(মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বৃত্তান্ত – ১৮৫২ থেকে ১৮৬০) – শেষ পর্ব
১৮৫১-৫২ সালে প্রথম ব্যাচের মোট ৮ জন মিলিটারি অ্যাসিস্ট্যান্ট (যাদেরকে স্টুডেন্ট অ্যাপ্রেন্টিস বলা হত) পাস করে মেডিক্যাল কলেজ থেকে। এরা সবাই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বা ইউরোপীয় ছিল। (Centenary, পৃঃ ৩১) আরেকটি ঘটনা ১৮৫১-৫২ সালে ঘটেছিল। ১৮৫২-৫২ সালের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল যে “Prince Jan Yudeen”-এর একটি চ্যারিটেবল ফান্ড হাসপাতালের স্বার্থে ব্যবহার করার হবে। রিপোর্টে বলা হয় যে বহু সেরে ওঠা রোগী হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যাবার পরেও এত দুর্বল থাকে যে কাজ শুরু করতে পারেনা, এমনকি যদি কাজের সুযোগ থাকেও। এজন্য কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয় “this fund might be very properly and usefully employed in relieving this class of distressed persons; and that the benefit so obtained would have a material effect in inducing the natives to resort freely to the Hospital.” (GRPI 1851-52, পৃঃ ৮৫) আর্তের নিরাময়ের সাথেসাথে মেডিক্যাল কলেজ বা উপনিবেশিক ভারতের তথা দুনিয়ার অন্যান্য হাসপাতাল এভাবেই হয়ে ওঠে সাম্রাজ্যবাদের মানবিক মুখ।
আমার একটি ভুলের নিরসন করি এবার। আগের অধ্যায়ে বলেছিলাম যে সদ্য প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩টি ইউরোপীয় ওয়ার্ডের একটি রিচার্ড ও’শনেসির নামে “ও’শনেসি” ওয়ার্ড নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু তথ্যটি ভুল। মেডিক্যাল কলেজের Centenary-তে স্পষ্ট করে কিছু না বলা এই ভুলের উৎস। GRPI 1852-53 (30the Sept. 1852, to 27th Jan. 1855)-তে এ বিষয়ে পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে – “On the female side of the Hospital in the Obstetric Department, two Wards have been named respectively the Goodeve and O’Shaughnessy Wards, in honor of Drs. Henry Hurry Goodeve and William Brooke O’Shaughnessy, who were not only among the earliest and most distinguished of the Officers connected with organization of the Medical College, but who were, in addition, the active agents in collecting a sum of amounting to nearly 30,000 rupees for the building of the first Lying-in-Hospital in Bengal.” (Centenary-তে, পৃঃ ৭৭)
আরেকটি ক্ষেত্রেও তথ্যের গরমিল পাচ্ছি – Centenary-র সঙ্গে GRPI 1852-53-র। প্রথম ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল যে ১০০ জন ইউরোপীয় রোগীর খাদ্যের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৭০০ টাকা এবং ২৫০ জন ভারতীয় রোগীর খাদ্যের জন্য সে বরাদ্দ ৩০০ টাকা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ভিন্ন তথ্য পাচ্ছি। নীচে সে টেবিল দিচ্ছি। এখানে দেখা যাচ্ছে টাকার পরিমাণ ৫০০।
এই সেশনে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেমন্সট্রেটর অফ অ্যনাটমির পদে দেখতে পাচ্ছি সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন চন্দ্রকুমার দে-কে। আগেরবারের মতই কাউন্সিল অফ এডুকেশনে ৩ জন ভারতীয়র নাম আছে – রসময় দত্ত, রামগোপাল ঘোষ, এবং আশুতোষ দেব। (GRPI 1852-55, পৃঃ ৬০)
আগেরবারে Male Hospital-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন পদে দেখেছিলাম সূর্য গুডিভ চক্রবর্তীর নাম। এই সেশনে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল খোলার পরে Medical College Hospital-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন পদে নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। হাসপাতালের রেসিডেন্ট সার্জন নিযুক্ত হয়েছেন সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন বৃন্দাবনচন্দ্র চ্যাটার্জি। ইংরেজি ক্লাসে স্টাইপেন্ডিয়ারি ছাত্র – ৪৬ জন, রবার্টসন স্কলার – ৩ জন, ফ্রি স্টুডেন্ট – ৪৫ জন, এবং সাবঅর্ডিনেট মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্ট – ১৬ জন। মোট ১১০ জন ছাত্র ছিল। (পৃঃ ৬১) দেখা যাচ্ছে ফ্রি স্টুডেন্ট, অর্থাৎ যারা নিজের খরচে পড়বে এবং যাদের চাকরি দেবার কোন দায়িত্ব সরকারের নেই তাদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। অনুমান করা যায়, সরকারি চাকরির বাইরেও রেলওয়েজ, চা কোম্পানি, বেসরকারি সংস্থা, দেশীয় এস্টেট কিংবা কোন ধনাঢ্য ব্যক্তির বাঁধা চিকিৎসক হিসেবে চাকরির বাজার বাড়ছে। চাকরি বাজারে প্রবেশ করছে। সেই নিয়ম মেনে মাইনেও নির্ধারিত হবে। এছাড়া কলকাতা শহরে বা শহরতলিতে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস লোভনীয় ছিল। আগে আলোচিত ভোলনাথ বোসের উদাহরণ এক্ষেত্রে পথিকৃৎস্থানীয়।
নীচে ১৮৫২-৫৩ সেশনে ইংরেজি ছাত্রদের হাজিরা এবং মোট ক্লাসের সংখ্যা দেওয়া হল। (পৃঃ ৬২) দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে ইউরোপীয় মানের তুল্য, বিশেষ করে UCL-এর, করে তোলার লক্ষ্যে ক্লাসের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে ছাত্রদের হাজিরাও।
এই সেশনেও শিক্ষকদের বিভিন্ন পদের পরিবর্তন হয়। এর আগে যা বলেছিলাম – প্রতিবছর বারেবারে শিক্ষকদের পড়ানোর সাবজেক্টের এত পরিবর্তনের ফলে বোঝা যায় তখনও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষায় specialization শুরু হয়নি। যেকোন অধ্যাপক যেকোন সাবজেক্ট পড়ানোর অধিকারী ছিলেন।
ডঃ জন ম্যাকফারসন মেটেরিয়া মেডিকার নতুন অধাপক হলেন। এডওয়ার্ড গুডিভ ধাত্রীবিদ্যার শিক্ষক হলেন। ল্যাবরেটরির দায়িত্বে অস্থায়ীভাবে Mr. Marcardieu-কে নিয়োগ করা হল। গুরুত্বপূর্ণ হল কলেজ কাউন্সিলের তরফে সরকারকে একটি চিঠি লেখা হয়েছিল “soliciting the appointment of a Chemist from Europe, to teach the science in all its departments, to its present standard of progress in Europe.” মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরি হওয়াকে “most important event connected with the history of the Medical College during the past session” বলে অভিহিত করা হল। (পৃঃ ৬৩)
হাসপাতালের বিবরণ
বার্ন অ্যান্ড কোং দ্বিতীয় দফার প্ল্যান পেশ করে হাসপাতাল তৈরির জন্য। সে প্ল্যান অনুমোদিত হয়। এ প্ল্যান অনুযায়ী একটি বেসমেন্ট এবং এর ওপরে দুটি তলা – ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ফ্লোর – নিয়ে কলেজ হাসপাতাল গড়ে ওঠে।
বেসমেন্টে ৭টি ওয়ার্ড এবং ৩ টি ঘর – ১টি উত্তর-পূর্ব এবং ২টি উত্তর-পশ্চিম ঘর – তৈরি হয়। ঘরগুলো প্রশস্ত। একেকটি ওয়ার্ড দৈর্ঘে ৬৯.৬ ফিট এবং প্রস্থে ২০.১০ ফিট ছিল। অন্য ঘরগুলো তুলনায় ছোট ছিল। (পৃঃ ৬৫)
প্রথম তলাতেও একইভাবে একই মাপের ৭টি ওয়ার্ড এবং ৩টি ঘর তৈরি করা হয়।
দ্বিতীয় তলাতেও একইভাবে একইরম মাপের একই সংখ্যক ওয়ার্ড এবং ঘর তৈরি করা হয়।
অপারেটিং থিয়েটার – দৈর্ঘে ৪৬ ফিট, প্রস্থে ৩৪ ফিট। উচ্চতা ২৬.৬ ফিট। ৩০০ জন মানুষ ধারণ করার উপযোগী ছিল।
পোর্টিকো রুম – দৈর্ঘে ৫৩ ফিট, প্রস্থে ৪৬.৬ ফিট। উচ্চতায় ২৬ ফিট।
সার্জন এবং ফিজিশিয়ানদের ঘর – দৈর্ঘ ২১ ফিট ৬ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৫ ফিট ৬ ইঞ্চি।
কনসাল্টিং রুম – দৈর্ঘ ২১ ফিট ৬ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৫ ফিট ৬ ইঞ্চি।
নর্থ পেডিমেন্ট – দৈর্ঘ ৫৯ ফিট, উচ্চতা ১০ ফিট।
সাউথ পেডিমেন্ট – দৈর্ঘ ১০৯ ফিট, উচ্চতা ১৫ ফিট।
ডিসপেনসারি রুম – দৈর্ঘ ৪৬ ফিট, প্রস্থ ২২ ফিট ৬ ইঞ্চি।
হাসপাতাল তৈরির মোট খরচ – ২,৩৬,৭৭২ টাকা ২ আনা ৬ পাই। (পৃঃ ৬৬)
এরপরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চালানোর খরচ লন্ডনের বিভিন্ন নামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হাসপাতালের তুলনায় কত কম এর তুল্যমূল্য বিচার করা হয়। “The North wing of St. Thomas’s Hospital in London was completed in 1835, at a cost of £18,800.” (তখনকার মূল্যমানে ১,৮৮,৮০০ টাকা) (পৃঃ ৬৭)
GRPI 1852-53-র রিপোর্টে আরও বলা হল – “A wing capable of containing 300 patients has recently been added to Guy’s Hospital at an outlay of £30,000.” (প্রাগুক্ত) অর্থাৎ গাই’জ হাসপাতালের একটি উইং তৈরির খরচ ভারতীয় মুদ্রায় ৩,০০,০০০ টাকা। আর সমগ্র মেডিক্যাল কলেজ তৈরিতে খরচ পড়েছে ২,৩৬,৭৭২ টাকা ২ আনা ৬ পাই।
