ছোটোবেলায় এতো পেন্সিল হারাতাম, যে মা একটা পেন্সিল ভেঙে দু’ভাগ করে দিত। আমার একটা বদভ্যাস ছিল পেন্সিলের পিছন চেবানো। আমাদের রান্নার ঠাকুর, যিনি ওড়িশার লোক ছিলেন, বলতেন ‘ পেন্সিলের পোঁ* চিবিয়ে কেউ বিদ্যাসাগর হয় না। পেন্সিলে সবচেয়ে পেনফুল স্মৃতি হলো যখন দু আঙ্গুলের মধ্যে পেন্সিল চিপে শাস্তি দেওয়া হতো। এখন পেন হারাই। পেন দু’ভাগ করার সুযোগ নেই,তাই দু’টাকার পেন দিয়ে কাজ চালাতে হয়। দামি পেন পেলে, দামি লোকেদের দিয়ে দি। কোনদিন বাড়ি থেকে দু’টো পেন নিয়ে বেরোলে,একটাও ফেরে না। আবার কোনদিন একটা নিয়ে বেরোলে, তিনটে নিয়ে ফিরি-যার একটাও আমার নয়।
এবার আসল কথায় আসি। যখন ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে বা ওটির পর নোটস্ লিখবো বলে, সিস্টারদের কাছে পেন চাই, তখন একটা অদ্ভুত জিনিষ ঘটে- যে ডাক্তাররা লেখার পর পেনটা ওদের ফেরত দেয়, তাদের ওরা পুরো পেনটাই দেয়। আর যারা পেনটা ভুল করে,নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়, তাদের খাপটা খুলে পেনটা দেয় যাতে খাপ ছাড়া পেনটা পকেটে ঢোকানো না যায়। আমি ওই খাপ-ছাড়া’দের দলে পরি।
কাল ছোট সিস্টার একটা পেন দিল। ছবিটা নীচে দিলাম। মাথায়,নীল খাপ আর বডিটা কমলা বা গেড়ুয়া। পকেটে রাখলে,শুধুই নীল দেখা যায়, বার করলে তবেই গেড়ুয়া রঙ দেখা যায়।
যাই হোক! এসব নিয়ে, বিশদে আলোচনা না করাই ভালো।
হাসপাতালে, সিস্টার ছাড়া ডাক্তারদের আর এক কাছের মানুষ হোল, রিসেপশনে বসা বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো। গতকাল বিকেলে একজনের কাছে গিয়ে বললাম, সোমবার একটা কাজ আছে, তাড়াতাড়ি চলে যাব, বেশি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিবি না। সে ডায়রি খুলে দেখলো,ছ’জনের নাম লেখা আছে-তার তলায় দাগ টেনে লিখে দিল, “Dr.Indranil Saha no more” আমি আঁতকে উঠলাম! এই মেয়ে কি ভবিষ্যত দেখতে পায়! গলা শুকিয়ে গেল।ভাবলাম, এক্ষুনি Good Night না বলে,Rest in Peace বলবে। শান্তিতে বিশ্রাম তো সব ডাক্তারই চায়।
যাই হোক্, এই বাচ্চাগুলো’কে নিয়েই মজা করি, এদের বকুনি দি, এদের ওপর রাগ করি। কিন্তু মাঝরাতে যখন ইমার্জেন্সী অপারেশানের পর ক্লান্ত হয়ে ওটি থেকে বেরোই, তখন এদেরই কেউ বলে, “স্যার একটু কফি করে দেবো?” বা আউটডোরে যখন কোন ঝামেলা হয়, তখন এই বাচ্চা মেয়েটা’ই সামনে দাঁড়িয়ে, মা’য়ের মতো আগলে রাখে।
আমি কোনদিন পরী দেখিনি। কিন্তু এদের দেখার পর আর কখনো গল্পের পরীদের দেখার দরকার’ই পড়বে না।