সুদূর অতীতে মানুষ ডায়াবেটিসের কারণ জানত না, কিন্তু ডায়াবেটিস নির্ণয় করতে পারত। এর জন্য তারা মূলত নির্ভর করত রোগের লক্ষণের উপর।
ইজিপ্টের থিবেসের সমাধি থেকে প্রাপ্ত ইবেরস প্যাপিরাস প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরনো। এই প্যাপিরাসে বহু রোগের বিবরণ আছে। তার মধ্যে একটি রোগের বিবরণে পাওয়া যায় যেখানে রোগী অত্যধিক মূত্র ত্যাগ করে এবং অত্যধিক জল পান করে। এবং আস্তে আস্তে তার দেহ শুকিয়ে যায় ও সে মৃত্যু বরণ করে। এটি নিঃসন্দেহে ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ানের বর্ণনা।
প্রায় একই সময়ে প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসকগণ রোগটির অস্তিত্ব খুঁজে পান এবং এই রোগীর মূত্র পিঁপড়েদের আকৃষ্ট করত দেখে তারা এই রোগের নাম দিয়েছিলেন মধুমেহ। সংস্কৃত ভাষায় মধু মানে শর্করা আর মেহ দ্বারা মূত্র বোঝায়। ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্র সেসময় বাকি পৃথিবীর থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল। সে সময়ের চিকিৎসকগণ ডায়াবেটিসকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন। জন্মগত মধুমেহ ও বেশি বয়সের মধুমেহ। তারা ডায়াবেটিসের সাথে পারিবারিক রোগের ইতিহাস, স্থূলতা, খাদ্যাভ্যাস, পরিশ্রম হীন জীবন যাপনের সম্পর্ক খুঁজে পান। তারা ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসাবে বিভিন্ন দানা শস্য, বিটুমিন, বেঞ্জয়েট, সিলিকা ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। যদিও সেসবে রোগীর বিশেষ উন্নতি হতো না।
সেই সুদূর অতীতে মূত্র পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। চিকিৎসকরা রোগীর মূত্রের স্বাদ গ্রহণ করে ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় করতেন। ডায়াবেটিস রোগীদের মূত্রে অত্যধিক গ্লুকোজ থাকায় তা স্বাদে মিষ্টি হতো।
গ্রিক চিকিৎসক অ্যাপোলোনিয়াস অব মেমফিস খ্রিস্টপূর্ব ২৩০ সালে প্রথমবারের মতো ডায়াবেটিস শব্দটি ব্যবহার করেন। আরেকজন গ্রীক চিকিৎসক এরেটাস অব ক্যাপোডেসিয়া(৮১-১৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) ডায়াবেটিস নিয়ে অনেক কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন রোগের থেকে ডায়াবেটিসকে আলাদা করার লক্ষ্মণ গুলি লিপিবদ্ধ করেন। তার মতে ডায়াবেটিস হল এমন একটি অসুখ যেখানে দেহের মাংস ও চর্বি গলে যায় ও মূত্রের সাথে বেরিয়ে যায়। ল্যাটিনে ডায়াবেটিস মানে সাইফন বা তরল বেরিয়ে যাওয়ার সরু নল।
৪০০-৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে দুটি আলাদা রোগ হিসেবে সর্বপ্রথম শনাক্ত করেছিলেন ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সুশ্রুত তাঁর সুশ্রুত সংহিতা নামক পুস্তকে। সেখানে তিনি বলেছিলেন টাইপ-১ তারুণ্য ও টাইপ-২ অধিক ওজনের সাথে সম্পর্কিত।
আরও অনেক রোগ রয়েছে যেগুলিতে বহুমূত্র ও শারীরিক দুর্বলতা হয়। তাই সেইসব রোগ থেকে পৃথকীকরণের জন্য ডায়াবেটিসের সাথে মেলিটাস (mellitus) শব্দ যোগ করেন ব্রাইটন জন রোল নামে একজন বিজ্ঞানী। ল্যাটিনে মেলিটাস মানে মধুর মতো মিষ্টি।
তবে ১৯২১ সালে বেন্টিং ও বেস্ট ইনসুলিন আবিষ্কার করার আগে পর্যন্ত ডায়াবেটিসের কোনও নির্ভর যোগ্য চিকিৎসা ছিল না। বিশেষ করে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে কম বয়সে মৃত্যুই ছিল একমাত্র ভবিতব্য।
কাল শোনাবো সেই ইনসুলিন আবিষ্কারের গল্প।
কালের জন্য কিছু ফে লে রাখবেন না। Do it now or do it immediately
কাল অবস্যই শুনব
Good info…Thank you