২৩ বছর আগেকার কথা| আমার থিসিস গাইড ছিলেন প্রফেসর রমন- তামিল ব্রাহ্মণ – পন্ডিত মানুষ| একই পরিবারের লোকেদের ডায়াবেটিস বেশি হয় কেন- কতটা- এই সব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে| তখন সন্দেহ হলে অনেকটা সুগার খাইয়ে কয়েকটা রক্ত পরীক্ষা করতে হতো, সময় ধরে, ডায়াবেটিস আছে কিনা জানার জন্য| একবার রক্ত পরীক্ষা করেই ডায়াবেটিস ডায়াগনসিস করা যায় কিনা সেই নিয়েই আমার থিসিস| প্রফেসর রমনের উৎসাহ আর থিসিস লেখা- সেই ঠেলাতেই একটু পড়াশুনা করতে হলো|
তখন সাম্প্রতিক জার্নাল পাওয়া কঠিন ছিল| পয়সাও লাগতো অনেক| গুগল বলে কিছু ছিলো না- ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ছিল কিনা মনে নেই| ইন্টারনেটের দোকান ছিল| ইন্দোরে যেখানে থাকতাম সেখান থেকে অটো রিক্সায় করে যেতে হতো| এক-দু ঘন্টার জন্য বুক করতে হতো আগে থেকে- ঘন্টা প্রতি খরচ হতো|মাঝে মাঝে কানেক্শন থাকতো না- আবার যাও- সে যাই হোক থিসিস শেষ করে জমা না দিলে কিছুই হবে না| সুতরাং …বছর তিনেক এই সব করতে হলো …
—————————–
পড়াশুনা করতে গিয়ে খুবই অবাক হয়েছিলাম| বিভিন্ন জার্নাল পড়লাম, রিসার্চ পেপার পড়লাম| ডায়াবেটিস ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে| মহামারির রূপ নেবে- শুধু ভারতেই ২-৩ কোটি লোকের ডায়াবেটিস হবে- আগামী ২৫ বছরে- এই সব লেখা ছিল| ১৯৯৭ সালের কথা বলছি| মিলিয়ে নেওয়ার মতো কথা| প্রায় সবই টাইপ ২- মানে শরীরে ইন্সুলিন আছে- কিন্তু কাজ করে না ভালো- মূলত ওজন বেশি হওয়ার জন্য| স্থূল ব্যক্তির শরীরে ইন্সুলিন ভালো কাজ করে না| পড়তে গিয়ে দেখলাম মধ্যপ্রদেশের মেদ বৃদ্ধি দুষ্টুমি করে সবচেয়ে বেশি| ভারতীয়দের, কোনো অজানা কারণে, ওইখানেই আবার মেদ বৃদ্ধি হয় বেশি- ঝামেলা যত| আর ডায়াবেটিস হলে সঙ্গে সঙ্গে হার্টের, কিডনির, চোখের, স্নায়ুর ব্যামো হয়| কঠিন সমস্যা|
—————————-
পাকে চক্রে বিলেতে এসে গিয়ে পড়লাম আরেক ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞর কাছে- ডেভিড হেবার্ট| দেশে থিওরি অনেক জানা হয়- পড়া হয়- কাজে নেমে সেইটা কাজে বিশেষ লাগানো হয় না| এদেশে উল্টো| সবটাই প্রাকটিক্যাল- কী করে চিকিৎসা করতে হবে সেইটা সবার আগে শেখানো হয়| তা ওঁর কাছে শিখলাম ভালোই| রাশভারী লোক- বেশি কথা বলতেন না- আবার হাতে ধরে শিখিয়েও দিতেন| ডায়াবেটিস বিলেতে কম নেই- এখানেও মহামারীর মতো অবস্থা| ওজন বাড়ছে, মানুষ আরো স্থূল হচ্ছে আর তার ইনসুলিন কমজোরি হয়ে যাচ্ছে- হার্টের, কিডনির, স্নায়ুর রোগ হচ্ছে| ওষুধের অভাব নেই- পুরোনো, নতুন, ইন্সুলিন ইত্যাদি মিলিয়ে বিরাট সম্ভার- সঙ্গে খাওয়া দাওয়ার নিদান- সুগার কন্ট্রোল করুন- সম্ভব- ডায়াবেটিস মানে নতুন রকম করে বাঁচা- life style disease- কমবে না- ভালো থাকবেন …
———————-
ইতিমধ্যে অনেক পরিচিত, কাছের মানুষের ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে- নানা জায়গায় গেলেই প্রশ্ন- কী করলে ভালো থাকবো- করলার রস, জড়ি বুটি, মেথির সবজি …আয়ুর্বেদ তো অব্যর্থ -কী বলিস- ঢক ঢক দু ফোঁটা দিনে দুবার- ঠিক কিনা? উত্তর দিতে পারি না| এই সব অর্ধ শিক্ষার আড়ালে মধুমেহ কী প্রচন্ড কান্ড কারখানা চালিয়ে যাচ্ছে ভেবে আতংকিত হতাম| সঠিক করে রাস্তা দেখাবো তার প্রমাণ ছিল না হাতে|
—————————-
নিউকাস্ল আর গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির একটি রিসার্চ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত হয়| দাবি- ডায়াবেটিস সারে| ওঁরা বেশ কয়েকশ মানুষের উপর পরীক্ষা করে দাবি করেছেন ওদের সূত্র মেনে চললে ডায়াবেটিস একদম সেরে যাবে| অনেক বাদ প্রতিবাদ, তর্ক বিতর্কের পর NHS ওদের দেখানো পথে চলতে রাজি হয়েছে| কী সেই পথ?
