লিখব না, লিখব না করেও লিখে ফেললাম। আজ এক ডাক্তার বন্ধু’র দেয়ালে এই চমৎকার লাইনগুলো দেখার পরে না লিখে পারলাম না। বন্ধুটি আবেদন করছে:
“বুকে হাত হাত রেখে বলুন, পায়েও হাত দেবেন না, গায়েও হাত দেবেন না, তবেই ডক্টরস ডে হ্যাপি হবে।”
তার এই লেখাটা পড়ে ১৮৪৮ সালে দুই জার্মান দার্শনিক বিপ্লবীর লেখা একটা চটি বই (ইশতেহার) থেকে কিছুটা উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারলাম না, বিশেষ করে লাস্ট লাইনটার জন্য।
“বুর্জোয়া শ্রেণী যেখানেই একহাত নেওয়ার, মাস্তানি করার সুযোগ পেয়েছে, সেখানেই সমস্ত সামন্ততান্ত্রিক, পিতৃতান্ত্রিক ও প্রকৃতি-শোভন সম্পর্ক খতম করে দিয়েছে। যেসব বিচিত্র সামন্ত-বাঁধনে মানুষ বাঁধা ছিল তার স্বভাবসিদ্ধ ঊর্ধ্বতনদের কাছে, তা এরা ছিঁড়ে ফেলেছে নির্মমভাবে, মানুষের সাথে মানুষের নগ্ন স্বার্থের বন্ধন, নির্বিকার ‘নগদ দেনাপাওনার’ সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই এরা অবশিষ্ট রাখে নি। আত্মসর্বস্ব হিসাবনিকাশের ঠাণ্ডা জলে এরা ডুবিয়ে দিয়েছে ধর্ম উন্মাদনার স্বর্গীয় ভাবোচ্ছাস, শৌর্যবৃত্তির উৎসাহ ও কূপমন্ডুক ভাবালুতা। লোকের ব্যক্তি-মূল্যকে এরা পরিণত করেছে বিনিময়মূল্যে। অগণিত অনস্বীকার্য সনদবদ্ধ স্বাধীনতার জায়গায় এরা এনে খাড়া করেছে ওই একটিমাত্র নির্বিচার স্বাধীনতা – অবাধ ব্যবসা, মুক্ত-বাণিজ্য। এক কথায়, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মোহগ্রস্ততার মধ্যে যে শোষণ এতদিন ঢাকা ছিল, তার বদলে এরা এনেছে নগ্ন, নির্লজ্জ, সাক্ষাৎ, পাশবিক শোষণ। মানুষের যেসব বৃত্তিকে লোকে এতদিন সন্মান করে এসেছে, সশ্রদ্ধ বিস্ময়ের চোখে দেখেছে, বুর্জোয়া শ্রেণী তাদের মাহাত্ম্য ঘুচিয়ে দিয়েছে, তাদের মাথার পেছনের দ্যুতিযুক্ত জ্যোতির্বলয় টেনে ছিঁড়ে দিয়েছে। চিকিৎসাবিদ, আইন বিশারদ, পুরোহিত, কবি, বিজ্ঞানী – সকলকেই এরা পরিণত করেছে তাদের মজুরি ভোগী শ্রমজীবী হিসেবে।”
মজুরি পাওয়া স্বাস্থ্য-শ্রমিকদের আবার বিশেষ দিন-টিন কিসের ভাই? কিসের ডক্টরস ডে? আজ সকালেও ঘুম থেকে ওঠার পরে ভালো করে দেখে নিয়েছি,মাথার পেছনে কোনো স্বর্গীয় থালা ফালা গজায় নি। কাল যেমন ছিলাম আজও তেমনই আছি, আগামী কালও তেমনই থাকবো। অতি সাধারণ একজন খেটে খাওয়া মানুষ।