এই হাসপাতাল তৈরির আগে মেডিক্যাল কলেজে যে অনেক ছোট একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল ছাত্রদের ক্লিনিক্যাল ট্রেনিংযের জন্য সে হাসপাতালের ১৮৪১ থেকে ১৮৫২ পর্যন্ত রোগীদের হিসেব এরকম –
ইউরোপীয় – ১১,৫৪০ জন।এদের মধ্যে মারা গিয়েছিল ১,২০৩ জন, ডিসচার্জড হয়েছিল ১০,৩৩৭ জন।
ভারতীয় – ১১,৫১৯ জন। মারা গিয়েছিল ১,০৩৩ জন, ডিসচার্জড হয়েছিল ১০,৪৪৮ জন।
ইউরোপীয় রোগী যারা ভর্তি হত তাদের মধ্যে কপর্দকশূণ্য ব্যক্তি ১৬%, নাবিক ১৩%, “Townsmen, not Paupers” ১২%, এবং “of Recruits and Invalids” ৪.৬৮% – “giving an average mortality of all classes of 14.6 per cent.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৮)
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যাপারে রিপোর্টে বলা হল – “That amount of space assigned to each patient in the wards of the new College Hospital, with the provision made for ventilation and a plentiful supply of water, will enable it in times of emergency and epidemic outbreaks of disease, to accommodate without injury, in the two upper floors, nearly 500 patients.” (প্রাগুক্ত)
“The European patients in the Medical College Hospital are all either paupers or seamen, and very many of them come for treatment in advanced and nearly hopeless stages of disease.” (পৃঃ ৬৯) এদের মৃত্যু হবার পরে একটা অংশ ডিসেকশন রুমের টেবিলে চলে যেত নিশ্চয়ই, কারণ এগুলো “unclaimed bodies”।
কলেজ কাউন্সিলের হিসেব অনুযায়ী এই নতুন হাসপাতাল ৩৫০ জনকে রোগীকে জায়গা দিতে পারবে, যাদের ২/৩ ভাগ পুরুষ রোগী এবং ১/৩ ভাগ মহিলা রোগী। ৩৫০ জনের মধ্যে অনুমিত ১০০ জন ইউরোপীয় এবং ২৫০ জন সমস্ত জাতের দেশীয় রোগী। মেডিক্যাল এবং সার্জিকাল কেসের মধ্যে ১৫৩টি মেডিক্যাল এবং ৯০টি সার্জিকাল কেস থাকবে। “For pregnancy and the diseases associated with it, 50 beds will probably be sufficient, including children, leaving about 66 for general cases, medical and surgical.” (প্রাগুক্ত)
কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল কলেজ তাদের রিপোর্টে জানাল যে হাসপাতালের এত রোগী সামলানো এবং ক্লিনিক্যাল ইনস্ট্রাকশনের জন্য যে সময় লাগবে সেজন্য অন্তত ২ জন ফিজিশিয়ান, ২ জন সার্জন, ১ জন হাউস সার্জন, ১ জন হাউস ফিজিশিয়ান এবং ১ জন করে ইউরোপীয়ান অ্যাপথেকারি ও স্টুয়ার্ড লাগবে “for the management of the victualling, clothing, and store departments” প্রয়োজন। ফিমেল ওয়ার্ডের জন্য লাগবে ১ জন হাউস সার্জন, ইংরেজ মেট্রন এবং নার্স, ১ জন করে ইউরোপীয় ও দেশীয় নার্স। (পৃঃ ৭০)
এর সঙ্গে তুলনা করা হল সেন্ট বার্থোলোমিউ হাসপাতালের। সে হাসপাতালে ৩৮৬টি বেডের জন্য ৩ জন প্রধান ফিজিশিয়ান এবং ৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিজিশিয়ান, ৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিজিশিয়ান ছাড়াও ১ জন হাউস সার্জন ও ১ জন অ্যাপোথেকারি রয়েছে। রয়েছে নার্স এবং ড্রেসারদের বড় বাহিনী।
ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে অনেক কম বেড থাকা সত্ত্বেও ৩ জন ফিজিশিয়ান, ৩ জন সার্জন ১ জন হাউস সার্জন, ১ জন অ্যাপোথেকারি ও যথেষ্টসংখ্যক নার্স, ড্রেসার ও অন্যান্য সহকারী বাহিনী। (পৃঃ ৭০)
GRPI 1852-53-র রিপোর্টে বলা হল – “The entire cost maintaining the Calcutta Hospital is considerably less than that of any similar institutions of like extent, in England.” (GRPI 1852-53, পৃঃ ৭১) এখানে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, কেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরি হবার পরে এর খরচ নিয়ে এত কথা খরচ করতে হচ্ছে এবং লন্ডনের বিখ্যাত হাসপাতালগুলোর সাথে তুলনা করতে হচ্ছে? এর একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ব্রিটিশ পার্লামানেটের সংঘাত। চিনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার আগেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ফলে ভারতের বাণিজ্যকে নিজেদের দখলে রাখার জন্য কোম্পানির কর্তাদের মরীয়া চেষ্টা ছিল ব্যয় হ্রাসের হিসেব দেওয়া।
রিপোর্টে হিসেব দিয়ে দেখানো হল – কিং’স কলেজ হাসপাতালের ১০১টি বেড “annual revenue of £4,000. The Middlesex Hospital with 300 beds, costs annually £8,000; Guy’s Hospital costs £21,000 annually … The gross annual sum expended in St. Thomas’s Hospital is £26,000. The entire annual cost of all departments of the Medical College at present is Company’s rupees 75,968-4-4”। (পৃঃ ৭১)
১৮৫২-৫৩-র রিপোর্টে একথাও জানানো হল – “The physicians and Surgeons of the London Institutions are chiefly paid from the students’ fees, while the whole expense of the School and Hospital in Calcutta is borne by the state.” (প্রাগুক্ত) যখন ওদেশে ছাত্রদের নিজেদের টাকায় পড়াশোনা করতে হত তখন এখানে শুধু ছাত্রদের পড়তে খরচ লাগত না তাই নয় বরঞ্চ এদের স্টাইপেন্ড দিয়ে ইউরোপীয় মেডিক্যাল শিক্ষায় আকৃষ্ট করার কাজ চলেছে। কারণ? ইউরোপীয় মেডিসিন এবং এই মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাকারী ব্রিটিশ শাসনের মান্যতা ও জনগ্রাহ্যতা তৈরি করা। মেডিসিন সাম্রাজ্যবাদের “মানবিক মুখ” হিসেবে কাজ করবে – এই ছিল শাসকেদের অভীপ্সা। এ নিয়ে আমি আমার এই দীর্ঘ ধারাবাহিক কিস্তির গোড়ার দিকে আলোচনাও করেছি।
এরপরে GRPI 1852-53-র রিপোর্টে লন্ডনের হাসপাতালের সাথে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের জন্য দৈনিক খরচের তুলনা করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে লন্ডনে যে খরচ দৈনিক ১৩ আনা ১০ পাই, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সে খরচ ৩ আনা ১০ পাই। (পৃঃ ৭২)
১৯ মার্চ, ১৮৫৩-র ক্যালকাটা গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষকদের বিন্যাস হল এরকম –
ডঃ এফ জে মোয়াট – মেডিসিনের অধ্যাপক এবং এক্স-অফিসিও ফার্স্ট ফিজিশিয়ান
ডঃ ই গুডিভ – মেটেরিয়া মেডিকার অধ্যাপক এবং এক্স-অফিসিও সেকেন্ড ফিজিশিয়ান
ডঃ আর ও’শনেসি – সার্জারির অধ্যাপক এবং এক্স-অফিসিও ফার্স্ট সার্জন
ডঃ অ্যালান ওয়েব – ডেসক্রিপটিভ এবং সার্জিকাল অ্যানাটমির অধ্যাপক এবং এক্স-অফিসিও সেকেন্ড সার্জন
ডঃ ডানকান স্টুয়ার্ট – ধাত্রীবিদ্যার অধ্যাপক এবং এক্স-অফিসিও অবস্টেট্রিক ফিজিশিয়ান। (পৃঃ ৭৪)
হাসপাতালের ব্যাপারে রিপোর্টে উল্লেখিত হয় – “It also stands in urgent need of a large tank in its immediate vicinity, to supply it all times with the amount of pure and wholesome water necessary for so great an establishment.” (পৃঃ ৭৮)
হাসপাতালের আরেকটি নজর দেবার মতো সমস্যা হিসেবে বলা হয় যে “closely surrounded on the North and South aspects, by bazaars and huts, which interfere with ventilation, and allow of no space for out-houses, and the means of affording a place to the convalescent patient.” (প্রাগুক্ত) ঘিঞ্জি বাজার এবং কুঁড়েঘর দিয়ে হাসপাতাল চতুর্দিকে ঘেরা বলে ওয়ার্ডগুলো যথেষ্ট পরিমাণে আলো বাতাস পাচ্ছিলনা। ফলে যে রোগীরা অসুস্থতা থেকে সেরে উঠছে তাদের জন্য এটা একটা বাস্তব সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
কলেজ কাউন্সিলের রিপোর্টে কয়েকজন ছাত্রের মাত্রাতিরিক্ত অনুপস্থিতির জন্য তাদেরকে আগের ক্লাসে রেখে দেওয়া হয়েছিল, আপ্স করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। একটি ছাত্র ৭০টি লেকচারের মধ্যে ৩৩টিতে অনুপস্থিত ছিল, আরেকজন ২৮টিতে। অন্যরাও তথৈবচ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ধাত্রীবিদ্যার ক্ষেত্রে ডঃ স্টুয়ার্ট তাঁর রিপোর্টে বললেন – “Each of the students who go up for examination this year, will have personally attended on an average three cases of labor in Hospital, under the superintendence either of the House Surgeon, or of the Professor … and the proper treatment cannot be learned without a previous thorough acquaintance with natural mechanism of labor.” (পৃঃ ৭৮) এরপরে যোগ করা হল – “as a general practice, the pupils paid no attention to their cases after the labor was over … for at least 10 days, the duty of visiting them daily for that time should be of paramount”। (পৃঃ ৭৯) এমনকি দরিদ্র ও সামর্থ্যহীন রোগীদের বাড়িতে গিয়ে দেখে আসার প্রস্তাবও ডঃ স্টুয়ার্ট দিয়েছিলেন।
