-ডাক্তার রায়, কারা আপনাকে খুন করার চেষ্টা করেছিল?
-আমি তো আগেও বহুবার বলেছি, অন্ধকারের মধ্যে কাউকে আমি চিনতে পারিনি।
-দেখুন, আমি একজন বহু ঘাটের জল খাওয়া পুলিশ। ভালোভাবেই বুঝতে পারছি আপনি কিছু একটা লুকচ্ছেন। আপনি কী চান না- খুনিরা শাস্তি পাক?
-ওরা তো শুধু হুকুম তামিল করতে এসেছিল। আসল অপরাধী তো ধরা পড়েছে।
-কিন্তু যারা আপনাকে খুন করতে চেয়েছিল, তাদেরও ধরা দরকার। কয়েকজন খুনি ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াবে, আর আমরা নাকে তেল দিয়ে বসে থাকব তা তো হতে পারে না। আর আপনার “শুধু হুকুম তামিল” কথাটা মানতে পারলাম না। হুকুমটা যখন কাউকে খুন করার তখন সেটা যারা তামিল করছে তারা খুনিই। আর খুনি খুব কম মানুষই হয়।
-কী জানি? জানেন তখন আমার বয়স তেইশ চব্বিশ, মেডিক্যাল কলেজে হাউসস্টাফ ছিলাম। এক সন্ধ্যায় একজন বাবা তাঁর আট বছরের মেয়ের লাশ কোলে করে এনেছিলেন। মেয়েটি দড়ির উপর ট্রাপিজের খেলা দেখাত কোনও সুরক্ষা ছাড়াই। খেলা দেখাতে গিয়ে মেয়েটি পড়ে গেছিল বারো ফুট উপর থেকে। যখন জিজ্ঞাস করেছিলাম, এতো উঁচুতে দড়ি টাঙান কেন? নিচে কিছু পাতেন না কেন? ওর বাবা উত্তর দিয়েছিলেন খেলার মধ্যে ঝুঁকি থাকলে তবেই লোকে পয়সা দেয়। নিচু করে দড়ি টাঙালে বা কিছু পাতলে কেউ পয়সা দেয় না। আচ্ছা, ঐ মেয়েটিকে যারা প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে দেখে আনন্দ পায়, তারাও কী পোটেনশিয়াল খুনি নয়।
-আপনি কথা ঘোরাচ্ছেন?
-আপনি ট্রেনে ছোটো বাচ্চাদের নিজের পিঠে কঞ্চির বাড়ি মেরে ভিক্ষা চাইতে দেখেছেন? মারতে মারতে পিঠে দাগ হয়ে গেলে তবে লোকেরা পয়সা দেয়। কজন তাদের থামতে বলে? আপনি কতজনকে শাস্তি দেবেন অফিসার? আসলে আমরা সবাই খুনি। যাদের সাহস আছে নিজের হাতে খুন করে, যাদের সাহস কম তারা কল্পনায় খুন করে আনন্দ পায়।
******
মফিজুলের কর্কশ কণ্ঠে ঘুম ভাঙল ডা. চঞ্চল রায়ের। মফিজুল তারস্বরে চিৎকার করছেন, ও ডাক্তারবাবু, শিগগিরি চলেন, খুব খারাপ পেশেন্ট এয়েচে। সাথে সাথে প্রাণপণে কোয়ার্টারের লোহার গেট ধরে ঝাঁকাচ্ছেন।
চঞ্চল তাড়াতাড়ি কোয়ার্টারের বারান্দায় এসে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে গো মফিজুলদা?
