প্রারম্ভিক কথা –
সাপের কামড়ে কোনও মৃত্যু ঘটলে যত না দ্রুত তা, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পরে, অথচ চিকিৎসকের অসামান্য দক্ষতায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে সাপে কাটা রোগীর বেঁচে ওঠার কাহিনি – সেই অর্থে কোনও সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হতে দেখিনা। সাপের কামড়ের মৃত্যুকে ঘিরে হাসপাতাল ভাঙচুর, চিকিৎসক সহ নার্স নিগ্রহ এতো আমাদের এখন গড়ের মাঠের ফুটবল। উন্মুক্ত জনতা বাস্তবিকই ঘটনাটা ঠিক কি ঘটেছে সেই বিচার বিশ্লেষণে না গিয়ে সুযোগ বুঝে দিলাম এক লাথি। সেই লাথির জেরে সামগ্রিকভাবে আমাদের সবার কি ক্ষতি হলো তাতে কুচ পরোয়া নেই। শুধু নিজের মনের জ্বালাটা তো মেটালাম। মানুষের ভুল ধারণা, অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞতা এসব তখন সব ঢাকা পড়ে যায় এই সকল মানুষেরই হিংস্রতায়। আমাদের মতো সাপ পাগল কিছু মানুষ যারা আছেন তারা চেষ্টা করি সাপের কামড়ের ঘটনাগুলোর সাফল্য এবং ব্যর্থতা উভয়কেই সোস্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে তুলে ধরার। যাতে মানুষ সাপ ও সাপ কামড়ের চিকিৎসা বিষয় নিয়ে একটু সচেতন হয়। পাশাপাশি চিকিৎসক বন্ধুরাও যাতে সাপ কামড়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলোর ইতিহাস থেকে নিজেদেরকে আরও পরিশীলিত করতে পারে। তাই আসুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি এবার প্রসঙ্গে ফিরি।
ঘটনা প্রবাহ —
ঘটনাটি অশোকনগর দৌলতপুর এলাকার। নাম – সুজলা মণ্ডল। বয়স – ৬০ স্বামী, পুত্র, পুত্রবধূ নাতি, নাতনী নিয়ে সুখের সংসার। বাড়িতে মনসা মন্দির আছে। বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতি বছর মনসা পুজোও করেন। স্বামীর কৃষিকাজের পাশাপাশি নিজেদের পালিত পশু গরু, ছাগলের দেখাশোনা এখনও তিনি নিজের হাতেই করেন। লাজুক স্বভাবের ভদ্রমহিলা কথা কম বললেও ছেলেদের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা এবং কর্তব্য পরায়ণে অত্যন্ত বিনয়ী। মা অসুস্থ বোধ করলে ছেলেরাও মায়ের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান। এমনই এই হাসিখুশি পরিবারে নেমে এল দুশ্চিন্তার ছাপ।
শারীরিক অসুস্থতা –
গত ২৯ তারিখ সোমবার সকাল থেকেই ভদ্রমহিলা ছেলেদের ডেকে বলছেন। তার শরীর কেমনজানি আনচান করছে । দুই হাতে ভিষণ ব্যথা, সামান্য জ্বালা করছে। সাথে দুই হাতের কিছুটা অংশ ফোলা এবং দুই হাতেই ফোলা জায়গায় চুলকাচ্ছে প্রচণ্ড। মায়ের এরকম অবস্থা দেখে সোমবার সকালেই অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আউটডোরে দেখাতে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। হাসপাতালের আউটডোরে এমনিতেই ভীড় তবুও কর্মরত চিকিৎসক রোগীর মুখ থেকে শারীরিক উপসর্গর কথা শুনে ভর্তির জন্য ইমারজেন্সিতে পাঠিয়ে দেন। তখনও অবধি রোগী স্পষ্ট ভাবেই কথা বলছিলেন।।
কথা বলতে সমস্যা –
মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে যাওয়ার পর রাউন্ডে দেখতে আসেন ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্য। এই দিন দিদির ইনডোর ডিউটি ছিলো। ফিমেল ওয়ার্ডে রাউন্ডে ডা. দিদি রোগী দেখতে দেখতে এই পেসেন্টের কাছে এসে যখন রোগীকে জিজ্ঞাসা করেন, কি সমস্যা হচ্ছে আপনার? তখন ডা. অপর্ণা দি খেয়াল করেন রোগীর কথা কেমন জানি জড়িয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার ভাবে কথা বলতে পাচ্ছেন না। পরিবারের লোকজনের দাবি এই কিছুক্ষণ আগে পেসেন্ট দিব্বি কথা বলেছেন। ভর্তি হয়ে যাওয়ার পর কি একটা ইঞ্জেকশন দেওয়ায় এই অবস্থা হলো। নাহলে পেসেন্ট তো সুস্থ ছিলো। ডা. দিদি পেসেন্টের এই পরিস্থিতি দেখেই বুঝে যান এটা নিশ্চিত ভাবে নার্ভ বিষের লক্ষণ । মুহুর্তে আর দেরি না করে সিস্টার দিদিদের নির্দেশ দেন এভিএস চালু করতে। এটা সাপের কামড়। পরিবারের লোকজন হতবাক। কোথায় কখন কিভাবে সাপ কামড়ালো। সাপ তো আমরা দেখিনি। পেসেন্ট তো এতক্ষণ কথা বলছিলো। এরকম অসুস্থ তো ছিল না !
রোগীর ইতিহাস –
দুপুর ১ টা ১০ মিনিট অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে ডা. অপর্ণা দির ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ডা. দিদির কণ্ঠ – ‘ আরে কোথায় আছেন শিগগির আসুন ভীষণ ইন্টারেস্টিং, কালাচের কামড় চলে আসুন ‘। প্রচন্ড গরম ঘরেতে বসেই প্রাণ ওষ্ঠাগত তার উপর কালাচের খবর। সত্যি কথা বলতে ডা. অপর্ণা দি ডিউটি থাকাকালীন সাপের কামড়ে কোনও পেসেন্ট এসে ভর্তি হলেই আমাকে একবার জানাবেন। আমি অশোকনগরে থাকলে দিদিও নিশ্চিত জানেন আমি যাবই। তাই দ্রুত হালকা পায়জামা-পাঞ্জাবি গায়ে চাপিয়ে সাইকেল চালিয়ে দিলাম ছুট। কাকলির অবশ্য আমার প্রতি একটু করুনা হলো তাই ভালো ছাতা নয় পুরোনো একটি ছাতা আমাকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা মাথায় দিয়ে যাও। ছাতা হারানো আমার স্বভাব, এই ভেবেই হয়তো পুরানো ছাতা হস্তান্তর। প্রখর রৌদ্রময় গরমের তাপকে উপেক্ষা করে যখন হাসপাতালে পৌঁছলাম তখন অলরেডি ডা. দিদি ১০ ভায়েলস এভিএস দেওয়ার পর আরও ১০ ভায়েলস এভিএস চালু করে দিয়েছেন।
২০ ভায়েলস এভিএস দেওয়ার পরও পেসেন্টের সাথে কথা বলে যা বুঝলাম, গাটে পীঠে ব্যথা তখনও পুরো কমেনি ৷ কথা বলছেন তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। আর দু’চোখ পুরো টোসিস না হলেও মাঝে মধ্যে খুব সর্তক ভাবে পেসেন্টের চোখ দুটোর দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাচ্ছে দু’চোখ কেমন জানি ঢুলুঢুলু মনে হচ্ছে। দুটি চোখ স্বাভাবিক মেলতে একটু সমস্যাই হচ্ছে। তবে দুপুর ১২ টার আগে পেসেন্টের যা অবনতি ছিলো সেই অবস্থা থেকে বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে কুড়ি ভায়েলস এভিএস দেওয়ার পর।
চাই আরও এভিএস-