“Diploma Examination English Class”-এ ১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিল। যেসব বিষয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল সেগুলো হল – (১) প্র্যাক্টিক্যাল সার্জারি, এবং সার্জারি ইন অ্যানাটমি ইন ডিসেক্টিং রুম, (২) প্র্যাকটিস অফ মেডিসিন, (৩) প্র্যাকটিস অফ সার্জারি (মৌখিক), (৪) মিডওয়াইফারি, এবং (৫) মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্স। (পৃঃ ৮০)
এর আগেও এ প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরির পর থেকে কলেজ কাউন্সিল এবং এডুকেশন কাউন্সিলের শিক্ষার ভরকেন্দ্রে চলে আসে থিওরি এবং প্র্যাকটিসের সুষম মেলবন্ধন। এ চেষ্টা ব্রামলের সময় থেকে শুরু হয়েছিল, উইলিয়াম ও’শনেসি কেমিস্ট্রির ক্লাসে বিষয়টিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। ছাত্ররা বাড়িতে ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি কিনে পরীক্ষানিরীক্ষা করাও শুরু করেছিল। এমনকি ছাত্ররা “Chemical Demonstration Society” তৈরি করেছিল ১৮৩৭ সালে। (Calcutta Monthly Journal, July 1837, পৃঃ ৪৩৩)
হাসপাতালের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যখন পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল ট্রেনিংযের সুযোগ জন্ম নিয়েছে, শিক্ষকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বইয়ের পড়া আর রোগীর পাশে থেকে শেখাকে যুক্ত করতে। পোস্ট মর্টেমের মধ্য দিয়ে “morbid anatomy: এবং “medical jurisprudence” শেখা, লেবার রুমে মা এবং শিশুর চিকিৎসা হাতেকলমে শেখাকে শিক্ষার অভ্যাসে পরিণত করতে চেয়েছেন তাঁরা। এজন্য ২০ নভেম্বর, ১৮৫৩-তে London Medical Times and Gazette-এ UCL-এর ফাইনাল পরীক্ষার যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল তার পর্যালোচনা করেছেন – “In thus combining the practical with the theoretical, the University of London has shown itself duly conscious of the true aims and objects of medical education, and has afforded an example to all other examining Medical Boards.” (GRPI 1852-53, পৃঃ ৮১)
মোট ১৬ জন ছাত্র এই শিক্ষাবর্ষে ডিপ্লোমা পান। নীলমাধব মুখার্জি স্বর্ণ পদক লাভ করেন। (পৃঃ ৮২) জুনিয়র ডিপ্লোমা পরীক্ষার জন্য ৪০ জন ছাত্র পরীক্ষায় বসেছিল। ২১ জন ডিপ্লোমা পায়। ১১ জনকে আবার পুরনো ক্লাসে ফেরত পাঠানো হয়, ৮ জনকে কলেজ থেকে অপদার্থতার জন্য বহিষ্কার করা হয়। (পৃঃ ৮৩)
শিক্ষাবর্ষ ১৮৫৩-৫৪ (GRPI 1853-54)
GRPI 1853-54 থেকে দেখতে পাচ্ছি কাউন্সিল অফ এডুকেশনের ভারতীয় সদস্য হচ্ছেন রসময় দত্ত, রামগোপাল ঘোষ এবং রামপ্রসাদ রায়। এর আগে আশুতোষ দেব ছিলেন। এবারে তিনি নেই। পরিবর্তে রামপ্রসাদ রায়ের নাম পাচ্ছি। নীচে ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের সাবজেক্ট এবং শিক্ষকদের তালিকা দিলাম। (পৃঃ ৮৪)
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারতীয় শিক্ষকেরা ছিলেন –
অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিজিশিয়ান – সূর্য গুডিভ চক্রবর্তী
হাঊস ফিজিশিয়ান – সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন চন্দ্রকুমার দেব
রেসিডেন্ট সার্জন – সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন বৃন্দাবনচন্দ্র চ্যাটার্জি। (পৃঃ ৮৫)
স্টাইপেন্ডিয়ারি স্টুডেন্ট ৪৫ জন, রবার্টসন স্কলার ১ জন, ফ্রি স্টুডেন্ট ৩১ জন, এবং সাবঅর্ডিনেট মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্ট ১৭ জন – মোট ৯৫ জন ছাত্র।
বিগত শিক্ষাবর্ষে ডঃ রবার্টসন কেমিস্ট্রির অধ্যাপনা থেকে ইস্তফা দেবার পরে এই পদটি ফাঁকা ছিল। খোদ লন্ডনের কোর্ট অফ ডিরেক্টরস ডঃ ম্যাকনামারাকে লন্ডন থেকে কেমিস্ট্রির অধ্যাপক হিসাবে নভেম্বর মাসে মেডিক্যাল কলেজে পাঠান। ফলে “Winter Session” থেকে তিনি ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। অবশ্য কেমিস্ট্রির প্রথম ৪০টি লেকচার ডঃ মার্চিসন (বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস) দিয়েছিলেন। ডঃ ম্যাকনামারা আসার পরে “introduction of practical tuition in the laboratory (পরে প্র্যাক্টিক্যাল কেমিস্ট্রি বলে আলাদা বিষয় হবে), under the direction of Professor” সম্ভব হল। এর ফলে আশা করা গিয়েছিল “under this system the pupils will acquire a considerable knowledge of chemical analysis and manipulation, which cannot fail to be highly useful to them as Medical practitioners” হবে। (পৃঃ ৮৭)
১২ বছর মেডিসিনের অধ্যাপক ও কলেজের সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে ডঃ মোয়াট চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। তাঁর জায়গায় ডঃ চক্রবর্তী হাসপাতালের মোয়াটের ওয়ার্ডের রোগীদের দায়িত্ব নেন। প্রসন্নকুমার মিত্র ডঃ চক্রবর্তীর জায়গায় আউটডোর ডিসপেনসারির দায়িত্ব নেন। “Ophthalmic Medicine and Surgery” এবং Eye Infirmary-র দায়িত্বে আসেন ডঃ বেডফোর্ড – অধ্যাপক মার্টিনের জায়গায়। (প্রাগুক্ত)
নতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কত রোগী চিকিৎসা পেয়েছে তার একটি হিসেব দেওয়া হয়। ১৮৫২ সালে ১,৩৭৯ জন ইউরোপীয় এবং ১,১৫৩ জন ভারতীয়র চিকিৎসা হয়। কিন্তু ১৮৫৩-৫৪ সালে সে সংখ্যা বেড়ে যথাক্রমে ২,২১১ ইউরোপীয় এবং ২,৮৫৮ জন ভারতীয় হয়েছিল। সংখ্যার বৃদ্ধিতে ইউরোপীয় রোগী বেড়েছে ৮৩২ জন এবং দেশীয় রোগী বেড়েছে ১,৭০৫ জন। আউটডোর ডিসপেনসারিতে ১৮৫২ সালে ১৩,৬০৬ জন রোগী দেখা হয়েছিল। ১৮৫৩ সালে সে সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়ে ৩৮,১৭০ জন হয়। (পৃঃ ৮৮)
১৮৫২ সালে ১ বছরে আউটডোর ডিসপেনসারিতে ছোটখাট (মাইনর) সার্জারি হয়েছিল ২০৫৭টি। এতগুলো মানুষের রোগমুক্তি ঘটেছে। অনুমান করা যায় কলকাতার সামাজিক অস্তিত্বে ও জীবনে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ক্রমাগত অপরিহার্য হয়ে উঠছে। নীচে রিপোর্টে প্রকাশিত টেবিল দেওয়া হল। (GRPI 1853-54, Appendix B. No. L)
১৮৫২-৫৩ সালে মিডওয়াইফারি বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল ১০০ জন। ১৮৫৩-৫৪ সালে সে সংখ্যা হয়েছিল ১২০ জন। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজে প্রসব করানোর জন্য গুডিভ যেসব উপঢৌকন চালু করেছিলেন (যেমন মায়েদের ও শিশুদের জন্য জামাকাপড় ও তামাক ইত্যাদির ব্যবস্থা করা) সেগুলো হ্রাস করা শুরু হয় – “gradual withdrawal of the small sum of money which was formerly given to the patients to enable them to obtain some comforts and clothing for the children on leaving the hospital.” (পৃঃ ৮৮) প্রথম ৬ মাসে এর জন্য অর্থবরাদ্দ কমিয়ে প্রত্যেক রোগীপিছু ২ টাকা করা হয়, এবং পরের ৬ মাসে কমিয়ে রোগীপিছু ১ টাকা করা হয়েছিল। রিপোর্টে জানানো হয়েছিল – “The Native Midwifery patients prefer getting the hospital allowance for diet at the rate of six pice a day each in money, to daily rations, and this indulgence is allowed to them.” অর্থাৎ দেশীয় প্রসূতিরা খাদ্যের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ৬ পয়সা নগদ হিসেবে নিতে চায়, এবং এ প্রশ্রয়টুকু তাদেরকে দেওয়া হয়। যদিও ডঃ স্টুয়ার্ট এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে প্রসূতিবিভাগের শিশুদের জন্য জামাকাপড় কেনার জন্য অর্থসাহায্য করেছিলেন। (প্রাগুক্ত)
১৮৫৪ সালের আগস্ট মাসে চোখের হাসপাতালকে উড স্ট্রিট থেকে সরিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেসমেন্টে নিয়ে আসা হয়। এতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল – ৭০ জন “in-patients” এবং ৩০ জন “out-patients”। মন্তব্য করা হয় – “the field for clinical instruction has been greatly, and it may be fairly hoped, permanently extended … The pupils have the advantage of seeing ophthalmic medicine and surgery on about a daily average of 100 In and Out-patients, whose cases afford the most ample means for illustrating the diseases of the eye.” (পৃঃ ৮৯)