শিগগিরি চলেন, একটা বাচ্চা ছেলে নিয়ে আইচে? হায় আল্লা, বাচ্চাটা মনে হয় বেঁচে নাই। দশ এগারো বছরের ছেলে।
চঞ্চল পাজামা আর ফতুয়া পরে ছিলেন। সে অবস্থাতেই বেরিয়ে আসলেন। প্রায় ছুটেই হাসপাতালে ঢুকলেন। কোয়ার্টার থেকে হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তার একপাশে বড় একটা দিঘী, অন্য পাশে ধূধূ ধানক্ষেত। রাস্তার দুধারেই ঝোপঝাড়। মাঝে মাঝেই সেই রাস্তায় বিষাক্ত সাপ দেখা যায়। চঞ্চল প্রথম প্রথম টর্চ নিয়ে রাস্তায় বেরতেন। যত দিন যাচ্ছে চঞ্চল যেন এই পরিবেশের সাথে মিশে যাচ্ছেন। আজকাল টর্চ ছাড়াই রাত্রে হাসপাতালে যাওয়া আসা করেন।
ছেলেদের ওয়ার্ডে ঢুকে চঞ্চল দেখলেন দুজন সিস্টারই সেখানে। একজন সিস্টার একটি বাচ্চা ছেলেকে কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) করার চেষ্টা করছেন। হাতের দুই তালু একটা অন্যটার উপর রেখে ছেলেটির বুকে চাপ দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃদপিণ্ড চালু করার চেষ্টা করছেন। অন্যজন কয়েকটি জীবনদায়ী ইনজেকশন সিরিঞ্জে ভরে ফেলেছেন। অপেক্ষা করছেন ডাক্তারবাবুর আদেশের।
চঞ্চল ছেলেটির গলায় হাত রাখলেন। সিস্টারকে ইশারায় বললেন, সিপিআর চালিয়ে যাওয়ার জন্য। চঞ্চল গভীর মনোযোগে গলার ক্যারোটিড পালস অনুভব করার চেষ্টা করলেন। সিস্টারের হাতের চাপের সাথে সাথে ক্যারোটিড পালস পাওয়া যাচ্ছে না। চঞ্চল বললেন, দিদি, এড্রিনালিন ইনজেকশনটা আমাকে দিন। ইনজেকশন দিয়ে তিনি কিছুক্ষণ ছেলেটির মধ্যে প্রাণের চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করলেন। তারপর বললেন, এবার থামুন দিদি, আর লাভ নেই।
ওয়ার্ডের সবাই জড়ো হয়েছেন বাচ্চা ছেলেটির খাটের চারধারে। চঞ্চল মফিজুলকে বললেন, এদের সরান, স্ক্রিন এনে বেডটা ঘিরে দিন। একটা ব্যাপারে চঞ্চল আশ্চর্য হচ্ছিলেন, এতক্ষণে ছেলেটির বাড়ির লোকের হাহাকারে হাসপাতাল মুখরিত হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ চারদিক আশ্চর্য শান্ত। চঞ্চলের অস্বস্তি লাগছিল। ঝড় ওঠার আগেই সব কিছু এতো শান্ত থাকে।
চঞ্চল মৃত ছেলেটির শরীরের সব কাপড় সরিয়ে দ্রুত পরীক্ষা করছিলেন। কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা- কোনো জমাট বাঁধা রক্ত অথবা কোনো দাগ। ছেলেটির পেটে হাত দিয়ে চঞ্চল থমকে গেলেন। ভালো করে পেট চেপে দেখলেন। পেটের উপর কান নামিয়ে শুনলেন। অভ্যস্ত আঙুলের ডগায় তিনি পেটের মধ্যে কিছু একটা অস্বাভাবিকত্ব অনুভব করেছেন। একজন সিস্টারকে বললেন, দিদি শিগগিরি একটা পঞ্চাশ সিসি সিরিঞ্জ আর একটা রাইলস টিউব আনুন। আর এর বাড়ির লোককেও ডাকুন।
চঞ্চল মৃত ছেলেটির নাক দিয়ে রাইলস টিউব পরাচ্ছেন, সে সময় একটি মাঝারি উচ্চতার ভাঙা গালের টাক মাথা লোক উঁকি দিলেন। বললেন, ডাক্তারবাবু, আমি এই ছেলেটির বাড়ির লোক। ছেলেটি কি মরে গেছে? যদি মরে গিয়ে থাকে তাহলে এসব করে লাভ কী? আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাই।
চঞ্চল অবাক হয়ে দেখলেন, বাড়ির লোক বলে দাবী করা লোকটির চোখে মৃত ছেলেটির জন্য একফোঁটাও শোক নেই। তিনি কঠিন স্বরে বললেন, একে বাড়িতে ছাড়া যাবে না। একে পোস্টমর্টেমে পাঠানো হবে। বাচ্চাটার মৃত্যু আমার স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। আপনি বলুন, ঠিক কী হয়েছিল? ওর কি আগে থেকে কোনো অসুখ ছিল?