১০ কিলো ওজন কমাতে হবে- দিনে ৮০০ kcal খেতে হবে ৩ মাস (১২ সপ্তাহ)| তার মতো করে সূপ আর shake ওঁরাই দেবেন – দেখা গ্যাছে যাঁরা অল্প সময়ের মধ্যে (১২-১৬ সপ্তাহ) এই ডায়েট মেনে ১০ কিলো ওজন কমাতে পেরেছেন তাঁদের প্রায় ৫০% এর ডায়াবেটিসের ওষুধ আর লাগে না- সুগার স্বাভাবিক হয়ে গ্যাছে| অনেকের প্রেসার কমে স্বাভাবিক হয়ে গ্যাছে| এখন ৫০০০ লোককে নিয়ে আরো বড়ো একটা স্টাডি হবে| ওজন কমানোর পর অনেককেই ২-৩ বছর ধরে ওঁরা দেখে চলেছেন| অধিকাংশেরই ডায়াবেটিস ফিরে আসেনি|
————————-
এর তাৎপর্য কী ? ডায়াবেটিস সারে| ১০ কিলো ওজন কমালেই হবে| এটা শুধু টাইপ ২ মানে বেশি বয়সের ডায়াবেটিস, যা ওজন বেশি হলেই হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য| দ্রুত কমাতে হবে- ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে| কী করে কমবে? দিনে ৮০০ kcal খাওয়া যাবে- ব্যস| কঠিন কিন্তু সারা জীবন ওষুধ খেয়ে যাওয়ার থেকে ভালো- হার্টের, কিডনির, স্নায়ুর ব্যামোতে ভোগার থেকে ভালো| সবার কমবে? এখনো অব্দি যা খবর ৫০% এর কমছে| যাদের সদ্য ধরা পড়েছে বা গত ৫-৬ বছরের মধ্যে ধরা পড়েছে তাদের সারার সম্ভাবনা বেশি|
আমার পরিচিত ও কাছের মানুষদের কথা ভাবি- আর ঘন ঘন রক্ত পরীক্ষা করতে হবে না- সকালে কত, বিকেলে কত ভাবতে হবে না| ওজন কমানোর পর নিয়ন্ত্রিত খাবার খেতে হবে| এই সব কারোর অধীনে থেকে করাই ভালো| প্রতিদিন ৮০০ kcal খাওয়া- ৩ মাস ধরে- চাট্টিখানি নয়- অনেকেরই কাউন্সেলিং লাগে- উৎসাহ লাগে- হচ্ছে, হবে চালিয়ে যান- লাগে| আশায় আছি – সত্যিই আশায় আছি- ডায়াবেটিস চিকিৎসায় যুগান্তর ঘটবে| সুস্থ থাকুন- ডায়াবেটিস সারান|
সুদীপ্ত, ভাল লেখ ভাল থেক ভালবাসা নিও।
শতদল
আমাদের দেশে পরীক্ষা করা দরকার । আমাদের গরীব দেশের ওষুধের খরচ বাঁচে তাহলে?
অনেক মানুষ ভালো থাকবে। ভালো তথ্য। ভালো থাকবেন।
হয়ত নতুন ভোর আমরা দেখতে চলেছি ।
এই study সত্য প্রমাণিত হলে তা চিকিত্সা বিজ্ঞানে এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা আবিষ্কার প্রমাণিত হবে।
মধুমেহ-মহামারী’র হাত থেকে মুক্তি ঘটবে।