কোভিডের নখ দাঁত ভোঁতা হয়ে গেছে। ক্ষমতাশালীর নখ দাঁত আবার বেরিয়ে এসেছে। ক্ষমতায় থাকা পুরুষপুঙ্গবেরা এতদিন তেল মালিশ করে বিশেষ অঙ্গটির যত্ন করছিলেন। এবার আসরে নেমেছেন। চারদিকে এমন মুষল পর্ব চলছে যে, মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের চক্রান্ত তকমা দিয়ে এটাকে “সাজানো ঘটনা”ও বলতে পারছেন না। বিরোধী এখন নেই, যারা ফিরে আসেনি তারা ফেরবার পথ খুঁজছে। আর রাজনীতি মানে আসলে ক্ষমতা। ক্ষমতা চাই। তাই তৃণমূলই তৃণমূলকে মেরে কুপিয়ে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে ফেলছে। অপরাধ করলেও আমার “তৃণমূল নেতা” বাবা আছে আমাকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য- এত বড় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সুযোগ কে ছাড়ে? পূঁজ আর সংক্রমণ অনুব্রতর অন্ডকোষ ছাড়িয়ে অনেক গভীরে ঢুকে গেছে। অন্যান্যরা সেই প্রচন্ড সংক্রামিত পূতিগন্ধময় আবহাওয়াতেই থেকে যাওয়া শ্রেয় মনে করছেন।
কিন্তু ভিক্টিম ব্লেমিং নতুন ব্যাপার না। পুরুষ -নারী উভয়েই মেয়েদের ওপর অত্যাচার হলে ভিক্টিম ব্লেমিং করে আসছে। মেয়েটার নিজের দোষেই রেপ হয়, মেয়েটা মরেও যায় নিজের বোকামিতে। আর রেপ হলে মরে যাওয়াটাই ভালো। বেঁচে থাকলে সেই জীবন মৃত্যুর চেয়েও খারাপ সেটাও থানা পুলিশ কোর্ট আর নিজের স্বজাতের লোকেরাই বুঝিয়ে দেয়। এত রাতে কে বেরোতে বলে? পার্টিতে কে যেতে বলে? শারীরিক সম্পর্ক করতে কে বলে? উত্তেজক পোশাক পরেছিল কেন? নেশা করেছিল কেন? ভয়ের ব্যাপার হল এই “prejudicial” কথাগুলো কলতলা আর পাড়ার জটলার গসিপে -টসিপে নয়, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, যিনি আবার মহিলা, স্টেজে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে বলছেন। আর পুলিশ প্রশাসন সেই কথার প্রতিধ্বনি করছে।
স্বেচ্ছায় এক পুরুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রেখেছিল, নেশার দ্রব্য পেটে পাওয়া গেছে। এইরকম মেয়েই ধর্ষিতা হবার উপযুক্ত। তাকে শাস্তি দেওয়া যায়।
নির্ভয়ার ধর্ষণকারীরাও এটাই জানত। যে মেয়ে রাত দশটায় বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘোরে সে চরিত্রহীন। অভব্য আচরণ করছে সে। সে যদি অভব্যতা করে তাহলে তার শাস্তি হল তাকে বুঝিয়ে দেওয়া, যে সে একটি পণ্যসামগ্রী ছাড়া আর কিছু না। তার স্থান পুরুষের পায়ের নীচে। এবং তার সম্মান তার যোনিতে। তার পরিবারের সম্মান, গোটা সমাজের সম্মান ও তার যোনিতেই ঢুকে বসে আছে।
অজান্তেই মনে ধর্ষণকারীর মানসিকতা বাসা বেঁধে থাকে। আশ্চর্য ভাবে নারী স্বজাতির প্রতি হোমো স্যাপিয়েন্সের হিংস্রতা আর নিষ্ঠুরতার কোন মাত্রা ঠিক করা যায় না, তার প্রমাণ রাখছে পরিবার প্রেমিক নেতা পুলিশ, এমনকী এক ক্ষমতাসীন নারী অবধি।
প্রেম, উভয়ের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক হওয়া আর ধর্ষণকে একই রেখায় টেনে নিয়ে আসার এই মারাত্মক ভাবনাসূত্রকে থামানোর মত সমষ্টিগত চিন্তা এরকম দেশ-কালে কি সম্ভব নয়?
দময়ন্তীরা ফিরে আসুক। “ইয়েস, শি ওয়াজ রেপড”, এটা বলার মত সাহস ফিরে আসুক আইনরক্ষকদের মধ্যে।