লোকটির চোখের দৃষ্টি হঠাৎ কেমন পালটে গেল। সাপের মতো হিস হিস করে বললেন, সে সব ব্যাপারে আপনার মাথা ঘামাতে হবে না। আমি হাসপাতালে এনেছিলাম যদি বাঁচানো যায়। আপনারা বাঁচাতে পারেননি। ব্যাস, আপনাদের কাজ শেষ। আর নাক না গলালেও চলবে।
চঞ্চল লোকটির মুখ থেকে কড়া দেশী মদের গন্ধ পাচ্ছিলেন। তাঁর মাথায় হঠাৎ রাগ চড়ে গেল। তিনি বললেন, আর একটিও কথা বললে আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেব। সিস্টার শিগগিরি পুলিশ ইনফরমেশনের খাতাটা বার করুন। আর থানার নম্বরটা দিন। প্রফুল্লদাকে এম্বুলেন্স বের করতে বলুন। প্রফুল্লদাকে একটা জরুরী কাজে বহরমপুর পাঠাবো।
****
ঘণ্টা দুয়েক কেটে গেছে। পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। এতটা জটিল পরিস্থিতিতে চঞ্চল আগে কখনো পড়েননি। হাসপাতাল লোকে লোকারণ্য। চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের সব গাছ থেকে ঘুমন্ত পাখিগুলো ঘুম ভেঙে উড়ে গেছে। চঞ্চল মেয়েদের ওয়ার্ডে সিস্টারদের টেবিলে মাথা নিচু করে বসে আছেন। সিস্টার দুজন ও তিনজন গ্রুপ ডি স্টাফ চঞ্চলের টেবিলের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। টেবিলের ওপারে দুজন বসে আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন লোকাল ‘এম এল এ’ প্রদীপ সাঁতরা, আরেকজন এলাকার স্বনামধন্য মানুষ শেখ জাহাঙ্গীর- যাকে স্বয়ং ‘এম এল এ’ সাহেবও ভয় পান। তাঁদের পেছনে অনেকগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে একনাগাড়ে চঞ্চলকে কুৎসিত ভাষায় গালি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য চঞ্চল ভুল চিকিৎসা করে ছেলেটিকে মেরে ফেলেছেন। এখন নিজের দোষ ঢাকার জন্য পোস্টমর্টেম করতে চাইছেন।
জাহাঙ্গীর হাত তুলে সবাইকে থামালেন। হাসিমুখে চঞ্চলকে বললেন, কই, অনেকক্ষণ তো হয়ে গেল, এলো আপনার পুলিশ? মনে রাখবেন, এখানে আপনি অতিথি। কিছুদিনের জন্য কাজ করতে এসেছেন, আবার চলে যাবেন। আর আমরা সেই জন্ম থেকে রয়েছি, মরার আগে পর্যন্ত এখানেই থাকব। এখানে আমরা যা বলব, তাই হবে। পুলিশ আপনার কথা নয়, আমাদের কথা শুনবে।
এম এল এ প্রদীপ সাঁতরা বললেন, আপনি ফালতু জেদ করছেন। জাহাঙ্গীর ভাই যা বলছেন তাই প্রথমে করলে এতো ঝামেলা হতো না। উনি কতো সোশ্যাল ওয়ার্ক করেন জানেন? উনি কটা অনাথ আশ্রম চালান জানেন? একাই চারটে অনাথ আশ্রম চালান। সেখানে মোট দুশ অনাথ ছেলে মেয়ে আছে। তাদের খাওয়া দাওয়া, পড়াশোনা, জামাকাপড়ের যাবতীয় খরচ জাহাঙ্গীর ভাই দেন। এই ছেলেটিও অনাথ ছেলে। ও আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। এখন মারা গেছে। কিভাবে মারা গেছে জেনে লাভ নেই। আপনি পোস্ট মর্টেমের রিকুইজিশন কাগজটা ছিঁড়ে ফেলুন।
চঞ্চল নিস্তেজ ভাবে বললেন, কিন্তু মৃত্যুর কারণ বোঝা না গেলে পোস্ট মর্টেম করা উচিৎ।
এম এল এ বললেন, জাহাঙ্গীর ভাইয়ের নিজের পরিচিত ডাক্তার আছেন। তিনি অনাথ আশ্রমের ছেলেমেয়েদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তিনি আগেও ওই ছেলেটিকে দেখেছেন। তিনি নিশ্চয়ই ওর মৃত্যুর কারণ বুঝবেন। আপনি বডিটাকে ছেড়ে দিন। না ছাড়লেও ক্ষতি নেই। আমরা জোর করে নিয়ে যাব। তবে আপনার সম্পর্কে যে টুকু জেনেছি আপনি একজন সৎ ও রোগী দরদী ডাক্তার। আপনার উপর জোরাজুরি করতে চাই না। আপনি তাড়াতাড়ি ডিসিশন নেন। আমরা আছি বলে এরা আপনাকে কিছু বলছে না। কিন্তু আমরা চলে গেলে এরা কী করবে তার গ্যারান্টি আমি দিতে পারছি না।
-কিন্তু আমি যে পুলিশ ইনফরমেশন পাঠিয়েছি?
