——————————-
Dr Panna Lal Ghosh
NRS Medical College
1952 Batch
———————————
প্রবেশ ও প্রশিক্ষণ
১৯৫৮ সাল। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ডাক্তারী পাশ করে ইন্টার্নশিপের পর শিশুবিভাগে হাউস্টাফশিপ করছি। মাইনে সামান্য, মাসে ৭৫ টাকা। একদিন ওয়ার্ড রাউন্ড দিয়ে আউটডোর শেষ করে ক্যান্টিনে ফিরছি। হঠাৎ শুনি ক্যান্টিনেই শোরগোল। গিয়ে দেখি বডি বিল্ডিং-এ নীলরতনশ্রী – শৈলেনদা। গতবছর সেনাবাহিনীতে short service এ যোগ দিয়েছে। সেনা ডাক্তারদের চাকরি নিয়ে গুণগান করছে। পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা, থাকা-খাওয়া ও সুরক্ষার বন্দোবস্ত নিয়ে চায়ের কাপে তুফান তুলছে। এখন পুজোর সময় এক মাসের ছুটিতে এসেছে। তারপর সেনা জীবনের অনেক সুযোগ-সুবিধা জানলাম।
আমরা কয়েকজন বন্ধুবান্ধব যুক্তি করলাম। অন্য জায়গায় চাকরীর চেষ্টা ছেড়ে সেনাতেই যাওয়া মনস্থ করলাম। কিন্তু short service মানে ৫-৭ বছর সার্ভিস, তারপর ফিরে আসা। চাইলে permanent হওয়া যায়, তবে তার জন্য পরীক্ষা দিতে হয়। সহজ নয়। যদিও short service join করতে খুব বেশী কাঠখড় পোড়াতে হয় না। Application এবং interview। Demand আছে, তাই ভর্তিও সহজ। তখন জানতাম না যে, সেনাতে যে আগে যোগ দেবে, সে-ই সিনিয়র। বেতন এবং প্রোমোশনের দিক থেকে। তবে permanent commision পাওয়া সময় সাপেক্ষ। আমি ও আমার বন্ধুরা মনে মনে ঠিক করলাম সেনাতেই যাব- তবে অনিশ্চয়তার short service নয়। Permanent commision-এ যাব এবং পরীক্ষা দিয়ে।
খোঁজ খবর করলাম। পিজি হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন মেজর জেনারেল (Retd.) গুপ্ত। উনি আর্মিতে ভর্তির জন্য ক্লাস নিতেন। সুবিধাই হল। ওনার কাছে জানলাম permanent commission-এর জন্য UPSC-তে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। আর সেনাবাহিনীতে প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের উপর জোর বেশী দেয়। উনি ওই সাবজেক্টে Stress দিয়ে বেশ কিছু ক্লাস নিলেন। আমরা ও অন্য কলেজের ডাক্তাররা ক্লাস করলাম এবং ১৯৫৯ সালের পরীক্ষার জন্য তৈরী হতে লাগলাম।
এমন সময় আমার বাবা কঠিন অসুখে রোগগ্রস্ত হলেন। অনেক দিন প্যারালাইসিস থাকার পর এবং আমাদের হাসপাতালে অনেক দিন চিকিৎসার পর সিদ্ধান্ত হয় ব্রেন টিউমার অপারেশন করতে হবে। তখন পিজি হাসপাতালে বিশিষ্ট নিউরোসার্জেন অশোক বাগচী এই অপারেশন করেন। উনি রাজী হলেন এবং অপারেশন করে জানা গেল – Fungal abscess of brain হয়েছিল। A rare disease. কিন্তু তখন anaesthesia এবং brain surgery এত উন্নত হয়নি। Hypothermia করে অপারেশন করা হয়েছিল। কিন্তু বাবা সুস্থ হল না। বাড়িতে নিয়ে আসা হল ওই অবস্থায়। মাঝে মাঝে convulsion হত। অসময়েই ৫৩ বছর বয়সে মারা যান।
