‘কেউ বাড়াবাড়ি করলে, জায়গায় জায়গায় শীতলখুচি হবে’-র বক্তা পার পেয়ে গেলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে।
এক মহিলা নেত্রীকে টোন কেটে ব্যঙ্গ সম্বোধন করা প্রধানমন্ত্রী পার পেয়ে গেলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে।
একটি রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর ‘আপত্তিকর ভাষণে’র অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যার কারণে, তাঁর ভোটপ্রচারে নিষেধাজ্ঞা ঝুলিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন।
দলমত নির্বিশেষে সমস্ত রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কোভিড বিধিকে তুশ্চু করে বাংলার মাঠ ঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, ‘মানুষের জন্য’ কাজ করতে এসে বাংলাকে বধ্যভূমি বানিয়ে ফেলছেন, নির্বাচন কমিশন অন্ধ এবং বধির।
চৈত্র সেল, চড়ক গাজনে শিবের মাথায় জল ঢালতে ভক্তদের ঢল নামছে পথে — হাসপাতালে বেড আর অক্সিজেনের হাহাকার, টিকাকরণ কেন্দ্রে ভ্যাকসিন বাড়ন্ত, প্রশাসন নির্বিকার।
ভোটের আবহে নিরস্ত্র কিছু মানুষকে ছিন্নভিন্ন করে দিল রাষ্ট্রের বুলেট, পুননির্বাচন হবে কিনা তাও জানা নেই, বিচার দূর-অস্ত! দেশের মহামান্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতদের ধর্মীয় পরিচয়ের পোস্টমর্টেমে ব্যস্ত হলেন। কি আশা করেছিলাম, তিনি গর্জে উঠবেন— “হিন্দু না ওরা মুসলিম, ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন?” জানিনা, কখনো তাঁর রক্তের প্রয়োজন হলে, হাসপাতালে গিয়ে ‘স্বধর্মের রক্তদাতার রক্ত চাই’ বলে হুঙ্কার দেবেন কিনা!
সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই মহিলা প্রার্থীকে তাঁদের বাহ্যিক চেহারার পরীক্ষায় গোল্লা দিয়ে এক মহিলা পোস্টদাতা অক্লেশে মিম বানিয়ে ফেলেন তাঁদের ‘কাজের মাসী’ আখ্যা দিয়ে। আর আমরা মেয়েরা, ‘মিসোজিনিস্ট’ বলে গুচ্ছের পুরুষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে থাকি, তুলতেই থাকি।
খবরের কাগজ ভরে ওঠে টাটকা রক্তের মতো তাজা খবরে — কোথাও ছ’বছরের শিশুকে সিঙাড়ার লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে নিজের দাদু আর মামা, কোথাও বা প্রথম সহবাসের পরে বিছানায় রক্ত না লাগার ফলে নববধূকে খাপ বসিয়ে, ‘অসতী’ তকমা দিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সাদা কালো নিরাবেগ অক্ষরমালার পাশেই স্পেন্সার আর অঞ্জলি জুয়েলার্সের চকচকে রঙীন পাতা-জোড়া বিজ্ঞাপন। আমার পেট গুলিয়ে বমি উঠে আসে।
করোনার মারণলীলার মাঝেই হরিদ্বারী কুম্ভমেলা, শিয়ালদহের প্ল্যাটফর্ম, বাহুবলী নায়কের রাজনৈতিক রোড শো — সব দেখে ভীষণ ভীষণ অসুস্থ বোধ করছি।
সিংঘু সীমান্তে কৃষকেরা চাষে ধর্মঘট করে অবস্থানে বসে আছেন।
কেমন হবে, যদি সারা দেশের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা, দায়িত্বজ্ঞানহীন, নির্মম, স্বার্থপর, হিংস্র শাসক আর তার লাগামছাড়া নাগরিকদের নির্বোধ আচরণের দায় নিতে অস্বীকার করে এই অনন্ত অমানুষিক কোভিড-সেবার কষ্ট থেকে অব্যাহতি নেয়?
কেমন হয় তাহলে?
কষে গালাগালি দিন সকলে আমাকে, আরো অসুস্থ হতে চাই আমি। এই অসুস্থ, বিষাক্ত সমাজে বেঁচে থাকার ইচ্ছে বড় নির্লজ্জ মনে হয়।
(সঙ্গের ছবি, ব্রাজিলের এক কোভিড ওয়ার্ডে মৃত্যুপথযাত্রী, একাকী করোনা রোগীর হাতের মধ্যে জল দিয়ে ফোলানো রবার গ্লাভস, শেষ মুহূর্তে কোনো আপনজনের স্পর্শানুভূতি জোগানোর জন্য কোনো সহৃদয় নার্স দিয়ে গিয়েছেন।)