ষষ্ঠ অধ্যায় – মেডিক্যাল শিক্ষার অন্দরমহলে নারীর প্রবেশ
প্রিন্সিপাল ডি. বি. স্মিথের পেশ করা ১৮৭২-৭৩ শিক্ষাবর্ষের রিপোর্টের শুরুতে খবর দেওয়া হল – কেমিস্ট্রি ও মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্সের অধ্যাপক কানাইলাল দে সরকারের তরফে “রায় বাহাদুর” (“the title of Rai Bahadur”) খেতাব পেয়েছেন। কানাইলাল সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছিল “a most intelligent and unassuming gentleman of great scientific merit.” (GRPI 1872-73, Appendix A, পৃঃ ৭০০) আমরা কানাইলাল দের নাম এর আগে জেনেছি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল (১০ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৪)-এ প্রকাশিত সূর্য গুডিভ চক্রবর্তীর গবেষণাপত্রের সুবাদে (“A Case of Amyloid degeneration”)। চক্রবর্তী তাঁর গবেষণাপত্রে বলেন – “On further examination, the bodies under the miicroscope in the cheim1ical laboratory, Kanny Loll Dey found objects which closely resembled the arrow-root starch-corpuscles”। কানাইলাল দে নিজেও একজন স্বাধীন গবেষক ছিলেন। তাঁকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে আমরা আবার এ রিপোর্টে ফিরে আসব।
কানাইলাল দে (২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৩১ – ১৬ আগস্ট, ১৮৯৯)
ইংরেজিতে তাঁর নাম লেখা হয়েছে একাধিক বানানে – Kanny Lall Dey, Kanny Loll Dey। কিন্তু কানাইলাল দে নামটি ইংরেজি বানানে বা উচ্চারণে কখনও আসেনি।
কানাইলাল ১৮৫৩ সালে মেডিক্যাল থেকে পাস করে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন হিসেবে কলেজেই শিক্ষতায় যোগদান করেন। কেমিস্ট্রিতে তাঁর অন্তর্নিহিত অস্বাভাবিক ব্যুৎপত্তি এবং আগ্রহ ছিল। তিনি কেমস্ট্রির প্রফেসরের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮৬২ সালে তাঁকে প্রেসিডেন্সি কলেজের কেমিস্ট্রির অধ্যাপক পদ দেওয়া হয়। ১৮৬৯ সালে মেডিক্যাল কলেজের “ভার্নাকুলার ক্লাস”-এর কেমিস্ট্রির এবং মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্সের (এখন যাকে ফরেনসিক মেডিসিন বলা হয়) শিক্ষক নিযুক্ত হন। লন্ডন, প্যারিস, আমেরিকা, আমস্টারডাম, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে ১৮৫৮ থেকে ১৮৮৩ সালের মধ্যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এগজিবিশনে ভারতীয় “মেডিসিনাল প্ল্যান্ট” এবং “ইনডিজেনাস ড্রাগস” সম্পর্কে পেপার পড়ে বা সশরীরে ডেমনস্ট্রেশন দিয়ে স্বর্ণপদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের পুরষ্কার, অকুণ্ঠ প্রশংসা এবং আন্তর্জাতিক স্তরের সোসাইটিগুলোর সাম্মানিক সদস্যপদ পেয়েছেন।
সেসময়ের লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী Chemist and Drugist পত্রিকায় ২৭ জানুয়ারি, ১৮৯৪-এ “world’s fifty most eminent men of science related to pharmacy” প্রকাশিত হয়। এতে তিনি স্থান পান। উপনিবেশিক সরকারের কেমিস্ট এবং কেমিক্যাল এগজামিনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও তিনি উপযুক্ত যোগ্যতাসহ সামলেছেন। মহেন্দ্রলাল সরকারও উদাহরণস্থানীয় কেমিস্ট হিসেবে তাঁকে গণ্য করতেন। তাঁর লেখা দীর্ঘ প্রবন্ধ “Modified land scurvy with pingaemia” প্রকাশিত হয়েছিল Indian Annals of Medical Science-এ ১৮৬৮ সালে (No. XXIV)। পরে একই বছরে পেপারটি পুস্তককারে প্রকাশিত হয়। এই পেপারে রোগের বর্ণনা দিয়ে তিনি জানাচ্ছেন – “The epidemic spread from this spot all round and visited almost every one of the sixteen huts already described. It spared neither age nor sex; men, women, and children alike suffered from its effects.”
