করঞ্জাক্ষ মিত্র আর মিত্রাবরুণ কর যখন থেকে এক মেডিকেল কলেজে একই বছর ছাত্র হয়ে ঢুকেছিলেন, তখন থেকেই ভাগ্য ওঁদের জীবনকে অনেকটা ডি এন এ’র মতো পাকিয়ে দিয়েছে, একসাথে, কিন্তু আলাদা।
করঞ্জাক্ষ’র রোল নম্বর ছিলো ছাপ্পান্ন, আর মিত্রাবরুণের পয়ষট্টি। ক্লাসের, গোল্ড মেডেলের বা ইউনিভার্সিটির পরীক্ষায় সবার নজর থাকতো এই দুটো রোল নম্বরে, এক আর দুই কার ভাগে যায়। কখনো কর জিততেন কখনো মিত্র.. মানে কখনো করঞ্জাক্ষ আর কখনো মিত্রাবরুণ, কলেজে অন্যের পদবীটা আরেকজনের নিকনেম হয়ে গেছিলো, বলছিলাম না ডি এন এ’র কথা!
ফাইনাল পরীক্ষায় করঞ্জাক্ষ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম হলেও, মেডিসিনের গোল্ডমেডেলটা গেলো মিত্রাবরুণের কাছে, সেই কর বনাম মিত্র অ্যাকাডেমিক রেষারেষি চলতে থাকলো এম ডি তেও, সেখানে মিত্রাবরুণ প্রথম হলেন বটে, তবে সেটা মাত্র এক নম্বরের জন্য।
। ২।
এত অবধি জেনে আপনাদের নিশ্চয়ই ধারণা জন্মেছে, করঞ্জাক্ষ আর মিত্রাবরুণ মোটেই মিত্র নয়?
সম্পূর্ণ ভুল হবে সেটা ভাবলে, দুজনে ফার্স্ট ইয়ার থেকে রুমমেট, ক্লাসের শেষে লাইব্রেরি, লাইব্রেরির শেষে সিনেমা এবং সিনেমার শেষে মৃদুমাত্রায় ঢুকুঢুকু, সবেতেই কর-মিত্র একেবারে হাতে হাতে, বন্ধুরা আওয়াজ দিতো কোনোদিন মেডিসিনের বই লিখলে সেটার নাম হয় কর অ্যান্ড মিত্র (মতান্তরে মিত্র অ্যান্ড কর) হবে।
এসব ঘটেছে প্রায় তিরিশ বছর আগে, এই মুহূর্তে দুজনেই প্রোথিতযশা চিকিৎসক, আর কি আশ্চর্য, দুজনে কনসালটেন্ট হিসেবেও যুক্ত শহরের জুপিটার হসপিটাল চেনে, যার চারটে হাসপাতালেই নিয়মিত রোগী ভর্তি থাকে দুজনের। আপনাদের নিজেদের বা বাড়ির লোকেদের কাছেও কে মিত্র বা এম কর-এর প্রেসক্রিপশন থাকবে। যশখ্যাতি বাড়ার সাথে সাথে অবশ্য দুজনের কতগুলো জিনিস বদলায়নি।
দুজনের কেউই কারো থেকে এক পয়সা কমিশন খান না (বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, জুপিটারের হিসেব অনুযায়ী মাসে সেটা পাঁচ ছ’লক্ষ), দুজনেই অতি যত্নে রোগী দেখেন, দুজনেই নিজেদের ‘ আপডেট’ করেন, দুজনের কেউই অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখেন না এবং..
