আমি একজন ডাক্তারী ছাত্র। একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। বেশ কিছুদিন ধরেই চেঙ্গাইলের মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাচ্ছি। প্রথমে যেতাম শুধু ক্লিনিকস সম্বন্ধে নিজের ধারণা ঠিক করতে। ডায়াগনসিস আরো ভালো করে শিখতে। কিন্তু তার সাথে কিছু উদ্বৃত্ত পাওনাও ছিল। সেই কথায় পরে আসব, আগে জায়গাটা সম্পর্কে এবং কেনো যাওয়া শুরু করলাম তা নিয়ে বলি।
আমাদের এক সিনিয়র ঈশাদির দৌলতে বেশ কিছুদিন ধরে বেলিয়াতোড়ে যাচ্ছি। সেখানেই পরিচয় সুজয় স্যারের সাথে। একদিন স্যারই বললেন চেঙ্গাইলে আয়। প্রায় চারঘন্টার পথ অতিক্রম করে গিয়ে পৌঁছলাম চেঙ্গাইল। প্লাটফর্মে নামতেই দেখলাম সবাই একডাকে চেনে বেলতলার ক্লিনিক। মুসলিম অধ্যুষিত একটি এলাকায় অবস্থিত এই ক্লিনিকটা। চারিদিকে যখন সিএএ, এনআরসি নিয়ে ঝড় উঠছে তখন দেখি এই গ্রামের মধ্যেই একটা হিন্দু মন্দির। মনে হলো গুজরাটের দাঙ্গাবাজদের ডেকে বলি শুধু গরুর দুধে সোনা না খুঁজে আমাদের রাজ্যে এসে একটু হাজার চুরাশির মা আর অরণ্যের অধিকার পড়তে।
চেম্বারের ভিতরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে রুগী দেখে চলেছেন ড. পুণ্যব্রত গুণ ওরফে পুণ্যদা, সামনের চেয়ারে বসে মৃন্ময়দা। কখনো এখানে আসে আমাদের বিপ্লবদা। প্রত্যেক শনিবার করে দেখা হয় সুমিতদার সাথে। উনি সাইকয়াট্রিস্ট। তাছাড়াও অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে আসেন সারা সপ্তাহ জুড়ে। কিন্তু আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সৌম্যকান্তি পন্ডার সাথে দেখা করার। সৌভাগ্যবশত প্রথম দিনই দেখা হয়ে গেল দাদার সাথে। অনেক পেডিয়াট্রিক পেশেন্ট দেখলাম।
এরপর বহুবার গেছি, কখনো একা, কখনো আবার বন্ধুদের নিয়ে। কমিউনিটি নিয়ে একটা সম্যক ধারণা ওখানে না গেলে তৈরি হত না। ডার্মাটোফাইটোসিস আর সাইকিয়াট্রির এতো রোগী একসাথে এক জায়গায় আর দেখিনি। অনেক দূর দূর থেকে রোগী এখানে আসেন, কারণ এখনকার ডাক্তাররা এখনো আপনার স্বপ্নের অগ্নীশ্বর মুখোপাধ্যায়। তারা শুধু নামমাত্র মূল্যে যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসাই এখানে করেন না, তার সাথে ইসিজি, এক্স-রে এবং রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা ন্যায্য মূল্যে করানোর ব্যবস্থা করেন। তাছাড়াও জেনেরিক নামে এখানে ড্রাগ পাওয়া যায়।
কি ভাবছেন এমনটাও আবার সত্যি হয়!! ডাক্তার মানুষের সেবাও করে আবার!! না হয়তো করে না। আপনার চেনা পরিধির মধ্যে হয়তো করেন না, কিন্তু নিজেদের কমফোর্ট জোনের বাইরে পা রাখলে বুঝবেন কত ডাক্তার এখনো মানুষের সেবা করছেন। ক্লিনিকাল এস্টাবলিসমেন্ট অ্যাক্টের দৌলতে এখানে আর এখন অস্ত্রোপচার হয় না। কারণ আপনি শিক্ষা-স্বাস্থ্যের দাবিতে ভোট দেন নি। দু টাকা কিলো চালকে অধিকার নয় আপনি ভিক্ষা বা দয়া হিসেবে দেখেন। হিন্দু মুসলিমের নোংরা রাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়ে ভোট দিতে যান। যাই হোক এতো প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও এখনকার চিকিৎসকরা হার মানতে শেখেন নি। সুজয় স্যার (সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট) এখনো মাসে দুদিন এখানে আসেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে অপারেশন করেন গরিবদের।
কিন্তু আগের দিন একটা অন্য অভিজ্ঞতা হল। সেটা বলেই এই লেখা বা ভাট বকা শেষ করব। আমার সহপাঠী অনিষাকে আগেরদিন নিয়ে গেছিলাম। বাইরে থেকেই এই ক্লিনিক দেখে ও একটা অদ্ভুত কথা বললো – যদি বেসরকারি কলেজের কোটিপতি ছাত্র এবং কমিউনিটি মেডিসিনের কিছু টিচারদের এনে এই কমিউনিটি দেখানো যেত…।
