১৪ই নভেম্বর শিশু দিবস বা চিলড্রেনস ডে। সেই চিলড্রেন বা শিশু কাদের বলবো এই প্রশ্নের একটু উত্তর খোঁজা যাক। ইংল্যান্ডে এক সময়ে চিমনির ভেতরে জমে থাকা ঝুলকালি পরিষ্কার করার জন্য শিশুদের কাজে লাগানোর প্রথা চালু ছিল। লক্ষ্য করা গিয়েছিল যে ওই শিশুদের বেশিরভাগই বেশিদিন বাঁচে না।
১৭৭৫ সালে রয়েল কলেজ অফ সার্জেন-এর ডাক্তার স্যার পার্সিভ্যাল পট প্রথমবার চিহ্নিত করেন যে ওই চিমনি সুইপারদের স্ক্রটাম কারসিনোমা (ক্যানসার)-র সাথে চিমনির ভেতরে জমে থাকা ঝুলের সম্পর্ক আছে। এর নাম হল “চিমনি সুইপার ডিজিজ”। সেই থেকে পৃথিবীর প্রথম অকূপেশোনাল ক্যানসার হিসেবে অসুখটি চিহ্নিত। এর ফলে দুটি ঘটনা হয়: এপিডেমিওলজি নামে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি শাখার গোড়াপত্তন হয় আর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইন পাশ হয় চিমনি সুইপার আইন নামে যাতে আট বছরের নীচে বয়েস এমন বাচ্ছাদের কাজে লাগানো নিষিদ্ধ হয়। মানে আট বছরের বেশি হয়ে গেলে শিশু আর শিশু থাকে না। শিশুর ডেফিনেশন তৈরি করে তথাকথিত মহান গণতান্ত্রিক উদারনৈতিক রাষ্ট্র।
এই আইন যে খুব বেশি কাজে লাগেনি সোটা বোঝা যায় ১৭৯৪ সালে বিখ্যাত কবি উইলিয়াম ব্লেক-এর লেখা একটি কবিতায়। কবি সেখানে মর্মস্পর্শী ভঙ্গিতে দেখিয়েছেন কিভাবে মাতৃহীন টমকে তার বাবা বিক্রি করে দিচ্ছে, মাথার চুলগুলো কামিয়ে দেয়ার জন্য টম বলে সেই বাচ্ছা চিমনি সুইপারটি কিভাবে কাঁদছে (সুট বা ঝুল কালি লেগে যাবে বলে চুল কেটে দেয়া হত)। কিভাবে দেবদূত এসে ডিক, জো নেড, জ্যাক -মৃত সব চিমনি সুইপারদের কফিন খুলে তাদের মুক্তি দিচ্ছে ইত্যাদি।
এর পরে মার্ক্স ১৮৬৮ সালে ইন্টার ন্যাশনাল ওয়ার্কিং মেন্স এসোসিয়েশনের বক্তৃতায় দেখান যে বুর্জোয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটালিস্ট ক্লাস কি নির্মম ভাবে শ্রমিকদের বিশেষত শিশু শ্রমিকদের শোষণ করে, তাদের শ্রমদিবস ১২ ঘন্টা থেকে কমিয়ে আনার আইন অবধি মানে না।
শিশু কাকে বলবো সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হয় অমল শৈশব হরণকারী, হত্যাকারী সেই সব লোভী নির্দয় মানুষগুলো আর তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামের ইতিহাস আর এপিডেমিওলজির পাতায় পাতায়।
শিশু দিবসে নিজের আদরের শিশু সন্তানের ছবি শেয়ার করা পাঠক/পাঠিকা একবার সেই টম এর কথা ভেবে দেখবেন। বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো সেই টম-এর কফিনে শুয়ে থাকা নিথর দেহকে কোনও দেবদূত মুক্তি দিতে আসবে না, ব্লেক ভুল বলেছিলেন, তাদের মুক্তির পথ আমাদেরই খুঁজে নিতে হবে।