সব দেখলাম কোভিডকালে।
ওই দেখো না জড়িয়ে পড়ে লকডাউনের জটিল জালে,
চললো শ্রমিক পা মিলিয়ে,
হাতে মাথায় বোঁচকা নিয়ে,
পেরথমবার জেনেছে সে,
মানুষরা হয় পরিযায়ী অনায়াসে নিজের দেশে।
চললো শ্রমিক ঘরের দিকে,
রুজির আশা ক্রমেই ফিকে,
রুটির ভাঁড়ার ফুরিয়ে আসে,
এক গোটা দেশ রাহুর গ্রাসে
বন্ধ দুয়ার, কারখানা কল,
হায় নাগরিক করবি কী বল,
টানছে আঁচল মৃত মায়ের দ্যাখ না রে ওই ছোট্ট শিশু,
দেখছে না কেউ ওদিক আদৌ, রাষ্ট্র ভীষণ পিপুফিশু।
লকের বাধা যেমনি ওঠে,
মালিক শোনায় সোহাগ ঠোঁটে,
আয় রে ফিরে আয় বাছারা,
যন্ত্র বিকল তোদের ছাড়া,
শ্রমিক তখন দ্বিধায় ভারী,
এদিক খিদে ওদিক মারী,
বেরোজগারির বিষম ভয়ে আবার পাড়ি দূর শহরে,
যেই এসে যায় ঢেউ দ্বিতীয়,
যাহ রে হাপিস মাইনেটিও,
আবার ফেরো পরিযায়ী রুটিবিহীন নিজের গ্রামে,
সাতটা দশক পেরিয়ে দেশে জি ডি পিতে সন্ধ্যা নামে।
সব দেখলাম কোভিডকালে,
সফরপথে অথইপানি থরথরানো ভগ্নহালে,
মধ্যবিত্ত তথৈবচ,
বেতন কমে তাও অথচ,
হাত পাতে না ফ্রি রেশনে,
তাদের কথা কে আর শোনে,
এদিক কাটে, ওদিক ছাঁটে,
শেষবেলা যায় বাজারহাটে,
স্কুলের মাইনে নাকাল দিতে,
টান পড়েছে আধুলিতে,
মন তবুও ঘাড় কাতে না,
কারোর কাছে হাত পাতে না,
ফি মাসে দেয় কোচিংয়ে ফি’জ,
চলছে মায়ের ডায়ালিসিস,
মাঝের থেকে মাছের থেকে রান্না নামে কলমি শাকে,
শুকনো হাসির ফেসবুকে পোস্ট ভালোই ঢাকে অভাবটাকে।
সব দেখলাম কোভিডকালে,
ওপরতলার রাজারা সব এখন মহারাজার হালে।
সেনসেক্সের সেক্সি নাচে,
ফল ধরেছে টাকার গাছে,
মিলিয়নের কঠিন জ্বরে,
অর্থনীতি ভীষণ নড়ে ,
সেই দুলুনির নেই হেথা ঢেউ,
হয়নি গরীব এইখানে কেউ,
নদীর স্রোতে শবের সারি,
ওদের তখন নতুন গাড়ি,
রোজই আকাশ ছুঁচ্ছে শেয়ার,
এই আকালেও বাড়লো দেশে একশো আরো বিলিয়নেয়ার।
সব দেখলাম কোভিডকালে,
স্বর্গ উঁচু হলো আরো, মর্ত্য নেমে যায় পাতালে।