কোভিড পরিস্থিতির আগে বেশ কিছু কালাচ কামড়ের কেস হিস্ট্রির সাক্ষি এই অধম ছিলো। বেশ কিছু কালাচ কামড়ের রোগীকে একদম কাছ থেকে দেখার বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে আমার মনে হচ্ছিল আরও এভিএস প্রয়োজন। ডা. অর্পণা দির সাথে কালাচ প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে বললাম, এই পেসেন্টকে আরও ১০ ভায়েলস এভিএস দিয়ে দিলে ভালো হয়৷ আসলে সাহস করে ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্যকে বলা যায়। কারণ আমি জানি দিদির এই বিষয়ে কোনও অহংবোধ বা ইগো নেই। রোগীটি সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে সেই আনন্দের স্বাদ সত্যি তারাই উপভোগ করতে পারেন যারা খুব কাছ থেকে মুমূর্ষু সাপ কামড়ের রোগীকে সম্পুর্ন সুস্থ করে তুলেছেন। রোগীর স্বার্থের কথা ভেবে কোনও রেফার না লিখে বরং এভিএস এর সংখ্যা বাড়িয়ে দাও। সব ক্ষেত্রে প্রোটোকল মেনে হয়না। প্রোটোকল একটা পথ নির্দেশ । এখানে সাপের কামড়ের চিকিৎসা বিষয়ে অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন সাপ কামড়ের রোগীর ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের বিবেচনা বুদ্ধি খাটিয়ে পরিমাণ মত এভিএস দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলার আনন্দ কি সত্যিই কম।
আবার ১০ ভায়েলস দেওয়া হলো –
আমি হাসপাতালে থাকতে থাকতেই ডা. দিদি জানালেন সিস্টার দিদিদের বলেছেন আরও দশ ভায়েলস চালু করতে। আমি গিয়ে দেখলাম খুব দ্রত আরও ১০ ভায়েলস এভিএস দেওয়া হয়েছে। আনুষঙ্গিক অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, সহ শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, ইসিজি সবটাই খুব দ্রুততার সাথে আন্তরিক ভাবে করা হল। সত্যি কথা বলতে যিনি হাসপাতালে নানা রোগী দেখার ব্যস্ততার মাঝেও এত কিছু পরিচালনা করতে পারেন সেই তো আমাদের কাছে একজন প্রিয় চিকিৎসক।
আরও এভিএস দাও শরীর যেন চাইছে —
দুপুর বেলা পেসেন্টের বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে পুনরায় যখন পেসেন্টের কাছে গেলাম তখন অনেকটা গলার স্বর পরিষ্কার হলেও দু’চোখ কিন্তু তখন পরিষ্কার টোসিস। ৩০ ভায়েলস এভিএস দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় অন্যান্য ইঞ্জেকশন সহ ওষুধ দেওয়া হলো। পেসেন্ট আগের থেকে অনেকটা ভালো। এমনিতেই প্রচণ্ড গরম আমার স্নান খাওয়া কোনটাই হয়নি। এদিকে পেসেন্টের পরিবারের লোকজন কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পাচ্ছেন না যে এটা সাপের কামড়। পরিচয় হলো তরুন ছেলে দেবব্রতর সাথে। কলেজে পড়াশোনা করছে। আমার লেখা সাপের বইটি সহ কুসংস্কার ও বিজ্ঞান পত্রিকাটি দিয়ে বললাম, এটা ভালো করে পড়ে তোমার মতামত জানিও। পাশাপাশি জানতে চাইলাম ঠিক কি ঘটেছিলো বলতো। দেবব্রত হল সুজলা মন্ডলের বড় ছেলের ঘরের নাতি।
রোগীর আরও কিছু ইতিহাস –