-তাতে কোনো সমস্যা নেই। এই নিন আপনি ওসির সাথে কথা বলুন।
চঞ্চল এম এল এর ফোন নিলেন। কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে স্থানীয় থানার ওসি বললেন, জলে থেকে কুমিরের সাথে বিবাদ করা যায় না ডাক্তারবাবু। আপনি ওরা যা করছে সেই মতো চলুন। আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আপনার চিঠি আমরা ছিঁড়ে ফেলবো। কেউ কিচ্ছু জানবে না।
চঞ্চল মোবাইলটা ফেরত দিতে গিয়ে বুঝতে পারলেন তাঁর পকেটের মোবাইলটাও কেঁপে উঠেছে। তিনি বের করে দেখলেন, হোয়াটসঅ্যাপে তার বন্ধু প্রীতমের ম্যাসেজ ঢুকেছে। প্রীতম ফরেনসিক মেডিসিনের ডাক্তার। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক। প্রীতম লিখেছে, তুই যেটা পাঠিয়েছিস সেই স্যাম্পলে মেথঅ্যাম্ফিটামিন আর ক্যাফিন রয়েছে। কম্পোজিশন অফ ড্রাগ ইয়াবা। বাংলাদেশে ইয়াবার নেশা খুব প্রচলিত, ইদানীং ভারতেও এই ড্রাগের ব্যবহার বাড়ছে। তুই স্যাম্পেলটা কোথায় পেলি?’
চঞ্চল ম্যাসেজটা একবার দেখেই প্রীতমের সাথে চ্যাটটা ডিলিট করে প্রীতমকে ব্লক করে দিলেন। তাঁর মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে। প্রায় সাথে সাথে জাহাঙ্গীর পকেট থেকে একটা পিস্তল বার করে টেবিলে রেখে বললেন, ডাক্তারবাবু কী ঠিক করলেন?
চঞ্চল বললেন, মৃতদেহ আপনারা নিয়ে যান। তবে দেখবেন পরে যেন আমি ফেঁসে না যাই।
জাহাঙ্গীর হেসে বললেন, আপনার কোনো চিন্তা নেই। তবে কিছু যদি মনে না করেন আপনার মোবাইলটা আজ আর কাল আমার কাছে থাক। ভয় নেই, আপনার গার্ল ফ্রেন্ড ফোন করলে আমি ধরব না। আপনি বরঞ্চ মোবাইলটা সুইচ অফ করে আমাকে দেন। পরশু দুপুরে আমি নিজে এসে আপনাকে ফেরত দিয়ে যাব। চলরে সব, এখন অনেক কাজ। ছেলেটাকে মাটি দিতে হবে। দেখিস অনাথ ছেলে বলে কোনো অবহেলা যেন না হয়। টাকা যা লাগে লাগুক।
খানিকক্ষণের মধ্যেই গোটা হাসপাতাল খালি হয়ে গেল। ছেলেটির মৃতদেহ নিয়ে সবাই চলে গেছে। ফিমেল ওয়ার্ডে বসে রয়েছে চঞ্চল সহ হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী। কারো মুখেই কোনো কথা নেই।