নিয়ম করা হয়, ছাত্রদের তরফে আউটডোর ডিসপেনসারিতে ৬ মাস হাজিরা দেওয়া এবং কাজ করা বাধ্যতামূলক “and the production of a certificate in testimony of such attendance, has now been made imperative as a qualification for admission to Junior Diploma examination.” (পৃঃ ৯০)
কলেজে ভর্তি হবার ক্ষেত্রেও নতুন কিছু নিয়ম তৈরি হল। এতদিন পর্যন্ত মাসে ৮ টাকা করে যে স্টাইপেন্ড দেওয়া হত সে নিয়মের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হল। স্টাইপেন্ড প্রাপকের জায়গা ফাঁকা হলে সে অর্থ “are to be divided into scholarships of the value of 12 and 16 rupees each”। স্টাইপেন্ড পরিবর্তিত হল স্কলারশিপে। এরসঙ্গে “entrance examination has been fixed at a somewhat higher standard than formerly.” (পৃঃ ৯০)
ক্লিনিক্যাল স্টাডির ক্ষেত্রেও কিছু নতুন নিয়ম এল।
(১) প্রতিটি ছাত্রকে আলাদা আলাদা করে কেস দেখতে হবে এবং ক্লিনিক্যাল ক্লার্ক এবং ড্রেসার হিসেবে কাজ করতে হবে।
(২) ঘনঘন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ছাত্রদের অধীত জ্ঞানের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
(৩) পরীক্ষার ক্ষেত্রে “practical medicine”-কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
(৪) “That a record of the pupil’s work be kept, and that it contain a statement of the manner in which he has kept his cases and of the manner in which he has acquitted himself at the examination” দেখাতে হবে। (প্রাগুক্ত) এভাবে এর পূর্ববর্তী কোন শিক্ষাবর্ষে ছাত্রদের পরীক্ষায় বসার পূর্বশর্ত হিসেবে রোগীদের কেস স্টাডি এমন মাত্রায় রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
বলা হল – “The junior pupils of the English Class are to attend, each for three months in the Compounding-shop in order to acquire a practical knowledge of the dispensing and preparation of medicines.” (পৃঃ ৯১)
পরীক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রেও কিছু আমূল পরিবর্তন আনা হল। কলেজ কাউন্সিল যেগুলো রেকমেন্ড করেছিল সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল – (১) প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে,
(২) যে রোগীকে পরীক্ষার জন্য ছাত্রদের দেওয়া হবে সে রোগী “selected from the new admissions whose cases have not been diagnosed or formerly inquired into. The examiners to interrogate the pupils with respect to these cases in any way they think fit.”,
(৩) চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রদের “to keep their record or case-books exclusively by themselves for the month between the 15th January and the 15th February … all the final pupils to produce at least four cases each.”
(৪) পরীক্ষকরা যেকোন সময়ে পরীক্ষা চলাকালীন কলেজে যে পোস্ট মর্টেম করা হবে সে সংক্রান্ত যেকোন ধরনের প্রশ্ন ছাত্রদের করতে পারবেন, এবং ছাত্রদের তার উপযুক্ত উত্তর দিয়ে সন্তুষ্ট করতে হবে। (পৃঃ ৯১)
সেদিন একটি একটি করে হাসপাতাল শিক্ষা, মেডিসিন সার্জারি ধাত্রীবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয় শিক্ষা, রোগীদের হিস্টরি থেকে ডায়াগনোসিসে পৌঁছনোর সমস্ত ধাপের হাতেকলমে শিক্ষা এবং রোগীদের সঙ্গে মেশার যেসব সোপান তৈরি হয়েছিল সে সোপান বেয়ে আজ আমরা আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। এ ইতিহাসকে কুর্ণিশ।
ফাইনাল পরীক্ষায় ১৬ জন ছাত্র হাজির হয়েছিল। এদের মধ্যে ১২ জন পাস করে। ২ জনকে ভালো করে শিক্ষার জন্য আরও একবছরের জন্য আগের ক্লাসে ফেরত পাঠানো হয়, এবং ২ জনকে ৬ মাসের জন্য।
ডঃ ম্যাককিননকে সরকারি পরীক্ষক করে পাঠানো হয়েছিল। কাউন্সিল অফ এডুকেশনকে পাঠানো তাঁর রিপোর্টের দুটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (১) তিনি বলেছিলেন যে পরীক্ষার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে “I have not based it solely on the result of the written essay and oral examinations, but have also given consideration to the manner in which the students have kept their case-books, and to the character they have received from the professors as to the performance of their duties in the wards of the Hospital.” (২) অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় তিনি উল্লেখ করেছিলেন – “Their knowledge of the use of stethoscope was particularly noticed.” (পৃঃ ৯৫)
আমরা যদি নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশনের সময়কাল (১৮২২-৩৫) থেকে ভাবি তাহলে পরপর ধাপগুলো এরকম ধরা যায়। প্রথম ধাপে visual, verbal, auditory এবং psyche-র acculturations হল। দ্বিতীয় ধাপে, মেডিক্যাল কলেজের জন্মলগ্নে, প্রিন্সিপাল ব্রামলের হাত ধরে moral এবং ethical acculturations। শবব্যবচ্ছেদ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া এই সীমার মাঝেই পড়ে। তৃতীয় ধাপে মেডিক্যাল কলেজে ক্লাস শুরু করার সঙ্গে সংপৃক্ত হয়ে গেল clock-time acculturations। একইসঙ্গে উদীয়মান আধা-পুঁজিকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের উপযুক্ত অনুগত, বাধ্য, সুশীল নাগরিক তৈরির educational techniques জন্ম নিতে থাকল মেডিক্যাল পাঠ্যক্রমে এবং প্রয়োগের মাঝে। ১৮৪১ পরবর্তী সময়ে বিশেষথ নর্থ এবং নর্থ-ওয়েস্টার্ন প্রদেশ জুড়ে ডিসপেনসারিগুলো বিস্তৃত হতে থাকে। জনসাধারণের মাঝে মেডিক্যাল কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা নতুন রাষ্ট্রের উপযোগী জনস্বাস্থ্যের কৃৎকৌশল পৌঁছে দেবার বাহক হিসেবে এঁরাও হয়ে উঠলেন রাষ্ট্রের একধরনের “intelligence gatherer”। একে আমরা চতুর্থ ধাপ বলতে পারি। পঞ্চম ধাপে হাসপাতালের পরিবেশে (রোগীর পরিচিত পরিবেশের বাইরে) রোগীর বেড সাইডে দাঁড়িয়ে খুঁটিনাটি হিস্টরি নেওয়া, পোস্ট মর্টেম ডিসেকশন করা, কেস-বুক রক্ষা করা এবং এর ভিত্তিতে পরিসংখ্যানগত তথ্য তৈরি করা এবং স্টেথোস্কোপের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার করে নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেহের অভ্যন্তরে রোগের প্যাথলজি নির্ণয়ে পৌঁছনো “Hospital medicine”-এর বৃত্ত সম্পূর্ণ করল। একটি পূর্ণাঙ্গ অবয়বের জন্ম দিল। ডেভিড আর্মস্ট্রং প্রযুক্তিগতভাবে স্টেথোস্কোপের ব্যবহারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন – “Every time the stethoscope was (and is) applied to a patient, it reinforced the fact that the patient possessed an analysable body with discrete organs and tissues which might harbour a pathological lesion. Thus, in the history of medicine it is not the doctors who have dominated, subjugated and objectified the patient; rather it is the stethoscope coupled to an anonymous gaze which has had a major impact in celebrating and sustaining the physical nature of the body during the nineteenth and twentieth centuries.” (“Bodies of Knowledge/Knowledge of Bodies”, in Colin Jones and Roy Porter (eds.), Reassessing Foucault: Power, Medicine and the Body, ২০০১, পৃঃ ২৩)
আমরা পূর্ব প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ডঃ ম্যাককিনন তাঁর রিপোর্টে আরও বললেন – “we deemed it advisable to extend our examinations beyond the mere diagnosis; and the students were further questioned as to their proposed manner of treating cases, and for the medicines they recommended, they were directed to write down prescription.” (GRPI 1853-54, পৃঃ ৯৫-৯৬)
আরও বলেন “The essays of Moheshchunder Ghose, I consider the best, on all of the three subjects given to write upon, but what Mr. Morgan wrote upon Surgery and Mr. Mina upon Midwifery, I think deserving of publication.” ১৮৫৪ সালে ১২ জন ছাত্র গ্র্যাজুয়েট হয়েছিল। স্বর্ণ পদক পান মহেশচন্দ্র ঘোষ। (পৃঃ ৯৬)