দেবব্রতর বয়ান অনুযায়ী যে পরিষ্কার তথ্য উঠে এলো তা থেকে নিশ্চিত এটা কালাচেরই কামড়। ওর বক্তব্য- বিছানায় মশারী খাটিয়েই ঘুমান ঠাকুমা। কিন্তু গত ২৭ এপ্রিল শনিবার রাতে ভিষণ গরমের জন্য মশারী না ঘটিয়ে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়েন। রবিবার সকালের পর থেকে ঠাকুমা বলেন, হাতে সামান্য ব্যথা করছে। সারাদিন বাড়ির কাজ সহ বিঁচুলি কাটা সব কাজ করেছে। আমি ওকে একটু থামিয়ে জানতে চাইলাম কোনও রকম পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, মাথাধরে থাকা, সারা শরীরের গাটে পীঠে ব্যথা হচ্ছে এমন কিছু কি বলে ছিল। ছেলেটির জবাব এত কিছু জানিনা। আসলে ঠাকুমা প্রতিদিন যেভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন সেভাবেই কাজকর্ম করছেন দেখে আমরা কি করে বুঝবো ঠাকুমার শরীরে অস্বস্তি হচ্ছে। রবিবার রাতে কোথায় ঘুমিয়েছেন ? উত্তর বিছানায়। এবং মশারী খাটিয়ে। কেননা ঠাকুমা নাকি কথায় কথায় বলছিল মাটিতে মেঝেতে ঘুমালে পোকামাকড় কামড়াতে পারে। কিন্তু যা ঘটার তা তো শনিবার রাতেই ঘটে গেছে। সোমবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর গরুর খাবারের জন্য বিচুলি কাটা শেষ করে ঠাকুমা বলেন যে দুই হাতে ভিষণ ব্যথা হচ্ছে। এবং হাত দুটো কেমন জানি ফোলা ফোলা লাগছে। হাত – পা জ্বালা ভিষণ জ্বলাও করছে।
বেশ কয়েক বছর আগে এই দৌলতপুর এলাকা থেকেই এক গর্ভবতী মহিলার কালাচ কামড়ের ঘটনা বলার পর, আমার মোবাইল থেকে কয়েকটি কালাচের ছবি দেখিয়ে দেবব্রতর কাছে জানতে চাইলাম, – এর আগে কোনও দিন তোমাদের বাড়িতে কালাচ সাপ দেখেছো ? সাথে সাথেই বলল ‘হ্যাঁ স্যার গত বছর আমি আমাদের ঘরে এই সাপকে ঢুকতে দেখেছি ‘। আরও বলল ‘ রাতে পড়াশুনা শেষ করে বাইরে বাথরুমে যাবো বলে যেই বেরিয়েছি ঠিক তখনই দেখেছিলাম একটি বড় ধরনের কালো রঙের কালাচ আমাদের ঘরের ভিতরে ঢুকছিল’। আমার পায়ের শব্দ পেয়ে সাপটি উল্টো ব্যাক করে শুকানো পাটের ছালের ভিতর দিয়ে ঢুকে বাইরে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তে পাশের জঙ্গলে নিমেষে চলে যায়। সাপটিকে আর দেখতে পাওয়া যায়নি। পাটের ভিতরে ঢোকার সময় লেজের কিছুটা অংশ ছবি তুলে রেখেছিলাম। ছবিটা দেখলাম এবং বললাম এটা মারাত্মক বিষধর কালাচ। নিশ্চিত হলাম এ বাড়ির আশেপাশে বিষধর কালাচ আছে। এবং এটা অবধারিত কালাচ কামড়েরই উপসর্গ ও লক্ষণ। এর আগে একটি কেস হিস্ট্রিতে জেনেছিলাম ৭২ ঘন্টা পর ডা. শেখ রাজিব এক পেসেন্টকে সঠিক সনাক্তকরে সাপ কামড়ের চিকিৎসা দিয়ে সম্পুর্ন সুস্থ করে তুলেছিলেন। সেই রোগীর পেট ব্যথার মুল কারণই ছিলো নার্ভ বিষ মানে কালাচের কামড়। আজ আমি একটু ভিন্ন উপসর্গ নিয়ে এই রোগীর ইতিহাস জেনে শিখলাম সত্যিই কালাচ সাপটি ভীষণ রকমেরই রহস্যময়।
শেষের কিছু কথা –
কালাচ নিয়ে এমন অভিজ্ঞতা কাদের কাদের হয়েছে জানিনা তবে ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্যর সৌজন্যে আমি নতুন করে আজ অনেক কিছু শিখলাম। পরিবারের লোকজনকে আস্বস্ত করে বললাম নিশ্চিত থাকুন এই হাসপাতাল থেকে এর আগে বেশ কিছু কালাচ কামড়ের রোগী সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। উনিও সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যাবেন। একটু চিকিৎসদের সাথে সহযোগিতা