আমার আর সেনা যাওয়ার পরীক্ষা দেওয়া হল না। কয়েকজন বন্ধু পরীক্ষা দিয়ে চাকরীতে যোগ দিল।
মাথার উপর দাদা ছিলেন। আর দুই ছোট ভাই পড়াশুনা করছে। রোজগার করতে হবে। কিন্তু বাড়িতে সকলের আপত্তি আমার সেনাতে যাওয়া নিয়ে। নীলরতন হাসপাতালে একটা ছোট চাকরী clinical pathologist জোগাড় করলাম। আর ভেতরে ভেতরে পরের বছরের জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। ১৯৬০ সালে UPSC-এর পরীক্ষা দিলাম এবং ভালভাবেই পাশ করলাম। সেনায় যোগদান করব – বাড়িতে মিথ্যা বলতে হয়েছিল যে ৭ বছর পর ফিরে আসছি।
২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৬১ সালে direct permanent commission নিয়ে সেনাতে যোগ দিলাম। আমাকে AMC centre লক্ষ্ণৌতে যোগদান করতে হল। আমাদের কলেজের আরো তিনজন যোগ দিল।
এবার আমাদের শুরু হল প্রশিক্ষণ। প্রথম তিনমাস শরীরচর্চা এবং সেনার Dress-এ marching, saluting, behaviour training ও shooting practice.আমাদের বাসা থেকে training centre প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া। সময়ের নিয়মে প্রায় অসম্ভব। আমাদের ২ জনের পেছনে একজন সেবাদার থাকত। সেই ব্যবস্থা করে দিল সাইকেল, কন্ট্রাক্টর-এর কাছ থেকে। মাসিক ভাড়া ১০ টাকা।
যারা সাইকেল চালাতে জানত না তাদের রাতারাতি শিখতে হত। আমরা যারা জানতাম তারা সাহায্য করতাম। খাওয়া দাওয়া মেসে। Well trained বেয়ারা আর তার উপর Mess Havildar-এর তীক্ষ্ণ নজর। একসঙ্গে ৫০-৬০ জনকে service দিচ্ছে ঠিক সময়মত।
পরের তিনমাস Pune-তে Armed Forces Medical College-এ professional training. সেখানে সব clinical subject পড়তে হত বিশেষ করে preventive medicine training. তার জন্য আলাদা বই ছিল। Training শেষে পরীক্ষা নেওয়া হল। ভালই ফল করলাম।
তারপর আরও একমাস Field training. আমাদের Batch এর চারজনকে পাঠাল Ferozpur, Punjab এ Field Ambulance-এ। ওখানে কর্তা ছিলেন একজন কড়া Anglo-Indian ডাক্তারবাবু।
আমাদের parade দেখে কর্তা খুবই অসন্তুষ্ট। Marching-এ পা মিলছে না, Salute টাইমিং ঠিক নয়- অতএব শাস্তি। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার ১ ঘন্টা পরে extra parade, সেও প্রায় ঘন্টাখানেক। কয়েকদিন চলল এইরকম।
তারপর পেলাম নিমন্ত্রণ- আমরা ৪ জন। CO সাহেবের বাড়িতে চায়ের নিমন্ত্রণ। ছোট করে কার্ডে লেখা ‘Dress- Shirt & Tie, Be punctual’.
Training-এর মধ্যেই আমাদের posting এল। আমার posting এল as Medical Officer, Infantry Battalion, 9 Grenadiers. খোঁজ নিয়ে জানলাম- unit Jammu-তে আছে। আমরা posting যাবার আগে ১ মাসের ছুটির আবেদন করেছিলাম, পেয়ে গেলাম। Leave cum posting।
বাড়ি ফিরে এলাম ৭ মাস Training পর্ব শেষ করে। এত বড় ট্রেনিং শুধু Permanent Commission Officer-দের জন্য।
বাড়ি ফিরে এলে সকলে শান্তি পেল।
(ক্রমশঃ)