কানাইলাল দে সম্পর্কে অল্পকথায় ডেভিড আর্নল্ড প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলেছেন – “(ব্রিটিশের জ্ঞান জগতের সাথে) একটি সংলাপ রক্ষিত হচ্ছিল, এবং যেসব ভারতীয়রা পশ্চিমী মেডিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিল তারা এ জ্ঞানের বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এমনকি সবচেয়ে ত্রুটিসন্ধানী নর্ম্যান চেভার্সের মতো ব্রিটিশ চিকিৎসকও (Norman Chevers) তাঁদের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহে ভারতীয়দের কাজকর্মের, যারা তাঁদেরকে ভারতীয় ওষুধ এবং ভারতীয়দের বিষের ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছেন, প্রশংসাসূচকভাবে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে, কানাইলাল দে এবং উদয়চাঁদ দত্ত – যথাক্রমে ১৮৬০ ও ১৮৭০-এর দশকে – এবং ১৮৯০ ও ১৯০০-এর দশকে চুণীলাল বোস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন পাশ্চাত্যের মনোযোগের ক্ষেত্রে ভারতের বিষ-সংক্রান্ত ওষুধ এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে। এই জ্ঞান ভারতীয় বিষ এবং ওষুধের চরিত্র ও প্রয়োগ বোঝার ক্ষেত্রে পশ্চিমী জ্ঞানজগতকে বিশেষ সাহায্য করেছে। এর মাঝে কৈফিয়তমূলক কিছু ছিলনা। ১৮৬২ সালে কানাইলাল দে ভারতীয় ওষুধের ব্যাপারে লন্ডনে এক একজিবিশনের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করেন – এর মাঝে ছিল বিষ এবং গর্ভপাতকারী ওষুধের নাম। ১৮৬৭ সালে তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থThe Indigenous Drugs of India প্রকাশ করেন (এর সম্পূর্ণ সংশোধিত, নতুন করে লেখা এবং অনেক বৃহদাকার ২য় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৯৬ সালে)। এ গ্রন্থে তিনি বাজারে যেসব ওষুধ এবং বিষ পাওয়া যায় অথবা যেগুলো বাঙ্গালি বৈদ্য এবং হাকিমেরা ব্যবহার করে তার তালিকা অন্তর্ভুক্ত করেন। নিজের গবেষণার ক্ষেত্রে ফরেন্সিক নমুনায় আফিম আবিষ্কার করা করার নিজস্ব পদ্ধতিকে ব্যবহার করেছিলেন।” (আর্নল্ড, Toxic Histories: Poison and Pollution in Modern India, 2016, পৃঃ ৭৪) আর্নল্ড আরও বলেন – “All three – Dey, Dutt and Bose – acted as more than just willing intermediaries between two very different knowledge systems. They were also advocates and educators, seeking to inform British practitioners of Western medicine and pharmacology about the nature and potentialities of Indian medicines and poisons while seeking, too, to educate their own class and country about India’s rich medical and toxicological inheritance. And it was not only these three, pre-eminent though their contribution was.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৫)
কেমস্ট্রির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক তথা গবেষক চুনীলাল বসু – বঙ্গ প্রদেশের কেমিক্যাল এগজামিনারও ছিলেন – তাঁর বিভিন্ন লেখায় এবং অভিভাষণে তিনি ১৮৬০ পরবর্তী সময়ে কানাইলাল দের মূল্যবান অবদানের কথা বারংবার উল্লেখ করেছেন।
যাহোক, আমরা ১৮৭২-৭৩ শিক্ষাবর্ষের রিপোর্টে ফিরে আসি। এতটা পথ হেঁটে এসে, মেডিক্যাল কলেজের এত সংখ্যক বার্ষিক রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার পরে প্রতিটি রিপোর্টের খুঁটিনাটি আলোচনার কোন অর্থ হয়না। আমি কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে আলোচনায় আনব, নজর দেব।
রিপোর্টে বলা হল – “rapidly increasing influx of students, especially in the Bengali Department, has now made fresh arrangements necessary.” ক্লাসরুমগুলোতে ছাত্র সংখ্যা অসহনীয়রকমের বেশি হয়েছে, এতটাই যে বহু ছাত্র না পারে লেকচার শুনতে, না পারে লেকচারারকে দেখতে। এরকম করে যথেষ্ট ক্লিনিকাল শিক্ষা দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। (GRPI 1872-73, পৃঃ ১৭) এজন্য বেঙ্গলি ক্লাসকে শিয়ালদহের নতুন তৈরি মেডিক্যাল স্কুলে (আজকের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ) স্থানান্তরিত করা হবে। দায়িত্বে থাকবেন মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্সের অধ্যাপক Dr. Woods। (পৃঃ ১৮)
“হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিস ক্লাস” নিয়ে বলা হল – ১ জন ছাত্রকে উদ্ধত আচরণের জন্য কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। “পেয়িং ক্লাস”-এ ছাত্রসংখ্যা বেড়ে ২১০ হয়েছে। আগের ৯ বছরের হিসেব ছিল যথাক্রমে ১৮৩, ১৫৩, ১২৫, ৮৬, ৮৬, ৬৫, ৫৪, ৩৪ এবং ৩১। (GRPI 1872-73, Appendix A, পৃঃ ৭০১)
বিভিন্ন ক্লাস মিলিয়ে কলেজের ছাত্রসংখ্যা ছিল ১,২২৬ – ইংলিশ ক্লাসে ৪০৫, হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিস ৪০, “নেটিভ মেডিল্যাল পিউপিলস” ১৪৬, “ভার্নাকুলার লাইসেনশিয়েট ক্লাস” ৩৭৯, এবং “নেটিভ অ্যাপোথেকারি ক্লাস” ২৫৬। ১৮৬০ সালে প্রাইমারি তথা ইংলিশ ক্লাসের ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৬০, ১৮৭২-এ ৪৪৫। একই সময়ে বেঙ্গলি ক্লাসের ছাত্রসংখ্যা ১৪৪ থেকে বেড়ে ৬৩৫ হয়েছে। (প্রাগুক্ত, পৃ; ৭০২)
১৮৬০-৬১ সালে ছাত্রদের কাছ থেকে প্রাপ্ত “ফি” ছিল ১,৪১০ টাকা। ১৮৭২-৭৩-এ সেটা বেড়ে হয়েছে ৩০,৫৬৮ টাকা। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭০৩) রিপোর্ট থেকে জানতে পারছি, এক বিশাল সংখ্যক ছাত্র শুধু বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেনা, আসে নর্থ-ওয়েস্টার্ন প্রসেশগুলো, আসাম এবং সিংহল থেকে। ৩টি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে – ইংরেজি, উর্দু এবং বাংলা। (পৃঃ ৭০৪)
১৮৭৩-৭৪ সালের রিপোর্টে জানানো হল, মিলিটারি ক্লাসকে পাটনায় নতুন করে খোলা স্কুলে (টেম্পল মেডিক্যাল স্কুল) স্থানান্তরিত করা হবে। (GRPI 1873-74, পৃঃ ৫৮)
১৮৭৪-৭৫ সালের রিপোর্টে শিক্ষাক্রমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা বলা হল। ৩ বছর পড়ার পরে যে ফার্স্ট এমবি পরীক্ষার নেওয়া হত সে পরীক্ষায় ছাত্রদেরকে এখন থেকে কম্প্যারেটিভ অ্যানাটমি এবং জুলজিতেও পরীক্ষা দিতে হবে। এর দুবছর পরে যে সেকেন্ড এমবি পরীক্ষা নেওয়া হত সে পরীক্ষায় পূর্ব-নির্ধারিত পাঠ্যক্রম ছাড়াও general and comparative physiology-তে পরীক্ষা দিতে হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইজিন এবং প্যাথলজি-তে পৃথকভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতদিন এগুলো মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হিসেবে ছিল। (GRPI 1874-75, পৃঃ ৮৭)
