রোগ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইনভেস্টিগেশনের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। লক্ষ্যণীয় কিছু রিপোর্টে নরমাল রেঞ্জের একটু এদিক ওদিক থাকলেও ডাক্তারবাবু বিশেষ পাত্তা দেন না। যেমন ধরুন আপনার সুগার ফাস্টিং ১১০ বা ১১৫, দুবার দুমাসে রিপোর্টে আসলে ডাক্তারবাবু বলে দ্যান যে ওষুধ চলছে সেগুলোই খেয়ে যান, সাথে হাঁটাহাঁটি আর খাবার এর কথাগুলো মাথায় রাখবেন। কিন্তু creatinine এর ক্ষেত্রে?
আপনার ১.৩ রিপোর্টে আসলো। আর মাস ছয়েক বাদে ধরুন ২.৩। এই ১ তারতম্য আপনার ডাক্তারবাবুকে চিন্তিত করে তুলবে, আপনিও নেট ঘেঁটে মোটামুটি মেনে নিয়েছেন আপনার কিডনি গ্যাছে। এরপর ডায়ালাইসিস। জীবনটা শেষ হয়ে গেল।
আসুন কয়েন এর উল্টো পিঠ দেখাই একটু।
কিডনি কেমন কাজ করছে সেটা সরাসরি জানার খুব একটা সহজলভ্য পথ নেই। Creatinine মাপা অনেকটা সারোগেসি। একদিকে যেমন creatinine মেপেই আমরা কিডনি সমস্যা আগে থেকে নির্ধারণ করতে পারলে বহু ক্ষেত্রেই কিডনি অকেজো হওয়া থেকে রুগীকে আটকাতে পারি ঠিক তেমনই ফলস এস্টিমেট অফ এলিভেটেড creatinine আপনাকে অযথা অনেক হয়রানি থেকে বাঁচাবে।
একটু জেনে নেই কি কি কারণে ফলস elevated of creatinine হয়।
১.যদি বেশি মাত্রায় শরীরে creatinine তৈরি হয়।
২.যদি ল্যাবে estimate করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়।
৩.যদি কিডনির tubular secretion কমে যায়।
Creatinine মূলত মাংসপেশীতে তৈরি হয়। আপনি পরীক্ষার আগের দিন রাতে জমিয়ে পাঁঠার মাংস খেয়েছেন।আপনার পরদিন creatinine বেশি আসবে।
অ্যাথলিটরা নিজেদের মাংস পেশির ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খায়। তাদের creatinine বেশি আসবে।
আপনি দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম করে creatinine টেস্ট করাতে এসেছেন। আপনার creatinine বেশি আসবে।
যে পদ্ধতিতে ল্যাবে সাধারণ ভাবে creatinine মাপা হয় সেটা একটা কলোরিমেট্রিক assey। সেখানেও বেশ কিছু তারতম্য ঘটলে creatinine বেশি দেখাবে।
বেশ কিছু ওষুধ খাওয়ার ফলেও রক্তে creatinine-এর মাত্রা বেশি আসতে পারে।
ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর কমন ওষুধ fenofibrate থেকে শুরু করে H2 ব্লকার মানে ranitidine যা আপনি দুটো ফুচকা খেলেই খেয়ে নেন তাতেও বাড়ে। এমনকি বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলেও রক্তে creatinine বাড়তে পারে।
তাই creatinine বাড়লে আগে সবটা বুঝে নিন আপনার ডাক্তারবাবুর থেকে। অনেক সময়তেই এইসব কারণে বেড়ে থাকলে সেটা ঠিক করলেই creatinine আবার আপনার নরমাল রেঞ্জে চলে আসতে পারে।
প্রথমেই নেট ঘেঁটে কান্নাকাটি করে কোথায় সস্তায় ডায়ালাইসিস হয় সেই করে বাড়ির সবার মাথা খাবেন না প্লীজ।
যদি এই ছোটো চুটকি লেখায় আপনাদের কোনো উপকার হয় নিজেকে ধন্য মনে করবো।
পড়াশুনা করে দীর্ঘ লেখার অভ্যাস আর নেই।রুগী দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। বড্ড বেশি হয়তো সরলীকরণ হয়ে আছে। আমার এটুকুই দৌড়।
ভালো থাকবেন সবাই।
Tukhor observation