ইতিহাসের দিকে তাকাই..
১৯০২ সালে চার্লস রিকেট (Charles Richet) তাঁর পোষা কুকুরকে sea anemone (প্রবাল জাতীয় সামুদ্রিক জীব) ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। তিন সপ্তাহ বাদে একই ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করলে কুকুরটির মারাত্মক অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হয়। তিনি বুঝতে পারেন বারবার প্রয়োগ কোনও সুরক্ষাকবচ দিলো না, উল্টে কুকুরটির প্রাণ সংশয় তৈরি হ’ল। এই ঘটনার নাম তিনি দিলেন a(without)phylaxis (protection)। পরে শ্রুতিমধুরতার বিচারে anaphylaxis কথাটি চালু হয়। আদপে গ্রীক শব্দ। ana-against, phylaxis-protection
এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য চার্লস রিকেট ১৯১৩ সালে মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার পান।
অ্যানাফাইল্যাক্সিস কী?
খুব জটিল আলোচনায় যাবো না। মোদ্দা কথা হ’ল এটি এক ধরনের মারাত্মক অ্যালার্জি। বহিরাগত কিছু বস্তু শরীরে প্রবেশের পর মূলত শ্বেত রক্তকণিকা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থ (যেমন হিস্টামিন) ক্ষরিত হয়। তার ফলেই অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনগুলো হয়।
লক্ষণগুলি কী কী?
নাক দিয়ে জল ঝরা, চামড়ায় র্যাশ, আমবাত, চামড়া লাল হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, গলার স্বরের পরিবর্তন, পেট ব্যথা , বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেলে প্রবল শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ আশংকাজনক ভাবে নেমে যাওয়া (শক), অজ্ঞান হয়ে যাওয়া.. ইত্যাদি দেখা যায়।
কোন কোন জিনিস থেকে হ’তে পারে?
এমন কোনও জিনিস নেই যেটা থেকে হ’তে পারে না। কার কোন জিনিস থেকে হবে সেটা আগে থেকে বেশিরভাগ সময়েই বোঝা যায় না। তবে মূলত বিভিন্ন ধরনের ভেনম (মৌমাছির হুল ইত্যাদি), সামুদ্রিক খাবার, ডিম, চিংড়ি, বিভিন্ন ওষুধ এসব থেকে বেশি হয়। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত এক্সারসাইজ, বিভিন্ন হরমোনঘটিত পরিবর্তন, প্যাকেটজাত খাবারে মিশ্রিত বিভিন্ন রাসায়নিক থেকে অ্যানাফাইল্যাক্সিস হ’তে পারে।
আগে থেকে বুঝবো কী করে? কী করে সতর্ক হবো?
চামড়ায় অল্প পরিমাণে ইঞ্জেকশন দিয়ে কিছু কিছু রাসায়নিকে অ্যালার্জি বোঝা যায়। আগে থেকে বোঝা গেলে মেডিক্যাল হিস্ট্রি নেওয়ার সময় অবশ্যই আপনার চিকিৎসককে জানান। অজানা মোড়ক, পুরিয়া, দানা ইত্যাদি যেগুলোর গায়ে কম্পোজিশন লেখা থাকে না সেগুলো ব্যবহার করবেন না।
অনেক সময় রক্তের কিছু উৎসেচকের (tryptase) মাত্রা, ইওসিনোফিল নামক শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ, রক্তরসের IgE লেভেল পরীক্ষা করে আন্দাজ পাওয়া যায়।
চিকিৎসা কী?
রোগলক্ষণ বিচার করার পর আপনার ডাক্তার অ্যান্টি-হিস্টামিনিক জাতীয় ওষুধ, স্টেরয়েড ইত্যাদি দিতে পারেন। শক পর্যায়ে গেলে অ্যাড্রিনালিন ও অন্যান্য সহযোগী চিকিৎসা (অক্সিজেন, শিরায় দেওয়ার তরল, স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন, বুক চেপে হার্ট পাম্প করা, বাইরে থেকে ফুসফুসে হাওয়া ঢোকানো ইত্যাদি) দেওয়ার প্রয়োজন হ’তে পারে।
এটা কি আমারও হ’তে পারে?
হ্যাঁ। পারে। যে কোনও দিন।
একটা হিসেব দিই। বছরে গড়ে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে চার থেকে একশো জন আক্রান্ত হন। প্রত্যেক মানুষের অ্যানাফাইল্যাক্সিসে আক্রান্ত হওয়ার লাইফটাইম রিস্ক ০.০৫-২%।
অনেক সময়ই ‘ভুল ইঞ্জেকশনে রোগীর মৃত্যু’ ধরনের শিরোনাম যুক্ত খবর প্রচার করা হয়। সেগুলো কিন্তু অনেক সময় ‘অ্যানাফাইল্যাক্টিক শক’-এর ঘটনা। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সব ধরনের সতর্কতা নিয়েও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়না। আমার নিজের ক্ষেত্রেও পেটে ব্যথার ইঞ্জেকশন নিয়ে অ্যানাফাইল্যাক্টিক শক হয়েছিলো। মারাও যেতে পারতাম। কাজেই বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, ডাক্তার জেনেবুঝে রোগীর ক্ষতি চান না।
দারুন লিখেছো ভাই। সুখপাঠ্য
অসাধারণ লেখা, স্যালুট ডক্টর ভাই
Khubei tottho purno…. Dhonnobad Dr Babu