১৮৫৫-র রিপোর্ট (২৭ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল ১৮৫৫)
GRPI 1955-র রিপোর্ট অনুযায়ী কলেজের সেক্রেটারির দায়িত্বে এডওয়ার্ড গুডিভ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভারতীয়রা হলেন – হাউস ফিজিশিয়ান তমিজ খান, অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য ফিজিশিয়ান মহেশচন্দ্র ঘোষ, রেসিডেন্ট সার্জন সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন বৃন্দাবনচন্দ্র চ্যাটার্জি। এছাড়া ইংলিশ ক্লাসে ডেমনস্ট্রেটর অফ অ্যানাটমি সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন চন্দ্রকুমার দেব, এবং মেটেরিয়া মেডিকার দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক সূর্য গুডিভ চক্রবর্তী ছিলেন। মিলিটারি এবং বেঙ্গলি ক্লাসে সুপারিন্টেনডেন্ট এবং লেকচারার অন অ্যানাটমি – মধুসূদন গুপ্ত, মেডিসিনের শিক্ষক – সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন প্রসন্নকুমার মিত্র, মেটেরিয়া মেডিকার শিক্ষক – সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন শিবচন্দ্র কর্মকার ছিলেন। (পৃঃ ৭৩) ইংরেজি ক্লাসে মোট ছাত্রসংখ্যা ছিল ৮৮।
ফাইনাল পরীক্ষায় ২৩ জন ছাত্র হাজির হয়েছিল। ১৭ জন পাস করেছিল, ৬ জন প্রত্যাখ্যাত হয়। (পৃঃ ৭৭) জুনিয়র ডিপ্লোমা পরীক্ষায় ১০ জন ছাত্র উপস্থিত হয়েছিল। ৮ জন পাস করে, ১ জন ফেল করে এবং ১ জনকে পুরনো ক্লাসে ফেরত পাঠানো হয়। (পৃঃ ৭৮)
ধাত্রীবিদ্যার অধ্যাপক ডানকান স্টুয়ার্টের মার্চ, ১৮৫৫-র রিপোর্ট অনুযায়ী – “The Midwifery Cases for the past year consisted of 21 fifth year, 12 fourth-year students, and 2 English Apprentices, who were all regular and attentive in attendance of Lectures. The former only were permitted to take charge of cases.” আরও জানান যে ১১২ জন প্রসূতির ডেলিভারি হয়েছে। শুধু তাই নয় “not a few of them objected to be delivered by a Medical Student”। ছাত্রদের সবাই স্বহস্তে ২টি করে ডেলিভারি করিয়েছে। বেশ কয়েকজন ৪-৫টি ডেলিভারি করায়, এবং ১ জন ৬টি ডেলিভারি করিয়েছিল। (পৃঃ ৮২)
১৮৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে “Ophthalmic Surgery, or to speak more correctly perhaps Diseases of the Eye, have been in the subjects for oral examination” এবং আশা প্রকাশ করা হয় এর ফলে ছাত্ররা আরও সুশিক্ষিত ও কার্যকরী হয়ে পাস করবে। (পৃঃ ৮৪)
শিক্ষাবর্ষ ১৮৫৫-৫৬ (GRPI 1855-56)
ডঃ মোয়াটের অবসরগ্রহণের পরে কলেজে আবার সেক্রেটারির পরিবর্তে প্রিন্সিপাল পদের সৃষ্টি, যেমন ব্রামলে ছিলেন প্রথম প্রিন্সিপাল। তাঁর অকালমৃত্যুর পরে প্রিন্সিপাল পদটি সেক্রেটারি পদে পরিবর্তন করা হয়। ডেভিড হেয়ার মেডিক্যাল কলেজের প্রথম সেক্রেটারি (১৮৩৭) হয়েছিলেন। GRPI 1855-56-র রিপোর্ট অনুযায়ী এই শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন প্রিন্সিপাল হলেন J. McRae।
তিনি জানালেন যে কলেজে ১ জন প্রিন্সিপাল এবং ৯ জন ইউরোপীয় অধ্যাপক আছেন। এছাড়া ৫ জন দেশীয় শিক্ষক এবং কলেজের গ্র্যাজুয়েট রয়েছেন শিক্ষকতার জন্য। (GRPI 1855-56, অ্যাপেন্ডিক্স এ, পৃঃ ১২৫) বলা হল “The government of the Medical College and Hospital, is vested in the Principal, aided by a Consultative Council, composed of all the Professors”। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১২৬) অর্থাৎ কলেজ কাউন্সিলের পরিবর্তে কনসালটেটিভ কাউন্সিল হল।
জানানো হল যে ২২ বছর হল এই কলেজ তৈরি হয়েছে, নতুন হাসপাতাল তৈরি হয়েছে ৩ বছর। এরমধ্যে ১০৪ জন সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন এবং ২৯৭ জন নেটিভ ডাক্তার পাস করে বেরিয়ে সরকারি চাকরিতে রয়েছে। (প্রাগুক্ত)
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানানো হল – (১) “Public Service”-এর জন্য যতসংখ্যক সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন এবং নেটিভ ডাক্তারের প্রয়োজন পড়ে তার অর্ধেকও এই কলেজ থেকে পাওয়া যায়না। (২) মূলত দারিদ্র্য এবং অন্যান্য কারণে যে ছাত্ররা কলেজে প্রবেশ করে তাদের একটি বৃহদংশ ৫ বছর পড়া চালাতে পারেনা, মাঝপথে ছেড়ে দেয়, (৩) গ্র্যাজুয়েট হয়ে বেরোনো ছাত্রের সংখ্যা যথেষ্ট কম এবং কেউ কেউ প্রাইভেট প্রাকটিস করতে শুরু করে, কেউ ইংল্যান্ডে যায় আরও লেখাপড়া করার জন্য, (৪) সর্বোপরি, ১৮৫৫ সালে দুজন ছাত্র পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছে পূর্ণতর শিক্ষার জন্য। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১২৭) ভোলানাথ বোসদের দেখানো রাস্তায় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা হাঁটতে শুরু করেছিল।
কলেজ হাসপাতালের ব্যাপারে বলা হল – “it affords a first-rate school of Instruction to the students of all classes in the College … the study of theory and practice of their profession and by which they are enabled to complete successfully in Examination with Medical pupils educated at the best Schools in Europe.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১২৯)
এরপরে ছাত্রদের বিভিন্ন সাবজেক্টে কৃতিত্বের বর্ণনা রয়েছে। আমি আর বিস্তারে সে আলোচনায় যাচ্ছিনা। শুধু এটুকু উল্লেখ করি যে অকল্যান্ড যেমন মাইক্রোস্কোপ প্রাইজ হিসেবে দিয়েছিলেন ব্যক্তিগত শিক্ষার পরিধি বাড়ানোর জন্য এ বছরে অ্যানাটমি এবং ফিজিওলজি পরীক্ষায় প্রথম হবার জন্য গোপালচন্দ্র দত্তকে একটি মাইক্রোস্কোপ প্রাইজ হিসেবে এবং ফার্স্ট সার্টিফিকেট অফ অনার দেওয়া হয়েছিল। (পৃঃ ১৩০)
শিক্ষাবর্ষ ১৮৫৬-৫৭ (GRPI 1856-57)
GRPI 1856-57-র রিপোর্ট অনুযায়ী নতুন প্রিন্সিপাল হলেন টি ডব্ল্যু উইলসন। রিপোর্টে বলা হল বিগত বছরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা “connected with the history of the Medical College, the effect of which is yet to be developed, has been the establishment of the Calcutta University for the purpose of granting Honors and Degrees.” (GRPI 1856-57, পৃঃ ১৯৯) ২৪ জানুয়ারি, ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হল এবং মেডিক্যাল কলেজ এডুকেশন কাউন্সিল বা পরবর্তীতে কনসালটেটিভ কাউন্সিলের পরিবর্তে চলে এল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায়। এর দরুন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাক্রমে রদবদল ঘটাতে হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ২০০)
“Lectures on Zoology have been in consequence added to the Currriculum, and one course of twenty-eight has been given by Professor Walker.” (পৃঃ ২০০) অন্যান্য যেসব পরিবর্তনগুলো ঘটেছে সেগুলো আগামী শিক্ষাবর্ষের আগে বোঝা যাবেনা বলে মন্তব্য করা হয়। পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন হয়। মেডিক্যাল কলেজের থার্ড ইয়ারের ছাত্রদের জন্য যে “first Pss Diploma Examination” নেওয়া হত সেটা “taken up for the first Examination of the University second-year students.” (প্রাগুক্ত)
এরসঙ্গে অতিরিক্ত দুটি পরিবর্তন হয়। প্র্যাক্টিক্যাল কেমিস্ট্রির ওপরে নতুন ক্লাস নেবার প্রয়োজন পড়ে এবং ক্লিনিক্যাল লেকচারের সংখ্যা বাড়াতে হয়। (Centenary, পৃঃ ৩৯) এর আগে কেবল একটি ডিগ্রি দেওয়া হত – গ্র্যাজুয়েট অফ দ্য মেডিক্যাল কলেজ। এখন ইউনিভার্সিটি থেকে LMS (Licentiate in Medicine and Surgery) ডিগ্রি নেবার প্রয়োজন পড়ল। এছাড়াও ইউনিভার্সিটি “degrees of Bachelor and Doctor of Medicine” ডিগ্রি প্রদান করা শুরু করল। (প্রাগুক্ত)
GRPI 1856-57-তে ১৫ নভেম্বর, ১৮৫৬ সালে মধুসূদন গুপ্তের মৃত্যু নিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলা হল – “He was the pioneer who cleared a space in the jungle of prejudice, into which others have successfully pressed”। (পৃঃ ২০০) মধুসূদন গুপ্তের জায়গায় সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন তমিজ খান (“a Native of intelligence and promise”) স্থলাভিষিক্ত হলেন।