পেশেন্ট আর ট্রিটমেন্ট ছাড়াও দুটো জিনিস আমার নজর কাড়লো – একজনের হাইপারট্রফিড স্কার। মহরমের সময় নিজের সারা গায়ে ছুরি মেরে কি সাংঘাতিক অবস্থা করেছে একুশ বছরের এই ছেলেটা। আর তারপর দেখলাম একটা চোদ্দ বছরের হিন্দু বিবাহিত মেয়ে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে। না অসুখ শুধু ফিজিওলজি আর প্যাথলজি দিয়ে সংজ্ঞাবদ্ধ করা যায় না। মেডিসিন পিওর সাইন্স নয়, সোশাল সাইন্স। আর এই সোসাইটিকে চেনানোর জন্যই চেঙ্গাইলের প্রেমে পড়ে গেলাম। কি অদ্ভুত দুটো ধর্মের মানুষ কিন্তু রোগ একটাই – শিক্ষার অভাব।
এর পরেও আপনি ভাবছেন পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে জে এন ইউ-তে ছেলে মেয়েরা কেন পড়ছে? আপনি এখনো ধর্মের নামে এবং কোন পন্থার নামে শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর হামলাকে সমর্থন করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন শুধু ওষুধ দিয়ে অসুখ সারবে না। প্রতিকারের একটাই উপায় – শিক্ষা। আর তা না হলে উজ্জ্বলা প্রকল্পের পোষ্টারের মেয়েরা ওই পোষ্টারের ছবির মতোই শ্বশুরবাড়ির হেঁসেল ঠেলবে। স্মার্ট সিটিতে বুলেট ট্রেন চালিয়ে তারা আসবে না। কিন্তু হ্যাঁ আমার বেশ কিছু বন্ধুরাও এমন স্ব্যার্থত্যাগী, পরোপকারী ডাক্তারদের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। এগিয়ে এসে মানব সেবায় ব্রতী হতে চাইছে।
Daktari student…..
Akbar cholun na Itihash er patai ghure asi..,,Calcuta killing er golpo pori…..(apnader moto over smart der mote ota golpo)Danga kara korechilo!!!??
Gujrat danga pore dekhbo …age west bengal dangar hishab gulo dekhun..
Okhane hindura ghumia nei bolei muslim agrashon briddhi pai ni…
R west bengal e hinduder jomi kere nichche mushlim ra r hindu ra ghumia ta dekhche…..amito apnar gaan dekhe obak hochchi je apni Gujrat danga dekhlen kintu west bengal er dike love jihad, muslim agrashon dekhlen na,…,ba vai bah,..
Apnar kache rugira shurokkhito to?Medical journal nia lekhalekhi korun …amader kono chulkani nei….but oi hindu mushlim er golpo tanben na……
হয়তো বাংলাটা ইংলিশে আর ইংলিশটা বাংলাতে লিখতে পারিনা বলেই আমি ওভারস্মার্ট। আর আপনি মনে হয় আমার পুরো লেখাটা পড়েননি। রুগীর বুকে স্টেথোস্কোপ বসালে আমি এস ওয়ান আর এস টু শুনতে পাই। ওটা হিন্দু মুসলিম সবার ক্ষেত্রেই এক। আর আমি তো দাঙ্গা বললাম, আমি তো একবারের জন্যে হিন্দু সন্ত্রাস বলিনি। আমি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভালবাসি। আমি জীবনকে ভালোবাসি। আমি সবার জন্য স্বাস্থের কথা বলতে ভালবাসি, আপনার জন্যেও। আমি চাই সবার জন্য শিক্ষা। আমি চাই যাতে আপনি জেনেরিক নামে ড্রাগ পান। আমি চাই যাতে আপনার স্বাস্থের পিছনে খরচ কমে। আপনি বোধকরি জানেন না আগের বছর আয়ুষ্মান ভারতের ৬৪০০ কোটির মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ খরচ হয়েছে। আর শহরে হাসপাতাল বানালে গরীবের কোনো উপকার হবে না। বেশতো আপনি যদি ভালো থাকেন, আপনার যদি নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থের পিছনে খরচ কমে, যদি আপনার এবং আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাকরির অনিশ্চিয়তা না থাকে তাহলে আমার পোস্ট না পড়লেও হবে। আর হ্যাঁ একবার চেঙ্গাইল থেকে ঘুরে যাবেন।
আপনি ভাট লেখেননি বা ভাট কোনও কথা বলেন নি। পয়োজনীয় কথা লিখেছেন। বেশ ভালো হয়েছে।
ব
ধন্যবাদ স্যার