***
সবে ভোরের আলো ফুটেছে হঠাৎ এক নারী কণ্ঠের আর্তনাদে সচকিত হয়ে উঠল হাসপাতাল আর আশেপাশের কোয়ার্টারগুলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিড় জমে গেল ডা. চঞ্চল রায়ের কোয়ার্টারের পেছনে। মাঠের ধান সবে কেটে নেওয়া হয়েছে। গোড়াগুলো রয়ে গেছে। তার মধ্যেই উপুড় হয়ে পড়ে আছে রক্তাক্ত একটি দেহ। ডাক্তার চঞ্চল রায়ের দেহ। তার পাশে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের সিস্টার ইন্দ্রনী পাল হাউমাউ করে কাঁদছেন, ডাক্তারবাবুকে শয়তান গুলো মেরে ফেলেছে গো। গ্রুপ ডি সুকুমার সরেন ঠক ঠক করে কাঁপছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না। তাঁর মনে হচ্ছে যেন এখুনি পড়ে যাবেন। আরেক গ্রুপ ডি স্টাফ মফিজুল ভেতর থেকে নিজের কোয়ার্টারের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। ঐ আর্তনাদ তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না। তাঁর চোখের জল বাঁধ মানছে না। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে আল্লার কাছে দোয়া করছেন যেন ডাক্তারবাবুর কিছু না হয়। নিজের উপর বড্ড রাগ হচ্ছে তাঁর। মনে হচ্ছে ডাক্তারবাবুর শরীরে যে আঘাত, যে কষ্ট- সেই কষ্ট নিজের শরীরে হলে মনের কষ্ট কিছুটা কমতো।
সিস্টার ও গ্রুপ ডি দাদারা ধরাধরি করে চঞ্চলকে সোজা করলেন। চঞ্চলের মুখ থেকে একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। শোনা মাত্রই সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন। “প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে। আর কে না জানে শুধু প্রাণই এক আশ্চর্য সম্পদ। এক ক্ষয়হীন আশা, এক মৃত্যুহীন মর্যাদা।” মুহূর্তের মধ্যে সকলের কান্না থেমে গেল। চঞ্চলের দেহটা তিন চারজন মিলে প্রায় পাঁজাকোলা করে তুলে দৌড়লেন হাসপাতালের দিকে। চটপট ক্ষতস্থান ড্রেসিং করে ফেলা হল। চঞ্চলের ততক্ষণে পুরোপুরি জ্ঞান ফিরে এসেছে। এম্বুলেন্স চালক প্রফুল্ল গাড়ি বের করে ফেলেছে। চঞ্চলকে ধরে ধরে এম্বুলেন্সে তোলা হলো। সঙ্গে উঠলেন সিস্টার ইন্দ্রনী ও গ্রুপ ডি স্টাফ সুকুমার। সারা গ্রামের লোক ভেঙে পড়েছে হাসপাতালে। সবাই সেখ জাহাঙ্গীরকে গালাগালি করছে। সবার বক্তব্য সে যদি আর হাসপাতাল মুখো হয় তাহলে আর বেঁচে ফিরতে পারবে না।
ইন্দ্রাণী বলছিলেন, কাউকে খবর দিতে হবে ডাক্তারবাবু?
চঞ্চল কষ্টের মধ্যেও হাসলেন। বললেন, আমার আর কে আছে? অনাথ আশ্রমে বড়ো হয়েছি। শুধু দু’জনকে খবর দিতে হবে। বারাসতের এস আই প্রলয় বসু, উনিও আমারই মতো নবজীবন আশ্রমে বড়ো হয়েছেন। আর আমার মেডিক্যাল কলেজের সহপাঠিনী নন্দিনী। আমার পকেটে দুজনের নাম্বার লেখা কাগজ আছে। কী বলতে হবে মনে আছে তো?
