যদি গারো পাহাড়ে জন্মাতাম, তাহলে মাতৃভাষা হতো গারো। পাহাড় জঙ্গলের ফিসফিসে গল্প গারো ভাষায় অনুভব করতাম। যদি উড়িয়া হতাম, সে ভাষাতেই সাগরের গল্প শুনতাম। যদি তামিল হতাম, তাহলে তামিলেই মন খুলে ঝগড়া করতাম। যদি জন্ম থেকেই মুক বধির হতাম, তাহলে সাইন ল্যাংগুয়েজ হতো মাতৃভাষা- সাইন ল্যাংগুয়েজেই ভালোবাসার গল্প শোনাতাম।
আমরা বাঙালি- তাই বাংলাতেই বকবক করি। একজন হিন্দি ভাষী, একজন ইংলিশম্যান, একজন জাপানী- তাঁর মাতৃভাষা নিয়ে যতটা গর্বিত আমরা তার চাইতে একটুও কম গর্বিত নই বাংলাভাষা নিয়ে।
যে ভাষা আমাদের চিন্তা করতে শিখিয়েছে, আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে, আমাদের ভালবাসতে শিখিয়েছে- সেই ভাষার ঋণ শোধ যোগ্য নয়। তবু আমাদের কিছুটা চেষ্টা করা উচিৎ। এই ভাবনা থেকে ২০২১ সাল থেকে কয়েকজন চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত ডক্টরস ডায়লগ ওয়েব ম্যাগাজিনের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস উদযাপন।
আমরা সাহিত্যিক নই। বাংলা সাহিত্যকে পুষ্ট করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে আমাদের মনে হয় একটি ভাষাকে বেঁচে থাকতে হলে শুধু সাহিত্যই যথেষ্ট নয়- সেই ভাষায় বিজ্ঞান চর্চারও প্রয়োজন। যেহেতু আমরা চিকিৎসক, তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর আমাদের কিছুটা দখল আছে। ডক্টরস ডায়লগ ওয়েব ম্যাগাজিনে মূলত বাংলা ভাষায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখা লিখি করা হয়। ‘স্বাস্থ্যের বৃত্তে’ পত্রিকাটির উদ্দেশ্যও একই।
সেই একই উদ্দেশ্য নিয়ে ভাষা দিবস উদযাপন। এই অনুষ্ঠানে প্রতিবছরই একাধিক চিকিৎসকের লেখা বই প্রকাশিত হয়। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলায় বক্তৃতামালা থাকে। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
শুধু চিকিৎসক নন, সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সাদর আমন্ত্রণ জানাই এই ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে। দেখা হবে, আড্ডা হবে, ২১শে ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যেটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।