ইংলিশ ক্লাসের ক্ষেত্রে জানানো হল – সার্জেন-মেজর সূর্য গুডিভ চক্রবর্তী প্রয়াত হয়েছেন। তিনি ২১ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। “The Council unanimously decided that the college should be closed on one of his lecture days as public expression of sorrow and esteem of his memory.” (GRPI 1874-75, পৃঃ ৮৭) একজন ভারতীয় শিক্ষকের সম্মানে কলেজ বন্ধ রাখা – এ ঘটনা উপনিবেশিক ভারতে খুব সহজলভ্য নয়।
“পেয়িং ক্লাস”-এ ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৩৩ হয়েছে। আগের শিক্ষাবর্ষে যেখানে ছাত্রপিছু খরচ ছিল ৩২৬ টাকা ৮ আনা, এ বছরে তার পরিমাণ ৩৩০ টাকা ১০ আনা। হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিস-এর সংখ্যা হয়েছে মোট ৪৬ জন। (পৃঃ ৮৭) প্রিন্সিপাল হিসেবে নর্ম্যান চেভার্স ১৫ বছর অতিবাহিত করার পরে শেষ ভাষণে বলেন – “When the Bengali (class) was removed in November 1873, it had augmented to 1,441. Last session the strength of the English class alone was 504.” (পৃঃ ৮৮)
এখানে উল্লেখ করা দরকার GRPI-তে, বিশেষ করে ১৮৭০-৭১ সাল থেকে, “ফিমেল এডুকেশন” নিয়ে রিপোর্টে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রধানত তিনটি স্তরে নারী শিক্ষার কথা বলা হচ্ছিল – প্রথম, পাঠশালা শিক্ষা; দ্বিতীয়, স্কুল শিক্ষা – নর্ম্যাল স্কুলে, জাতীয়তাবাদী স্কুলে বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি স্কুলে; তৃতীয়, কলেজে শিক্ষা। পরবর্তী ধাপে বিশবিদ্যালয় শিক্ষাও যুক্ত হয়। নারীদের মেডিক্যাল শিক্ষা আরও পরে শিক্ষাকাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ বিষয়ে আমি পরে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১৮৭৫-৭৬ সালের রিপোর্টে বলা হয়, বাংলায় ৫টি মেডিক্যাল স্কুল আছে – ইংলিশ এবং অ্যাপ্রেন্টিস ক্লাসের জন্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ, বেঙ্গলি ক্লাসের জন্য ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুল, মিলিটারি ক্লাসের জন্য টেম্পল মেডিক্যাল স্কুল (বাঁকিপুর,পাটনা), ঢাকা মেডিক্যাল স্কুল এবং কটক মেডিক্যাল স্কুল। সম্ভবত ১৮৭৫-৭৬ সালে বিহার এবং উড়িষ্যা প্রশাসনিকভাবে বাংলার অন্তর্গত ছিল। এজন্য ওখানকার মেডিক্যাল স্কুলগুলোকেও বাংলার বলা হয়েছে।
১৮৭৬-৭৭ শিক্ষাবর্ষের রিপোর্টে বলা হয় যে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রসংখ্যা কমে যাবার প্রধান কারণ হচ্ছে – “the regulation of the University which substituted the F.A. for the Entrance examination as a qualification for admission to the Licentiate class, and in a secondary degree to several minor causes.” (GRPI 1876-77, পৃঃ ৬৭) অর্থাৎ, পূর্বতন ফার্স্ট আর্টস (F.A) পরীক্ষার পরিবর্তে তুলনায় অনেক শক্ত ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স পরীক্ষা চালু হবার ফলে – যে পরীক্ষা আগের পরীক্ষার চেয়ে অনেকটাই শক্ত ছিল – অনেক ছাত্র পরীক্ষায় অকৃতকার্য হচ্ছিল।
১৮৭৭-৭৮ সালের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে – “The session of the college extends from the middle of June to the following March. In June 1877 the college opened with 176 students, against 225 and 330 of 1876 and 1875 respectively. At the end of the session in March 1878 the number of students had fallen still further to 145. The students are divided into (1) scholars and free-students, (2) paying students, and (3) hospital apprentices. Students of the two former classes, who must have passed the First examination in Arts, are prepared by a five years’ course of study for the University examinations in medicine. The hospital apprentices enter the college after having spent two years with a regiment; these students read for three years, and their final examination is held by the college authorities.” (GRPI 1877-78, পৃঃ ৬৬) অর্থাৎ, ১৮৭৭-৭৮ শিক্ষাবর্ষে বিগত শিক্ষাবর্ষের চেয়ে ১৪৫ জন ছাত্র কমে গেছে। রিপোর্টে নির্দিষ্টভাবে এর কোন কারণ উল্লেখ করা নেই।
পরে বলা হয়েছে, সবচেয়ে উৎসাহব্যঞ্জক খবর হচ্ছে – “the admission of 35 new students (including 11 casual students) to the paying class, against the single admission of the preceding year.” (পৃঃ ৬৬) উল্লেখ করা হয়, কলেজ প্রতিষ্ঠা হবার পরে ৪৩ বছরে ৫৭৫ জন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়েছে। (পৃঃ ৬৭)
১৮৭৮-৭৯ সালের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, মেডিক্যাল কলেজে ৩ ধরণের ক্লাস হচ্ছে – (১) স্কলারস এবং ফ্রি স্টুডেন্টস, (২) পেয়িং স্টুডেন্টস, এবং (৩) হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিসেস। (GRPI 1878-79, পৃঃ ৮৭) এ বছরেই সরকারের তরফে নতুন নিয়ম চালু করা হয় – এতদিন পর্যন্ত যে নিয়ম ছিল যে পাস করে বেরোলেই চাকরি নিশ্চিত থাকবে এখন থেকে আর সেরকমটা হবেনা – “appointments of Assistant Surgeons will be regulated by requirements of the Medical Department” এবং “as a matter of right” হিসেবে আর চাকরি হবেনা। এর থেকে অনুমান করা যায় আধুনিক মেডিসিনের যে বাজার ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল সে বাজার এখন সেসময় থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে চাহিদা-জোগান সম্পর্কের ওপরে ভিত্তি করে। চাকরি আর অধিকারের বিষয় হিসেবে থাকছেনা। (পৃঃ ৮৮)
১৮৭৯-৮০ সালের রিপোর্টে অনেক বছর পরে জানা যাচ্ছে যে ১ জন পরীক্ষার্থী এমডি পরীক্ষায় বসেছিল এবং সে কৃতকার্য হয়েছে। (GRPI 1879-80, পৃঃ ৯০)
এখানে আমরা দুয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে দেখতে পারি – (১) যত সংখ্যক ছাত্র এলএমএস বা এমবি পরীক্ষায় বসছে এবং পাস করছে তার একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশও এমডি পরীক্ষায় বসছেনা বা কৃতকার্য হচ্ছেনা, এবং (২) এতগুলো বছরের রিপোর্টে মোলিক গবেষণাকর্মের কোন কথা সরকারিভাবে কোথাও উল্লেখ করা নেই। আমরা কি অনুমান করতে পারি যে কেবলমাত্র সামরিক এবং সামাজিকভাবে উপনিবেশের জনতার প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা হচ্ছে? অধিকন্তু, স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান বিষয়ক কোন মৌলিক চিন্তা জন্ম নিক এমনটা সরকারের অভিপ্রেত নয়?