ইন্দ্রাণী মুখে এই প্রথম হাসি ফুটল। তিনি বললেন, লাইন বাই লাইন মনে আছে।
সুকুমার হঠাৎ কেঁদে ফেললেন। বললেন, আমাকে মাপ করে দেন ডাক্তারবাবু, নিজেরে বড্ড পাপী মনে হচ্ছে। মফিজুলতো ঘর থেকেই বেরোয়নি।
চঞ্চল বললেন, চুপ চুপ, প্রফুল্লদা শুনতে পেয়ে যাবে। প্রফুল্লদা কিচ্ছু জানেনা। সব ব্যাপারটা যেন আমাদের চারজনের মধ্যেই থাকে। যাদের সাথে লড়তে নেমেছি, তারা কিন্তু ভয়ানক শক্তিধর।
****
ঘণ্টা খানেকে মধ্যেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাতে শুরু করল, মুর্শিদাবাদের এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসককে খুনের চেষ্টা করল জাহাঙ্গীর নামে এক সমাজবিরোধী। চঞ্চলরা যখন বহরমপুর হাসপাতালে পৌঁছলেন ততক্ষণে এমারজেন্সিতে খবর পেয়ে অনেক চিকিৎসক চলে এসেছে। কয়েকজন সাংবাদিকও ক্যামেরা নিয়ে হাজির হয়েছে। স্থানীয় এস আই এবং কয়েকজন পুলিশ অফিসারও হাজির। এমারজেন্সিতে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেল চঞ্চলের দেহে একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। সবই প্রায় ধারাল অস্ত্রের আঘাতে হয়েছে। কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার কোনোটাই তেমন গভীর নয়। লাঠির বাড়ি আছে শরীরের কয়েক জায়গায়। কালশিটে পড়েছে, ফুলেও আছে। কিন্তু এক্স রে করে দেখা গেলো ভাঙেনি। সার্জারির বিভাগীয় প্রধান নিজে এসেছেন চঞ্চলকে দেখতে। তিনি বললেন, তোমার ভাগ্য বেশ ভালো। সারা গায়ে এতো ক্ষত হয়েছে- দেখে যে কেউ আঁতকে উঠবে। কিন্তু কোনোটাই তেমন খতরনাক নয়। যারা মারতে এসেছিল তারা শুধু আদর করেই ছেড়ে দিয়েছে।
চঞ্চল এস আইকে সে রাতের ঘটনা সব খুলে বললেন। এটাও বললেন, মৃত বাচ্চাটির পেটে হাত দিয়ে তিনি প্ল্যাস্টিকের মতো কোনো একটা বস্তুর অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন। তাই মৃত ছেলেটির স্টমাকের স্যাম্পল সংগ্রহ করে রাতেই তার এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে পাঠিয়েছিল। সেই বন্ধু জানিয়েছিল, সেই স্যাম্পলে কুখ্যাত ড্রাগ ইয়াবার সন্ধান পাওয়া গেছে। হিরোইনকে পেছনে ফেলে এই ইয়াবা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের এক নম্বর ড্রাগ। ইদানীং পশ্চিমবঙ্গেও এর রমরমা বাড়ছে। এটি পাওয়া যায় ছোটো ছোটো ট্যাবলেট আকারে। চঞ্চলের ধারণা শেখ জাহাঙ্গীর তার অনাথ আশ্রমের আড়ালে এই ইয়াবার ব্যবসা করে।
এস আই জানালেন, একটা সুবিধা হয়েছে। সাংবাদিকরা কীভাবে খবর পেয়েছে জানিনা, তবে সবকটা চ্যানেলে এখন আপনার খবর দেখাচ্ছে। এবং সেখানে সবাই সোজাসুজি বলছে জাহাঙ্গীর আপনাকে হুমকি দিয়েছিল। এবং তার পরেই আপনাকে খুন করার চেষ্টা হয়েছে। বল এখন আমাদের কোর্টে। সময় নষ্ট করে লাভ নেই। জাহাঙ্গীর উপর মহলে যোগাযোগ করার আগেই ওর চারটে অনাথ আশ্রমে রেড করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের পারমিশন নিয়ে আমি এখনই বেড়িয়ে পড়ছি।
চঞ্চল হাসপাতালের বেডে শুয়ে চোখ বন্ধ করল। তার মধ্যে অদ্ভুত একটা উত্তেজনা হচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক হবে তো। উত্তেজনায় সে দৈহিক যন্ত্রণা অনুভব করছিল না।
***
সন্ধ্যার পর সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ টিভির পর্দায় দেখল কীভাবে মুর্শিদাবাদ জেলায় পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে ইয়াবা ড্রাগসের রমরমা ব্যবসা চলছে। এই ড্রাগ পাচারের কাজে লাগানো হচ্ছে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের।
