‘প্রকৃতিকে মানুষ জয় করে ফেলেছে বলে আমরা যেন আত্মশ্লাঘায় না ভুগি। আমাদের প্রত্যেকটা জয়ের প্রতিশোধ নেয় প্রকৃতি। প্রত্যেকটা জয় প্রথমে আমরা যা চেয়েছি সত্যিই তাই ঘটিয়েছে, কিন্তু পরে তা অন্যরকম কিছু ঘটিয়েছে, অপ্রত্যাশিত এমন কিছু ফল ফলেছে, যা প্রথমটিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। যেসব মানুষ মেসোপটেমিয়া, গ্রিস, এশিয়া মাইনর এবং অন্যত্র আবাদী জমি পেতে বনজঙ্গল ধ্বংস করেছিল, তারা স্বপ্নেও ভাবেনি যে অরন্যের সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার আধারকেও ধ্বংস করে তারা আসলে ঐ দেশগুলোর আজকের রুক্ষতার ভিত্তি স্থাপন করছে। আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের ইতালিয়রা যখন দক্ষিণ ঢালের পাইন বনগুলি কেটে ফেলছিল, তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না যে এর ফলে পাহাড়ী ঝর্ণাগুলো বছরের বেশীর ভাগ সময় জল না পেয়ে বর্ষাকালে সমতলে বন্যা ডেকে আনতে পারে। সুতরাং প্রত্যেকটা ধাপ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভিনদেশের জনগণের উপর একজন বিজয়ী যেভাবে শাসন চাপিয়ে দেয় সেভাবে, প্রকৃতির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের মত করে, আমরা কিছুতেই প্রকৃতিকে শাসন করতে পারি না – বরং রক্ত-মাংস-মস্তিষ্কসমেত আমরা এই প্রকৃতিরই অংশ, প্রকৃতির মাঝেই বিরাজমান, এবং এর উপর আমাদের সব ওস্তাদির কারণ এই যে অন্য সমস্ত জীবের চেয়ে আমাদের একটা বাড়তি সুবিধে রয়েছে, তা হল আমরা প্রকৃতির নিয়মকানুনগুলো শিখতে ও সেগুলোকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম।’ – এঙ্গেলস তাঁর ‘পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’ থিসিসে ‘বানর থেকে মানুষে রূপান্তরে শ্রমের ভূমিকা’ অধ্যায়ে লিখছেন।
গত কয়েক দশকে দুনিয়া জুড়েই গ্রীষ্ণ উষ্ণতর ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ঘনঘন তাপ প্রবাহের সঙ্গে উচ্চ আর্দ্রতা যুক্ত হয়ে বিপদ বাড়িয়ে তুলছে। শুধু মানুষই নয়, বিপন্ন প্রাণীজগৎ, বিপন্ন উদ্ভিদজগৎ। খরার প্রকোপ বাড়ছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে অরণ্যে। শহরাঞ্চলে বড় বড় বাড়ি, রাস্তা, সেতু, ফ্লাইওভার ও অন্যান্য ধাতব কাঠামো তাপ ধরে রাখায় যেন তাপদ্বীপ গড়ে উঠছে, ফলে দিনের বেলায় অসহ্য গরম, আবার রাতে তাপ বিকীরণ ধীরে হবার ফলে রাতেও গুমোট আবহাওয়া থাকছে। সারাদিনে এবং রাতেও উচ্চ আর্দ্রতার দরুন মানুষের শরীরের স্বাভাবিক ঘাম বষ্পায়িত হতে না পারায় তাপক্লেশ বাড়ছে। ফলে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র যাদের নেই, মূলতঃ সেইসব দরিদ্র মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষতঃ বয়স্ক মানুষ, শিশু, রোগশয্যায় থাকা মানুষ ও মাঠেঘাটে খেটে খাওয়া মানুষজন। তাপক্লেশে হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র ও কিডনী বিকল হয়ে পড়ছে। বাতাস অত্যধিক গরম হয়ে ভূমিস্তরে ওজোন গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে, যা থেকে পরে ধোঁয়াশা তৈরী হয়, শ্বাসকষ্ট বাড়ায়। ফুলরেণু ও অন্যান্য বায়বীয় অ্যালার্জেনের মাত্রাও অত্যধিক গরমে বেড়ে যায়, ফলে বিশ্বের প্রায় ত্রিশ কোটি অ্যাজমা আক্রান্ত মানুষ বাড়তি বিপদে পড়েন। শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের বর্ধিত ব্যবহার বাইরের আবহাওয়াকে উত্তপ্ততর করে তোলে, আরো দূষণ ছড়ায়; বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় উৎপাদন বাড়ে, ফলে অন্যধরণের দূষণ হয়।