আমরা পরে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করব যে ১৮৬৭-৬৮ সালে কলেরা মহামারির সময়ে কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক স্বার্থকে রক্ষা করার লক্ষ্যে গবেষণার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের মেডিসিন ও কলেরা নিয়ন্ত্রণ-কেন্দ্রিক একাধিক পলিসি বিজ্ঞানচর্চার বিদ্যমান ধারার মূলনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছিল। এই পরিবর্তনের ফল সুদূরপ্রসারী হয়। দীর্ঘদিন কোন স্বাধীন গবেষণাকর্ম ভারতে হয়নি। উৎসাহিত তো করা হয়ইনি, বরঞ্চ অবদমিত করা হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
একটু বিষয়ান্তরে গিয়ে আমরা ১৮৭৮-৭৯ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনিটস-এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেখে নিই, যা আমাদের পরবর্তী আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয়।
২৭ এপ্রিল, ১৮৭৮-এ সেনেট মিটিংয়ে কয়েকটি বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল –
(১) “Female candidates shall be allowed to take up the subjects prescribed by the University of Calcutta for the B. A. Course, with the option of substituting French, German, Italian, or an Indian vernacular for the second language.”
(2) “Female candidates shall also be allowed to substitute Political Economy for the mathematical subjects in this examination.” (University of Calcutta: Minutes for the Year 1878-1879, ১৮৭৯, পৃঃ ৩)
এখানে লক্ষ্যণীয় যে মেয়েদের ক্ষেত্রে অংকের বদলে পলিটিক্যাল ইকনোমি নেবার সুযোগ থাকছে। এটা কি এরকম কোন ধরে-নেওয়া ইঙ্গিত বহন করে যে মেয়েরা অংকে স্বভাবতই দুর্বল যেজন্য তাদের ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল ইকনোমি নেবার ব্যবস্থা থাকল?
সেনেটের মিটিংয়ে সরকারিভাবে প্রথমবারের জন্য নথিবদ্ধ হল মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বিষয়টি। এর অনেক আগে, ১৮৪৮-৪৯ সাল থেকে, নারীশিক্ষার প্রসঙ্গ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাসংক্রান্ত আলোচনায় উঠে এসেছে। বেথুন তো ছিলেনই, এছাড়াও লর্ড ডালহৌসি ১ এপ্রিল, ১৮৫০-এ “নেটিভ ফিমেল এডুকেশন” নিয়ে ইতিবাচক মতামত দেন। (J. A. Richey, Selections from Educational Records, Part II, 1840-1859, 1922, পৃঃ ৫৬)
১৫ মে, ১৮৭৮-এ সেনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় – যেহেতু মহেন্দ্রলাল সরকার হোমিওপ্যাথি প্রাকটিস করছেন সেজন্য তাঁর সাথে ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের অন্য সদস্যরা নিজেদেরকে যুক্ত করতে পারবেন না। ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিন থেকে মহেন্দ্রলালকে অপসারণ করা হল। (Minutes for the Year 1878-1879, ১৮৭৯, পৃঃ ৪) মহেন্দ্রলালকে তাঁর কৃতিত্বের কথা মাথায় রেখে ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিন থেকে ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্থানান্তরিত করা হল। (প্রাগুক্ত, ৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৭৮, পৃঃ ৫০)
২৩ জুলাই, ১৮৭৮-এর সেনেট মিটিংয়ে ২ জন ভারতীয় সদস্যের নাম পাচ্ছি – প্রথমজন হলেন আগে আলোচিত রায় কানাইলাল দে বাহাদুর, দ্বিতীয়জন মুন্সি তমিজ খান, খান বাহাদুর। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ২০)
১০ জানুয়ারি, ১৮৭৯-এর সেনেট মিটিংয়ে মেডিসিনের পরীক্ষা সংক্রান্ত একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – (১) জুনিয়র এলএমএস এবং এমবি পরীক্ষায় অ্যানাটমি, ফিজিওলজি এবং মেটেরিয়া মেডিকা পরীক্ষার প্রতিটি ১০০০ নম্বরের হবে। পাস করতে অন্তত ৫০০ নম্বর পেতে হবে। (২) কেমিস্ট্রি, বোটানি এবং কম্প্যারেটিভ অ্যানাটমি পরীক্ষা হবে ৬০০ নম্বরের, পাস নম্বর ২৪০। (৩) সিনিয়র এগজামিনেশনের ক্ষেত্রে মেডিসিন, সার্জারি এবং মিডওয়াইফারি ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। পাস নম্বর ৫০%। (৪) প্যাথলজি, হাইজিন এবং মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্সের পরীক্ষা ৬০০ নম্বরের হবে। পাস নম্বর ৩৫%। (৫) কিন্তু ফাইনালে কোন পরীক্ষায় ফেল করা যাবেনা এবং মোট নম্বর অন্তত ৫০% থাকতে হবে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৫)
১৯ এপ্রিল, ১৮৭৯-র মিটিংয়ে মহিলা পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – (১) “একটি পৃথক স্থানে মহিলাদের তত্ত্বাবধানে মহিলা পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। (২) পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই পরীক্ষার ফি একই থাকবে। (৩) অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী জমা দেওয়া ফি ফেরত পাবেনা। (৪) মহিলা এবং পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই এন্ট্রান্স পরীক্ষা একই হবে। (৫) অংকের পরিবর্তে মহিলারা বোটানি নিতে পারবে।” (Minutes for the Year 1878-1879, ১৮৭৯, পৃঃ ১৪৭)
এখানেও ধরে নেওয়া হচ্ছে যে মেধার ক্ষেত্রে মহিলা এবং পুরুষ একই সারিতে নেই। অংকের জন্য যেহেতু সবল মস্তিষ্ক প্রয়োজন সেজন্য তুলনায় দুর্বলতর সাবজেক্ট বোটানিকে বেছে নেবার সুযোগ রাখা হল মহিলাদের জন্য।
পরবর্তী বার্ষিক রিপোর্টের বিবরণ
