‘বাচ্চা কিচ্ছু খেতে চায় না’ আর ‘*রেল্যাক কতবার খাবে’ এসব প্রশ্নে জেরবার হতে হতে আবার একবার বাচ্চার খাওয়া নিয়ে কলম থুড়ি স্ক্রিন ধরতে হ’ল। বিষয়ের খুব গভীরে না গিয়ে কিছু প্র্যাক্টিক্যাল টিপস দেবো-
১.
বাচ্চার ছ’মাস পূর্ণ হলেই বাড়ির খাবার শুরু করুন। কোনও রকম প্যাকেটজাত খাবার দেবেন না। *রেল্যাক, *স্টাম, *জাম এসব খাইয়ে কখনোই বাচ্চার সঠিক পুষ্টি হয় না। বুকের দুধের সাথে উপযুক্ত পরিপূরক খাবার দিন। তবে বিশেষ কিছু দিনে রান্না করার সময় না থাকলে এক-আধবার প্যাকেটের খাবার দিতেই পারেন কিন্তু মাথায় রাখবেন ওটা বাধ্য হয়ে করা। প্যাকেটের খাবারের ফ্লেভারের জন্য বাচ্চারা আকৃষ্ট হয়। অভ্যেস বানিয়ে ফেললে বাচ্চা আর বাড়ির খাবার খেতেই চাইবে না।
২.
অন্নপ্রাশন বা ওই জাতীয় কোনও সামাজিক রীতিনীতির জন্য বাচ্চার বাড়ির খাবার শুরু করতে দেরি করবেন না। বাড়ির পুরাতনপন্থী লোকেদের বোঝান উৎসব অনুষ্ঠান, ঠাকুরের নামগানের জন্য বাচ্চার বাড়ির খাবার খাওয়া পিছিয়ে গেলে বাচ্চারই ক্ষতি।
৩.
চাল-ডাল (খিচুড়ির মতো) গলিয়ে খাওয়াতে শুরু করুন। ছেঁকে খাওয়াবেন না। ধীরে ধীরে সবজি মেশাতে শুরু করুন। নতুন কিছু শুরু করতে গেলে এককালীন একটিই দেবেন। নতুন খাবারে সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখুন।
৪.
বাচ্চার খাওয়ার আগে অন্তত আড়াই ঘন্টা খালি পেটে রাখুন। ছ’মাসের পর আগের মতো ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না। ‘আহারে! বাছার আমার পেট পড়ে গেল…’ বলে ঘন্টায় ঘন্টায় বুকের দুধ খাইয়ে গেলে বাচ্চার কাছে বাড়ির খাবার খাওয়াটা অত্যাচার বলে মনে হবে এবং খাওয়ার পর নির্ঘাত বমি করে তুলে দেবে।
৫.
পারলে বাচ্চার খাওয়ার সময় বাড়ির সবাই একসাথে বসে খান। বাচ্চা সবার খাওয়া দেখুক। একটু বড় হ’লে খাওয়ানোর সময় ছোট্ট বাটিতে খানিকটা খাবার ওকে নিজের হাতে খেতে দিন। প্রথম প্রথম ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করবে। তাই করুক।
৬.
খাওয়ার সময় টিভি, মোবাইল চালাবেন না। কোলে করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাতি-ঘোড়া-কুকুর-ছাগল দেখাবেন না। বাচ্চা এক জায়গায় বসে খাবে। যাতে তার মনোযোগ শুধু খাবারের দিকেই থাকে। রঙিন সবজির (বিট, গাজর ইত্যাদি) টুকরো রাখবেন যাতে খাবারটি দেখতে আকর্ষণীয় হয় এবং বাচ্চা খাওয়াটাকেও মজাদার খেলা হিসেবে নেয়।
৭.
স্বাদ বাড়াতে অল্প করে ঘি বা মাখন মেশাতে পারেন। বেশি মিষ্টি দেওয়ার অভ্যেস না করানোই ভালো। অঙ্কুরিত ছোলা রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর গুঁড়ো করে খিচুড়ির সাথে মেশান।
৮.
মোটামুটিভাবে আট মাস বয়সের পর ডিম, মাছ ইত্যাদি প্রাণীজ প্রোটিন শুরু করা যায়। এক বছর বয়সের আগে গরুর দুধ দেবেন না।
৯.
বাচ্চাকে প্রতি দু’ঘন্টায় খাইয়ে দিতে হবে এরকম মাথার দিব্যি কেউ দেয় নি। খিদে পেলে খাওয়ান। খাওয়ার জন্য জোর করবেন না।
১০.
মাথায় রাখুন, বাচ্চার পুষ্টির অর্থ ফুলিয়ে ফুটবল বানানো নয়। বেশি প্যাকেটের খাবার খাওয়া বাচ্চার ওজন বাড়ে ঠিক কিন্তু প্রায়ই রক্তাল্পতা বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকে। বাড়ির খাবার খেয়েই বাচ্চা ভালো থাকে, সুস্থ থাকে।
নিচের ছকে (একটি জাতীয় পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রাপ্ত) মোটামুটি একটি ধারণা দেওয়া হ’ল। এরপরেও জিজ্ঞাস্য থাকলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।