এই অস্বাভাবিক তাপে গাছগাছড়াও শুকিয়ে যাচ্ছে, চাষের ফলন কমে যাচ্ছে। প্রাণীকূলেও তাপক্লেশে মৃত্যু বাড়ছে। গবাদি পশুর দুধ শুকিয়ে যাচ্ছে। পুকুর, ভেড়ি ও নদীর জল দীর্ঘক্ষণ গরম থাকায় মাছ মরে যাচ্ছে। ফলে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ছে, মহার্ঘ হচ্ছে খাদ্যবস্তু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ‘১৯৬০ সালের তুলনায় এখন আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে গেছে, ফলে প্রত্যেক বছর বিশ্বে অতিরিক্ত ৬০ হাজার মানুষ মারা যান, যার সিংহভাগই উন্নয়নশীল দেশে। চড়তি সমুদ্রতল এবং আবহাওয়ার বেড়ে চলা চরমভাবাপন্নতা বাড়িঘর, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও অন্যান্য জরুরী পরিষেবা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’ বিশ্বের অর্ধেকের বেশী জনসংখ্যা সমুদ্রের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করে। সুন্দরবন ক্রমশঃ ডুবছে। ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা দ্রুততম হারে বাড়ছে। ফলে ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে যে তিন কোটি মানুষের বাস, তাদের একটা বড় অংশ অচিরেই ঝড়ে-বন্যায় উদ্বাস্তু হবে, বাড়বে মানসিক রোগ, কর্মহীনতা, অপুষ্টি থেকে শুরু করে সংক্রামক-অসংক্রামক রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, বৃষ্টিপাতের গতিপ্রকৃতির বেড়ে চলা খামখেয়ালীপনা ভূগর্ভস্থ জলস্তরে তারতম্য ঘটিয়ে মিষ্টি জলের সরবরাহেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আশঙ্কা, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের বহু অঞ্চলে অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ চরমে উঠবে। আবার বহু এলাকা নতুন করে অতিবৃষ্টি ও বন্যাপ্রবণ হয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটবে। ভারতে সাম্প্রতিক কালে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত বেড়ে ভূমিক্ষয়, ধস, বন্যায় বহু গ্রাম ও শহর ক্ষতিগ্রস্ত হল। পানীয় জলের ঘাটতি, জলে ডুবে বা তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু, জলবাহিত রোগের মহামারীর পাশাপাশি খাদ্যাভাবে অপুষ্টিজনিত রোগভোগ বৃদ্ধির ঘটনা দেখা গেল। জমা জল মশা-মাছিসহ নানা পতঙ্গের বাড়বাড়ন্তের কারণ হয়ে উঠছে, ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গুর মত পতঙ্গবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ আগে ছিল বর্ষাকালের সমস্যা, এখন বছরভর এই সমস্ত রোগ ছড়াচ্ছে, যেসব এলাকায় এসব রোগ তেমন হত না, সেখানেও সংক্রমণ হচ্ছে।
ইউনিসেফ ঘোষণা করেছে যে বিশ্বের কোন শিশুই জলবায়ু সংকটের প্রভাবমুক্ত নয়। নিষ্পাপ শিশুরা কোনভাবেই এই সংকটের জন্য দায়ী নয়, অথচ তাদেরকে এর ফল ভুগতে হচ্ছে! ফলে জলবায়ু আন্দোলনে ক্রমশঃ অল্পবয়সীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সুইডেনের গ্রেটা থুনবার্গ, ভারতের দিশা রবি, জোয়েল কিন্ডিয়ার মত দেশে দেশে অসংখ্য কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী স্কুলে হরতাল করছে, সংসদ অভিযান করছে, পূর্বজ প্রজন্মের কাছে সোচ্চার দাবী জানাচ্ছে তাদের বসবাসের জন্য এক স্বাস্থ্যকর গ্রহ রেখে যেতে। সম্প্রতি আমাদের রাজ্যের যুব আন্দোলনের কর্মীরা সুন্দরবনে কয়েক লক্ষ ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়েছেন, যে কাজ করার কথা ছিল সরকারের।