এর আগে ১৯৭৮-৭৯ সালের রিপোর্টে থেকে আমরা জেনেছি যে “appointments of Assistant Surgeons will be regulated by requirements of the Medical Department” এবং “as a matter of right” হিসেবে আর চাকরি হবেনা। কিন্তু রিপোর্টে এটাও বলা হয়েছিল – আগামী ৪ বছর অব্দি যারা পাস করে বেরোবে তারা যদি আবেদন করে তাহলে “must be admitted into the service”। প্রয়োজনের অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত (supernumeraries) যারা তাদের সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি। ড. আর্ভিং-এর হিসেব অনুযায়ী এ সংখ্যা ১৫০-এর কম কোনভাবেই নয়। (GRPI 1878-79, পৃঃ ৮৮)
১৮৭৯-৮০ সালের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল – বেথুন স্কুলকে কলেজের মর্যাদায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে ১ জন সর্বক্ষণের অধ্যাপক নিয়োগ করে। ১৮৭৯ সালে জুন মাসে কটক কলেজের অধ্যাপক শশিভূষণ দত্তকে কলেজের প্রথম অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে কলেজের ক্লাস শুরু হয়। (প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, বাংলার নারী-জাগরণ, ১৯৪৫, পৃঃ ৭৫) ১৮৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করে নতুন ক্লাসের একমাত্র ছাত্রী ছিলেন কাদম্বিনী বসু (বিবাহের পরে গাঙ্গুলি)। ১৮৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে Miss Ellen D’Abreu এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করে কলেজের ছাত্রী হন। Miss D’Abreu ভর্তি হবার ফলে হিন্দু ছাড়াও অন্য সম্প্রদায়ের মহিলাদের ভর্তির ক্ষেত্রে আর বাধা রইল না। (GRPI 1879-80, পৃঃ ৮২)
মেডিক্যাল কলেজের ব্যাপারে বলা হয় “সবচেয়ে অসন্তোষজনক ঘটনা হল বহুসংখ্যক পেয়িং স্টুডেন্ট কলেজ থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সাময়িকভাবে কলেজের ফি দিতে না পারার জন্য। যত ছাত্র কলেজ ছেড়ে চলে গেছে তাদের সংখ্যা বিগত শিক্ষাবর্ষের চাইতে বেশি এবং এদের মধ্যে ১৫ জন স্কলারশিপ পেত।” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯০)
এ শিক্ষাবর্ষে ১ জন পরীক্ষার্থী এমডি পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়েছে। ৩ জন ছাত্র আনার্স পরীক্ষায় বসেছিল। ১ জন ছাত্র সার্জারিতে এবং ১ জন মিডওয়াইফারিতে অনার্স পেয়েছিল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯০) আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বেশ কয়েকবছর বাদে ১ জন বা তার বেশি ছাত্র এমডি পরীক্ষায় কৃতকার্য হচ্ছে।
এছাড়া, মহিলা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কালিদাস নাগ জানিয়েছেন – “Two of the candidates from the Bethune School were successful – Kamini Sen, later, the poet Mrs. Kamini Roy passing in the first division, and Subarna Prabha Bose in the second.” (Bethune School and College Centenary Volume, 1849-1949, ed. Kalidas Nag, 1952, পৃঃ ৪০-৪১)
১৮৮০-৮১ সালের রিপোর্টে মহিলাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয় – “The highest point yet reached in the advance of female education is marked by the success of two girls’ schools in the University examination of December 1880. The Government Bethune School and the Free Church Normal School উভয়েই তাদের ছাত্রীদের পাঠিয়েছিল First Arts Examination-এ। বেথুন স্কুল থেকে ২ জন এবং অন্যটি থেকে ১ জন। নর্ম্যাল স্কুলের চন্দ্রমুখী বসু ২য় বিভাগে পাস করেছে্ন। এবং বেথুন স্কুলের কাদম্বিনী বসু পাস করেছেন ৩য় বিভাগে। দুজনেই এখন তাদের ডিগ্রি পরীক্ষার জন্য বেথুন স্কুলে পড়ছেন। চন্দ্রমুখীকে প্রতিমাসে ২৫ টাকা এবং কাদম্বিনীকে প্রতিমাসে ২০ টাকা বিশেষ স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে পড়াশুনো চালানোর জন্য। একইসঙ্গে বেথুন স্কুল ৩ জন প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল। বেথুন স্কুলের ২ জন – কামিনী সেন ১ম বিভাগে এবং সুবর্ণপ্রভা বসু ২য় বিভাগে পাস করেছেন। দ্বিতীয়জনকে তার বিয়ের কারণে আপাতত কলেজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।” (GRPI 1880-81, পৃঃ ৮৭-৮৮)
মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত ছাত্রকে ৫ বছরের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। “হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিস”দের ক্ষেত্রে এই সময় হবে ৩ বছর, কারণ এরা প্রথম ২ বছর কোন রেজিমেন্টে প্রশিক্ষণ নেবে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯০)
পেয়িং ক্লাসের ছাত্ররা বেশি সংখ্যায় কলেজ ছেড়ে যাওয়া কলেজ কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল – “As in former years, the fluctuations in attendance were very great, as many as 54 paying students having withdrawn their names during the course of the session.” এর সমাধান হিসেবে ঠিক করা হয় – “fees are to be paid in advance, in two sums of Rs. 30 for each half-year.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯১)
বলা হয় মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরে ৪২ বছরে ৭০০ জন ছাত্র “have obtained degrees and licences in medicine and surgery. Of these 26 were from Ceylon.” নেটিভ দাই-দের ব্যাপারে বলা হয়েছিল – সে বছরে ৮ জন নেটিভ দাই মিডওয়াইফারিতে পাস করেছে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯১)