বাংলাদেশ থেকে ঢুকছে ইয়াবা ট্যাবলেট। এই ট্যাবলেট ওয়াটার প্রুফ প্লাস্টিকের মধ্যে পুরে দশ বারো বছরের ছেলেমেয়েদের খাইয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ ট্যাবলেট প্লাস্টিকে মুড়ে একেকজনকে গেলানো হয়। তারপর তাদের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি বাংলার বাইরেও এই ড্রাগস ছড়িয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত যে ছেলেটিকে চঞ্চলদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল, সেই ছেলেটিকেও ড্রাগ পাচারের কাজে লাগানো হচ্ছিল। কোনোভাবে পেটের মধ্যে প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট ফেটে গিয়ে ছেলেটি মারা যায়। ছেলেটির মৃতদেহ কবর থেকে তুলে পোস্ট মর্টেমের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পারমিশন চাওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে পারমিশন খুব তাড়াতাড়িই পাওয়া যাবে।
শেখ জাহাঙ্গীর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ফারাক্কার কাছে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি পুলিশি জেরার মুখে সব কিছু স্বীকার করেছেন। শুধু তিনি একটা ঘটনাই অস্বীকার করেছেন। সেটা হল ডা চঞ্চল রায়কে খুন করার চেষ্টার কথা। তাঁর বক্তব্য তিনি কেন ডাক্তারবাবুকে আধমরা করে ধানক্ষেতে ফেলে রাখতে বলবেন? তাতে তাঁর লাভটা কী? খুন করার হলে তো পুরোপুরিই খুন করতে বলতেন।
জাহাঙ্গীরের কথার যুক্তি আছে। টিভি চ্যানেল গুলো এখন নিজেরাই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। চ্যানেলে চ্যানেলে বিশেষজ্ঞদের বসিয়ে জোর আলোচনা চলছে- কে খুনি? নানা রকম নতুন নতুন মনগড়া তথ্য বেরিয়ে আসছে। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই বলছেন জাহাঙ্গীরই খুন করার জন্য লোক লাগিয়েছিলেন। কেন তারা ডাক্তার বাবুকে খুন না করেই ধানক্ষেতে ফেলে এলো তাই নিয়েও নানা মুনির নানা মত। কেউ বলছেন খুনিরা আসলে ডাক্তারবাবুর রোগী ছিল। কোনোদিন হয়তো ডাক্তারবাবু তার জীবন বাঁচিয়েছেন। তার প্রতিদান স্বরূপ তাঁরা ডাক্তারবাবুকে পুরোপুরি না মেরে আধমরা করে ফেলে এসেছে।
সাধারণ মানুষ এইসব আজগুবি বিশ্লেষণ হা করে শুনছে। অনেকেই ইয়াবা নিয়ে নেটে সার্চ করে রীতিমতো পড়াশুনা করছে।
এম এল এ প্রদীপ সাঁতরা এলাকার লোকেদের নিয়ে ইয়াবা ড্রাগসের চোরাকারবারের সাথে যুক্ত সকলকে ধরার দাবীতে বিশাল মিছিল করেছেন। তিনি নিজেই ভয়ে ভয়ে আছেন। বাড়িতে অনেক ক্যাশ টাকা ছিল, সেই টাকা রাতারাতি গাড়ি করে নিজের শালার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার শালা একটি হারামজাদা লোক- ঐ টাকা আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, তাই নিয়ে প্রদীপের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে আপাতত আর কোনো উপায়ও নেই।
****
কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর স্থানীয় এস আই’এর মুখোমুখি হল চঞ্চল। শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ।
-সবই তো মিলে যাচ্ছে ডা. রায়। একটা জিনিসই শুধু মেলাতে পারছি না। কে আপনাকে খুন করার চেষ্টা করল?
-যে ছেলেমেয়েদের অনাথ আশ্রমগুলি থেকে উদ্ধার করেছেন, ওদের কোথায় পাঠানো হল?
-ওদের একটা সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে। আশ্রমগুলোর পরিবেশ একেবারে নারকীয়। ওরা চরম আতঙ্কের মধ্যে ছিল। কেউই ভালো করে কথা বলছে না। আপনি শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন, নাবালক মেয়েদের উপর, এমনকি কয়েকটি নাবালক ছেলেদের উপর নিয়মিত যৌন নির্যাতন চালানো হত।
-আমি আর কিছুতেই আশ্চর্য হই না। মানুষ সামান্য জাগতিক আনন্দের জন্য কতটা হীন কাজ করতে পারে তার নমুনা আমি প্রত্যহ দেখি। ডাক্তারদের সামনে একজন মানুষ যেভাবে নিজেকে উন্মোচিত করে, অন্য কোথাও তা করেনা।
-সবই তো হল, কিন্তু একটা বিষয়ই অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। আপনাকে কারা খুন করতে চেয়েছিল?