কেমিস্ট্রির অধ্যাপক ম্যাকনামারার রিপোর্ট উল্লেখ করার মতো। তিনি জানালেন – “About one-tenth of the Class have useful reliable works, the rest have works, which, however good in their way, are not now sufficiently up to the time to be in the hands of Students in Chemistry.” (পৃঃ ২০৩) অর্থাৎ ছাত্ররা কেমিস্ট্রির যে বইগুলো পড়ছে সেগুলো অধিকাংশই বর্তমানে পাঠের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, অনেক সেকেলে হয়ে গেছে।
“The systematic course of Lectures on Ophthalmic Surgery has been given as usual in the Theatre of the Medical College.” (পৃঃ ২০৪)
শিক্ষাবর্ষ ১৮৫৮-৫৯ (GRPI 1858-59)
GRPI 1858-59 থেকে জানা যাচ্ছে, এই শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল হলেন ডব্ল্যু সি বি ইটওয়েল। নীচে ১৮৫৮-৫৯ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন সাবজেক্ট এবং ছাত্রদের উপস্থিতির টেবিল দেওয়া হল। (GRPI 1858-59, Appendix A, পৃঃ ২০৩) এই টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে মোট ১১টি সাবজেক্ট পাঠ্যসূচিতে রয়েছে।
অক্টোবর, ১৮৫৮-তে ডঃ হ্যারিসন চলে যাবার পরে প্রায় সে মুহূর্তেই অধ্যাপক আর্চার “course of Lectures in Descriptive amd Surgical Anatomy”-র দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অ্যানাটমির অধ্যাপনার পদে ইংল্যান্ড থেকে এক অধ্যাপকের আসার কথা আছে বলে জানানো হয়েছিল। হাসপাতালের সার্জিকাল ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে ডঃ হ্যারিসন এবং হাউস সার্জন ডঃ প্লেফেয়ার কুশলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ২০৬)
রিচার্ড ও’শনেসি ২২ বছর সাফল্যের সঙ্গে কাজ করার পরে মার্চ, ১৮৫৯-এ ইংল্যান্ডে ফিরে যান অসুস্থতার কারণে। “Prinary Class”-এর ক্ষেত্রে সেশনের শুরুতে ১৩৯ জন ছাত্র ভর্তি হয়েছিল। এরপরে ২০ জন ফ্রি স্টুডেন্ট কলেজ ছেড়ে দেয়। এর কারণ হল আগের মতোই “either feeling themselves unequal to the ordeal to the Dissecting Room and Hospital, or to the long and laborious course of study demanded from them.” এই ২০ জন ছাড়াও ২ জন ফিফথ ইয়ার এবং ২ জন সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র সেশন চলাকালীন কলেজ ছেড়ে দেয়। ৩ জন ছাত্র মেডিক্যাল শিক্ষাগ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডে যাত্রা করে – সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করে “covenanted service”এর জন্য প্রতিযোগিতা করার লক্ষ্যে। (পৃঃ ২০৭)
সমস্ত বিভাগের অধ্যাপকেরা ছাত্রদের পড়াশুনোর ব্যাপারে সাধারণভাবে সন্তোষ জ্ঞাপন করেন। “The University have left the “First Examinations” for their Diploma in Medicine and Surgery in the hands of the College Professors”। (পৃঃ ২০৯) যেখানে ৫৭ জন ছাত্রের First Examinations-এ বসার কথা সেখানে ৩১ জন পরীক্ষায় বসেছিল। এদের মধ্যে ১২ জন পাস করে – ৬ জন প্রথম শ্রেণীতে। এরকম হবার কারণ দুটি – (১) ইংরেজিতে অসম্পূর্ণ জ্ঞান, এবং (২) মাত্র ২ বছর পড়ার পরে সেকেন্ড ইয়ারের শেষে এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল মেডিসিনের একেবারে গোড়ার বিষয়গুলোর ওপরে – অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, কেমিস্ট্রি এবং মেটেরিয়া মেডিকার।
এরপরে ইউনিভার্সিটিকে জানানো হয় – “It is the unanimous opinion of the Professors of the Medical College that the First Examination should take place at the end of the third instead of second year.” (পৃঃ ২১০)
পরবর্তীতে Supreme Government-এর অনুমোদনে “paying Clas of Pupils” বলে একটি আলাদা বর্গ করা হয়, যারা ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হচ্ছে তাদের জন্য। এসব ছাত্ররা ভর্তি হবার সময়ে ১৫ টাকা দিয়ে ভর্তি হবে এবং কলেজে যতদিন থাকবে ততদিন মাসে ৫ টাকা করে মাইনে দিতে হবে। “This experiment will test the willingness of educated Natives to pay for a professional education in Medicine.” (পৃঃ ২১২) এদের স্বাধীনতা থাকবে হয় ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি নেবে অথবা ইংল্যান্ডে গিয়ে কোন ব্রিটিশ কলেজ থেকে পাস করে আসবে।
তাহলে Prinary Class-এর ক্ষেত্রে ৩ ধরনের ছাত্রের বিভাজন হল – (১) যারা স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশুনো করছে, (২) ফ্রি স্টুডেন্টস, এবং (৩) পেয়িং স্টুডেন্টস। এখানে বলা প্রয়োজন যে সেসময়ে রেলওয়ে কোম্পানিরা ১৮০ টাকা মাসিক মাইনেতে সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনদের এবং ৫০ টাকা মাইনেতে নেটিভ ডাক্তারদের চাকরি দিচ্ছে। (পৃঃ ২১২-১৩)
ডিসেকশনের জন্য এই শিক্ষাবর্ষে ৯৮৯টি বা এর বেশি শবদেহ সংগৃহীত হয়েছে। (পৃঃ ২২০) মিউজিয়ামের ব্যাপারে বলা হয় যে বেশ কিছু “Native drugs”-এর স্পেসিমেন আছে, কিন্তু লেবেল করা নেই। ফলে “a large proportion of the Native Medicines were consequently not identifiable.” (পৃঃ ২২১) আরও বলা হয় “It constantly happens that the new Native Drugs of reputed value ate submitted for trial under the authority of the Head of the Medical Department, but the result of these trials are lost to the profession.” (পৃঃ ২২২)
মেডিক্যাল কলেজের মিউজিয়ামের ক্ষেত্রেই যখন এ ঘটনা ঘটছে তখন অর্ধশিক্ষিত আয়ুর্বেদচর্চাকারীদের ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা দুষ্কর। এভাবেই দেশীয় ওষুধ জ্ঞানের জগত থেকে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে সমাজ ও সামাজিক স্মৃতি থেকে। পরবর্তী সময়ে এর জায়গা নিয়েছে ইউরোপের ল্যাবরেটরিতে তৈরি এবং রাসায়নিক মেডিসিনের ক্রমবর্ধমান বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামা বিভিন্ন আয়ুর্বেদীয় কোম্পানি – ওষুধগুলোর উপাদানগত চরিত্র যাই হোক না কেন। (দ্রষ্টব্যঃ মধুলিকা ব্যানার্জি, Power, Knowledge, Medicine: Ayurvedic Pharmaceuticals at Home and in the World, 2009) আবার ১৮৪০-এর দশকের পর থেকে উপনিবেশিক সরকার ইংল্যান্ডের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত ওষুধের বাজার খুলে দেবার জন্য দেশীয় ওষুধকে সম্পূর্ণত উপেক্ষা ও অবহেলা করতে শুরু জরে। কিন্তু এই উপনিবেশিক সরকারই যখন ১৮৪০-এর দশকে ডিসপেনসারির প্রসার ঘটাচ্ছে সেসময়ে খরচ বাঁচানোর জন্য দেশীয় ওষুধের ব্যবহার শুরু করেছিল। পাটনা ডিসপেনসারির ১৮৪২ সালের একটি চিত্র। সদ্য পাস করা রাম ঈশ্বর অবস্থি এই ডিসপেনসারির দায়িত্বে ছিলেন।
শিক্ষাবর্ষ ১৮৫৯-৬০ (GRPI 1859-60)
GRPI 1859-60-এর উদ্বোধনী ভাষণ দেন Ophthalmic Medicine and Surgery-র অধ্যাপক চার্লস আর্চার। ডিরেক্টর জেনারেল অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশনস পরে একে An Introductory Lecture Addressed to the Students of the Calcutta Medical College শিরোনামে ছেপে পুস্তিকা হিসেবে প্রকাশ করেন (১৮৫৯)।
এই ভাষণে তিনি বলেন যে আর কোন পেশা নেই যা “extracts more mental labor than the one you have chosen.” (পৃঃ ২) একথা বোধহয় এখনও সমানভাবে সত্যি। এরপরে বেসিক সায়ান্সের অগ্রগতি কিভাবে মেডিসিনের বিকাশকে সাহায্য করে সে সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দেন – প্রথম, বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ অণুজীব কেমন করে দেহকে আক্রান্ত করে সেগুলো আমরা “natural history of plants and animals” থেকে জানতে পারি, (৩) ফিজিক্সের অগ্রগতি মেডিসিনকে “achromatic microscope” দিয়েছে, ফলে আগে যেখানে রেটিনাকে একস্তরীয় বলে আমরা জানতাম তা আসলে সাতটি স্তর বিশিষ্ট, এবং (৩) মাইক্রোস্কোপের ব্যবহারের ফলে দেহের অভ্যন্তরের কোশ ও টিস্যুকে আমরা আরও অনেক ভালোভাবে জানতে ও চিনতে পারছি। (পৃঃ ৫-৮) এজন্য তাঁর অভিমত অনুযায়ী ছাত্রদের “educated senses” তৈরি করতে হবে। (পৃঃ ১০) তিনি জোর দিয়েছিলেন – “We look with confidence to the rising and subtle intellects of the natives of India to eliminate from such untrodden fields of research, those philosophical deductions which benefit mankind, and raise the profession in the scale of human science.” (পৃঃ ১২) একটি পরম সত্য তিনি ছাত্রদের বলেছিলেন – “Death too which should never cease to be held in reverence”। (পৃঃ ২৫) অর্থাৎ মৃত্যুকেও শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। আমরা এখনও শিখেছি কি?