১৮৮১-৮২ সালের রিপোর্টে “ফিমেল এডুকেশন” বিভাগে জানানো হল – “Miss D’Abreu, who passed the F.A. Examination, and Miss Abala Das, who passed the Entrance Examination, in December 1881, both with first grade scholarships, have joined the Madras Medical College, where provision exists for the superior instruction of women in medicine. An application had previously been made to the Council of the Medical College in Calcutta for the admission of the young ladies to that institution, to study the ordinary course presented for the degree; but it met with such determined opposition from the Professor of the College, though warmly supported by the Officiating Principal and subsequently by the Principal, that the proposal was for the time dropped. It may be predicted with confidence that this is one of those movements which no amount of opposition will finally succeed in overcoming.” (GRPI 1881-82, পৃঃ ৯২)
এন্ট্রান্স পরীক্ষায় Miss D’Abreu এবং Miss Abala Das-এর মতো দুজন প্রথম বিভাগে পাস করা মেধাবী ছাত্রীকে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকদের প্রবল বিরোধিতার জন্য মেডিক্যাল কলেজ ছেড়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে মেডিক্যাল শিক্ষার জন্য, এ বিষয়টি ভারতে আধুনিক মেডিসিন শিক্ষার অগ্রদূত মেডিক্যাল কলেজের পক্ষে অবশ্যই শ্লাঘার বিষয় ছিলনা। একইসঙ্গে বিবেচ্য যে বাংলাকে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে উদারবাদী এবং প্রাগ্রসর বলে ভারতবর্ষ সাধারণভাবে মনে করত সেরকম ভাবমূর্তির পক্ষেও এধরণের ঘটনা কলঙ্কজনক ছিল। ফলে ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্যে বিশেষ আলোড়ন তৈরি হয়। আমি এ নিয়ে পরের অধ্যায়ে আলোচনা করব।
এলএমএস এবং এমবি পরীক্ষা এব্বং পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে নতুন করে বিশেষ কিছু বলার নেই। কোন এমডি পরীক্ষার্থী ছিলনা।
বিগত শিক্ষাবর্ষে যেখানে ৮ জন “নেটিভ দাই” পাস করেছিল, এবারে সে সংখ্যা ৪ জন। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০১-১০২)
১৮৮২-৮৩ সালে রিপোর্টে “ফিমেল সেকশন” বিভাগে ২৩২ অনুচ্ছেদে জানানো হল – “বাংলার নারী শিক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে উল্লেখজনক হল বেথুন স্কুলের কাদম্বিনী বসু এবং চন্দ্রমুখী বসুর বিএ পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন। কাদম্বিনী বসু (বর্তমানে গাঙ্গুলি), সাম্প্রতিক পুনর্বিন্যাসের ফলে, মেডিক্যাল কলেজে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছেন। His Honor the Lieutenant-Governor, taking into consideration all the difficulties suggested by the Council of the Medical College, decided that no sufficient reason existed for the exclusion of duly qualified young ladies from the study of Medicine in the Institution.” (GRPI 1882-83, পৃঃ ৭০)
২৯ জুন, ১৮৮৩-র Government Resolution পরিষ্কার ভাষায় জানায় যে “ইতিমধ্যেই এখানকার প্রদেশগুলো (মাদ্রাজের সাথে প্রতিতুলনায়) have suffered from the Council’s failure to take a broad and unprejudiced view on this question, সম্পূর্ণ যোগ্য এবং শিক্ষিত মহিলাদের have had to betaken themselves to the more liberal Presidency of Madras.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭০-৭১)
পরে আরও কড়া ভাষায় জানানো হল – “It is, in Mr. Rivers Thompson’s (তদানীন্তন বাংলার লেফটন্যান্ট গভর্নর) opinion, clearly opposed to the public good, as well as to legitimate private interests … Illiberality here has great and numerous evil consequences.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭১) শুধু এটুকুই নয়, লেফটন্যান্ট গভর্নরের মতে, কলেজ কাউন্সিলের পদক্ষেপ মহিলাদের কুসংস্কার (zenana prejudices) এবং জাত-পাতের ব্যবধান শক্ত করে। সর্বোপরি, যে মেডিক্যাল পেশা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র ও হিতকর কাজের দিকে এগিয়ে দেয় ভারতীয় মহিলাদেরকে সে পেশা বেছে নেওয়ার স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক পদক্ষেপকে অবদমিত করে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭১)
মেডিক্যাল কলজের অধ্যাপক এবং কলেজ কাউন্সিলের যে সদস্য ব্রিগেডিয়ার-সার্জেন আর সি চন্দ্র মহিলাদের কলেজে ভর্তির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আপত্তি করেছিলেন এবং, সম্ভবত, কাদম্বিনীকে মেডিসিনের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় এক নম্বর কম দিয়ে ফেল করিয়েছিলেন তিনি “took furlough for one year and seven more months at the close of the session”। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৯-৮০)
মেডিক্যাল কলেজ থেকে ৪৪ বছরে (১৮৩৯ সালে প্রথম ব্যাচের ৫ জন ছাত্র পাস করেছিল) মোট পাস করা এলএমএস এবং এমবি ছাত্রের সংখ্যা এবছরের হিসেব অনুযায়ী ৭৩১ জন। গতবছরের ৪ জনের পরিবর্তে ৫ জন নেটিভ দাই এ বছরে মিডওয়াইফ হিসেবে পাস করে বেরিয়েছে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮০)
