ফার্মাসিস্ট মঙ্গল’দা এসে উত্তেজিত ভাবে বললেন, “বুঝলেন ডাক্তারবাবু, কাল রাতে একজন মহাপুরুষের দর্শন হল।”
ডাক্তারবাবু আউটডোর শুরু করার আগে টেবিল চেয়ারগুলো একটা কাপড় দিয়ে ঝাড়ছিলেন। বললেন, “মহাপুরুষ বুঝলেন কি করে? গায়ে লেখা ছিল?”
মঙ্গল’দা বললেন, “প্রায় তাই। তাছাড়া উনি যা করলেন, তা কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়।”
“কি করলেন? জলের উপর দিয়ে হাঁটলেন নাকি বাতাসে ভেসে থাকলেন?”
“তার চেয়েও সাংঘাতিক। কাঠ কয়লার গনগনে আগুনের উপর দিয়ে উনি হাঁটলেন। এমন ভাবে হাঁটলেন, যেন সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠে মর্নিং ওয়াক করছেন।”
“এটা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়। পায়ের নীচে কয়েক ধরণের কেমিক্যাল মেখে খুব তাড়াতাড়ি আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে চলে গেলে ব্যথা বা জ্বালা কিছুই লাগে না।”
মঙ্গল’দা বললেন, “এটা সেরকম ফাঁকিবাজি কেস নয় ডাক্তারবাবু। বাবাজীর মধ্যে কোনোও তাড়াহুড়ো ছিল না। ধীরে সুস্থে হাঁটলেন। কি বলব ডাক্তারবাবু, সে এক বীভৎস ব্যাপার। আগুনে চটপট করে শব্দ হচ্ছে। মাংস পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি। দুজন অজ্ঞান হয়ে গেল। অথচ ওনার মুখে যন্ত্রণার চিহ্নমাত্র নেই। শুধু যন্ত্রণা নয়, কোনও আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ নেই। যেন মুখোশ পরে আছেন।”
“মুখোশ? মাংস পোড়ার গন্ধ…?” ডাক্তারবাবু চিন্তিত মুখে পকেট থেকে মোবাইল বের করলেন। তারপর খানিকক্ষণের মধ্যেই ইন্টারনেট থেকে একটা ছবি বের করে মঙ্গল’দাকে দেখালেন। বললেন, “দেখুন তো, এই ছবির সাথে বাবাজীর কোনও মিল আছে কিনা?”
মঙ্গল’দা বললেন, “হ্যাঁ, মুখটা অনেকটা এরকমই। এরকমই এবড়োখেবড়ো। এক্স প্রেশন লেস। কানটাও এরকম গুটি গুটি ভর্তি।”
ডাক্তারবাবু বললেন, “আজ রাতে আরেকবার বাবাজীর কাছে যাবেন। গিয়ে কানে কানে জিজ্ঞাসা করবেন, রোগের চিকিৎসা করাবেন? নাকি বিনা চিকিৎসায় মরবেন?”
মঙ্গল’দা ভয়ার্ত মুখে বললেন, “বাবাজী যদি অভিশাপ- টভিশাপ দিয়ে দেন?”
“কিচ্ছু হবে না। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আর কথা নয়। এবার আউটডোর শুরু করতে হবে। পেশেন্টের বিশাল লাইন পড়েছে।”
পরের দিন মঙ্গল’দা ঢুকতেই ডাক্তারবাবু ধরলেন। “গেছিলেন আপনার মহাপুরুষের কাছে?”
মঙ্গল’দা বললেন, “গেছিলাম। আপনার শেখানো কথাটাও বললাম।”
“বাবাজী কি উত্তর দিলেন?”
মঙ্গল’দা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর বললেন, “উনি কথাটা শুনে এদিক ওদিক সতর্ক ভাবে তাকালেন। তারপর নিচু গলায় বললেন, বেটা, শয়তান হয়ে বাঁচার থেকে ভগবান হয়ে মরে যাওয়া ভাল।”
ডাক্তারবাবু চিন্তিত মুখে বললেন, “ভগবান হয়ে নয়, শয়তান হয়েই ওনাকে মরতে হবে। এই রোগে মৃত্যু এত সহজে আসবে না। বাবাজী চিকিৎসা করালেই ভাল করতেন।”
মঙ্গল’দা বললেন, “কিন্তু ডাক্তারবাবু, আমি এখনও ধোঁয়াশায়। কি রোগ আর কিসের চিকিৎসা?”
“সেকি? এতবছর হেলথে চাকরি করেও আপনি এখনও বুঝতে পারেননি! লেপ্রোমেটাস লেপ্রোসির নাম শুনেছেন? অ্যাডভান্স স্টেজের কুষ্ঠ। যাতে আক্রান্ত অঙ্গের স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়, ব্যথা বেদনার বোধ চলে যায়…”