দুজনে প্রতি শনিবার প্রাণখুলে আড্ডা মারেন। ডি এন এ’র ডাবল হেলিক্স পাক খেয়ে চলেছে, কিন্তু দূরে ঠেলেনি তাঁদের।
। ৩।
তবে একটা ব্যাপারে দুজনে একদম আলাদা। রোগীর চিকিৎসা করা যায় দুইভাবে, রামায়ণ আর মহাভারত।
বিশুদ্ধবাদীরা রে রে করে তেড়ে আসবেন না দয়া করে,
বিজ্ঞানমনস্করা কেস দেবেন না প্লিজ, এর থেকে সোজাভাবে দুটো উপায়কে আর বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
রামায়ণ উপায় মানে গন্ধমাদন তুলে এনে বিশল্যকরণীর খোঁজ করা। মানে রোগের সবকটা সম্ভাবনার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া,
যাতে কিছুই ‘মিস’ না হয়। এতে ডাক্তারের পিঠ আর উকিলের খরচা বাঁচে বটে, কিন্তু রোগীর পকেট বেশ হালকা হয়। তবে ইদানিং এই উপায়ই বেশি চলে, ‘ফুল বডি চেক আপ’ করার রমরমা সেটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
মহাভারত উপায় মানে অর্জুনের শরসন্ধান.. সেই পাখির চোখ। এখানেও রোগীর আগাপাশতলা পরীক্ষা করা হয়, তবে সেটা ডাক্তারের পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে, সাথে বড়জোর একটা নিখরচার স্টেথোস্কোপ, প্রেশার মাপার মেশিন আর ইদানিংকার নব্য আমদানি, অক্সিমিটার।
এখানে বেশির ভাগ সময় পরীক্ষা লেখার সময় ডাক্তার জানেন তার ফলাফল কি আসবে, পরীক্ষা হয়ও খুব কম। কিন্তু এটা সময়সাপেক্ষ এবং পুরোপুরি চিকিৎসকের দক্ষতানির্ভর, আর এখনকার ভারতবর্ষে
অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ।
ডাক্তার করঞ্জাক্ষ মিত্র রামায়ণে বিশ্বাসী। ডাক্তার মিত্রাবরুণ কর মহাভারতে। দুজনের স্বপক্ষেই যুক্তি আছে, রোগীরাও প্রায়শই দুভাগ। এতে সুনাম যেমন হয়েছে, তেমনি মন্দলোকে কথা বলতেও ছাড়েনি।
করঞ্জাক্ষ বড় বেশি টেস্ট লেখেন আর মিত্রাবরুণ রোগী হাতে রাখেন বলে সমালোচকরা বলে থাকেন। তবে তাতে দুজনের প্র্যাকটিসে কিছু ভাঁটা পড়েনি। রোজ চেম্বার থিকথিক করে রোগীতে, আর দুজনেরই শতকরা নব্বইভাগ নিজের নিজের ডাক্তারকে ধন্বন্তরি ভাবেন।
তিরিশ বছর ধরে এই সুনাম অক্ষয় দুজনেরই।
। ৪।
জুপিটার কর্তৃপক্ষ অবশ্য আগামীর দিকে চোখ রাখছেন। সরকারি নীতির পরিবর্তনে এখন ডাক্তার বেড়েই চলেছে, আগে যেখানে এম বি বি এস পেতেই ঘাম ছুটে যেতো, সেখানে এখন এক একটা আর এম ও’র চাকরিপিছু আট দশজন এম ডি। মুশকিল হলো, এরা সমান ডিগ্রীধারী হলেও, কতটা কী শিখেছে বোঝা মুশকিল, প্রাইভেট কোটা আর মেধা’র এই জগাখিচুড়ি ভিড়ে কাদের ওপর রোগী নিয়ে ভরসা করা যায় সেটা বোঝার জন্য কোনো পরীক্ষা নেই।
সুতরাং জুপিটার কর্তৃপক্ষ ফেলোশিপের ব্যবস্থা করলেন, করঞ্জাক্ষ মিত্র আর মিত্রাবরুণ করের আন্ডারে হাসপাতাল পিছু দুজন করে সদ্যপাশ এম ডি, মানে মোট ষোলোজন ডাক্তার সুযোগ পাবে।
গোলমাল বাঁধলো ঠিক সেখানেই। করঞ্জাক্ষ’র কাছে শিখলে অত্যাধুনিক সব পরীক্ষার ব্যাখ্যা কয়েকদিনের মধ্যেই আয়ত্বে চলে আসবে, কারণ প্রতিটি রোগীর কাছে তার রোগসম্বন্ধীয় যাবতীয় টেস্ট আছে, কোনটা পজিটিভ আর কোনটা নেগেটিভ, তাই বিচার করে রোগনির্ণয় পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে সহজ। তার সাথে করঞ্জাক্ষর অগাধ মেডিকেল জ্ঞান তো আছেই। প্রায় তিরিশটা আবেদন জমা পড়লো আটটা সিটের জন্য।
মিত্রাবরুণের কাছে শেখাটা অনেক কঠিন ।তিনি রোগী পরীক্ষা করে অনেকটা সময় খরচ করেন। এখনো তিনি স্টেথো বসিয়ে ঠিক করেন কার হৃদযন্ত্রের ভালভে কী গোলমাল, অথবা ফুসফুসের কোন কোণায় নিউমোনিয়া হানা দিয়েছে, পেট টিপে লিভার বড় হয়েছে কিনা দেখেন , মোটমাট তার এই ‘ক্লিনিকাল পরীক্ষা’তেই বেশ সময় যায়। পরীক্ষা তিনিও লেখেন, তবে তা অনেকটাই ওই ‘পাখির চোখ’ মার্কা, মানে যেটা সন্দেহ, সেটাই পাওয়া যায় বেশির ভাগ সময়। নর্মাল বেশি করে না দেখলে অ্যাবনর্মাল বোঝা মুশকিল, তাই নয় কি?