১৮৮৩-৮৪ সালের রিপোর্টে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হল যে মেডিক্যাল কলেজের নিয়মিত ক্লাসে মহিলাদের অ্যাডমিশন এক যুগান্তকারী ঘটনা “makes a new stage in the history of medical education in Bengal”। (GRPI 1883-84, পৃঃ ১১৩) প্রায় হুবহু এক কথা বলা হয়েছিল ২৮ অক্টোবর, ১৮৩৬ সালে মেডিক্যাল ছাত্ররা যখন প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করে। সেটাও ভারতের মেডিক্যাল শিক্ষার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিকবদলের ঘটনা ছিল। এরপরে কিভাবে মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার দরজা নারীদের জন্য খুললো তার বিবরণ আছে।
বিগত শিক্ষাবর্ষে যেখানে ৭ জন এমবি পরীক্ষায় পাস করেছিল, এ বছরে সে সংখ্যা বেড়ে ৯ জন হয়েছে। মোট ২১৫ জন হসপিটাল অ্যাপ্রেন্টিস অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপোথেকারি হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছে। গতবছর পাস করা নেটিভ দাইয়ের সংখ্যা ছিল ৫ জন। এবছরে কমে ৩ জন হয়েছে। ৬ জন “pupil-nurses”-ও মিডওয়াইফ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছে।
১৮৮৪-৮৫ সালের রিপোর্ট থেকে জানতে পারছি যে পূর্বোল্লেখিত অধ্যাপক আর সি চন্দ্র furlough কাটিয়ে আবার কলেজে যোগ দিয়েছেন। ৩১ মার্চ, ১৮৮৫-র অনুযায়ী মেডিক্যাল কলেজে তিনজন ছাত্রী ছিলেন – কাদম্বিনী গাঙ্গুলি, বিধুমুখী বসু এবং ভার্জিনিয়া মেরি মিত্র। প্রত্যেকে মাসে ২০ টাকা করে স্কলারশিপ পেতেন। (GRPI 1884-85, পৃঃ ৮৬)
এছাড়া যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য অন্তত তিনটি ঘটনা ঘটে এবছরে – (১) সার্জেন এফ সি চ্যাটার্জি “gave Rs. 5000 in 4 per cent. Government securities to be awarded to the student of the fourth-year (with the exclusion of Europeans and native Christians) who does best in Practical and Theoretical Histology, Normal and Morbid.”
(২) প্রথম যে ৪ জন ছাত্র উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন এবং ওদেশের মেধাবী ছাত্রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন সাবজেক্টে সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করেছিলেন তাঁদের একজন ছিলেন ভোলানাথ বসু। তিনি এ বছরে তাঁর নিজের alma mater মেডিক্যাল কলেজে “several scientific instruments and medals” এবং ১০০০ টাকা উইল করে দান করেন (“in government securities”)। এতে যে সুদ পাওয়া যাবে সেটা দিয়ে প্রতি ১ বছর অন্তর ১ জন শ্রেষ্ঠ ছাত্রকে (“best of the fourth-year matriculated students in bedside diagnosis of medical and surgical cases”) একটি পুরষ্কার দেওয়া হবে।
এখানে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, ১৮৮৪-৮৫ সালে যখন বিজ্ঞান প্রধানত ল্যাবরেটরি-কেন্দ্রিক গবেষণায় এবং কোষের অভ্যন্তরে আরও বেশি বেশি করে প্রবেশ করছে এবং বিজ্ঞানের নিত্যনতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে সেসময়েও মেডিক্যাল কলেজে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে “best of the fourth-year matriculated students in bedside diagnosis of medical and surgical cases”-কে। এর মধ্যে দূষণীয় কিছু নেই। কিন্তু এটুকু বোঝা যায় যে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা এবং গবেষণা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছুতে পারেনি তখনও, সাবেকি “হসপিটাল মেডিসিন”-এর স্তরে রয়ে গেছে – মাঝে মাঝে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে। মেডিক্যাল কলেজের ইতিহাস লিখতে বসে প্রায় ২০০ বছর পরে এর আভ্যন্তরীণ কারণ আমাদের বোঝা আবশ্যিক।
(৩) কাশিমবাজারের মহারাণী স্বর্ণময়ী দেবী মেডিক্যাল পাঠরত নারীদের থাকার জন্য একটি হোস্টেল তৈরির উদ্দেশ্যে ১,৫০,০০০ টাকা কলেজকে দান করেছেন। এ টাকায় হোস্টেল বিল্ডিংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর গত মার্চ মাসে স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও সার্জেন-জেনারেল A. J. Payne বেশকিছু মূল্যবান পুস্তক মেডিক্যাল কলেজের লাইব্রেরিতে দান করেছেন। (GRPI 1884-85, পৃঃ ৮৬-৮৭)
১৮৮৩-৮৪ সেশনে কম্পাউন্ডার ক্লাসে ২ জন ছাত্র ছিল, ১৮৮৪-র জুন মাসে তারা পাস করে যায়। বর্তমান শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ২ জন ইউরেশিয়ান এবং ১০ জন দেশীয় ছাত্র এই ক্লাসে ভর্তি হয়। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৭)
মহিলাদের স্কলারশিপেরে ব্যাপারে আরেকটি তথ্য উল্লেখযোগ্য। ১৮৮৬ সালে স্যার ওয়াল্টার ডি সুজা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেন, এবং স্কলারশিপ প্রাপকদের ডি সুজা নিজেই বাছাই করবেন এমনটা জানা যায়। (ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ১৮৮৬, ভল্যুম ২, পৃঃ ১৮) অন্য আরেকটি খবর থেকে জানা যায় যে স্যার ওয়াল্টার ডি সুজা ৩ বছরের জন্য প্রতিমাসে ২০০ টাকা স্কলারশিপের জন্য বরাদ্দ করেছেন। এ কাজটি “has been of the greatest possible service.” ১১টি ডি সুজা স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছিল। এতে অনুপ্রেরণা লাভ করে মেডিক্যাল কলেজের তদানীন্তন প্রিন্সিপাল ডঃ জে এম কোটস মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রীদের ভর্তির নিয়মের কিছু পরিবর্তন সাধন করেন “making them similar to those of Madras, so that a number of students were able to enter who would not otherwise have done so.” ডি সুজা স্কলারশিপ ছাড়াও বৈদ্যনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত আরও ২টি স্কলারশিপ প্রদান করেন (The Indian Magazine, No. 194, February 1887, পৃঃ ২২৯)
