হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ভাতে মেরে এবং লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ তছনছ করে ন্যূনতম লজ্জা নেই এসএসসি এবং সরকারের। প্রতিশ্রুতির নাটকের পর আমরা দেখলাম প্ল্যান এ (পু লিশের লা/থি ও লা/ঠি) এবং প্ল্যান বি (জা তিদা ঙ্গা করে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া)। অজস্র মিথ্যার বেসাতি সাজিয়ে বোকা বানানোর খেলা চলছে তো চলছেই৷
সোমবার (২১ এপ্রিল ২০২৫) নবান্ন অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন চাকরিহারারা। সেই অভিযান আটকানোর উদ্দেশ্যে সেই তারিখেই “যোগ্য/ অযোগ্য” তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিল এসএসসি এবং জানিয়েছিলেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। শেষ অব্দি শিক্ষাদপ্তর নামক পর্বত মূষিক প্রসব করল। কোনো তালিকাই প্রকাশ করল না তারা। বদলে ঘুষ দিয়ে আগেভাগে চাকরি বাগানো ব্যক্তিদের সুবিধা দেবার জন্য তারা বলল, যাদের তারা নিজেদের মর্জিমাফিক প্রথম তিন কাউন্সেলিংয়ে ডেকেছিল, তারাই বৈধ। অর্থাৎ বড়মাপের উৎকোচই বৈধতার মাপকাঠি এই রাজ্যে!
স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনকারীরা বৈধতা নির্মাণের সেই অবৈধ পদ্ধতি মেনে নেননি। তাঁরা অবস্থান আন্দোলন করছেন “আচার্য সদন”-এর সামনে (যে বাড়িটার নাম আসলে “আশ্চর্য সদন” হওয়া উচিত)।
পুলিশ-প্রশাসন যথারীতি “শিষ্টের দমন, দুষ্টের পালন” ধর্মের আচার অসামান্য নিষ্ঠায় পালন করে চলেছে। আজও ধাক্কাধাক্কি করেছে শিক্ষকদের। অবস্থানরত শিক্ষকদের বসার চৌকি, খাবার, পানীয় জল, সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে৷ মহিলাদের টয়লেটে যেতেও দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ সবরকম শারীরিক অত্যাচার চলছে। এভাবেই কি আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দুর্নীতির জয়গান গাওয়ার চেষ্টা? ছাব্বিশ হাজার সরকারি চাকরিজীবী এবং তাঁদের পরিবার সহ লক্ষাধিক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া এসএসসির চেয়ারপার্সনকে ঘেরাও করা অন্যায়, অথচ গ্রীষ্মের দিনে অন্যায়ের শিকারদের পানীয় জল থেকে বঞ্চিত করা অপরাধ নয়? এসএসসির চেয়ারপার্সনকে যথেষ্ট পরিমাণে জল, খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, বিশ্রাম নেবার জন্য আরামদায়ক বিছানা, বাতানুকূল কামরা ইত্যাদি সবকিছু দেওয়া হোক, কিন্তু তিনি সঠিক গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রকাশ করেই অফিস ছাড়বেন।
এরপর হয়ত আবার লা/ঠি চলবে, লা/থি চলবে। সেরকম ঘটলে পরবর্তী অবস্থান কর্মসূচী সম্ভবত নবান্নের দোরগোড়ায় হবে। সি দ্দিকু ল্লা সাহেব একাই শহর অচল করার ক্ষমতা রাখেন না, ক্ষমতার আসল উৎস জনগণ।
চিকিৎসক সংগঠনগুলো পূর্ণ শক্তিতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের পাশে থাকবে। আমি একজন প্রাক্তন ছাত্র, একজন ছাত্রীর বাবা এবং একজন শিক্ষিকার জীবনসঙ্গী। আমি ব্যক্তি হিসেবে এঁদের পাশে থাকব এবং আমার মতো বহু মানুষ থাকবেন। শিক্ষামন্ত্রী চাইলে আমাদের শরীরের ওপর দিয়ে গাড়ি, এমনকি বুলডোজার বা রোডরোলার চালিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু রাজ্যের সব মানুষকে চাপা দেবার মতো যথেষ্ট সংখ্যক গাড়ি তাঁর কাছে আছে কি?