ব্যক্তি মানুষকে এই দাবদাহজনিত অসুস্থতার থেকে বাঁচতে কয়েকটি সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ঘর থেকে তপ্ত বাতাস বের করে দিতে বৈদ্যুতিন নির্গমন-পাখা ব্যবহার করতে হবে, পাখার গরম হাওয়া সরাসরি গায়ে লাগানো যাবে না। বারবার ঠান্ডা জলে স্নান করতে হবে, ছাতা ব্যবহার করতে হবে, রোদ্দুর সরাসরি গায়ে লাগানো যাবে না। পিপাসা পাক বা না পাক, জল খেতে হবে বারবার, ঠান্ডা পানীয় বা মদ নয়। সহজপাচ্য, হালকা খাবার, রস আছে এমন ফল ও সব্জী খেতে হবে। সুতির, হালকা রঙের, ঢিলা পোষাক পরতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও রুগ্ন মানুষের তাপক্লেশ হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে, এরকম কাউকে বন্ধ গাড়িতে অপেক্ষায় রাখা যাবে না। বাড়ির ছাদে, উঠোনে বা ফ্ল্যাটের বারান্দায় টবে প্রচুর ছোট গাছ লাগাতে হবে। তাপক্লেশে অসুস্থ বোধ করলে সত্বর বাতানুকুল ঘরে বা ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে, পোষাক খুলে ঠান্ডা জলে গা মুছতে হবে, ঠান্ডা জল খেতে হবে। মাথা ঘুরলে, বমি পেলে, বুকে ব্যথা হলে বা শ্বাস আটকে এলে, হাতে-পায়ে খিল ধরলে দেরী না করে হাসপাতালে যেতে হবে।
জলবায়ুর এই সংকটে যাঁদের সবচেয়ে কম অবদান, সেই গরীব মানুষ সবচেয়ে বেশী সংকটাপন্ন। ১৯৮৮ সাল থেকেই ১০০-টা কর্পোরেট হাউস মিলিত ভাবে ৭০ শতাংশ গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী। নাসার বিজ্ঞাণী জেমস হ্যানসেন ১৯৮৮ সালেই ভূপৃষ্ঠের বেড়ে চলা উষ্ণতার দিকে তামাম বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবুও আমেরিকা পরের দু’দশক কিয়োটো প্রোটোকল গ্রহণ করতে নারাজ ছিল। ২০০৬ সালে হ্যানসেন সতর্ক করলেন এই বলে যে, গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমনের হার কমিয়ে পৃথিবীকে ভয়াবহ পরিণতি থেকে বাঁচাতে আমাদের হাতে আর মাত্র একটা দশক রয়েছে। তারপরে আরো দেড় দশক কেটে গেছে, এর মধ্যে ওবামা প্রশাসন প্যারিস চুক্তি চূড়ান্ত করলেও ট্রাম্প প্রশাসন তাতে জল ঢেলে দিয়েছে।
শিল্পবিপ্লবের পরের তিনশো বছরে প্রত্যেক দশক তার আগের দশকের তুলনায় উষ্ণতর ছিল। এই তিনশো বছরে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এক ডিগ্রী সেসসিয়াসেরও বেশী বেড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, হিমবাহগুলো গলছে, বৃষ্টিপাতের প্যাটার্ন বদলাচ্ছে। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার ঘটনা তীব্রতর ও ঘন-ঘন ঘটছে। এই সমস্ত পরিবর্তন আখেরে নিরাপদ আশ্রয়, নির্মল বাতাস, নিরাপদ পানীয় জল, পর্যাপ্ত খাদ্য ইত্যাদির মত স্বাস্থ্যের সামাজিক ও পরিবেশগত নিয়ামকগুলোকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। শিল্পবিপ্লবের সময় থেকেই ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসাবে কাজ করছে জীবাশ্ম জ্বালানী এবং জলবায়ুকে বিপদগ্রস্ত করছে, কিন্তু নয়া উদার অর্থনীতির হাতে পড়ে তা বেলাগাম সংকট ডেকে এনেছে। এই সংকট মোটেই সরলরৈখিক নয়, বরং জটিল ও বহুমাত্রিক। অথচ একের পর এক কিয়োটো, কোপেনহেগেন, ডারবান, প্যারিস, এমনকি হালের গ্লাসগো সম্মেলনেও কার্যকরী কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা গেল না! ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমনের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা উপেক্ষা করে আমেরিকা ২০৫০ সালে ‘মোট শূণ্য নিঃসরণে’ পৌঁছানোর কথা বললেও গরীব ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি যে আর্থিক দায়যদ্ধতা নেবার কথা ছিল, তা বেমালুম এড়িয়ে গেল। জলবায়ু সংকটকে সামনে রেখে মার্কিন নেতৃত্বে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দ্বন্দ্ব অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে।
