একজন ডাক্তার হিসেবে এটা আমার অনেক দিন জানার ইচ্ছা মানুষ সত্যিই কেমন ডাক্তার পছন্দ করে।
দৃশ্য ১
আপনি গেছেন একটি কর্পোরেট হসপিটালে ডাক্তার দেখাতে। বাতানুকুল পরিবেশে বসে ডাক্তারের অপেক্ষা করছেন। পাশের আউটলেট থেকে চা-কফি স্যান্ডউইচ খাচ্ছেন। ডাক্তারবাবু মোট পাঁচজন patient দেখবেন তার মধ্যে দুনম্বরেই আপনার নাম লেখা আছে। পরিচিত এক ডাক্তার বন্ধুকে দিয়ে catch মেরে আপনি appointment fix করেছেন। না হলে এই ডাক্তারবাবুর waiting period প্রায় দু’মাস। অসাধারণ পরিবেশে ডাক্তারের সাথে সময় নিয়ে কথা বলে ডাক্তার দেখিয়ে আপনি বেরিয়ে আসলেন। ডাক্তারবাবু যে পরীক্ষাগুলি করতে বললেন সেগুলো করালেন এব়ং আপনার কয়েক হাজার টাকা খরচা হল। আপনি উচ্চবিত্ত হলে ঠিক আছে মধ্যবিত্ত হলে গায়ে লাগলো। কোট টাই পরা ডাক্তারের ওপর রাগ বাড়লো, মনে হলো সবাই ব্যবসা ফেঁদে বসেছে।
দৃশ্য ২
অসুস্থ একজন আত্মীয়কে নিয়ে গেছেন sarkari hospital-এর ডাক্তার দেখাতে। আউটডোরে দুই টাকার টিকিট করে ১৩৬ জনের পিছনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। বহির্বিভাগের লোক হয়েছে বেদম। সকাল ৯ টায় আবার শুরু হওয়ার আগেই প্রায় ৩০০-৪০০ লোকের লাইন দাঁড়িয়ে গেছে। রোগী দেখা শুরু হল। দু ঘন্টা বাদে আপনার আত্মীয়কে দেখিয়ে আপনি বেরিয়ে আসলেন। রাগ হল ডাক্তারবাবুর উপর, যে উনি একেবারেই সময় নিয়ে কথা শোনেননি, ভালো করে আপনার রোগীকে গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করেননি, তার উপরে ব্যবহারও যেন সব সময় তিরিক্ষি হয়ে আছে। আশপাশে ভিড়ের মধ্যে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। আপনি ভেবে দেখলেন না যে আপনার আত্মীয়কে এভাবে দেখতে গেলে যে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে তিনশ থেকে চারশ রোগী এভাবে দেখতে গেলে outdoor টা বিকেলের মধ্যে শেষ হবে না দু’দিন ধরে চলবে।
দৃশ্য ৩
পাড়ার ডাক্তার বাবুকে দেখাতে ওষুধের দোকানে গেছেন। খুব একটা ভীড় নেই এবং পারিশ্রমিকও যথেষ্ট কম। ডাক্তারবাবু এসে গেছে শুনে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন ডাক্তারবাবু রিক্সা থেকে নামছেন এবং ডাক্তারবাবুর পরনে জিনস আর টি-শার্ট। ডাক্তারকে রিক্সা থেকে নামতে দেখে আপনার মনটা গাইতে শুরু করল যে এই ডাক্তারের ওষুধে ভালো কাজ করবে না। ডাক্তারবাবু পরনের জিনস আর টি-শার্ট দেখে মনে হল ডাক্তারের বয়স কম অভিজ্ঞতা ও বেশি নয় এর দ্বারা রোগ নির্ণয় হবে না। আপনার কিন্তু এটা মাথায় নেই যে কর্পোরেট হসপিটালের বাতানুকুল পরিবেশে কোট পেন্ট পড়ে বসা আর পাড়ার ওষুধের দোকানে খুপড়ি ঘরে কোট পেন্ট পড়ে বসার মধ্যে পার্থক্য আছে এবং সেটা একেবারেই আরামদায়ক নয়। খুবই আশ্চর্যজনক ভাবে গরমে ডাক্তারদেরও গায়ে ফুসকুড়ি বেরোয়। মোটামুটি ভাবে ডাক্তার দেখালেন এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলেও খুব একটা খারাপ লাগলো না কিন্তু মনে মনে ঠিক করে নিলেন যে আরেকটা second opinion নেবেন।
দৃশ্য ৪
সকাল বেলা আপনার বাবাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে এসেছেন। রাতের দিকে বাবার শরীরটা একটু খারাপ। ডাক্তারকে ক্রমাগত ফোন করে চলেছেন কিন্তু তিনি ফোনটি ধরছেন না। চরম রাগ রাগ হলো আপনার এবং ডাক্তারের ফোন না ধরায় তাকে মনে মনে অসংখ্য গালাগাল দিলেন।
পরেরদিন বাবাকে নিয়ে গেলেন আর একজন ডাক্তার দেখাতে আত্মীয়দের কাছে এটা শুনে যে এই ডাক্তারবাবু ফোনে সব সময় অ্যাভেলেবল থাকেন।
চেম্বারে গিয়ে বসলেন ডাক্তার দেখাতে কিন্তু ক্রমাগত ফোন আসতেই থাকছে। ওনার সাথে ভাল করে কথাও বলতে পারলেন না এবং অন্য কথা বলার খুব একটা সময় পেলেন না। আপনার বাবা সব সমস্যা খুলে বলতে পারলেন না। বাইরে বেরিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন যে এত ফোন ধরলে চলে নাকি?
এরকম অসংখ্য দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বুঝতে পারি না কোন ডাক্তার আসলে ভালো।
#CopiedandReposted