মানুষ স্বভাবত হিংস্র। বন্ধুত্ব ভালোবাসা আর অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা
তাকে প্রতি প্রজন্মে শিখতে হয়,
জিনগত ভাবে সে যুদ্ধবাজ , কখনো শান্তির বাণী প্রচারক নয়।
পরিচিত রূপকথাগুলোই ধরো, পৃথিবীর যে কোনো দেশের
সেই এক কাহিনী-কথন
রাজকন্যা বন্দী কোনো রাক্ষসের হাতে, রাজপুত্তুর চলেছেন
তাকে মেরে তার হবু বউ উদ্ধারে,
আর অন্তিমে , রাক্ষসনিধন।
কখনো রাক্ষসের তরফ থেকে কোনো গল্প শুনেছো, কেন সে দিয়েছে রেখে রাজকন্যাকে কারাগারে?
কিংবা এমন কোনো গল্প যেখানে রাক্ষস শেষ অবধি ভুল বুঝে ভালো হয়ে গেছে?
উঁহু, রাক্ষসকে মরতে হবেই , কারণ আর কিছু নয়,
সে না-মানুষ, তাই ভয়ংকর
বিউটি অ্যান্ড দি বিস্ট জাতীয় গল্প লোকে কমই লিখেছে,
আর সেখানেও,
জন্তু মানুষ হলো আগে,
হ্যাপিলি এভার আফটার হলো তারপর।
আমাদের শৈশবের এই রাক্ষসগুলোকে বড় হতে হতে নানা নাম পেয়ে যায়।
আমি ভারতীয় হলে রাক্ষসের নাম পাকিস্তানি,
পাকিস্তানি হলে সে ভারতীয়।
ইজরায়েলি- প্যালেস্তিনিয়, বার্মিজ-রোহিঙ্গিয়া, হিন্দু-মুসলমান..
ক্ষেত্রবিশেষে সেটা বিজেপি-তৃণমূল বা বাঙালি-অসমিয়া,
আর বিশেষতম ক্ষেত্রে পাশের বাড়িও,
মোটকথা, সকলের ধারণায় কিছু না দেখা বা আধা-জানা মানুষ থাকে,
যারা নেয় রাক্ষসের স্থান,
যাদের ঘর ভাঙলে আমরা বলি বেশ হয়েছে,
যাদের দেশ হারালে আমরা বলি হওয়াই উচিৎ
যাদের শিশু মরে গেলে আমরা বলি আপদ গেলো,
যাদের মৃত্যুর খবরে আমরা ফেসবুকে খুশির ইমোজি দিই।
যদি রাক্ষসদের কোনো রূপকথা থাকতো,
সেখানে কী লেখা হতো?
না-মানুষ ছানারা সভয়ে শুনতো, মানুষ রাজার অত্যাচারের থেকে বাঁচতে কেমন করে রাজকন্যাকে পণবন্দী করেছিলো বেচারা রাক্ষস,
হয়তো বা রাজকুমারীর প্রেমও ছিলো তার প্রতি,
কিভাবে অন্যায় যুদ্ধে মানুষ রাজকুমার তাকে পরাস্ত করেছিলো।
আমরা সবাই নিজেদের রূপকথার কারিগর,
যেখানে রাজকন্যা হতে পারে দেশ, ধর্ম, জাতি বা নেহাতই পাতি পাড়াতুতো বিবাদের যুক্তি,
আর সেই অনুযায়ী বেছে নিচ্ছি সেই ভয়ানক রাক্ষস হবে কে।
আর ঠিক বিপরীতপ্রান্তে, আর কোনো রাজকুমার তার যুদ্ধ চালাচ্ছে আমাদের রাক্ষস হিসেবে দেখে।
মানুষেরা জিনগত ভাবে যুদ্ধবাজ। প্রতিটি প্রজন্ম শান্তির সংজ্ঞাটা আলাদাই শেখে।