতে এর আগে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছি)। এর সাথে যুক্ত করবো মন্থলী রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত (১৯.০৩.২০২০) মাইক ডেভিসের লেখা “The Monster is Finally at the Door” প্রবন্ধের পর্যবেক্ষণ – “The current pandemic expands the argument: capitalist globalization now appears to be biologically unsustainable in the absence of a truly international public health infrastructure. But such an infrastructure will never exist until peoples’ movements break the power of Big Pharma and for-profit healthcare.” আমরা নিশ্চয়ই ভেবে দেখবো এ পর্যবেক্ষণটি।
পেছনে ফিরে আবার নজর রাখি নেচার-এ তোলা প্রশ্নটিতে – কতগুলো ভাইরাসের প্রয়োজন হয় একজন মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে তার উত্তর পেতে আবার কঠোর গবেষণা হবে, নতুন নতুন তথ্য উঠে আসবে। এভাবেই তো বিজ্ঞান এগোয়। এখানে মনগড়া ধারণা, কল্পবিজ্ঞান বা pseudoscience-এর (সে গোমূত্র কিংবা রামদেববাবা যাই হোকনা কেন) কোন স্থান নেই।
(এ প্রবন্ধটি প্রায় একই শিরোনামে ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে গুরুচণ্ডালী পত্রিকায় ১৩.০৭.২০২০-তে প্রকাশিত হয়েছে)
খুব ভালো লাগলো
Thank you so much Sir
It is very helpful to us
খুব শক্তিশালী, যুক্তিগ্রাহ্য প্রবন্ধ। বহুল পঠিত হওয়া প্রয়োজন।
ভাইরাস ও তার সংক্রমণের প্রকৃতি নির্ধারণ তো চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
জটিল প্রশ্ন। সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত। সকলের পড়ার মত প্রবন্ধ।
Excellent article. Very clearly explained. This is probably the first to talk about paradogm shift in our understanding of airborne transmission – it will remain a significant first.
Thank you all! Indira, Kanchan, Bhaskar and other friends thank you as you have seriously read the article – engaged reading.
সময়োপযোগী মূল্যবান লেখা, বিষয়ের গভীরতা ও গবেষণা ছাড়াও বিশেষ করে আমার যেটা ভাল লাগে নিখুঁত লেখার স্টাইল, স্বচ্ছতা, লালিত্য । বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য সাহিত্য খুব কম লেখক লেখেন বা লেখার ক্ষমতা রাখেন, তাঁদের মধ্যে জয়ন্ত-দাই অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ (**জয়ন্তদা কে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি বলে একথা লিখছি না**) ।
—
তো যাইহোক, দুটো কথা ।
এক, এই লেখাটি থেকে যেটা বেরিয়ে আসছে, মাসক পরার প্রয়োজনীয়তা। বিশেষ করে যখন করোনাভাইরাস প্রবল ভাবে ছড়াচ্ছে, তখন একটা ব্যাপার আমরা দেখেছি যে সাধারণ মানুষকে যদি বোঝান যায় যে এমনভাবে থাকবেন যেন মনে করেন আপনি করোনা আক্রান্ত কিন্তু কেউ জানে না, তাহলে আপনি কি ভাবে থাকবেন যাতে আপনার থেকে অন্য কারো সংক্রমণ না হয়? এই জায়গাটিতে মুখে মাস্ক পরার সচেতনতার কথাটি আসে, বিশেষ করে এই প্রবন্ধটি (ছবি সহ) মানুষের মধ্যে প্রচারিত করতে পারলে বা এই প্রবন্ধটিকে কেন্দ্র করে যদি ইনফেকশন ছড়ানোর একটি ছবি বা কমিক তৈরী করে বা পোস্টার তৈরী করে দেওয়া যায়, তাহলে বহু মানুষের উপকার হবে । এই লেখাটি সে দিক থেকে বিশেষ করে পাঠযোগ্য/পঠিতব্য ।
দুই, এই পয়েন্ট-টা হয়ত কিঞ্চিৎ তাত্ত্বিক মনে হতে পারে, বাতাসে বাহিত কণা কতদূর ছড়াচ্ছে এই ধারণার গবেষণাপ্রসূত ফলকে কি প্যারাডাইম শিফট বলার সময় হয়েছে? আমার কাছে এই আর্গুমেন্ট-টি স্পষ্ট নয়। একটা ব্যাপার প্রণিধানযোগ্য যে প্রায় সবকটা স্টাডি স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক, বা চিকিৎসার পরিপ্রেক্ষিতে করা। চিকিৎসার সেটিং এ নিশ্চয় প্রযোজ্য, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে (পাশে কথা বলা ধরা যাক), দূরত্বের এখন যে নির্দেশাবলী তার থেকে দূরত্ব কতটা পরিবর্তন করার প্রয়োজন , বা মাস্ক কখন কোথায় পরার কথা সে ব্যাপারগুলো কিন্তু এখনো স্পষ্ট নয়।
১৩.০৭.২০২০তে প্রকাশিত লেখাটা পড়েছি। এই লেখাটা আরও বিস্তারিত, তাই আমার পক্ষে আরও ভাল।
সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হয় যে ভাবে রোগ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ছড়াচ্ছে তাতে গোষ্ঠী সংক্রমন হয়তো শুরু হয়ে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাইরাসটি বায়ুবাহিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেও থাকতে পারে।
তবে পরিস্থিতি আমার মত মানুষের চোখে যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং কোন আশার আলো আপাততঃ দেখতে পাচ্ছি না।
Lovely presentation sir
Khub bhalo bhabe viruser khomota somporke bola hoyechhe…
Oneke r kachhe pouchok.