হে শেষের কবিতার প্রেমিক, ‘দেবতার গ্রাস’-এর কবি, ‘গোরা’-র লেখক, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর গল্পকার, বাঙালিকে ঊপনিষদ চেনানো দার্শনিক,
তুমি চেয়েছিলে, শতবর্ষ পরেও তোমার লেখা কবিতা কেউ পড়ুক। তাই নিয়ে কথা বলুক।
চিন্তা নেই, আজ শতবর্ষেরও তিরিশ বছর পরে তোমাকে নিয়ে অনেক কথা হবে।
একে একটানা ভয়াবহ গরমের পরে একদিন স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। তারপর নির্বাচনের বাজার। দুর্গাপুজোর পরে বাঙালির দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মকান্ড। বেশ একটা অসংগঠিত শিল্প।
ভোট বড় বালাই। তাই, বড় বড় নেতানেত্রীদের কাট আউটের পায়ের কাছে তোমার সাদা দাড়িওআলা ছোট্ট একটা ছবি রেখে তাতে গ্যাঁদার মালা চড়িয়ে গলার শির ফুলিয়ে বক্তৃতা হবে, রেকাবে করে সন্দেশ আর ছোট্ট গ্লাসে জল দিয়ে তোমার পুজো হবে। তারপর বেসুরো গলায় গান হবে, ‘আলো আমার আলো ওগো আলো ভুবন ভরা।’ অথচ চতুর্দিকে শুধু অন্ধকার।
এ যুগের বাঁশবনের শেয়াল রাজা সাজা বামনরা তোমার বিশালত্বের ধারণা করতে না পেরে বলবে,
‘তুমি খুব বড় কবি।’
তারপর রুটিন প্রভাতফেরি, লজেন্স আর চুলে রজনীগন্ধা গোঁজার পর রবির কিরণ চড় চড় করে উঠলে মাইক তারস্বরে চিৎকার করে উঠবে-
‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে।’
ঘামের গন্ধলেপা প্যাচপেচে গরমে কোথাও বাজবে,
‘শ্রাবণের ধারার মত পড়ুক ঝরে…’
কেউ বলবে,
তুমি এখানে কোনোদিন খেতে আসো নি।
কেউ বলবে,
তোমার জমি নিয়ে গন্ডগোল আছে। ল্যান্ড রেভিনিউ অফিসে যেতে হবে।
কেউ তর্ক করবে,
তুমি নজরুলের লেখা চুরি করেছো।
ইন্স্টাগ্রামে তোমার সাথে সেলফি হবে।
ফেসবুকে ট্রোল হবে।
হোয়াটসঅ্যাপে গোল হবে।
খাসির মাংস দিয়ে বাসমতি চালের ভাত হবে।
পড়ে পাওয়া ছুটির ঘুম হবে।
তারপর রবি রোজকার মত অস্তাচলে গেলে – কেউ সস্তা, কেউ সিঙ্গল মল্টের দু-পেগ মেরে তোমার রচনাবলীর তৃতীয় খন্ডের উপরে গ্লাস রেখে বাতেলা করবে। দূরে মাইক বাজবে কান ফাটিয়ে-
জিলে জিলে লে, আয়ো আয়ো জিলে লে…’
ইতি –
বহু যুগ পরের এক অর্বাচীন
ছবি: অন্তর্জাল
২৫ বৈশাখ, ১৪৩১