কাজেই ডাক্তার মিত্রাবরুণ করের কাছে ফেলোশিপ করার আবেদন জমা পড়েছে.. স্রেফ একটি। জয়িতা ঠাকুরের এম ডি’র রেজাল্ট দুর্দান্ত, গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট বর কানাডায় গেছে একটা দুবছরের ফেলোশিপ নিয়ে, সে এখনো বিদেশ যেতে দ্বিধাগ্রস্ত। সেই জয়িতা ছাড়া মিত্রাবরুণের আর কেউ জুটলো না। জুপিটার কর্তৃপক্ষ বাকি সাতটিকেও জুড়ে দিলেন করঞ্জাক্ষ’র সাথে। ডাক্তার মিত্র একেকটি হাসপাতালে তিনজনকে নিয়ে রাউন্ড দেন, ডাক্তার করের সেখানে চারটে হাসপাতালে ওই একটিই সহকারী ডাক্তার, জয়িতা। করঞ্জাক্ষ’র সাথে দেখা হলে বলেন, ‘মিত্র, দেখিস, সবেধন নীলমণিটি খোয়া না যায়!’
। ৫।
নাহ, নীলমণি খোয়া যাওয়ার কোনো চান্স নেই।
রোজ জয়িতা রোগীর হিস্ট্রি নেয়, মিত্রাবরুণ ঠিক বের করে দেন কোনখানটা সে ভুলে গেছে। একজন গৃহবধূর গ্যাসের তাক কতটা উঁচু, রিকশাওয়ালা সারাদিনে কখন কখন খায়, ব্যাংকের ম্যানেজারের কততলায় অফিস, শিক্ষিকার বাড়িতে পোষা বেড়াল আছে কিনা, এসব সামান্য তথ্য থেকে মিত্রাবরুণ টেনে বের করে আনেন তাদের রোগের শেকড়। জয়িতা শিখেছে চোখ আর নখ দেখে কিভাবে মোটামুটি হিমোগ্লোবিন আন্দাজ করা যায়, লাং ক্যানসারের রোগীদের নখগুলো কেমন উঁচু হয়ে ওঠে। জিভ চোখ আর নখ দেখে এত রোগের আন্দাজ পাওয়া যায়, বইতে লেখা থাকলেও সেটা তাকে কেউ দেখায়নি। জয়িতা এখন জানে, মাইট্রাল স্টেনোসিস আর ভি এস ডি স্টেথো দিয়ে কিভাবে বুঝে নিতে হয়। সামান্য অ্যানিমিয়া আর তলপেট ব্যথায় সে মিত্রাবরুণকে আর্জেন্ট গাইনি রেফার করতে দেখেছে, পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছে পেশেন্টের একটোপিক প্রেগন্যান্সি, আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই রোগী বাঁচানো যেতো না।
একটা দিনের কথা জয়িতার খুব মনে আছে।
তিতিবিরক্ত রোগী, ইউ টি আই মানে মুত্রনালীর সংক্রমণ হয়েই চলেছে তার কয়েকমাস ধরে। ভদ্রলোক করাননি এমন কোনো পরীক্ষা নেই। মিত্রাবরুণ ওসব কিছু না দেখে আগে রোগীর পুরুষাঙ্গটি পরীক্ষা করলেন প্রথমে, আর আবিষ্কৃত হলো ওপরের ছালটি অতি টাইট হয়ে মূত্রের গতিবিধি আটকে দিয়েছে.. ফাইমোসিস।
এর আগে গোটা আটেক ডাক্তার তাঁর অন্তর্বাস খুলেই দেখেননি!
