লিভার নিয়ে আমাদের চিরকালের দুশ্চিন্তা। এই বুঝি খারাপ হল! এই বুঝি জন্ডিস হল! কী খাব কীই বা খাব না, কী ভাবে চলব নিজের পেটটুকু সামলে রেখে? এইসব অনন্ত জিজ্ঞাসা সমাধানের সামান্য প্রয়াস এই প্রবন্ধে ।
আমাদের আজকের আলোচনার প্রথম বিষয় হল লিভার আমাদের শরীরে কী কী কাজ করে।
লিভারের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শরীরে কতগুলো প্রোটিন তৈরি করা। যেমন ধরা যাক অ্যালবুমিন। লিভার শরীরের এই ভীষণ দরকারী প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন ছাড়া আমরা বাঁচব না, শরীরের পুষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে এবং রক্ত তরলতর হয়ে যাবে।
এরপর – লিভার শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার জন্য খুবই দরকারি কিছু প্রোটিন (factors) তৈরি করে।
আমরা যে খাবারগুলো খাচ্ছি, তার বাড়তি অংশ শরীরে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমিয়ে রাখে আবার প্রয়োজন হলেই ওই গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করে ফেলে। বোঝা গেল না? একটু উদাহরণ সহযোগে বলি? ধরুন খগেনবাবু সকাল সকাল খেয়ে দেয়ে ট্রেনে করে আপিস রওনা দিলেন, কিন্তু পথ অবরোধের জন্য সারা দিন মাঝপথে অভুক্ত আটকে রইলেন। কিন্তু না খেয়ে থেকে রাত সাড়ে দশটাতেও ওঁর সুগার ফল করল না। এই সময়ে লিভার জমিয়ে রাখা গ্লাইকোজেন ভেঙে ভেঙে সুগার তৈরি করে শরীরকে সরবরাহ করেছে। এটা কিন্তু লিভারের একটা জীবনদায়ী কাজ।
আমি জানি সুধী পাঠক পাঠিকারা অধৈর্য হয়ে পড়ছেন হজমের ব্যাপারে লিভারের কি কোনও কাজ নেই? সত্যি সত্যি হজম করার ক্ষেত্রে লিভারের বিশেষ কিছু কাজ নেই। আমাদের রক্তে যা যা জিনিস বাইরে থেকে ঢুকেছে সেগুলোকে পরিশ্রুত করাটা অবশ্য লিভারের কাজ কিন্তু সেটা হজম সংক্রান্ত নয়। আমি আমার শিক্ষক- জীবনেও বহু ছাত্র-ছাত্রীকে এই প্রসঙ্গে অবাক হতে দেখেছি। লিভার থেকে বেরিয়ে আসা পিত্তরস ‘হজম হয়ে যাওয়া’ চর্বি ( fatty acid ) রক্তে মিশিয়ে দিতে সাহায্য করে।
তবে একটা ভাগ্যের কথা, লিভার নিজের ক্ষমতা আটগুণ বাড়াতে পারে। অর্থাৎ পুরো লিভার খারাপ না হলে শরীরের ক্ষতি হবে না।
লিভার খারাপ হলে বুঝব কী করে?
হেপাটাইটিস হলে জ্বর আসবে, খিদে কমে যাবে (যেমনটি সব ভাইরাল অসুখে হয়)। আর লিভার খারাপ হলে পেটে জল জমে, পা ফোলে, বমিতে রক্ত উঠতে পারে।
তা হলে আমরা করবটা কী?
একটা লিভার ফাংশান টেস্ট, লিভার আর পিত্তথলির ছবি। তবে হেপাটাইটিসের ভ্যাক্সিনগুলো ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত।
সব চেয়ে বড়ো কথা হল, আপনার অসুবিধা আপনার চেনা ডাক্তারবাবুই সব থেকে ভালো বুঝবেন।
সারা দিন গলা জ্বালা, বুক জ্বালা, ঢেকুর ওঠা হয়। এটা এক মাসের ওপর চলছে। কি করব ?