-অস্পষ্টই থাক না ব্যাপারটা। তারা যেই হোক উপকারই করেছে, আমার, বাচ্চাগুলোর, সকলের। না হলে এই ড্রাগ চক্র ধরা পড়তো না। বাচ্চাগুলো উদ্ধারও হতো না। এমনকি হয়তো সত্যি সত্যিই আমি খুন হয়ে যেতাম।
-তবু একটা খচ খচানি রয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পুলিশ হিসাবে এটা আমার ব্যর্থতা। যা হোক আপনি বিশ্রাম নিন। কোনো সাহায্য লাগলে বলবেন।
-একটা সাহায্য লাগবে। এখনই একটা গাড়ি যোগাড় করে দিতে পারবেন?
-এতো রাতে গাড়ি নিয়ে কোথায় যাবেন?
-হাসপাতালে ফিরে যাব। আমি আপাতত ওই হাসপাতালের একমাত্র ডাক্তার। আমার তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়াটা খুব দরকার।
-ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না? তাছাড়া আপনি এখন সারা রাজ্যে হিরো। টিভি চ্যানেল গুলো আপনার ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে। আমরা আপনার শারীরিক অবস্থার কারণে কোনো রকমে আটকে রেখেছি। আপনার সুস্থতা কামনায় বিভিন্ন শহরে নানা বয়সের মানুষ মোমবাতি জ্বেলে প্রার্থনা করছেন।
-অফিসার, আপনি প্লিজ আমাকে এখনই একটা গাড়ি জোগাড় করে দিন, বেরিয়ে পড়ি। আমি সেলেব্রিটি হতে চাইনা। হাসপাতালে ফিরে যেতে চাই। কতো রোগী ভর্তি আছে। একজন মায়ের আগের দুই সন্তান জন্মানোর আগেই মারা গেছে, সে তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিতে ভর্তি আছে। এই সন্তানটাকে বাঁচাতেই হবে। কালাচ সাপে কাটা দুটি রোগী ভর্তি ছিল। জানিনা সিস্টাররা সামলাতে পারছেন কিনা? জন্মের পর যে বাচ্চাটা অনেকক্ষণ পরে শ্বাস নিয়েছিল, তার জন্যও আমার ফেরা দরকার। সেখানে আমার কতো কিছু করার আছে। বন্যেরা যেমন বনে সুন্দর, চিকিৎসক
তেমন হাসপাতালে।
পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
******
চঞ্চল হাসপাতালে ফেরত এসেছেন। রাউন্ডের শেষে কোয়ার্টারে ফিরে দেখলেন সামনের সিঁড়িতে সুকুমার ও মফিজুল বসে আছে। গেটের চাবি খুলে ঘরে ঢুকতেই পেছন পেছন দুজনেই ঘরে ঢুকলেন। চঞ্চল বললেন, কী হলো, কেউ কথা বলছেন না কেন? মফিজুলদা, সুকুমারদা- আপনারা কিছু বলতে এসেছেন?
হঠাৎ মফিজুল নিচু হয়ে চঞ্চলের পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বললেন, আমি ভয়ানক পাপ করেছি, আপনার গায়ে হাত তুলেছি। তারপর থেকে এক মুহূর্তও আমি শান্তিতে থাকতে পারছি না।
চঞ্চল দুহাতে তাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, পাপ কোথায়, আপনি যা করেছেন, তার চেয়ে পুণ্যের কাজ হতেই পারে না। এতোগুলো বাচ্চা ছেলে মেয়ে আপনাদের দুজনের জন্য বেঁচে গেল। চোখের জল মুছুন।
-না ডাক্তারবাবু, এই হাতে আপনাকে আঘাত করেছি। এই হাত আমি পুড়িয়ে ফেলব।
চঞ্চল বললেন, সুকুমারদা, আপনি তো অনেক সিনিয়র। আপনি মফিজুলদাকে বোঝান।
সুকুমার বললেন, আমি বোঝাবো! আমি কী বোঝাবো? ওই ঘটনার পর এক মুহূর্তের জন্যও দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। আপনার শরীরে যে স্ক্যালপেল চালিয়েছিলাম, কতবার ইচ্ছে হয়েছে সেই স্ক্যালপেল দিয়ে নিজেকেও ক্ষতবিক্ষত করি।
-প্লিজ, আপনারা দুজনে শান্ত হন। দয়া করে তীরে এসে তরী ডোবাবেন না।
চঞ্চল ভেবেছিল সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু সে বুঝতে পারছিল সমস্যা এখনও মেটেনি। এই দুটি ভালো মানুষকে পাপবোধ থেকে যে করেই হোক বের করে আনতে হবে।