সুতরাং, টিটিকিরি খাক আর যাই ঘটুক, জয়িতা মিত্রাবরুণের পাশ ছাড়তে রাজি নয়।
।৬।
এমনি করে বেশ চলছিলো। হঠাৎই এলো সেই ভয়ানক রাত, গত এপ্রিলে। খবরে পড়েছিলেন নিশ্চয়ই, হারিকেন ‘জামিলা’র সেই তছনছে আক্রমণ? ঘন্টায় একশো সত্তর কি মি বেগে সে ঝড় যখন শহরের দিকে ধেয়ে আসছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন করঞ্জাক্ষ আর মিত্রাবরুণ দেশের উল্টোদিকে, কনফারেন্সে। এয়ারপোর্ট আগে থেকেই বন্ধ,
কাজেই সম্ভাবনাই নেই পূর্বাভাষ পেয়েও ফিরে আসার।
জুপিটার কর্তৃপক্ষ ইমার্জেন্সি সামলাতে তাঁদের সব ফেলোকে ডিউটিতে রেখেছেন। শহর থমথমে, ঝড়ের ঝাপট বাড়ছে, বৃষ্টি ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, এমন সময় এম এল এ সঞ্জীব সাঁইয়ের হঠাৎই শ্বাসকষ্ট। কোনোক্রমে তাঁকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসছে, এমন সময় একটা প্রাইভেট গাড়ি টালমাটাল হয়ে জুপিটারের ইমার্জেন্সিতে ঢুকলো। নরেশ চৌহান, শহরের সবচেয়ে ধনী, তাঁকে নিয়ে তাঁর ড্রাইভার ঢুকলো। দম আটকে আসছে নরেশের, তিনি বহুদিনের সি ও পি ডি রোগী। এক সাথে দুই ভিআইপি শ্বাসকষ্টের পেশেন্টে যখন ইমার্জেন্সি ব্যতিব্যস্ত, তখন একই সাথে তিনটে ঘটনা ঘটলো।
এক, ঠিক সে সময়ই ঝড় আছড়ে পড়লো শহরে, আর বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। দুই, কড়কড়কড়াৎ করে বাজ পড়ে জ্বলে গেলো জুপিটারের জেনারেটর। তিন, ফোনের নেটওয়ার্ক ঝপ করে চলে গেলো। ভেতরে তখন হুলুস্থুলু! দুই রোগীকেই অক্সিজেন দেওয়া সত্তেও কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আর কোনো পরীক্ষা করার উপায় নেই।
ঘটনাচক্রে দুজনেই করঞ্জাক্ষ মিত্রের রোগী। থই না পেয়ে
করঞ্জাক্ষর ডান আর বাঁহাত সুদীপ আর সানন্দা প্রায় আর্তনাদ করে উঠলো, ‘জয়িতা, একটু দ্যাখ তো।’
পরের ঘটনাবলি নিয়ে বহু বছর আলোচনা হবে। কীভাবে কটা ইমার্জেন্সি আলোতে স্টেথো, প্রেশারের যন্ত্র আর অক্সিমিটার সহযোগে জয়িতা বের করে ফেললো সঞ্জীবের হার্ট ফেইলিওর আর নরেশের নিউমোথোরাক্স, কীভাবে সঞ্জীবকে তড়িৎগতি ল্যাসিক্স আর নরেশের ফুসফুসে ড্রেন ঢুকিয়ে নীল হয়ে যাওয়া দুটো মানুষকে সে ফিরিয়ে এনেছিলো মৃত্যুর মুখ থেকে, সেই রূপকথা পরের প্রজন্ম অবধি নিশ্চিত পৌঁছাবে।
ঝড়ের তাণ্ডব থামার পরে যখন দুই বিশিষ্টজন আই সি ইউতে নিরাপদ আশ্রয়ে, তখন করঞ্জাক্ষ’র গোটা টিম পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে
মিত্রাবরুণের সবেধন নীলমণির।
। ৭।
নেটওয়ার্ক এলো প্রায় চব্বিশ ঘন্টা বাদে। ততক্ষণে নানান চ্যানেলের সুবাদে দুবন্ধু জেনে ফেলেছেন জয়িতার কীর্তি।
নেটওয়ার্ক ফিরতেই জয়িতাকে ফোন করলেন মিত্রাবরুণ,
‘সাবাস মা!’
জয়িতা আস্তে বললো, ‘সাবধানে ফিরুন স্যার, যা শিখিয়েছেন তেমন করেছি। সবই আপনার জন্য।’
করঞ্জাক্ষ’র দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন মিত্রাবরুণ, ‘দেখলি তো , আমার নীলমণি এখন শহরের গর্ব। এমন গর্ব বহুকাল হয়নি রে! বোধহয় কোনোদিন আর হবেও না।’
করঞ্জাক্ষ বললেন ‘আজ আমারও ভারী গর্বের দিন রে!’
মিত্রাবরুণ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
করঞ্জাক্ষ হেসে বললেন ‘ জয়িতা আমার একমাত্র সন্তান যে! আমারই মেয়ে ও।’
বলেছিলাম না মশাইরা, ডি এন এর প্যাঁচের মতো কর আর মিত্র বাঁধা?