অভয়ার বিচার চেয়ে আন্দোলন হঠাৎ শাসকদলের বিরুদ্ধে চালিত হওয়ায় কিছু মানুষ বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এবং এই বাজারেও তৃণমূলের সমর্থনে গলা তুলছেন। আসলে পেট বড় দায়- যে পেটের দায়ে গোটা বাংলা ফুঁসছে জেনেও জীবন হাতে নিয়ে পুলিশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোক ঠ্যাঙাচ্ছে, সেই পেটের দায়ে এটুকু প্রতিরোধ তো গড়ে তোলাই যায়! সন্দীপ ঘোষ আর মমতা ব্যানার্জি তো এই তৃণমূল ডাকাতির একমাত্র বেনিফিসিয়ারী নন- এনারাও রয়েছেন বই কি!
শুরুতেই একটা কথা বলে নেওয়া ভালো। অভয়ার ধর্ষণ ও খুন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়- এটা একটা রাজনৈতিক খুন। যাদের বুদ্ধিবৃত্তি এখনো হাওয়াই চটির তলায় পিষ্ট হয়নি তারা সকলেই এই ওপেন সিক্রেট জানেন, অনেকে নিজের সুবিধার্থে ‘stray incident’ বলে বেরিয়ে যেতে পারেন, সেটা আলাদা কথা। বারবার বলে/লিখে ক্লান্ত হয়ে গেছি, তবুও আরো একবার ক্রনোলজি দেখে নিন।
১. একটা ক্ষতবিক্ষত ছিন্ন বিচ্ছিন্ন মৃতদেহ দেখে সেটাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার, মনোরোগের ওষুধ খেত ইত্যাদি বলে চালানোর চেষ্টা। (এখনো সেই নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই কারো)
২. মৃতার পরিবারকে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখা (ভেতরে কী পরিকল্পনা চলছিল এখনো অপরিষ্কার)
৩. মরণপণ তৎপরতায় ময়নাতদন্ত- যে হাসপাতালের ঘটনা, সেই হাসপাতালেই, এবং কোনোমতে তা সেরে মৃতদেহ দাহ করা।
৪. নো এফ.আই. আর, সন্দীপ ঘোষকে কোনো জেরা হয়নি পুলিশি তদন্তে। লজ্জার মাথা খেয়ে এবং নিজের দায় ঝাড়তে পদত্যাগকারী সন্দীপ ঘোষকে অন্য একটি কলেজের ধর্ষণ করতে পাঠানো।
৫. একটা আধ-মাতাল লোককে হেডফোনের সূত্রে ফাঁসিয়ে তাকেই একমাত্র দোষী সাজিয়ে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা।
৬. অন্যন্য কলেজের ডাক্তারেরা আরজিকরে ঢুকতে চাইলে, পেটোয়া প্রিন্সিপালের কুকুর ডাক্তারি ছাত্রদের দিয়ে ‘আমাদের নিজস্ব ব্যাপার’ বলে জিবি করতে না দেওয়া- পুলিশি হেনস্তা।
৭. এর মাঝে চুপিচুপি সেমিনার রুমের বিপ্রতীপে থাকা ঘরটি (?আসল ক্রাইম প্লেস) ভেঙে দেওয়া(দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এটা অন্য কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়ারা গিয়ে উদ্ধার করে, পুলিশ-মিডিয়া কেউ জানতো না)। মুখে সিবিআই মন্ত্র জপ করতে করতে এভিডেন্স সরিয়ে ফেলার প্রচেষ্টা।
৮. কোর্টের তৎপরতায় সিবিআই-র হাতে কেস চলে গেলে রাতারাতি গুণ্ডা পাঠিয়ে আরজিকরে ভাঙচুর- টার্গেট ‘সেমিনার রুম’ (ভিডিও প্রমাণ আছে)। যদিও সেই পরিকল্পনা শেষ অব্দি সফল হয়না।
৯. এরপর সবার নজর ঘোড়াতে নিজের বিরুদ্ধে নিজেই পথে নামা- অবান্তর কিছু কথা বলা। নিজের বাদবাকি জোকারগুলোকে কিছু অর্বাচীন কার্যকলাপ করানো।
১০. প্রতিবাদী সকল স্তরের মানুষের বিরুদ্ধে সরকারি অত্যাচার। ডাক্তার, অ-ডাক্তার, ফুটবল সমর্থক- সকল প্রতিবাদের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা।
এত কিছু শুধু কয়েকটা নরপিশাচকে বাঁচাতে। এবং এটা নতুন কিছু নয়। মমতা ব্যানার্জি এই লুম্পেনদের মাতৃসমা। ২০১৯-এ পরিবহর মাথা ফেটেছিলো- কোন রোগীকে কেন্দ্র করে এই জলঘোলা সবাই জানতো- একজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ? করেনি। কামদুনি কাণ্ড? উদাহরণ দিতে শুরু করলে শেষ হবেনা। সিপিএমের নাকি হার্মাদবাহিনী ছিল, এদের আছে ধর্ষকবাহিনী- তৃণ-ধর্ষক-মূল নাম দিতে পারে দলটার- যারা ধর্ষকদের পাশে সবসময় থাকবে।
বাংলার প্রতিটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করি, অভয়ার প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন। নয়তো এদের সাহস আরো বাড়বে। ‘আরজিকর করে দেব’ এদের এখন নতুন স্লোগান হয়েছে। আজ নয় কাল এরা আপনার বাড়িতেও হাত বাড়াবে- তখন কিন্তু প্রতিবাদ করার জায়গায় থাকবেন না।