১৮৮৫-৮৬ সালের রিপোর্টে জানানো হল – ৩ জন নেটিভ দাই মিডওয়াইফারিতে পাস করেছে এবং “certificates of qualification” পেয়েছে। ৫ জন “pupil-nurses” ধাত্রী সিসেবে পাস করে বেরিয়েছে। (GRPI 1885-86, পৃঃ ৭২)
স্বর্ণকুমারীর মেডিক্যাল কলেজে মেয়েদের থাকার হোস্টেল তৈরির জন্য ১,৫০,০০০ টাকা দানের কথা উল্লেখ করে বলা হল – “the Government of Bengal ruled that for girls passing into University Entrance examination should be admitted to the college, and that after a three years’ course of classes and practical instruction, and on passing the final test and honor examinations, they should receive a certificate qualifying them to practise medicine, surgery, and midwifery … The Governement of Bengal has sanctioned a grant of Rs. 3,000 for furnishing the hostel.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭২)
১,২০০ টাকা খরচ করে একটি নতুন কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছে – এ খবরও জানানো হয়। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭২) এখানে আরেকটি বিষয় নজর করার মতো। এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে – কম্পাউন্ডার হবার জন্য সেসময়ে half-yearly পরীক্ষা নেওয়া হত। সে বছর মোট ৬৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জন এসেছিল মফস্বল থেকে। অর্থাৎ, ইংরেজি তথা ইউরোপীয় মেডিসিনের প্রভাব ভালোভাবেই জনসমাজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল, নাহলে অধিকাংশ ক্যান্ডিডেট গ্রামাঞ্চল থেকে আসত না। লেফটন্যান্ট গভর্নরের তরফ থেকে একটি ব্রোঞ্জ মেডেল দেওয়া শুরু হয়। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৩)
যেসব ছাত্রীরা পূর্বোল্লেখিত ডি সুজা স্কলারশিপ পাবে তারা ছাড়াও লেডি ডাফরিন ফান্ড থেকে স্কলারশিপ পাওয়া ছত্রীরাও স্বর্ণময়ী হোস্টেলে থাকতে পারবে। বিনা খরচে পড়াশুনো চালানো ছাড়াও এ ফান্ডগুলো থেকে মোট ১১টি স্কলারশিপ ছাত্রীরা পাবে – “The year has therefore been marked by an important advance in the provision for the higher education of women in medicine.” (GRPI 1885-86, পৃঃ ৮২)
মহারানী স্বর্ণকুমারী মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রীদের হোস্টেলের টাকা বরাদ্দ করে যে চিঠিটি লিখেছিলেন সেটা উদ্ধৃত করে এ অধ্যায়টি শেষ করি –“I had long felt the necessity for female medical tuition, female medical relief, and the supply of competent female nurses and midwives in India … But with the advance of my age I became less sanguine, and determined to do what I could with my own limited resources. Accordingly on February 25, 1885, I placed a sum of money (the amount was £15,000) in the hands of the Bengal Government for the erection of a hostel attached to the Calcutta Medical College in furtherance of female education in Bengal.” (The Asiatic Quarterly Review, Vol. III, January – April, 1887, পৃঃ ২৯০)
সেসময়ে ১ পাউন্ডের সাথে টাকার বিনিময় মূল্য ছিল ১০ টাকা। এজন্য রাণীর দানকে সর্বত্র ১,৫০,০০০ টাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
Bengali type hochhe na. Khub totthosamriddha lekha. Kichuta jantam. Anektai jantam na. Thanks to Dr Jayanta Bhattacharya
অত্যন্ত পরিশ্রমী প্রবন্ধ। একটি বিষয় বিশদে জানতে চাই। ড রাজেন্দ্র চন্দ্র ছাত্রীদের বৃত্তির ব্যবিস্থা কবে শুরু করেছিকেন, ১৮৮৯ সালে না তার আগে? কাদম্বিনী এই বৃত্তি পেয়েছিলেন? তার প্রতি শিক্ষকের এত কাঠিন্য, বিধুমুখী বা ভারজিনিয়া মেরি মিত্রর জন্য তো ছিলনা। এ সম্বন্ধে আলোকপাত করলে খুশি হব।
কৃষ্ণা রায়।
রাজেন্দ্র চন্দ্র মেয়েদের বৃত্তির কোন ব্যবস্থা করেননি। ওগুলো সরকারি বৃত্তি ছিল।
কাদম্বিনীর ক্ষেত্রে যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা পুরুষতান্ত্রিক হিন্দু সমাজের একজন পুরুষের পেশাগত জগতে প্রতিফলন। আমি পরের কিস্তিতে এ নিয়ে বিশদে লিখব। আর ভার্জিনিয়া মেরি মিত্র খ্রিস্টান ছিলেন। ফলে তাঁর ক্ষেত্রে এ প্রসঙ্গ আসেনা। বিধুমুখীর বিষয় আমি বলতে পারবো না। তবে কাদম্বিনীর ভর্তি হওয়া শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিপ্লব ঘটায়। ফলে পরবর্তীতে অন্য নারীদের ক্ষেত্রে আর অসুবিধে হয়নি।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক আলোকিত হল। অসাধারণ
Excellent one sir.
আপনার লেখা না পড়লে অনেক কিছু জানতে পারতাম না, অত্যন্ত পরিশ্রম করে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা, ধন্যবাদ স্যার
আবার একটি চমৎকার ইতিহাস ভিত্তিক প্রবন্ধ আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পেশ করলেন ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
চিকিৎসাবিদ্যা আয়ত্ত্ব করার আগ্রহ বাড়ছে সেই সময়। চাকরি নিশ্চিত নয়, তবুও।
কিন্তু মেয়েদের পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বা তাঁদের একসারিতে বসানোর ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রকদের অনীহা তখনও বর্তমান ছিল।
সময় কি খুব বদলেছে আজও। আমরা পুরুষ চিকিৎসককে ডাক্তার এবং মহিলা চিকিৎসককে লেডী ডাক্তার বলি আজও।
চর্চা চলুক। আমরা আমাদেরকে চিনি, আর সাথে জানি বাংলায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাস।
বা!