ওমেন্স ডে মানে গয়নার দোকানের ডিসকাউন্ট নয়, ব্র্যান্ডেড মেক আপ এর চকমকে বিজ্ঞাপন নয়, আজ ঘাম ঝরানোর , রক্ত ঝরানোর গল্প বলার দিন। আজ ঘর ভাঙার গল্প, ঘর গড়ার গল্প বলার দিন। আজ হেরে গিয়ে যারা জিতে যায় তাদের কথা শোনানোর দিন।
রকে আড্ডা মারা ছেলেপুলেরা অনেক সময়ই কোনও মেয়েকে দেখলে আওয়াজ দেয় ‘এ ত পুরো আগুন, জ্বালিয়ে দিল। বা একদম গোলা’। কথাটা আক্ষরিক অর্থেও যে অনেক সময় সত্যি হতে পারে তার একটা উদাহরণ আজ দেব। আজ এক আগুনের গোলার গল্প বলি।
আজ থেকে বছর ছয়েক আগের ঘটনা। আমার চেম্বারে এসেছিল নাসিমা নামে একটি অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে। বয়স ২০ বছর হবে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরেই বিয়ে হয়ে যায়। বর ক্লাস ফাইভ পাশ। বিড়ির ব্যবসা করে বেশ ভাল পয়সা করেছে।নাসিমা লুকিয়ে লুকিয়ে ডাইরি লেখে, কবিতা পড়ে আর শাহরুখ খানের সব বই অনেক বার করে দেখে। বিয়ের ২ বছর পরেও বাচ্চা না হওয়ায় ওর শ্বশুর বাড়ি থেকে সন্তানের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে। তারপর শুরু হয় ছেড়ে দেওয়ার হুমকি। প্রতিদিন চেম্বারে এসে নাসিমা কাঁদত। ভয় পেত, এই বুঝি ওর বর ওকে ছেড়ে দেয়। ওর সঙ্গে কথায় কথায় জানতে পারি, বরের অনেক টাকা থাকলেও ওর চিকিৎসার খরচ ওর বাবা, মা দিত। বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তার ওপর ওর দিদিও মা বাবার কাছেই থাকত।
দিদি কেন ওখানে থাকে? আমি জিজ্ঞাসা করতে বলেছিল, দিদির দুটো বাচ্চা হওয়ার পর ওর বর ওকে ছেড়ে দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে। ‘বাচ্চা হয়েও তো ওর বর ছেড়ে গেছে তাহলে তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন’? এভাবে গল্প করতে করতে ও কখন যেন কাছের একজন হয়ে যায়। একদিন বলেছিলাম, ‘তোর বর যদি সত্যিই ভাল না বাসে তাহলে সে ছাড়ার আগে তুই ছেড়ে দে’।
তারপর অনেক দিন আসে না। আমি ভাবলাম আমার কথা পছন্দ হয়নি বলে হয়তো আর আসছে না। এর বেশ কিছু বছর পর, দু মাস আগে একদিন এসে বলল, সে সিঙ্গল মা হতে চায়। আমি তো অবাক। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল জানতে চাইলাম। এবার সেই আগুন দেখলাম ওর চোখে। আর কান্না নয়। দৃঢ়তার সঙ্গে বলল, আমি বরকে ছেড়ে এখন কলকাতায় থাকি। কিন্তু এখানে করিস কী? উত্তরে জানাল, ‘প্রথমে আমি আর দিদি একটা ঝুপড়িতে থাকতাম। লোকের বাড়ি বাসন মেজে চলত। তারপর রান্নার কাজ শুরু করি। এতে দুজনে মিলে ভালই রোজগার করতে লাগলাম। এরপর দেখলাম, বড় বড় বাড়িগুলোতে রুটির ভাল চাহিদা আছে। এরপর দুজনে মিলে রুটি বানিয়ে বিক্রি শুরু করলাম। চেনা পরিচিতি বাড়তে লাগল। বয়স্ক লোকেদের বাড়ি পৌঁছে দিতাম। এভাবে পশার জমতে থাকে। কাজের জন্য আরও মেয়ের দরকার হয়। নিজেরা গ্রাম থেকে স্বামী ছেড়ে দিয়েছে এমন মহিলাদের এনে কাজ দিয়েছি। এখন নিজে স্বাবলম্বী। তাই নিজের মতো করে বাচ্চা নিয়ে ‘সিঙ্গল’ মা হতে চাই।
ছবি: সুব্রত দে