এ রিপোর্টে বলা হল – “The Examinations of the College have been replaced by those of the University, and the Diploma of the former by Licentiate’s Degree of the latter.” (পৃঃ GRPI 1859-60, Appendix A, পৃঃ ১৩২) ছাত্রদের “First Examinations”-এর খারাপ ফলাফলের ব্যাপারে যথেষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। (পৃঃ ১৩২-১৩৪)
Paying Class-এর ব্যাপারে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয় – “purely eleemosynary (দাতব্য) character of education at the Medical College deterred many persons of respectability from entering the institution.”
হাসপাতালের ব্যাপারে জানানো হয়েছিল – ১৮৫৯ সালে নেটিভ ওয়ার্ডে ২,২২৮ জন এবং ইউরোপীয় ওয়ার্ডে ২,২২৮ জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছিল। ডঃ আর্চারের তত্ত্বাবধানে চোখের হাসপাতালে ২,৪২৬ জন আউটডোর এবং ৫২২ ইন-ডোর রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। একবছরে ২৪,০০০ রোগী চিকিৎসা পেয়েছে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৪৯)
শিক্ষাবর্ষ ১৮৬০-৬১ (GRPI 1860-61)
GRPI 1860-61-তে মেডিক্যাল কলেজের রিপোর্ট পেশ করেন তৎকালীন প্রিন্সিপাল এস বি পার্ট্রিজ (S. B. Partridge)। তাঁর রিপোর্টের শুরুতেই জানাচ্ছেন মেটেরিয়া মেডিকা এবং ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ডঃ ইটওয়েল ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ড চলে যাবার পরে সে দায়িত্ব অর্পিত হয় ডঃ গুডিভ চক্রবর্তীর ওপরে। ডঃ গুডিভ চক্রবর্তীর কাজের ব্যাপারে এস বি পার্ট্রিজ বলেন – “most ably performed by a former student of this Coolege, Dr. Goodeve Chuckerbutty”। (GRPI 1860-61, Appendix A, পৃঃ ১৭১)
প্রাইনারি তথা ইংলিশ ক্লাসের বিষয়ে জানান – সেশনের শুরুতে বিগত বছরের ১০৩ জন ছাত্র ছিল, ৫৭ জন নতুন ছাত্র ভর্তি হয়। মোট ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৬০। কিন্তু যখন রিপোর্ট পেশ করছেন তখন ছাত্রসংখ্যা ১৪৬ জন। এই ১৪ জনের মধ্যে ১ জন মারা গেছে, ৫ জন ইংল্যান্ডে গেছে উন্নততর শিক্ষার জন্য, ৮ জন ছাত্র হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। যে ৫ জন ছাত্র ইংল্যান্ডে গিয়েছে তাদের মধ্যে ৪ জন সিনিয়র স্টুডেন্ট। এদের মধ্যে ৩ জন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের First Examination পাস করেছিল, অর্থাৎ LMS (Licentiate in Medicine and Surgery) ডিগ্রি অর্জন করেছিল। এবং ১ জন Paying Class-এর ছাত্র ছিল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৭২)
পার্ট্রিজ তাঁর রিপোর্টে মন্তব্য করেন – “The experience of the past year, I think, is such as to justify us in looking forward hopefully to the establishment of the paying system as a general rule in the College at no very distant period … Free Presentation should be done away with, and even Scholarship-holders expected to pay the usual College fee”। (পৃঃ ১৭৩) তিনি একথাও বলেন যে সাধারণ শিক্ষার মানে এবং বিশেষত অ্যানাটমি শিক্ষায়, তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারেন, মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা বিশ্বমানের শিক্ষার সাথে তুলনীয়।
১৮৬০ সালের Second Examination for the University-তে (এই পরীক্ষা এ বছরেই প্রথম নেওয়া হয়েছিল) ২০ জন পরিক্ষার্থী ছিল। ১৪ জন পাস করেন। ৩ জন প্রথম বিভাগে এবং ১১ জন দ্বিতীয় বিভাগে। ২ জন ছাত্র ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। এরমধ্যে একজন ছিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার (মেডিসিনে) যিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়ান্স-এর প্রতিষ্ঠাতা। সার্জারিতে স্কলারশিপ পেয়েছিলেন রাজকৃষ্ণ ব্যানার্জি। (পৃঃ ১৭৫)
মোট ১০টি সাবজেক্টের প্রশ্নপত্র রিপোর্টের শেষে দেওয়া হয়। সেগুলো ছিল – (১) মেডিসিন, (২) সার্জারি, (৩) মিডওয়াইফারি, (৪) কেমিস্ট্রি, (৫) অপথ্যালমিক সার্জারি, (৬) মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্স, (৭) বোটানি, (৮) মেটেরিয়া মেডিকা, (৯) General Anatomy and Physiology, এবং (১০) Comparative Anatomy and Zoology। (GRPI 1860-61, Appendix C, পৃঃ ৬৩-৬৮)
১৮৬০ সালেই বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল কলেজের জন্য Code of Rules তৈরি করে। এর মধ্যে ফার্স্ট LMS পরীক্ষার জন্য আবশ্যিক হিসেবে মেডিসিনের ৩টি সেশন সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে হবে, অ্যানাটমি কেমিস্ট্রি মেটেরিয়া মেডিকা এবং ফিজিওলজিতে ৭০টি লেকচারের দুটি কোর্স শেষ করতে হবে, শেষ করতে হবে ১টি করে প্র্যাক্টিক্যাল কেমিস্ট্রি এবং প্র্যাক্টিক্যাল ফার্মেসির কোর্স এবং প্রতিটি টার্মে ১২টি করে ডিসেকশন করতে হবে। (Centenary, পৃঃ ৪১)
সেকেন্ড LMS পরীক্ষার নিয়ম আরও কঠোর ছিল – “having conducted six labours, possession of a certificate of three months’ attendance at an out-door dispensary, fifteen months’ attendance on the surgical and fifteen months’ medical practice of a hospital with clinical lectures; three months’ attendance on the practice of a hospital with eye infirmary; and, as clinical clerk and dresser, with the writing up of six medical and six surgical cases, and a certificate of general character and conduct from the Principal.”। (Centenary, পৃঃ ৪২) কলেজে এর আগে যেরকমভাবে পরীক্ষা নেওয়া হত সেভাবেই লিখিত, প্র্যাক্টিক্যাল এবং মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল “practical Microscopy, Post Mortem examination and application of surgical apparatus”।
১৮৬০ সালেই M.B. ডিগ্রি প্রদান করা শুরু হয়। এতে ল্যাটিনের পরীক্ষা নেবারও ঊল্লেখ ছিল, যদিও কার্যত তা কখনো হয়ে ওঠেনি – “The M.B. examination was regarded more or less as an Honors degree until the year 1888, when the system of separate examination was introduced.” (Centenary, পৃঃ ৪২)
M.D. পরীক্ষার পূর্বশর্ত ছিল “that the candidate must have obtained the degree of Bachelor of Arts, and practised five years, or spent two years in hospital and two in private practice or only two years’ hospital or private practice if the candidate had taken his degree with Honours … The examination was written, oral and practical on Medicine, Surgery, Midwifery, Hygiene and Pathology. The late Dr. Chunder Coomar Dey (b. 1830, d. 1886) was the first M.D. of the Calcutta University.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪২-৪৩)
উপনিবেশিক ভারতে আধুনিক মেডিক্যাল শিক্ষার দ্বারোদঘাটন থেকে শুরু করে মেডিসিনের তৎকলীন সর্বোচ্চ ডিগ্রি এমডি অব্দি একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল, তখনও মেডিসিনে সুপারস্পেশালিটির ধারণা আসেনি, বাস্তব ক্ষেত্রও তৈরি হয়নি।
১৮৫৯-এ মেডিক্যাল কলেজের সার্জারির অধ্যাপক হন জোসেফ ফেইরার (Fayrer)। তাঁর বিষাক্ত সাপের ওপরে প্রামাণ্য গ্রন্থ আছে। ১৮৬৩ সালের ১৫ জুন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের সামনে নতুন শিক্ষাবর্ষের “Introductory Address”-এ বললেন – “you are at a disadvantage as compared with students in European Colleges, your previous mode of life, the society in which, as boys, you have mingled, the tone of thought, the example of all about you, have most probably been unfavorable to study, or to the application of your intellectual powers to the subjects of the character now to be brought before you.” (Joseph Fayrer, An Introductory Address to the Students of the Calcutta Medical College, 1863, পৃঃ ৬) অস্যার্থ, ইউরোপীয় ছাত্রদের তুলনায় ভারতীয় ছাত্ররা সবসময়েই পিছিয়ে আছে চিন্তার ধরনে, জীবনযাত্রার মাপকাঠিতে এবং যেভাবে বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে সেসব ক্ষেত্রে।
সভ্যতার একটি সিঁড়ি তৈরি হয়েছিল। নীচের ধাপে ভারত, একেবারে সর্বোচ্চ ধাপে রয়েছে ইউরোপ তথা ইংল্যান্ড। এ ধরনের জাতিগত বৈষম্যের প্রচ্ছন্ন সুর রয়ে গেল ১৮৬৩ সালে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির ২৮ বছর পরেও মেডিক্যাল শিক্ষাক্রমের এবং মেডিক্যাল কলেজের নির্দিষ্ট পরিবেশে যাপিত জীবনের মধ্যে।