বর্তমান বিশ্বের মূল দ্বন্দ্বগুলোর অবসান ঘটার পরেও মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির শোষণমূলক, স্বল্পমেয়াদী সম্পর্ক ও তার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার দ্বন্দ্ব রয়েই যাবে। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব যাতে বৈরিতামূলক না হয়, তার তীব্রতা যাতে স্তিমিত হয়ে আসে, সেই লক্ষ্যে সুসংহত পরিবেশ নীতি গ্রহণ করা দরকার। মুনাফালোভী ধনতন্ত্র সেই নীতিতে চলবে না, বরং এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে আরো মুনাফা লোটার সুযোগ খুঁজবে। ফলে শ্রমজীবী মানুষকেই পরিবেশ রক্ষার লড়াই তীব্রতর করতে হবে।
আমাদের রাজ্যে উন্নয়নের নামে যেমন যথেচ্ছ গাছ কাটা হচ্ছে, পুকুর বোজানো হচ্ছে, খোলামুখ কয়লাখনি খোলার চেষ্টা চলছে, তেমনি মেহনতী মানুষের প্রতিরোধও তীব্রতর হচ্ছে। যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর আন্দোলন, কোলকাতা পুরসভার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পুকুর বোজানোর বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন, দেওচা-পাঁচামীর আদিবাসীদের প্রতিরোধ, পুরুলিয়ার তিলাবনী পাহাড় রক্ষার দাবীতে উপজাতিদের সমাবেশ তার প্রমাণ। এই নিদারুন দাবদাহ ও তজ্জনিত তাপক্লেশের মোকাবিলার দাবীতেও শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে, কৃষকদের বিশ্রামের জন্য চা-বাগানের আদতে পর্যাপ্ত ছায়াগাছ লাগাতে হবে প্রতি মাঠে। গ্রামীণ এলাকায় রাস্তার দু’পাশে ব্যাপক বনসৃজন করতে হবে। শহরে ফাঁকা জমি খুঁজে প্রচুর গাছ ঘন করে লাগাতে হবে, বট, অশ্বত্থ জাতীয় গাছ। তাপদ্বীপের প্রভাব মোকাবিলা করতে গেলে এরকম অনেকগুলো বড় গাছের বাগান করতে হবে শহরজুড়ে। দখলমুক্ত করে ফুটপাত বরাবর গাছ লাগাতে হবে, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শীতল ফুটপাত বানাতে হবে। পীচের রাস্তার বদলে তাপসহনীয় আধুনিক সামগ্রী ও প্রযুক্তি দিয়ে রাস্তা বানাতে হবে। একশো দিনের কাজে প্রচুর নতুন পুকুর কাটতে হবে শহরের পরিধির বরাবর। বাতানুকূল বিশ্রামাগার তৈরী করতে হবে প্রতি বস্তি এলাকায় ও শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত প্রান্তে, যাতে পথচলতি তাপক্লিষ্ট মানুষ অসুস্থ বোধ করলে আশ্রয় নিতে পারেন। ব্যাটারিচালিত বাতানুকূল গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে অকারণ যানজট তৈরী না হয়। আলোকসজ্জা ইত্যাদিতে বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে লোডশেডিং প্রতিহত করতে হবে, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকে। সরকারী ভর্তুকিতে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। জলের অপচয় কমিয়ে নলবাহিত জলের সরবরাহ অটুট রাখতে হবে।
‘পুঁজি’-র তৃতীয় খন্ডে মার্ক্স লিখছেন, ‘সমাজের উচ্চতর অর্থনৈতিক কাঠামোর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এক-আধজনের হাতে দুনিয়ার ব্যক্তিগত মালিকানা ঠিক ততটাই অযৌক্তিক ঠেকবে যতটা অযৌক্তিক একজন মানুষের উপর আরেকজনের ব্যক্তিগত মালিকানা। এমনকি, একটা সমগ্র সমাজ, একটা জাতি বা একই সময়ে বিদ্যমান সমাজসমূহের সমষ্টি একসাথেও দুনিয়ার মালিক হতে পারে না। তারা শুধুমাত্র এর ভোগদখলকারী, তাদের অবশ্যই একে উন্নত অবস্থায় পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে হস্তান্তর করে যেতে হবে।’ সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগোতে হবে।
খুবই সময়ুপযোগী লেখা।