লাভলী| আমাদের স্কুলের ছাত্রী| এই ডাউন সিনড্রোম বাচ্চাটি তার স্বাভাবিক স্বভাব মাধুর্যে অচেনাকে কাছে টানতে পারে মাত্তর মিনিট পাঁচের মধ্যে| কী বলব আপনাদের, এনতার চুমু মেরে মেরেই এই কাজটি করে ফেলে সে| চুমু দিয়ে দিয়ে নিজে ফতুর হয়, ভরপুর করে উল্টোদিকের মানুষগুলোকে|
কাল লাভলী ক্লাসে খেলছিল আরেকটি বাচ্চার সাথে| ও হ্যাঁ, এখানে বলে রাখি ক্লাসে লাভলীর খেলেমেলে বেড়ানো, দিদিমনিদের কাপে ফুড়ুক ফুড়ুক চা খাওয়া আজকাল আর কোনো খবর নয়| বরং সে যেদিন চা ফেলে সামান্য পরিমাণে খাতাবইয়ে মনযোগী হয়, সেদিন লাভলী খবর হয় সারা স্কুলপাড়ায়|
তো কাল তুমুল বাঁদরামোর মোমেন্ট এন্ড মুডে সহপাঠীকে নিয়ে দুম করে মাটিতে ঢিপ হল লাভলী| পড়ে গিয়ে তার ঝাক্কাস চোখদুটো আরো ডাগর হয়ে উঠলো| বুখলাম, প্রচন্ড লেগেছে লাভলীর| লাভলী এমনই| যন্ত্রনায় আনন্দে ফেস কাটিং সেম রেখে দেবে একদম| মিষ্টতায় বহর তার এমনই বেশি যে আপনি ধরতেই পারবেন না কোনটায় লাভলী মিষ্টি বেশি? বা কোনটা লাভলীর কাছে বেশি মিষ্টি? সুখ না দুখ?
কালও পড়ে গিয়ে নিজে এত ব্যাথা পেলো– তবু ঝটপট উঠে গেল| দুবার জাস্ট ছোট্ট হাতদুটো ঝাঁকাল| মনে হলো, সকালের প্রথম রোদ্দুরে ছাদের আলসের পায়রা নাচল| তারপরই হেসে জড়িয়ে ধরলো তার সহপাঠীকে, মানে যাকে নিয়ে ধপাস হয়েছিল| তাকে কত কত আদর করে চলল লাভলী| তারই সাথে হেসে লাট হল তার চুল ঘেঁটে দিল| নিজে নিজে গল্প বানিয়ে ভোলাল তার বন্ধুকে|
সবচেয়ে হতবাক হলাম যখন দেখলাম, আদর পেয়ে অন্য বাচ্চাটা কেমন আঁকড়ে ধরেছে তার বন্ধুকে—লাভলীকে| একটুও কাঁদছে না, একটুও চেঁচাচ্ছে না সেই অন্য হাইপার একটিভ ছেলেটা| অনেকটা ক্ষণ দুজনে দুজনকে জড়িয়ে বসে রইল আমাদের ছেলে মেয়ে| দুজনের কেউই মাকে বা আমাদেরকে ডাকল না| ভ্রূক্ষেপই করল না|
ছাদটা এখন রোদে ভরা| তাতে খেলছে শত পায়রা|
লাভলীকে না ভালোবেসে থাকা যায় না। ময়ূরী মিত্র যেভাবে ওদের প্রতিটা movement খেয়াল করেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। ধন্যবাদ লেখিকাকে।
ঈশ্বর যখন মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, হয়ত এমনটাই চেয়েছিলেন! সবাই ঠিক লাভলী র মত হবে….
এমনটা যে কেন হয়না?
লাভলী কে আমার অনেক আদর!