করুন। হাসপাতালে দিনরাত যারা ডিউটি করেন তারা জানেন কিভাবে সব দিক সামলে এই ধরণের সাপ কামড়ের রোগীর দেখভাল করা কতটা চাপের। যাইহোক দুপুরর পর বাড়িতে আসার আগে পেসেন্টের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে কেন জানিনা আমার মনে হলো ডা. দিদিকেই সাহস নিয়ে বলা যায় ৩০ ভায়েলস দেওয়া হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু রাতে তো আপনি থাকবেন না কাজেই আরও ৫ ভায়েলস স্লো করে চালিয়ে রাখুন না। আমি রাতে অবশ্যই আসবো ওদের ফোন নাম্বার আমার কাছে আছে আমি যোগাযোগ করেও নেবো।
প্রখর তাপে দুপুরের পর বাড়িতে ফিরে স্নান-খাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় যখন হাসপাতাল যাব বলে রেডি হচ্ছি ঠিক তখন ডা. দিদির ফোন, “আরে শুনুন না আরও ৫ ভায়েলস এভিএস দিয়েছি। পেসেন্ট এখন অনেক সুস্থ বেডে বসে মুড়ি খাচ্ছে। আমার আজকের মতো ডিউটি শেষ। আমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। আপনি একবার এসে পেসেন্ট কেমন আছে আমাকে জানান “। রাতে পুনরায় গিয়ে পরিবারের লোকজন সহ পেসেন্টের সাথে কথা বলি। পেসেন্ট একদমই পুরো ফিট। কথা বলতে সমস্যা নেই। দু’ চোখ মেলতেও কোনও সমস্যা নেই। হাতের ব্যথা, ফোলা কমে গেছে। পেসেন্ট সম্পুর্ন বিপদমুক্ত। অবশেষে পরিবারের মানুষজনকে বোঝাতে সক্ষম হলাম এটা যে সত্যিই কালাচের কামড়। যাইহোক সাপ কামড়ের কেস হিস্ট্রি গুলোকে আমাদের পরবর্তীতে কাজের সুবিধার জন্য ডকোমেন্ট হিসেবে রাখার কারণে পেসেন্টের একটি ছবি নেওয়ার আবাদার জানাতেই বড় ছেলে বললেন, নিশ্চয়ই তুলবেন, ডা. দিদি বারবার আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য যেভাবে ছুটে ছুটে এসছেন আর আপনি যেভাবে এই গরমের মধ্যে দুপুর থেকে রাত অবধি আমাদের পাশে থেকেছেন, সমস্যা গুলোকে বুঝে ডাক্তার দিদির সাথে কথা বলেছেন। আপনাদের এই অবদানের কথা কি ভোলা যায়। একদিন আমাদের বাড়িতে আসুন। বললাম নিশ্চ্যই যাবো। রাতে বাড়িতে ফিরে আসার আগে আর একবার স্বচক্ষে দেখে যখন হাসপাতালের বাইরে এলাম তখনই দেখি অধির আগ্রহে ওনার বড় ছেলে সহ পরিবারের লোকজন বাইরে অপেক্ষায় রয়েছেন। শুধু বললাম এবার বিশ্বাস হয়েছে তো এটা বিষধর কালাচ সাপের কামড়। মোট ৩৫ ভায়েলস এভিএস লেগেছে।
মঙ্গলবার ছিল বারাসাতে আমাদের মেডিকেল ক্যাম্প। মনটাও খুতখুত করছিলো। ডা. অপর্ণা দিও উৎসুক হয়ে আছেন। আমাকে একবার ফোনও করেন। তার আগে পরিবারের সাথে আমার কথাও হয় পেসেন্ট সম্পুর্ন সুস্থ। সুস্থ হওয়ার একটি ছবি ডা. দিদিকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিই। দিদি প্রত্যুত্তরে জানান তিনি খুব খুশি। আমি চিকিৎসক নই তবে এটা বুঝি একজন মুমূর্ষু সাপের কামড়ের রোগীকে সম্পুর্ন সুস্থ করে তোলার যে আনন্দ তা কোনও অর্থ বা প্রশংসা দিয়েও ব্যখ্যা করা যায় না। পরিশেষে বলি ডা. দিদি আপনি ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আর এভাবেই মানুষের পাশে থেকে সাপের কামড়ের রোগীদের সুস্থ করে তুলুন।