আবার ভিন্ন কথাও শোনা গিয়েছিল ভারতের চিকিৎসকদের গবেষণাকর্ম এবং সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে চিকিৎসাসংক্তান্ত খবরাখবরের জন্য প্রতিষ্ঠিত জার্নাল Indian Medical Gazette-এ (১৮৬৬-র এপ্রিল মাস থেকে ১৯৫৫-র জুন মাস পর্যন্ত নিয়মিত প্রতিমাসে প্রকাশিত হয়েছিল) ১ এপ্রিল, ১৮৬৮-তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে। সেখানে বলা হয়েছিল যদিও “Under British rule, however, they (হাকিম এবং বৈদয) have disappeared altogether from political life, and socially have little or no standing in European society, where they are virtually ignored.”, কিন্তু “In native society, all over the country, these men still hold their own, and are greatly respected, ministering as they do to the troubles of both body and mind of the people, and generally possessed of a superior education.” (“A Plea for Hakeems”, পৃঃ ৮৭-৮৯)
এই সংকট সবসময়েই বহন করতে হয়েছে মেডিক্যাল কলেজে জন্ম নেওয়া এবং সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়া পাশ্চাত্য চিকিৎসাব্যবস্থাকে। এই সংকট প্রকৃতপক্ষে ইউরোপীয় জ্ঞানতত্ত্বের সাথে ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্বের (তার ধরন যতই এম্পিরিকাল হোক না কেন) জ্ঞানতাত্ত্বিক সংঘাত। ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্ব ঐতিহাসিকভাবে সঙ্গত কারণে পরাজিত হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজের গর্ভাবস্থা, বৃদ্ধি ও বিকাশ থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরি এবং মেডিক্যাল শিক্ষাক্রম ও পরীক্ষাপদ্ধতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে আসা অব্দি মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরের ও পারিপার্শ্বিক সমাজের ইতিহাসের মধ্যেকার ইতিহাস পরিক্রমা এখানেই শেষ হল।
অপূর্ণতা
কিন্তু অপূর্ণতা রয়ে গেল অনেকগুলো ক্ষেত্রে – (১) ১৮৬৪-৬৫ সাল থেকে শিক্ষাক্রমের মধ্যে হাইজিন, ডেন্টিস্ট্রি, এবং প্যাথলজির আলাদা সাবজেক্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা হলনা, (২) ১৮৭৩ সালে বাংলা বিভাগের ছাত্র সংখ্যা এত বেশি হয়েছিল (৮৭৩ জন) যে এই বিভাগকে শিয়ালদায় ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে (যা আজকের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ) সরিয়ে নেবার আলোচনা অনুপস্থিত থাকল, (৩) ১৮৭৬ থেকে মেডিক্যাল কলেজে নারীদের ছাত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্তির কথা কাগজেকলমে স্বীকৃত হবার খবর (কাদম্বিনী গাঙ্গুলি যার ফসল) অনালোচিত রইল, এবং (৪) সর্বোপরি, আগে আমার আলোচনায় যেমন সংক্ষেপে বলেছি, “হসপিটাল মেডিসিন”-এর ভরকেন্দ্র যখন ঐতিহাসিকভাবে “ল্যাবরেটরি মেডিসিন”-এ সরে গিয়েছে সেসময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান তথা আবিষ্কারকদের কথা আলোচনা করিনি। এগুলো পরে কোন সময়ে করব। উল্লেখ করা হলনা সূর্য গুডিভ চক্রবর্তী, কানাইলাল দে কিংবা মহেন্দ্রলাল সরকারের গবেষণাপত্রের কথা যেগুলো বিভিন্ন সময়ে ল্যান্সেট বা ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছে।
খোদ রবার্ট কখ তাঁর কলেরার জীবাণু আবিষ্কারের সময়ে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবরেটরিতে কাজ করেছেন ১৮৮৩-৮৪) – “Koch got the right to work in the well-eqipped laboratory provided him at the Medical College Hospital in Calcutta” (David C Knight, Robert Koch: Father of Bacteriology, 2019) । কালাজ্বরের ওষুধের আবিষ্কারক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী আরেক উজ্জ্বল সন্তান, যদিও নোবেল প্রাইজ থেকে বঞ্চিত। স্যার কেদারনাথ দাসের অবস্টেট্রিক ফরসেপস আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে। এরকম বহুসংখ্যক নাম উল্লেখ করা যায়।
কিন্তু আলাদা করে যাঁর কথা বলতে হবে তিনি হলেন শম্ভুনাথ দে। কখ যেখানে থেমেছিলেন (কলেরার জীবাণুর আবিষ্কার) তার পরবর্তী ধাপে এগিয়েছেন শম্ভুনাথ দে। ১৯৫৩ সালের অক্টোবর সংখ্যায় Journal of Pathology and Bacteriology-তে প্রকাশিত তাঁর পেপার “An experimental study of the mechanism of action of V. cholerae on the intestinal mucous membrane”-এ দেখালেন যে জীবাণুর শরীর থেকে নিঃসৃত এক্সোটক্সিন কলেরা রোগীর ডায়ারিয়ার কারণ। পরবর্তীতে ৩০ মে, ১৯৫৯-এ নেচার-এর মতো জার্নালে তাঁর “Enterotoxicity of Bacteria-free Culture-filtrate of Vibrio cholera” প্রকাশিত হয়। WHO-র বুলেটিনে (২০১০) ক্ল্যাসিক পেপার হিসেবে তাঁর কাজ গৃহীত হয়। তাঁর এই কালজয়ী কাজগুলো হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবরেটরিতে। যদিও তিনিও নোবেল প্রাইজ থেকে বঞ্চিত হন।
অসাধারন – অনেক কিছু জানা গেল –
Dear Jayanta I believe with this present write up — your Historical Magnum Opus on arrival of Western Medical Science and education in South Asia — ends here with a plethora of statistical and comparative charts of CMCH’s excellence vis -a-vis its sister institutions performance in London of that age . It is a brilliant -” Curtain call “. You rightly sensed in all these apparent magnanimity of our past colonial master — there was a distinct hint of — ” Orientalism”(Edward Said ) — either to show the Governed Indians — the image of a benevolent power — or to make the foothold stronger to spring out for neighbouring annexation. Cannot complain much — that was the “Ball Game of Colonial Power”. — n.da
Apropos my earlier comments I like to make some more here.Why only blame –Nobel Committee? Their bias against south Asians are well known.At least some western Nobel Laureates e.g.Prof. Joshua Lederberg had nominated De for the Nobel Prize more than once. De was never elected a fellow of any Indian academy and never received any major award. Indeed as Professor Padmanabhan pointed out in an editorial in Current Science, “De died in 1985 unhonoured and unsung in India’s scientific circles. That De received no major award in India during his lifetime and our Academies did not see it fit to elect him to their Fellowships must rank as one of the most glaring omissions of our time.Not even “Padma Sri???!!!”
2.Jayanta — You mentioned about a) Dr. Kanailal Dey & b) Dr. Tamizh Khan in relation to shifting of Vernacular section of Licenciate Medical Sub -Assistant training centre to Sealdah area — originally named Sealdha Medical School — renamed to Cambell Medical ( b.1824 – d.1894) and Lt.Governor of Bengal Presidency –(1871 – 1874) — morphed to Nilratan Sarkar Medical College in 1948 ( Sir Nilratan Sarkar– was an exceptionally brilliant student of this Bengali Medium Medical School – sustained his study in utter poverty and then moved to CMCH – on Principal Tamizh Khan’s strong recommendation and persuation with an educational government scholarship — to complete MB and later MD of Calcutta University. He never went to England to pursue higher medicinal training. He was a mentor short of personality to Dr B.C.Roy professionally and in their personal life – mixed up with a bit of salacious lores).
3, It is wrongly circulated these days that Dr.Radha Gobindo Kar — was a brilliant student
of CMCH– which he never was;but his putative father Dr.Durgadash Kar was,– having passed out from — Vernacular section of CMCH — with a licentiate certificate to practice western medical science. He s credited with — publishing a meteria medicine book ,in Bengali language containing Prof.W.B,O’Shaugnassey’s prescriptions .He made name at Sreerampore. Dr. R.G.Kar joined Sealdha Vernacular Medical School but could not complete his 3yrs. course in 5 yrs and on suggestion of both Dr.Tamizh Khan and Dr. K.L.Dey moved to Edinburgh to join Extra Mural Licentiate Medical Course and received his L.R.C.P. He returned back and can be profusely credited for ushering in Edinburgh experience to a practical shape in Calcutta for dissipating Western Medicine to Indians.
4.Dr.Kedar Das– passed his MD (in Obs/Gynaec) from Madras Medical College… and General Hospital with Hons.& Gold Medal…. etc..etc… — nirmalya da.
এক ঐতিহাসিক দলিল সম্পূর্ণ হল। মেডিকাল কলেজের গর্ভাবস্থা থেকে তারুণ্য পর্য্যন্ত বহু মূল্যবান তথ্য আপনি সন্নিবেশিত করেছেন এই দলিল।
আশা করি মেডিকাল কলেজের প্রাক্তন, বর্তমান ও আগামী দিনের ছাত্ররা উদ্বুদ্ধ হবে এই সোনালী ইতিহাস পড়ে।
একটি বিশাল কাজ করেছেন আপনি ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
আন্তরিক ধন্যবাদ!
সামগ্রিক ইতিহাসের ধারনা পেলাম।