মধ্যমগ্রামের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। সম্ভবত খুব ভালো দিকে যাচ্ছে না।
দিকে দিকে রাস্তা বন্ধ । নববারাকপুরে যাওয়ার দুটো ব্রিজই বাঁশ দিয়ে ব্লক করা।
কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই জানতে পারছি না। চারিদিকে শুধু গুজব। চিকিৎসক হয়েও আমার এলাকা সম্পর্কে একেবারে অন্ধকারে। সারাদিন জ্বরের রোগী দেখছি। কাকে সন্দেহ করব, কাকে করব না – বুঝতেও পারছি না।
আরেক সমস্যায় পড়েছি। দলে দলে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস আর ‘এস এল ই’র রোগীরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসছেন। তা^দের অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বাজার থেকে উধাও।
বিভিন্ন মিডিয়া কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ভূমিকা নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছে। তারপর থেকে ওষুধটি মুড়ি মুড়কির মতো বিক্রি হয়েছে। আমি এমন রোগীও পেয়েছি যিনি করোনা থেকে বাঁচার জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ৪০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট দশদিন ধরে রোজ দুটো করে খাচ্ছেন। করোনা তার দেহে কোনো রকমে ঢুকলেও, বেচারা ভাইরাস বড্ড লজ্জায় পড়বে।
তবে তার পরেও ওষুধটি পাওয়া যাচ্ছিল। কফিনে শেষ পেরেক পুঁতেছেন ট্রাম্প সাহেব। ভারতের কাছ থেকে হুমকি সহ ওষুধটি চাওয়ার পর, অবশিষ্ট ওষুধও রাতারাতি বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে।
সাধারণ মানুষ ভেবেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে ওষুধের জন্য তর্জন গর্জন করছেন, তাতে নিশ্চয়ই সঞ্জীবনী শক্তি আছে। ফলে অনেকেই প্রাথমিক দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উৎসাহের সাথে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেতে শুরু করেছেন।
ওদিকে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের প্রয়োগের ফলাফল বিশেষ সন্তোষজনক নয় বলে কয়েক জায়গা থেকে রিপোর্ট আসছে। তবে এদেশের মানুষ ডাক্তারের বক্তব্যের চাইতে মিডিয়ার বক্তব্যকে বেশি বিশ্বাস করেন। এবং তার চেয়েও বেশি বিশ্বাস করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে। ফলে ‘এস এল ই’ রোগীদের আপাতত ম্যালেরিয়ার ওষুধই খাওয়াতে হচ্ছে।
এদিকে অন্যান্য ওষুধপত্রের যোগানও বিশেষ ভালো নয়। সকাল থেকে অন্তত একশো ফোন পেলাম, ‘ডাক্তার বাবু, এই ওষুধটা পাচ্ছি না। একটা বিকল্প বলুন।’ লকডাউন আরো দীর্ঘায়িত হলে এবার ওষুধের জন্য হাহাকার শুরু হবে।
তবে অন্যান্য হাহাকার ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষের রোজগার বন্ধ। কর্মচ্যুত হওয়ার ভয়, খাদ্যের জন্য হাহাকার। অত্যধিক উদ্বেগ এবং হতাশায় অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছেন।
লকডাউন বাড়তে থাকলে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। লকডাউনের সময় কমানোর জন্য দরকার ছিল প্রথম অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা এবং তাদের আইসোলেটেড করা। কিন্তু এখনো রোগীদের অবস্থা খুব খারাপ না হলে অথবা তাদের করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার হিস্ট্রি না থাকলে পরীক্ষা হচ্ছে না।
নিঃসন্দেহ আমি যুদ্ধ ক্ষেত্রে আছি। খেলনা বন্দুক নিয়ে প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করছি। একটা সত্যি বন্দুক পেলে দেখিয়ে দিতাম যোদ্ধা হিসাবে আমি খুব একটা খারাপ ছিলাম না।